একটি ওয়েবসাইট আপনার অনেকদিনের স্বপ্ন ও আশা-আকাঙ্খার প্রতীক। এটা শুধুমাত্র আপনার ব্যক্তিগতই নয়, বরং প্রাতিষ্ঠানিক পরিচিতিরও একটি মাইলফলক। তাই ডোমেইন হোস্টিং কেনার ক্ষেত্রে আপনার একটিমাত্র ভুল সিদ্ধান্ত হতে পারে আজীবনের সর্বনাসের কারণ।
বর্তমানে নামে বেনামে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে এবং প্রতিনিয়তই উঠছে। এসব ডোমেইন এবং হোস্টিং প্রোভাইডাররা তাদের সার্ভিসের মান ভালো করার তুলনায় বেশি মন দিচ্ছে কাস্টমার বৃদ্ধিতে। ফলে ডোমেইন এবং হোস্টিং এর মূল দাম এরা অনেকাংশে কমিয়ে দিয়ে বাজারে ছাড়ছে।
►► আরো দেখুন : ওয়াইফাই নাকি মোবাইল ডেটা, কোনটি বেশি ফাস্ট?
এরফলে যারা এই বিষয়ে খুব বেশি জানে না বা একেবারেই নতুন, তারা এই কোম্পানিগুলোর এসব লোভনীয় ফাঁদে পা দিচ্ছে। ফলাফল হিসেবে তৈরির দুই তিন মাসের মধ্যেই তাদের ওয়েবসাইট ব্লক হয়ে যাচ্ছে, অথবা ডোমেইন ব্লক হয়ে যাচ্ছে।
শুধু তাই নয়, হুট করে গজিয়ে ওঠা এসব কোম্পানীগুলো হুট করেই উধাও হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে, আপনি যদি তাদের থেকে সার্ভিস নেন, তাহলে পরবর্তীতে তাদের থেকে কোন প্রকার সাহায্যই আপনি পাবেন না। যেহেতু ডোমেইন হোস্টিং এর নবায়ন একটি বাৎসরিক প্রক্রিয়া। তাই আপনি যতদিন ওয়েবসাইট চালাবেন, ততদিনই আপনার প্রোভাইডারের সাথে আপনার যোগাযোগ থাকতে হবে।
ডোমেইন হোস্টিং কেনার আগে যা করবেন
আজ কোর্সটিকায় আমরা ডোমেইন ও হোস্টিং নির্বাচনের পূর্বে বিবেচ্য বিষয়গুলো আলোচনা করবো। যেগুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার পরবর্তী মূল্যবান পদক্ষেপটি গ্রহণ করতে পারেন। আবারো বলছি, ডোমেইন হোস্টিং কেনার ক্ষেত্রে একটি ভুল সিদ্ধান্ত আপনার ওয়েবসাইটের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা ডেকে আনবে।
১. কম দামের হোস্টিং এর ধারে কাছে যাবেন না
আপনার হয়তো বাজেট কম। বেশি দাম দিয়ে হোস্টিং কেনার সামর্থ্য এই মুহুর্তে নেই। কিন্তু তাই বলে বেনামী কোন কোম্পানি থেকে অল্প দামে হোস্টিং কিনবেন না। এমন অনেক কোম্পানি আছে, যারা মাত্র ৫০০ টাকায় আপনাকে ১০ জিবি হোস্টিং দেবে এবং সাথে থাকবে আরো অনেক ফিচার।
ভুলেও এ সব কোম্পনির প্ররোচণায় পা দেবেন না। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, “যত গুড় তত মিষ্টি”। সুতরাং কম দামের হোস্টিং এ সাপোর্ট কম পাবেন, বেশি দামের ক্ষেত্রে অবশ্যই বেশি সাপোর্ট পাবেন এটাই স্বাভাবিক। কিছু টাকা বাঁচানোর জন্য এমন মানের হোস্টিং নেওয়া উচিত হবে না যেটা আপনাকে সারা বছর ভুগাবে। তাই যত্রতত্র হোস্টিং কেনা থেকে বিরত থাকুন।
২. সিপ্যানেলের স্পেস ও ব্যান্ডউইথ দেখে নিন
যখন হোস্টিং কিনবেন, তখন অবশ্যই আপনার সার্ভারের স্পেস ও ব্যান্ডউইথ বুঝে নিন। সিপ্যানেলে ঢুকে চেক করে দেখুন আসলেই কি আপনাকে আপনার কথামতন স্পেস ও ব্যান্ডউইথ দিয়েছে কিনা। শুধু তাই নয়, ওয়েবসাইট সেটআপ দেয়ার পরেও মাঝে মাঝে আপনার হোস্টিং চেক করে দেখুন, সবকিছু ঠিক আছে কিনা।
৩. কাস্টমার সাপোর্ট
কোন কোম্পানির থেকে হোস্টিং নেয়ার আগে অবশ্যই তাদের সার্ভিস ভালো করে পর্যালোচনা করুন। কাস্টোমারের প্রতি তাদের রেসপন্স কেমন, তাদের সাপোর্টে ফোন, মেইল বা লাইভে চ্যাট করে দেখুন তারা লাইভ সাপোর্ট কেমন দেয়।
আপনার সার্ভার যদি কখনো ডাউন হয় আর যদি তা জানাতে এবং উত্তর পেতে কয়েক দিন লেগে যায়, তাহলে লক্ষ ভিজিটর হারাতে পারেন। আর যদি আপনি রিসেলার ক্লাইন্ট হয়ে থাকেন, তবে তো মহা বিপদে পড়বেন।
আপনি আপনার ক্লাইন্টকে উত্তর দেয়ার মতো কিছুই পাবেন না। তাই তাদের সাথে আপনার যোগাযোগের বিষয়টি খুব ভালোভাবে পরিস্কার হয়ে নিন।
৪. ইমেইল ও ডোমেইন ফিচার
হোস্টিং এর প্যাকেজ বা প্লান অনুযায়ী তার ফিচার বা সুবিধাগুলো নির্ধারিত হয়ে থাকে। তাই, হোস্টিং কেনার আগে ওই নির্দিষ্ট প্যাকেজে আপনি কয়টি ইমেইল সেটআপ করতে পারবেন এবং কয়টি ডোমেইন/সাব-ডোমেইন ব্যবহার করতে পারবেন তা অবশ্যই জেনে নেবেন।
আপনার আজ হয়তো একটি ওয়েব সাইট দরকার হলো, আগামীকাল আরেকটি লাগতেই পারে। আর তাই যে সব প্ল্যান একটি মাত্র ডোমেইন হোস্ট করতে দেয় সেই প্ল্যান না কেনাই ভাল।
►► আরো দেখুন: পছন্দের ডোমেইন না পেয়ে হতাশ? এই লেখাটি পড়ুন
তবে আপনি যদি নিশ্চিত থাকেন যে, আপনার কেবলমাত্র একটি ওয়েবসাইটই দরকার হবে, তাহলে সিংগেল ডোমেইন সেটআপ করতে পারবেন, এমন হোস্টিং কেনায় কোন সমস্যা নেই।
৫. সম্পূর্ণ কন্ট্রোল প্যানেল
একটি ওয়েবসাইট তৈরির জন্য আপনাকে আপনার ডোমেইন এবং হোস্টিং প্যানেলের সম্পূর্ণ একসেস রাখতে হবে। এগুলো ছাড়া কখনোই আপনি আপনার ওয়েবসাইটের পূর্ণাঙ্গ মালিকানা দাবী করতে পারবেন না। তাই ব্যবহারবিধি এবং নিরাপত্তার স্বার্থে অবশ্যই আপনার সকল ডকুমেন্টগুলো বুঝে নিন।
অনেক বেনামী প্রতিষ্ঠান আছে, যারা হোস্টিং এর সিপ্যানেল দিতে অস্বীকার করে। আপনি যদি হোস্টিং কিনে থাকেন, তাহলে কোম্পনি আপনাকে সিপ্যানেলের একসেস দিতে বাধ্য। তাই, কেনার আগে এগুলো আলোচনা করে নিন।
অপরদিকে আপনি হোস্টিং রিসেল করতে চাইলে একাধিক ইউজার বানানো এবং তাদের জন্য রিসোর্স (স্পেস, ব্যান্ডউইথ) বরাদ্দের বেপারটি খুব ভালাে করে জেনে নিন।
৬. আপগ্রেড অথবা ডাউনগ্রেড
হোস্টিং এ প্রতিটি প্যাকেজের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে আরো বেশি ফিচার দরকার পরলে একটা সময় আপনার বর্তমান প্লানটাকে একটু বাড়িয়ে নিতে হতে পারে। আর সেই সময় যদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তারা আপনার হোস্টিং আপগ্রেড করে দিতে পারে সেটা আপনার জন্য অনেক সুবিধাজনক হবে। সাধারণত, ভাল মানের সকল সার্ভার কোম্পানী এরকম পদ্ধতি রেখে থাকে।
ঠিক একইভাবে ডাউনগ্রেড করার ক্ষেত্রেও কোন প্রকার ঝামেলা হবে কি না, তা নিশ্চিত হয়ে ডোমেইন কেনার সিদ্ধান্ত নিন।
৭. থার্ড পার্টি থেকে সার্ভিস নেবেন না
অল্প দামের সুযোগ পেয়ে থার্ড পার্টি থেকে কোন ডোমেইন হোস্টিং সার্ভিস না নেয়ার চেষ্টা করুন। এরা হয়তো আপনাকে কম দামে সার্ভিস ঠিকই দেবে, কিন্তু তার কোয়ালিটি হবে অনেক নিম্নমানের। হয়তো মাসে ৭-৮ দিনই আপনার সাইট ডাউন থাকবে। অথবা একসাথে অনেক ভিজিটর আপনার সাইটে ভিজিট করলে আপনার সাইট ডাউন হয়ে যাবে।
তাই খরচ বেশি হলেও ভালো এবং সুপরিচিত প্রেভাইডারের থেকে আপনার হোস্টিং প্যাকেজি কিনে নিন। এর ফলে আপনার সাইটের নিরাপত্তা এবং অন্যান্য সমস্যাগুলো সম্মুখীন হতে হবে না।
প্রিয় পাঠক, কোর্সটিকায় আপনি কোন বিষয়ে লেখা চান, তা জানিয়ে নিচে কমেন্ট করুন। ওয়েব ডিজাইন, ডেভেলপমেন্টে এবং ফ্রিল্যান্সিং শিখতে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিন।
Discussion about this post