যুগ যুগ ধরে তেঁতুল তার স্বাদের জন্য পরিচিত লাভ করে আসছে। তেঁতুল ফল খেতে মিষ্টি ও টক হওয়ায় এটি সবার পছন্দের একটি ফল। বিশেষ করে মেয়েদের কাছে তেঁতুল খুবই প্রিয় একটি ফল। তেঁতুলের স্বাদ ছাড়াও তেঁতুলের উপকারিতা অনেক। তেঁতুলের মধ্যে রয়েছে এমন কিছু উপাদান যে উপাদানগুলোর আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
স্বাদের জন্য তেঁতুল খেলেও আজকাল মানুষ শুধু স্বাদের জন্য তেঁতুল ফল খায় না। এটি ব্যবহৃত হয় বদহজম, হার্ট, লিভার ও কিডনি এর উপকারিতায়। তাছাড়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কাজেও তেঁতুলের জুড়ি মেলা কঠিন। তাই মাঝে মধ্যে তেঁতুল খেলে এটি অনেক বড় বড় সমস্যা থেকে আপনাকে মুক্তি দেবে।
তেঁতুলের উপকারিতা
তেঁতুলের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তেঁতুল মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যার জন্য শরীরে সহজে কোন রোগ আক্রমণ করতে পারে না। তার পাশাপাশি এটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেমন হার্ট, লিভার ও কিডনি এর মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে সুরক্ষিত রাখে। চলুন ক্রমান্বয়ে তেঁতুল এর সকল উপকারিতা কথা জানবো।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে রোধ সর্দি-কাশির মতো রোগ লেগেই থাকে। তেঁতুল খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হবে। সর্দি-কাশির মতো রোগগুলো সহজে শরীরে জায়গা করে নিতে পারবে না। তেঁতুলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি এর মতো বিভিন্ন উপাদান। যে উপাদানগুলো রোধ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অধিক কার্যকর।
তেঁতুলে থাকা অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদানগুলো শরীরে থাকা জীবাণুগুলোকে দূর করতে সাহায্য করে। যার ফলে শরীর থাকে জীবাণুমুক্ত।
হার্টের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে
তেঁতুল হার্টের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। তেঁতুলে রয়েছে উচ্চ ফাইবার ও ফ্ল্যাভোনয়েড। এটি খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে। খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখলে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এই উপাদানটি ট্রাইগ্লিসারাইড, যা রক্তে থাকা এক ধরনের ফ্যাট, এই উপাদানটি জমতে বাঁধা দেয়। তেঁতুলে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
কিডনি সুস্থ রাখতে তেঁতুলের উপকারিতা
কিডনি সুস্থ রাখতে তেঁতুলের উপকারিতা অনেক। তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা কিডনি ফেলিওর ও কিডনির ক্যান্সার এর মতো সমস্যা রোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়া তেঁতুলে থাকা পটাশিয়াম কিডনি থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। তেঁতুল খাওয়ার ফলে কিডনি থাকবে সুস্থ।
ওজন কমাতে তেঁতুল
ওজন কমানোয় তেঁতুল অনেক কার্যকর। বেশী ওজন হলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। তেঁতুল ওজন কমাতে সহায়ক। তেঁতুলে রয়েছে হাইড্রক্সি সাইট্রিক অ্যাসিড নামক নামক একটি উপাদান। যা শরীরে চর্বি জমা হতে দেয় না। তাছাড়া তেঁতুল শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে। এবং ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়।
লিভার সুরক্ষিত রাখতে তেঁতুলের উপকারিতা
গবেষণায় দেখা গেছে তেঁতুল খাওয়ার ফলে লিভারের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস পায়। এবং তেঁতুলে থাকা প্রোকিয়ানিডিন লিভারের ফ্রি র্যাডিকাল এর বিরুদ্ধে লড়াই করে। এছাড়া তেঁতুলে রয়েছে ভিটামিন ই ও সেলেনিয়াম যা লিভারকে সুরক্ষিত রাখে। তাই লিভারকে সুরক্ষিত রাখতে সুরক্ষিত তেঁতুল খাওয়া উচিত।
হজম শক্তি বাড়ায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
তেঁতুলে রয়েছে উচ্চ পরিমানে ফাইবার। যা আমাদের অন্ত্রের কাজকে সহজ করে দেয়, হজম করতে সাহায্য করে ও গ্যাসের সমস্যা থেকে দেয় মুক্তি। এছাড়া তেঁতুলে রয়েছে ম্যালিক ও টারটারিক অ্যাসিড। যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঔষধ হিসেবে বহুকাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অনেকে ডায়রিয়া জনিত ব্যথা সারাতে তেঁতুল ব্যবহার করেন। যা কার্যকারীও বটে। সহজে হজম শক্তি বাড়াতে চাইলে হজম শক্তি বৃদ্ধির ট্যাবলেট খাওয়ার মাধ্যমেই বাড়াতে হবে।
ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে রাখতে তেঁতুলের উপকারিতা
ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে রাখতে তেঁতুলের উপকারিতা অনেক বেশী। তেঁতুলে উপস্থিত alpha-amylase নামক একটি উপাদান রয়েছে। যে উপাদানটি রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এবং তেঁতুলে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান। যে উপাদানটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। ফলে ডায়াবেটিস থাকে নিয়ন্ত্রণে।
পেপটিক আলসার রোধে সহায়ক
পেপটিক আলসার পেটে ও ক্ষুদ্রান্ত্রে হয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে তেঁতুলের বীজ গুড়ো করে নিয়মিত খেলে এই বীজ পেপটিক আলসার সারিয়ে তোলে বা এই আলসার হতে দেয় না। তেঁতুলে থাকা পলিফেনলিক কম্পাউন্ড এই আলসার হতে বাধা দেয়।
তেঁতুল সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন: তেঁতুলের অপকারিতা বা ক্ষতিকর কোন দিক রয়েছে কি?
উত্তর: কোন কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। তেঁতুলও বেশী খেলে ক্ষতি হতে পারে। বেশী খাওয়া ছাড়াও তেঁতুলের আরও ক্ষতিকর দিক রয়েছে। আশা করি সেই বিষয়ে কোর্সটিকায় খুব শ্রীঘই লেখা প্রকাশিত হবে।
প্রশ্ন: পুরাতন তেঁতুল, পাকা তেঁতুল ও কাচা তেঁতুলের উপকারিতার মধ্যে কি কোন ধরনের পার্থক্য আছে?
উত্তর: তেঁতুল পাকার সাথে সাথে এর মধ্যে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। সেজন্য এর উপকারিতার মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
প্রশ্ন: তেঁতুল কি রক্ত পানি করে দেয়?
উত্তর: এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। তেঁতুল অনেক উপকারী একটি ফল।
শেষ কথা
তেঁতুলের উপকারিতা যেমন অনেক তেমনই তেঁতুল অতিরিক্ত ব্যবহারে ক্ষতির কারণও হয়ে যেতে পারে। তাই ছেলে বা মেয়ে যেই হোক না কেন সবারই উচিত একসাথে অধিক পরিমাণ তেঁতুল না খেয়ে অল্প অল্প করে তেঁতুল খাওয়া। এতে তেঁতুল শরীরে আস্তে আস্তে প্রভাব ফেলে। তাই ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
Discussion about this post