ডেভিড কপারফিল্ড গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর : আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সমকালীন বাংলা কথাসাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ নাম। তাঁর জন্ম ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে গাইবান্ধা জেলায়। ‘চিলেকোঠার সেপাই’ ও ‘খোয়াবনামা’ উপন্যাস এবং ‘অন্যঘরে অন্যস্বর’, ‘দুধভাতে উৎপাত’, ‘দোজখের ওম’ প্রভৃতি তাঁর ছোটোগল্প-গ্রন্থ। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ দেশে-বিদেশে নানা গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার ও একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ডেভিড কপারফিল্ড গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর
বর্ণনামূলক প্রশ্ন—১: নিচের ক ও খ প্রশ্ন দুটির উত্তর দাও:
ক. ডেভিড কপারফিল্ডের জীবনের প্রথম ধাক্কা কী ছিল?
খ. তার সৎ বাবা ও সৎ মায়ের চরিত্রের মধ্যে কী ধরনের মিল দেখা যায়?
১ নম্বর বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তর
ক. ডেভিড কপারফিল্ডের জীবনে প্রথম বড় ধাক্কা আসে তার মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে হওয়ার পর। মাত্র ছয় মাস বয়সে পিতাকে হারানোর পর, ডেভিড এবং তার মা শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করছিল। তারা একে অপরের সঙ্গে সুখী ছিল, এবং বাড়ির কাজের মেয়ে পেগোটি ছিল তাদের সঙ্গী। কিন্তু, আট বছর বয়সে, যখন ডেভিডের মা দ্বিতীয় বিয়ে করেন, তখন তার জীবনে পরিবর্তন আসে। ডেভিডের মা মার্ডস্টোন সাহেবের সঙ্গে বিয়ে করেন। মার্ডস্টোন ছিলেন একজন শক্তিশালী শারীরিক গঠনের ব্যক্তি, যার গোঁফ, ভুরু এবং জুলফি ছিল বড় এবং শক্ত।
প্রথম থেকেই ডেভিড অনুভব করেন যে মার্ডস্টোন তার জন্য এক অচেনা এবং অস্বস্তিকর ব্যক্তি। তার উপস্থিতি ডেভিডের জন্য জীবনের প্রথম বড় ধাক্কা হয়ে ওঠে। মার্ডস্টোনের অত্যাচার এবং কঠোর মনোভাব তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। এরপর তার সৎ মা, মার্ডস্টোনের বোনও তাদের বাড়িতে আসেন, যিনি ছিলেন অত্যন্ত নিষ্ঠুর এবং কঠোর প্রকৃতির। এই দুই কঠোর ব্যক্তি ডেভিডের জীবনে অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি করে।
এমন পরিস্থিতিতে, ডেভিডের সুখী এবং শান্তিপূর্ণ জীবনে যে পরিবর্তন আসে, তা তার জীবনের প্রথম বড় ধাক্কা হিসেবে চিহ্নিত হয়। তার মা যখন নতুন স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির সাথে জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন, তখন ডেভিড তার মায়ের ভালোবাসা ও স্নেহের অভাব অনুভব করতে শুরু করে। এভাবে, ডেভিডের জীবনে প্রথম বড় ধাক্কা আসে, যখন সে বুঝতে পারে যে তার নিরাপদ ও সুখী জীবন ধীরে ধীরে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।
খ. ডেভিডের সৎ বাবা মার্ডস্টোন এবং তার সৎ মা, মার্ডস্টোনের বোন, উভয়ের চরিত্রের মধ্যে কিছু মৌলিক মিল ছিল। প্রথমত, তারা দুজনেই অত্যন্ত কঠোর, নিষ্ঠুর এবং স্বার্থপর ছিলেন। মার্ডস্টোন সাহেব শারীরিকভাবে বিশালকায়, তার গোঁফ, ভুরু এবং জুলফি ছিল অত্যন্ত বড় এবং শক্ত, যা তার শক্তিশালী এবং শাসনমূলক চরিত্রের প্রতীক ছিল। তিনি একজন অত্যন্ত নির্মম ব্যক্তি ছিলেন এবং তার আচরণ ডেভিডের প্রতি ছিল প্রায় সবসময়ই শাসনমূলক এবং শত্রুতা পূর্ণ।
তার সৎ মা, মার্ডস্টোনের বোন, ছিলেনও একই ধরনের নিষ্ঠুর এবং কঠোর প্রকৃতির। তিনি ডেভিডের প্রতি কোনো ধরনের সহানুভূতি বা ভালোবাসা প্রদর্শন করতেন না, বরং তার প্রতি দমনমূলক মনোভাব ছিল। দুজনেই ডেভিডকে তার ব্যক্তিগত অনুভূতি বা ইচ্ছার প্রতি কোনো ধরনের সম্মান দেখাতেন না, বরং তাকে এক ধরনের শাসনাধীন হিসেবে দেখতেন।
এছাড়া, তারা দুজনেই নিজেদের স্বার্থে ডেভিডের মায়ের কাছ থেকে শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইতেন, যেন তাদের কর্তৃত্ব এবং ক্ষমতা বজায় থাকে। তারা নিজেদের সুবিধার জন্য ডেভিডের জীবনকে কষ্টদায়ক করে তুলেছিল এবং তার জন্য একটি অত্যন্ত কঠোর পরিবেশ তৈরি করেছিল। তাদের নিষ্ঠুর মনোভাব এবং শাসনমূলক আচরণ ডেভিডের জীবনে একটি অসহনীয় এবং দুঃখজনক পরিস্থিতি তৈরি করে।
তাহলে, ডেভিডের সৎ বাবা ও সৎ মায়ের চরিত্রের মধ্যে যে মিল দেখা যায় তা হলো তাদের নির্মমতা, শাসনমূলক মনোভাব এবং স্বার্থপরতা। তারা দুজনেই ডেভিডকে ভালোবাসা ও সহানুভূতির পরিবর্তে কঠোরতা এবং নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখেছিল।
বর্ণনামূলক প্রশ্ন—২: নিচের ক ও খ প্রশ্ন দুটির উত্তর দাও:
ক. মার্ডস্টোন সাহেবের কঠোর আচরণের কারণে ডেভিডের কী সমস্যা তৈরি হয়েছিল?
খ. মা ও পেগোটির সঙ্গে ডেভিডের সম্পর্ক কেমন ছিল? আলোনা করো।
২ নম্বর বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তর
ক. মার্ডস্টোন সাহেবের কঠোর আচরণের কারণে ডেভিডের জীবনে অনেক ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছিল। মার্ডস্টোনের উপস্থিতি এবং তার শাসনমূলক মনোভাব ডেভিডের মানসিক এবং শারীরিক অবস্থা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। প্রথমত, মার্ডস্টোন ছিল একজন অত্যন্ত শাসক প্রকৃতির ব্যক্তি, যিনি ডেভিডকে সবসময় নিয়ন্ত্রণ করতে চাইতেন। তার প্রভাবের ফলে ডেভিডের জীবনে প্রথমবারের মতো ভয় এবং অনিশ্চয়তা ঢুকে পড়ে। মার্ডস্টোনের নিষ্ঠুরতা এবং অযথা দোষারোপের কারণে ডেভিডের আত্মবিশ্বাস নষ্ট হতে শুরু করে এবং তার নিজের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল।
এছাড়া, মার্ডস্টোনের অত্যাচারের কারণে ডেভিডের মানসিক অবস্থাও অবনতির দিকে এগোতে থাকে। তিনি একাকীত্ব এবং নিঃসঙ্গতার অনুভূতিতে ভুগতে থাকেন। মার্ডস্টোন তার প্রতি সবসময় অযথা রাগ এবং তিরস্কার করতেন, যা ডেভিডের শৈশবকে কঠিন করে তুলেছিল। শাসন আর ভয়ংকর আচরণের মধ্যে ডেভিড তার মায়ের স্নেহ এবং সহানুভূতি থেকে দূরে সরে যেত, যার ফলে তার দুঃখ আরও বাড়ত।
মার্ডস্টোনের আসা, ডেভিডের মায়ের অদ্ভুত নির্লিপ্ততা এবং তার কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি একত্রিত হয়ে ডেভিডের জীবনকে এক দুঃখময় অবস্থায় পরিণত করে। এটি তার মনোবল ভেঙে দিয়ে, তাকে একটি নিঃস্ব, ভয়ানক এবং দুঃখপূর্ণ পরিবেশে আটকে রাখে।
খ. ডেভিডের মা এবং পেগোটি তার জীবনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ নারী চরিত্র ছিলেন, এবং তাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল খুবই গভীর এবং সহানুভূতিশীল। ডেভিডের মা ছিলেন একজন আদর্শ মা, যিনি সবসময় তার সন্তানের প্রতি দয়া এবং ভালোবাসা প্রদর্শন করতেন। যদিও তার মা দ্বিতীয় বিয়ে করার পর মার্ডস্টোনের কঠোর শাসন এবং নির্লিপ্ততা দেখতে শুরু করেন, তারপরেও ডেভিডের মা তার সন্তানের প্রতি নিজের ভালোবাসা অক্ষুন্ন রেখেছিলেন। তবে, মার্ডস্টোনের প্রভাবের কারণে ডেভিড তার মায়ের কাছে আগের মতো নিরাপত্তা এবং ভালোবাসা অনুভব করতে পারছিল না।
পেগোটি ছিল ডেভিডের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। তিনি ছিলেন বাড়ির কাজের মেয়ে, কিন্তু তার সঙ্গে ডেভিডের সম্পর্ক ছিল একদম বন্ধুত্বপূর্ণ এবং স্নেহপূর্ণ। পেগোটি ছিল একজন ভালো মানুষ, যার মনে ছিল অগাধ ভালোবাসা এবং সহানুভূতি। পেগোটি ডেভিডের কষ্ট এবং দুঃখ বুঝতে পারতেন এবং তাকে সান্ত¡না দিতেন। যদিও পেগোটি নিজেও মার্ডস্টোনের অত্যাচারের শিকার ছিল, তবুও তিনি ডেভিডের জন্য তার সর্বোচ্চ সহায়তা ও ভালোবাসা প্রদর্শন করতেন।
তাদের সম্পর্ক ছিল একে অপরকে বোঝার এবং সহানুভূতি প্রদানের মতো। পেগোটি ডেভিডের জন্য একজন প্রকৃত বন্ধু, যিনি সবসময় তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতেন। মা এবং পেগোটির সঙ্গে ডেভিডের সম্পর্ক ছিল সেই সময়ের প্রতিকূল পরিবেশেও একমাত্র আশ্রয়স্থল, যেখানে সে শান্তি এবং ভালোবাসা খুঁজে পেত।
আরও দেখো—অষ্টম শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের আনন্দপাঠ বই থেকে ডেভিড কপারফিল্ড গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য ৩টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখানে দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও বাংলা বইয়ের গল্প-কবিতার সৃজনশীল, জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমূলক এবং বহুনির্বাচনি সমাধানের জন্য উপরের লিংকটি অনুসরণ করো।
Discussion about this post