প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে লেবু ব্যবহার সবচেয়ে নিরাপদ ও দুশ্চিন্তামুক্ত। সুদূর অতীত থেকেই নারীদের সৌন্দর্যচর্চায় লেবুর ব্যবহার ব্যবহার হয়ে আসছে। মনোমুগ্ধকর ঘ্রাণ এবং উপকারীতার জন্য এটি সর্বমহলে সমানভাবে সমাদৃত।
রূপচর্চার জন্য লেবু শ্রেষ্ঠতম একটি প্রাকৃতিক উপাদান। লেবুর কার্যকরী এন্টিটক্সিন গুণাবলী ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করে ত্বককে মসৃণ ও কোমল করে তোলে। শুধু তাই নয়, লেবু ভিটামিন সি-তে ভরপুর। ওজন কমানো, রক্তের কোলেস্টেরল কমানো ছাড়াও রক্তস্বল্পতা কমাতে লেবুর অনেক ভূমিকা রয়েছে।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে লেবুর ভূমিকা
১. ভিটামিন: লেবু Vitamin C এর সবচেয়ে বড় উৎস। লেবুতে থাকা ভিটামিন সি ক্যান্সারের সেল গঠন প্রতিরোধ করে স্কার্ভি রোগ থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন সি দেহের ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে এবং রক্তের জমাট বাঁধার ক্ষমতা বাড়ায়।
২. রোগ প্রতিরোধ: লেবুর আ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং আ্যান্টি-ভাইরাল উপাদান দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। রোদে পোড়া ত্বক মেরামতের জন্যও লেবু অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
৩. দাগ দূর করে: স্বাস্থ্যজ্বল ত্বকের জন্য আ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুব দরকারী। লেবুতে থাকা বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কুঞ্চন এবং দাগ দূর করে। লেবুতে থাকা Vitamin C ব্রণ বা আ্যাকনি সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দূর করে। যা আমাদের ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে বিশেষ সহায়ক।
৪. হৃদরোগ প্রতিরোধক: লেবুর খোসার ভেতরের অংশে কুটিন নামের বিশেষ ফ্র্যাভানয়েড উপাদান আছে। যা শিরা এবং রক্তজালিকার প্রাচীরকে যথেষ্ট শক্তিশালী করে তোলে এবং সুরক্ষা দেয়। ফলে স্বভাবতই হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে।
৫. ব্রণ দূর করা: অ্যারোমথেরাপির ক্ষেত্রেও লেবু একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বয়সজনিত মুখের স্পট বা দাগ সারাতে লেবুর রস যথেষ্ট কার্যকরী। লেবুর রস ব্যবহারে মুখের ব্রণও দ্রুত দূর হয়।
৬. রূক্ষ ত্বকের জন্য: হাতের কনুই, হাঁটু, পায়ের গোড়ালির ময়লা দূর করতে লেবু অত্যন্ত কার্যকর। হাত ও পায়ের রূক্ষভাব দূর করতে প্রাচীনকাল থেকে লেবুর রস বা লেবুর খোসার ব্যবহার হয়ে আসছে৷
লেবু ও শশার ফেইসপ্যাক
- সাধারণভাবে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে একটি পাত্রে সমপরিমাণ শশার রস ও লেবুর রস মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরী করে নিন।
- এবার একটি কটন বলের সাহায্যে পুরো মুখে লাগাতে থাকুন।
- মিশ্রণটি মুখে লাগানোর সাথে সাথে যদি জ্বালা করে তবে দ্রুত ধুয়ে ফেলুন।
- লেবু ত্বককে অতিরিক্ত শুষ্ক করে ফেলতে পারে। সেক্ষেত্রে ত্বকের উপযোগী একটি ময়েশ্চারাইজার মুখে লাগিয়ে নিন।
লেবু ও দুধের ফেইসপ্যাক
- একটি বড় লেবুর অর্ধেক অংশ কেটে তার রস বের করে নিন।
- এবার তার সাথে ১০ টেবিল চামচ তরল দুধ ভালো ভাবে মিশিয়ে নিন।
- ধীরে ধীরে পুরো মুখে ম্যাসাজ করুন যতক্ষণ পর্যন্ত পুরো মিশ্রণটা ত্বক না শোষণ করে।
- ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
এই ফেইসপ্যাকের উপকারিতা হলো, লেবু ত্বকের তেল দূর করে আর দুধ ত্বকের ময়েশ্চারাইজার ধরে রাখে। শুধু একটি জিনিস মনে রাখতে হবে। আর তা হলো, এই মিশ্রণটি চোখের চারপাশে সাবধানে লাগাতে হবে।
লেবু ও ডিমের ফেইসপ্যাক
- একটি ডিমের সাদা অংশের সাথে অর্ধেকটা লেবুর রস, এক টেবিল চামচ কমলালেবুর রস ও কুসুম গরম পানি দিয়ে পেস্টের মতো করে মিশিয়ে নিন।
- এই প্রলেপটি আস্তে আস্তে ত্বকে মেখে ২০ মিনিটের মতো রাখুন।
- শুকিয়ে যাবার পর ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
- লেবুর রস ও মধুর ফেইসপ্যাক
- একটি বড় লেবুর অর্ধেক অংশ কেটে তার রস বের করে নিন।
- তাতে ২ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরী করুন।
- মুখে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট।
- ত্বক টেনে ধরলে ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
►► আরো দেখো: ৫ মিনিটে খুশকি দূর করার উপায়
►► আরো দেখো: ত্বকের যত্নে শশার ফেসপ্যাক ব্যবহার
পরিশেষে নিজেকে সুন্দর ও সুস্থ রাখুন। ত্বক পরিচর্যার সাথে সাথে সুষ্ঠু খাদ্যাভাস গড়ে তুলুন। বাহ্যিক সৌন্দর্ষের পাশাপাশি মানসিক উৎকর্ষতা বিকাশেও সচেষ্ট হন। তাহলে পূর্ণাঙ্গ সৌন্দর্য বিকশিত হবে।
Discussion about this post