ডিজিটাল মার্কেটিং কি? : মানুষ তার পছন্দসই ক্যারিয়ার বেছে নিতে চায়। তবে এটা খুব একটা সহজ প্রক্রিয়া নয়। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী ক্যারিয়ার পছন্দ করা এবং সে মতে নিজেকে গড়ে তোলার মাধ্যমে সঠিক লক্ষ্যে যাওয়া সম্ভব। আমরা সবাই এমন একটা দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ার চাই যাতে আমাদের প্রয়োজনীয় সকল চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ক্যারিয়ারটা উপভোগ করতে পারি।
আজকের বাস্তবতায় ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার হিসেবে স্কুল থেকেই পছন্দ তথা শিখে আসতে হবে ব্যাপারটা এমন নয়। আশার কথা হলো এই ২০২১ এ এসে ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার হিসেবে প্রথম সারির একটি বলে পরিগণিত হচ্ছে। তাই বলা যায় ডিজিটাল মার্কেটিং আগামির ক্যারিয়ার হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যার চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
ডিজিটাল মাকেটিং কি?
ডিজিটাল মার্কেটিং (Digital Marketng) এ ক্যারিয়ার গঠন করতে চাইলে প্রথমে আমাদেরকে ডিজিটাল মার্কেটিং কি তা জানতে হবে। যাকে আমরা এই পেশার জন্য প্রাথমিক পাঠ বলতে পারি। সাধারণত মার্কেটিং হলো কোন পণ্য বা সেবার বিপণণ তথা অ্যাডভারটাইজিং। তেমনি ডিজিটাল মার্কেটিং হলো ইন্টারনেট বা অনলাইন ভিত্তিক বিজ্ঞাপন প্রচার।
সুতরাং ইন্টারনেট বা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে যে মার্কেটিং করা হয় তাই ডিজিটাল মার্কেটিং। যেমন এসইও, এসইএম, স্যোশাল মিডিয়া মার্কেটিং, ইউটিউব মার্কেটিং ইত্যাদি। অন্যভাবে, ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে বুঝায় অনলাইন বা ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে ব্যবহার করে ইন্টারনেট দুনিয়ায় পণ্য, প্রতিষ্ঠান বা ব্র্যান্ডের প্রচারণা বা বিজ্ঞাপন দেয়া।
ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার
বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ। ইন্টারনেট এর দ্রুত অগ্রগতি ও সহজলভ্যতার কারণে আমরা সবাই এখন সত্যিকার Global Village বা বিশ্বগ্রামে বসবাস করছি। মূহুর্তের মাঝে আমরা পৃথিবীর সকল প্রান্তের সর্বশেষ আপডেট জানতে পারছি। নতুন নতুন তথ্য ও প্রযুক্তি আমরা অনলাইনের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারছি। নানা স্যোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমার নিজেদের নানা দিক শেয়ার করার পাশাপাশি অন্যদের বিষয়গুলো জানতে পারছি। সাথে সাথে আমাদের অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান করছি।
যার মাধ্যমে আজকের পৃথিবী আমাদের সামনে ছোট্টগ্রাম হয়ে ধরা দিচ্ছে। অতএব বলা যায় যে, আগামির পৃথিবী ডিজিটাল মাধ্যমেই আমাদের সামনে উপস্থিত হবে। ভবিষ্যতে ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার হিসেবে খুবই আকর্ষণীয় পেশা হিসেবে গ্রহণ করা হবে। তাই আগামির পৃথিবীতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং এ ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন এখনই।
ডিজিটাল মার্কেটিং এ ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে প্রথমেই নিশ্চিত হতে হবে আপনি কোন বিষয় ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চান। সে অনুযায়ী আপনার পরবর্তী পরিকল্পনা সাজানো ও বাস্তবায়ন করতে হবে। তার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
ডিজিটাল পৃথিবী প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। তাই সময়ের সাথে সাথে আপনার ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সকল বিষয়ে আপডেট থাকতে হবে। ডিজিটাল মার্কেটিং এ ক্যারিয়ার শুরু করতে নিদির্ষ্ট কোন শাখা নির্বাচন না করে সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।
যদি ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চান অবশ্যই এক্সপার্ট লেভেলের দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তবেই সফলতা সম্ভব অন্যথায় নয়। কেননা শুধুমাত্র প্রাথমিক ধারণা অর্জন করে ক্যারিয়ার শুরু করা হিতে বিপরীত হতে পারে।
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন শাখা
ডিজিটাল মাধ্যমে যে কোন মার্কের্টিং ডিজিটাল মার্কের্টিং এর অন্তর্ভূক্ত। তাই বলা চলে ডিজিটাল মার্কেটিং এর অনেক শাখা রয়েছে। যেমন: আর তা হলো সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান (এসইও), সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (এসইএম), সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (এসএমএম), সোশ্যাল মিডিয়া অপ্টিমাইজেশান, ইউটিউব মার্কের্টিং, ই-মেইল মার্কেটিং, কনটেন্ট বা আর্টিকেল মার্কেটিং, এফিলিয়েট মার্কেটিং, ই-কমার্স মার্কেটিং, ডিসপ্লে অ্যাডভারটাইজিং, মোবাইল এসএমএস এবং এমএমএস, কলব্যাক ইত্যাদি।
আপনি এর যে কোন একটিতে আপনার ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। এই মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে আপনি যে কোন প্রতিষ্ঠান, পণ্য বা সেবার মার্কেটিং করতে পারেন। যার মাধ্যমে অনলাইন ভিত্তিক সকল গ্রাহকের কাছে আপনার পণ্য সম্পর্কে জানাতে পারেন। উল্লেখিত যে কোন একটিতে আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারেন। এবার চলুন, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ শাখাগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।
১. সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান (এসইও)
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রাণ হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান তথা এসইও (Search engine optimization)। এসইও হচ্ছে ওয়েবসাইট বা ওয়েবপেজকে সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারকারীদের সার্চে সামনের দিকে দেখানোর চেষ্টা করা । যার ফলে আপনার ওয়েবসাইট শুরুর দিকে দেখানো হয়।
এসইও এর মাধ্যমে অনলাইন এ কোন প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবার ওয়েবসাইটটি গ্রাহকের সামনে আসে। এসইও তে বিভিন্ন ধরণের কাজ থাকে। যেমন কিওয়ার্ড রিসার্স, লিংক বিল্ডিং, আর্টিকেল পাবলিশ, অপপেজ এসইও, অনপেজ এসইও ইত্যাদি।
এসইও সার্ভিস প্রদানের মাধ্যমে আপনি ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। আপওয়ার্ক, ফাইভার, ফ্রিল্যান্সার ডটকম ইত্যাদি মার্কেটপ্লেসে আপনি এসইও এর সার্ভিস দিতে পারেন। পাশাপাশি বর্তমানে দেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠানে এসইও এক্সপার্ট হিসেবে চাকরির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান সম্পর্কে আরো জানুন।
২. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
ডিজিটাল মার্কেটিং এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং। খুব সহজেই আপনি এ সেক্টর আপনার ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারেন। বর্তমানে সকল প্রতিষ্ঠান তাদের ব্রান্ড, পণ্য বা সেবার প্রচার প্রসারে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর জন্য দক্ষ মার্কেটিং এক্সপার্ট নিয়োগ দিচ্ছে।
ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, পিন্টারেস্ট ইত্যাদি মাধ্যমে এই মার্কেটিং হয়ে থাকে। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর মাধ্যমে সহজেই গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো যায়। সময়ের সাথে সাথে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর জন্য প্রচুর কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। এছাড়া সকল মার্কেটপ্লেসে এই সার্ভিস প্রদান করা যায়। চাকরির পাশাপাশি মার্কেটপ্লেসে সার্ভিস দিয়ে আপনি প্রচুর অর্থ আয় করতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং সম্পর্কে আরো জানুন।
৩. ইউটিউব মার্কের্টিং
ডিজিটাল মার্কেটিং এ ভিডিও ব্যবহার করে প্রচারণা বড় জায়গা দখল করেছে। টিভিতে বিজ্ঞাপনের মতো বর্তমানে ইউটিউব এ মার্কেটিং খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আপনি নিজস্ব চ্যানেল পণ্য বা সেবার ভিডিও আপলোড করতে পারেন।
অথবা কোন কোম্পানির ব্রান্ড ভ্যালু ও পণ্য সম্পর্কে জানাতে ইউটিউব ভিডিও বানানো ও প্রচারের জন্য কাজ করতে পারেন। বর্তমানে ভিডিও তথা ইউটিউব মার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্যতম মাধ্যম। তাই ইউটিউব মার্কের্টিং এ আপনার ক্যারিয়ার শুরু করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।
৪. ইমেইল মার্কেটিং
আমরা ইমেইলকে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় তথ্য আদান প্রদানের প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করলেও ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্যতম পার্ট হচ্ছে ইমেইল মার্কেটিং। এই মার্কেটিং নানাভাবে হয়ে থাকে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ইমেইল সংগ্রহ করা যায়। পরবর্তীতে পণ্য বা সেবা সম্পর্কে জানিয়ে ইমেইল পাঠানোর মাধ্যমে মার্কেটিং করা হয়ে থাকে। ইমেইল মার্কেটিং সম্পর্কে আরো জানুন।
৫. কনটেন্ট বা আর্টিকেল মার্কেটিং
কনটেন্ট মার্কেটিং হলো ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্যতম মাধ্যম। এটি আর্টিকেল অথবা ভিডিওর মাধ্যমে হতে পারে। আর্টিকেল পাবলিশের মাধ্যমে কনটেন্ট মার্কের্টি করা যায়। যে কোন ওয়েবসাইট বা ব্লগ এ আর্টিকেল পাবলিশ এর মাধ্যমে কনটেন্ট মার্কেটিং হয়ে থাকে।
আর্টিকেল রাইটিং, পাবলিশ এবং মার্কেটিং তথা প্রচার ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্তর্ভূক্ত। তাই কনটেন্ট মার্কেটিংকে আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারেন অনায়াসে। কনটেন্ট এর চাহিদা কখনো কমে না। প্রতিদিনই নতুন নতুন কনটেন্টের প্রয়োজন হয়। ভবিষ্যতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে। কনটেন্ট রাইটিং সম্পর্কে আরো জানুন।
৬. এফিলিয়েট মার্কেটিং
এফিলিয়েট মার্কেটিং হলো ডিজিটাল প্লাটফর্মে অন্যের প্রোডাক্ট প্রমোশনের মাধ্যমে বিক্রয় করা। আপনার ওয়েবসাইট অথবা ব্লগ এবং ভিডিওর মাধ্যমে এফিলিয়েট মার্কেটিং করা যায়। উদাহরণ স্বরূপ আমরা অ্যামাজন এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের কথা বলতে পারি।
এফিলিয়েট মার্কের্টিং কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য অথবা নিজেই শুরু করতে পারেন। বর্তমানে এফিলিয়েট মার্কেটিং ক্যারিয়ার হিসেবে সামনের দিকে রয়েছে। ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার হিসেবে এফিলিয়েট মাকেটিং শুরু করে দিতে পারেন। এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে আরো জানুন।
৭. সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং
সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (এসইএম) হলো সরাসরি সার্চ ইঞ্জিনে মার্কেটিং। এসইও তে আমরা সরাসরি মার্কেটিং করতে পারি না। কিন্তু সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং এ তা সম্ভব। সার্চ ইঞ্জিন এ আমরা কোন কিছু সার্চ দেয়ার সময় অ্যাড তথা বিজ্ঞাপন আকারে শুরু দিকে যে ওয়েবসাইটগুলো দেখা যায় তা সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং এর অন্তর্ভূক্ত।
এর মাধ্যমে সরাসরি ওয়েবসাইট সার্চ ইঞ্জিন এর শুরুর পেজ এ দেখানো হয়ে থাকে। Google, Yahoo বা Bing ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং করা হয়ে থাকে। সহজেই আপনি মার্কেটপ্লেস অথবা যে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য এই সার্ভিসটি দিতে পারেন।
শেষ কথা
বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার খুবই আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয়। যার চাহিদা প্রতিনিয়ত ঊর্ধ্বমুখী। আধুনিক ব্যবসার প্রচার ও প্রসারে এর অস্তিত্ব অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। সুতরাং ভবিষ্যতে ডিজিটাল মার্কেটিং আরও ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পাবে এটা কোন প্রকার সন্দেহ ছাড়াই বলা যায়।
প্রযুক্তি নিয়ে নিত্য নতুন লেখা পড়তে ভিজিট করুন We Tech Bangla। ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে চান? বাংলাদেশের জনপ্রিয় অনলাইন শিক্ষা প্লাটফর্ম Ghoori Learning এর সাথে Basic Digital Marketing Course টি সম্পন্ন করুন। যা আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ারকে আরো উন্নত, সমৃদ্ধ ও সফল করে তুলবে।
Discussion about this post