৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ ঢাকাই ছড়া : অনদাশঙ্কর রায় ১৯০৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি প্রচুর পরিমাণে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা ও ছড়া-কবিতা লিখেছেন। তাঁর বিখ্যাত বইয়ের মধ্যে আছে “পথে প্রবাসে”, “বাংলাদেশে”, “উড়কি ধানের মুড়কি” ইত্যাদি। নিচে অন্নদাশঙ্কুর রায়ের একটি ছড়া দেওয়া হলো। এটি তীর “রাঙা মাথায় চিরুনি” ছড়ার বই থেকে নেওয়া হয়েছে।
৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ ঢাকাই ছড়া
ছড়াটি নীরবে পড়ো; পড়ার সময়ে অর্থ বোঝার চেষ্টা করো। এরপর শিক্ষকের নির্দেশ অনুযায়ী সরবে পড়ো।
ঢাকাই ছড়া
অন্নদাশঙ্কর রায়
বলছি শোনো কী ব্যাপার
ডাকল আমায় পদ্মাপার
আধ ঘণ্টা আকাশ পাড়ি
তারই জন্যে কী ঝকমারি।
অবশেষে পেলেম ছাড়া
বিমানেতে ওঠার তাড়া।
পেয়ে গেলেম যেমন চাই
বাতায়নের ধারেই ঠাঁই।
এই কি সেই পদ্মা নদী
সিন্ধুসম যার অবধি?
আঁকাবাঁকা জলের রেখা
পালতোলা নাও যায় যে দেখা।
একটু বাদে এ কোন শহর
ঢাকা নাকি? বেশ তো বহর!
বিমান যখন থামল এসে
পৌঁছে গেলাম ভিন্ন দেশে।
মোদের গরব মোদের আশা
শ্রবণ জুড়ায় বাংলা ভাষা।
বন্ধুজনের দর্শনে
নয়ন জুড়ায় হর্ষণে।
বাংলা লিপি দিকে দিকে
জয়ের চিহ্ন গেছে লিখে।
কোথায় গেল পাকিস্তান
খান সেনা আর টিক্কা খান।
রাজার বাগ আর রায়ের বাজার
বধ্যভূমি ইটের পাঁজার।
মেলে দেখি মানসনে
কারবালা কি কুরুক্ষেত্র।
একেই ঘিরে হবে লিখা
মহান কত আখ্যায়িকা।
নতুন লেখক সম্প্রদায়
নেবেন এসে লেখার দায়।
গুরুত্বপূর্ণ শব্দের অর্থ
অবধি: বিস্তার
আখ্যায়িকা: কাহিনি।
ইটের পাঁজা: ইটের স্তূপ
কারবালা: ইরাকের একটি জায়গার নাম, যেখানে এজিদ বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে ইমাম হোসেন (রা) শহিদ হন।
কুরুক্ষেত্র: মহাভারতে উল্লেখিত একটি জায়গার নাম, যেখানে কুরু ও পাণ্ডবদের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল।
খান সেনা: পাকিস্তানি সৈন্য।
ঝকমারি: ঝামেলা।
টিক্কা খান: মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইন্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক।
দর্শন: দেখা।
বধ্যভূমি: যেখানে মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
বহর: আয়তন।
বাতায়ন: জানালা।
মানসনেত্র: মনের চোখ।
রাজার বাগ: ঢাকা শহরের একটি জায়গা, যেখানে পুলিশের ব্যারাক আছে। পঁচিশে মার্চ রাতে এখানে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধ পুলিশের প্রতিরোধ-যুদ্ধ হয়।
রায়ের বাজার: ঢাকা শহরের একটি জায়গা, মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসররা যেখানে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে ফেলে রাখে।
শ্রবণ: কান।
সম্প্রদায়: গোষ্ঠী।
হর্ষণ: আনন্দ।
ছড়া বুঝি
শিক্ষকের নির্দেশ অনুযায়ী তোমরা দলে ভাগ হও। ‘ঢাকাই ছড়া’ নামের ছড়ায় কী বলা হয়েছে, তা দলে আলোচনা করে বোঝার চেষ্টা করো। কোন দল কেমন বুঝতে পেরেছে, তা যাচাই করার জন্য এক দল অপর দলকে প্রশ্ন করবে। এজন্য আগেই দলে আলোচনা করে কাগজে প্রশ্নগুলো লিখে রাখো। (মূল বইয়ের ১৩৮ নম্বর পৃষ্ঠা)
১. ‘ঢাকাই ছড়া’ ছড়াটির লেখক কে?
উত্তর: ‘ঢাকাই ছড়া’ ছড়াটির লেখক অন্নদাশঙ্কর রায়।
২. লেখক পদ্মাপারে কীভাবে আসছেন?
উত্তর: লেখক বিমানে চড়ে পদ্মাপারে আসছেন।
৩. লেখকের পদ্মাপারে আসতে কত সময় লেগেছিল?
উত্তর: আধঘণ্টা।
৪. লেখক বিমানের কোন জায়গায় আসন পেয়েছিলেন?
উত্তর: জানালার পাশে।
৫. পদ্মা নদী কোন নদী অবধি বিস্তৃত?
উত্তর: সিন্ধু নদী।
৬. পদ্মা নদীতে কী দেখা যায়?
উত্তর: আঁকাবাঁকা জলের রেখা এবং পালতোলা নৌকা দেখা যায়।
৭. লেখকের মতে কোন ভাষা শ্রবণ জুড়ায়?
উত্তর: বাংলা ভাষা।
৮. লেখকের চোখ জুড়িয়ে গেছে কেন?
উত্তর: বন্ধু-বান্ধবের সাক্ষাতে লেখকের চোখ আনন্দে জুড়িয়ে গেছে।
৯. লেখক বিমান থেকে নেমে চারিদিকে কী দেখেন?
উত্তর: বাংলা লিপি বা লেখা।
১০. কী ঘিরে নতুন গল্প-কবিতা লেখা হবে?
উত্তর: যুদ্ধবিদ্ধস্ত ঢাকা শহরকে ঘিরে নতুন গল্প-কবিতা লেখা হবে।
১১. কারা লেখার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন?
উত্তর: নতুন লেখক সম্প্রদায়।
১২. এই ছড়ায় ‘খান সেনা’ বলতে কী বোঝান হয়েছে?
উত্তর: পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে বোঝান হয়েছে।
১৩. টিক্কা খান কে?
উত্তর: টিক্কা খান ছিলেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডার অধিনায়ক।
১৪. ‘ঢাকাই ছড়া’ লেখার মূল বিষয়বস্তু কী?
উত্তর: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিদের বিজয়ের পর কবির কলকাতা থেকে ঢাকায় ভ্রমণ ‘ঢাকাই ছড়া’র প্রধান বিষয়। বিমানের যাত্রাপথ, নদ-নদী, প্রাকৃতিক দৃশ্য, নতুন ঢাকার বর্ণিল রূপ, বাংলা ভাষা ও বন্ধুদের প্রতি আবেগ, একাত্তরের নারকীয় হত্যাকা- ও বাঙালির জয় এবং নতুন সাহিত্য রচনার পটভূমি ছড়াটিতে উপজীব্য হয়ে উঠেছে।
বুঝে লিখি
‘ঢাকাই ছড়া’ নামের ছড়াটি পড়ে কী বুঝতে পারলে তা নিচে লেখো। (মূল বইয়ের ১৩৯ নম্বর পৃষ্ঠা)
‘ঢাকাই ছড়া’টি অন্নদাশঙ্কর রায়ের একটি অসাধারণ সৃষ্টি। আলোচ্য ছড়াটিতে ছড়াকার বলেন- তিনি একদা পদ্মা নদীর দেশে অর্থাৎ বাংলাদেশে নিমন্ত্রিত হন। আকাশ পথে বিমানে করে আসার পথে তিনি জানালার পাশের আসনে বসেন। জানালা থেকে তিনি পদ্মা নদী অবলোকন করেন। সিন্ধু পর্যন্ত বয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা পদ্মা নদী দেখে তিনি মুগ্ধ হন।
আকাশ থেকে তিনি দেখতে পান পদ্মার বুকে বয়ে চলা অসংখ্য পালতোলা নৌকা। এভাবে দেখতে দেখতে তিনি কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢাকা শহরে বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। বাংলাদেশে এসে, বাঙালীদের সাথে কথা বলে তাঁর প্রাণ জুড়ায়। বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে গিয়ে, বাঙালীদের থেকে পাকিস্তানি শাসকদের বাংলা ভাষা কেড়ে নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা তিনি এ ছড়ায় তুলে ধরেন। সেই সাথে তুলে ধরেন পাকিস্তানি শাসক ইয়াহিয়া খান ও টিক্কা খানের অত্যাচারের কাহিনী।
১৯৭১ সালে রাজার বাগ ও রায়েরবাজার বদ্ধভূমিতে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীদের নৃশংস গণহত্যার কাহিনীও তুলে ধরেছেন এই ছড়াতে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে তিনি ‘কারবালা’ ও ‘কুরুক্ষেত্র’ যুদ্ধের সাথে তুলনা করেছেন। ছড়ার একেবারে শেষ প্রান্তে ছড়াকার অন্নদাশঙ্কর রায় নতুন প্রজন্মের কাছে এ সকল ইতিহাস তুলে ধরার দায়ভার অর্পণ করেন নবাগত লেখকদের হাতে।
খেয়াল করি
‘ঢাকাই ছড়া’ পড়ার সময়ে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল করি। (মূল বইয়ের ১৪০ নম্বর পৃষ্ঠা)
১. লাইনের শেষে মিল-শব্দ আছে কি না।
উত্তর: হ্যাঁ, মিল-শব্দ আছে।
২. শব্দের রূপ পরিবর্তিত হয়েছে কি না।
উত্তর: হ্যাঁ, শব্দের রূপ পরিবর্তিত হয়েছে।
৩. তাল দিয়ে পড়া যায় কি না।
উত্তর: হ্যাঁ, তাল দিয়ে পড়া যায়।
১. মিল-শব্দগুলো নিচে লেখো:
ব্যাপার – পদ্মাপার
পাড়ি – ঝকমরি
ছাড়া – তাড়া
চাই – ঠাঁই
নদী – অবধি
রেখা – দেখা
শহর – বহর
এসে – দেশে
আশা – ভাষা
দর্শনে – হর্ষণে
দিকে – লিখে
বাজার – পাঁজার
মানসনেত্র – কুরুক্ষেত্র
২. পরিবর্তিত শব্দগুলো নিচে লেখো। একইসঙ্গে শব্দগুলোর প্রমিত রূপ পাশে দেখাও। একটি করে দেখানো হলো।
কবিতায় ব্যবহৃত শব্দ:
- আমায়
- আধ
- পেলেম
- গেলেম
- নাও
- মোদের
- লিখা
শব্দের প্রমিত রূপ:
- আমাকে
- আধা
- পেলাম
- গেলাম
- নৌকা
- আমাদের
- লেখা
৩. কোথায় কোথায় তাল পড়েছে দাগ দিয়ে দেখাও। প্রথম চার লাইন করে দেখানো হলো। (তাল বোঝার জন্য ছড়াটি পড়ার সময়ে হাতে তালি দিয়ে দিয়ে পড়ো। খেয়াল করো, এখানে প্রতি লাইনে দুইটি করে তাল পাওয়া যাচ্ছে।)
উত্তর: শিক্ষার্থীরা, হাতে তালি দিয়ে দিয়ে নিজেরা করার চেষ্টা করো।
ছড়ার বৈশিষ্ট্য খুঁজি
ছড়ার কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার মাধ্যমে বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝার চেষ্টা করো। (মূল বইয়ের ১৪৩ নম্বর পৃষ্ঠা)
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই ছকভিত্তিক উদ্দীপকটি পিডিএফ উত্তরমালায় দেখো। )
কবিতা ও ছড়ার সম্পর্ক
কবিতার সঙ্গে ছড়ার মিল রয়েছে অনেক জায়গায়। তবে, এই মিলের ভেতরেও কবিতার মধ্যে ছড়াকে আলাদা করে চেনা যায়।
১. কবিতায় মিল-শব্দ থাকে। কোনো কবিতায় লাইনের শেষে মিল-শব্দ নাও থাকতে পারে। তবে ছড়ায় অবশ্যই লাইনের শেষে মিল-শব্দ থাকে।
২. কবিতার মতো ছড়াতেও শব্দরূপের পরিবর্তন হয়।
৩. কবিতা তাল দিয়ে দিয়ে পড়া যায়। এই তাল কখনো ধীর গতিতে পড়ে, কখনো দ্রুত গতিতে পড়ে। আবার কোনো কোনো কবিতায় তাল একেবারেই থাকে না। তবে, ছড়া অবশ্যই তাল দিয়ে পড়া যায়। আর সেই তালও পড়ে খুব ঘন ঘন।
ছড়া কী? ছড়া কাকে বলে?
ছড়া মূলত শিশুদের জন্য বানানো কবিতা। ছড়ার প্রতি জোড়া লাইনের শেষে মিল-শব্দ থাকে এবং দুত তালে পড়া যায়। ছড়ার আয়তন সাধারণত ছোটো হয়। ছড়ার লাইনগুলোও আকারে ছোটো হয়ে থাকে। কবিতার মতো ছড়াও যে কোনো বিষয় নিয়ে রচিত হতে পারে। অনেক সময়ে অকারণ বা অর্থহীন বিষয় নিয়েও আবোল- তাবোল ছড়া লেখা হয়। যাঁরা ছড়া লেখেন তাঁদের বলে ছড়াকার।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির বাংলা সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা, উপরে আমরা তোমাদের বাংলা বইয়ের ৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ ঢাকাই ছড়া শেয়ার করেছি। তোমাদের মূল বইতে যেভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, আমরা ঠিক সেভাবেই উত্তরগুলো তৈরি করেছি। আশা করছি, এই প্রশ্নের উত্তরগুলো তোমাদের জন্য অনেক হেল্পফুল হয়েছে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post