দশম শ্রেণির শারীরিক শিক্ষা ১ম অধ্যায় প্রশ্নের উত্তর : শারীরিক শিক্ষায় সুস্থজীবন। তাই শারীরিক শিক্ষা সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা অপরিহার্য। আগে সবার ধারণা ছিল শরীর সম্বন্ধীয় শিক্ষাই শারীরিক শিক্ষা। শরীরকে নিয়ে যে শিক্ষা আবর্তিত হয় তাকে শরীরচর্চা বলে। শরীর ভালো না থাকলে মন ভালো থাকে না।
কাজে মন বসে না, তাই দেহ ও মনের সম্পর্ক অতি ঘনিষ্ঠ। ‘সুস্থ দেহে সুন্দর মন’ প্রাচীন এই প্রবাদটি সর্বযুগে, সর্বকালে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমানে শারীরিক উন্নয়ন, মানসিক বিকাশ ও সামাজিক গুণাবলি অর্জনই হলো শারীরিক শিক্ষা। একজন শিক্ষার্থী শারীরিক শিক্ষা লাভ করে সুস্থ দেহে সুন্দর মনের অধিকারী হয়ে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে এটাই সবার প্রত্যাশা।
দশম শ্রেণির শারীরিক শিক্ষা ১ম অধ্যায় প্রশ্নের উত্তর
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ॥ ক ॥ শারীরিক শিক্ষা কাকে বলে?
উত্তর : শারীরিক উন্নয়ন, মানসিক বিকাশ ও সামাজিক গুণাবলি অর্জনই হলো শারীরিক শিক্ষা। অর্থাৎ যে শিক্ষা দেহ ও মনের উন্নতির লক্ষ্যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সুষম উন্নয়ন, মানসিক বিকাশ সাধন, সামাজিক গুণাবলি অর্জন ও খেলাধুলার মাধ্যমে চিত্তবিনোদন করে থাকে, তাকে শারীরিক শিক্ষা বলে।
প্রশ্ন ॥ খ ॥ জীবতাত্ত্বিক ভিত্তি বলতে কী বুঝায়?
উত্তর : জীববিজ্ঞান হলো জীবন এবং জীবিত প্রাণীর বিজ্ঞান। জীববিজ্ঞানের তথ্যানুসারে এই পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি হয়েছে অন্যান্য প্রাণীর মতোই বিবর্তনের ফলে। বিবর্তনবাদের আলোকে প্রাণীর জৈবিক ভিত্তি, দৈহিক গঠন কাঠামো, শারীরিক সক্ষমতা, নারী-পুরুষের পার্থক্য, শারীরিক উন্নতি ইত্যাদি বিষয়গুলো শারীরিক শিক্ষার জীববৈজ্ঞানিক ভিত্তির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ সার্বিকভাবে শারীরিক জ্ঞান
যথা : শারীরিক গঠন, শারীরিক ক্ষমতা, শারীরিক পার্থক্য, শারীরিক সুস্থতা ইত্যাদি হচ্ছে শারীরিক শিক্ষার জীবতাত্ত্বিক ভিত্তি।
প্রশ্ন ॥ গ ॥ ইন্ট্রামুরাল স্পোর্টস কাকে বলে?
উত্তর : ইন্ট্রামুরাল একটি ল্যাটিন শব্দ যা ওহঃৎধ এবং গঁৎধষরং- এর সমন্বয়ে গঠিত। ওহঃৎধসঁৎধষ শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দেয়ালের ভিতরে। আভিধানিক অর্থ থেকেই স্পষ্টত বোঝা যায় যে, যখন একটি প্রতিষ্ঠানের চার দেয়ালের মধ্যে বা শুধু নিজেদের মধ্যে কোনো প্রতিযোগিতা বা কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় তাকে ইন্ট্রামুরাল স্পোর্টস বলে।
প্রশ্ন ॥ ঘ ॥ জীববলবিদ্যার নীতি কাকে বলে?
উত্তর : খেলাধুলায় অংশগ্রহণকারী শরীরের ওপর উপযুক্ত বল ও তার প্রভাব সম্পর্কিত যাবতীয় নীতিই হলো জীববলবিদ্যার নীতি।
রচনামূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ॥ ক ॥ ‘সুস্থ দেহে সুন্দর মন’ উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : শারীরিক উন্নয়ন, মানসিক বিকাশ ও সামাজিক গুণাবলি অর্জনে যে শিক্ষা তাই শারীরিক শিক্ষা। সুস্থ জীবনের জন্য শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
‘সুস্থ দেহ সুন্দর মন’ এটি একটি প্রাচীন প্রবাদ। অর্থাৎ সুস্থ দেহের ওপরই সুন্দর মন অনেকাংশে নির্ভর করে। সাধারণত শরীর ভালো না থাকলে মন ভালো থাকে না। ফলে কাজেও মন বসে না। আর সুস্থ দেহের জন্য প্রয়োজন শারীরিক শিক্ষার। শারীরিক শিক্ষার মাধ্যমেই একজন ব্যক্তি তার দেহের সুষম উন্নয়ন ঘটাতে পারে।
শারীরিক শিক্ষা ব্যায়ামের মাধ্যমে ব্যক্তির প্রত্যেকটি অঙ্গকে যেমন : মাংসপেশি, হাড়, শিরা, ধমনি ইত্যাদিকে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে সক্ষম করে তোলে। ফলে দেহ সুস্থ থাকে এবং যেকোনো কাজ করতে যেকোনো মানুষ মানসিকভাবে আগ্রহ পায় অর্থাৎ মনও ভালো থাকে।
প্রশ্ন ॥ খ ॥ শারীরিক শিক্ষার নীতি কত প্রকার ও কী কী?
উত্তর : সুস্থ জীবনযাপনের জন্য অন্যতম অপরিহার্য হলো শারীরিক শিক্ষা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ। এটি শারীরিক উন্নয়ন, মানসিক বিকাশ ও সামাজিক গুণাবলি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
শারীরিক শিক্ষার নীতিসমূহকে প্রধানত ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো :
১. জীববৈজ্ঞানিক নীতি
২. মনোবৈজ্ঞানিক নীতি
৩. সমাজবৈজ্ঞানিক নীতি
৪. জীববলবিদ্যার নীতি
৫. দার্শনিক নীতি
নিচে উল্লিখিত নীতিগুলো ব্যাখ্যা করা হলো :
জীববৈজ্ঞানিক নীতি : এ নীতি মূলত প্রাণীর জৈবিক দিকসমূহ নিয়ে গঠিত। প্রাণের জৈবিক ভিত্তি মানবদেহের সক্ষমতা, কার্যকারিতা, গঠন, নারী ও পুরুষের মধ্যে পার্থক্য প্রভৃতি এ নীতিটির অন্যতম আলোচ্য বিষয়।
মনোবৈজ্ঞানিক নীতি : মনোবিজ্ঞান হলো ব্যক্তির ব্যবহারের বিজ্ঞান। মনোবিজ্ঞান হতে গৃহীত নীতি হলো খেলাধুলা সম্পর্কিত শিশুর ইচ্ছা, আগ্রহ, জ্ঞান, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি।
সমাজবৈজ্ঞানিক নীতি : মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্র থেকে গৃহীত নীতি হলোÑ সমাজবৈজ্ঞানিক নীতি, সমাজের অসংগতি, সামাজিক সম্পর্কের প্রতিফলন, সাংস্কৃতিক দিকের বিকাশ প্রভৃতি।
জীববলবিদ্যার নীতি : জীববলবিদ্যা মূলত খেলাধুলায় অংশগ্রহণকালীন শরীরের ওপর উপযুক্ত বল ও তার প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে। এক্ষেত্রে মানব দেহের বল, গতি, ভারসাম্যের পরীক্ষণ প্রভৃতি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ।
দার্শনিক নীতি : শারীরিক শিক্ষায় এ নীতিটি দর্শনের বিভিন্ন শাখা যেমন : আদর্শবাদ, প্রকৃতিবাদ, বাস্তববাদ ও প্রয়োগবাদ নিয়ে গঠিত। পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়া, ব্যক্তিসত্তার সর্বাঙ্গীণ বিকাশ প্রভৃতিই এ নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন ॥ গ ॥ শারীরিক শিক্ষার উদ্দেশ্য বর্ণনা কর।
উত্তর : প্রতিটি বিষয়েরই কোনো না কোনো উদ্দেশ্য থাকে। শারীরিক শিক্ষাও কিছু উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত। বিভিন্ন চিন্তাবিদদের আলোকে শারীরিক শিক্ষার উদ্দেশ্যকে চারভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো :
শারীরিক সুস্থতা অর্জনের উদ্দেশ্য : শারীরিক শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো শারীরিক সুস্থতা অর্জন। এর আওতায় দেহ ও মনের সুষম উন্নয়ন, খেলাধুলার নিয়মকানুন, সমন্বয়, সহিষ্ণুতা প্রভৃতি অন্যতম বিবেচ্য বিষয়।
মানসিক বিকাশ সাধনের উদ্দেশ্য : শারীরিক শিক্ষায় এ উদ্দেশ্যের আওতায় নৈতিকতা, চিন্তাধারার বিকাশ, আত্মত্যাগী হওয়া প্রভৃতি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
চারিত্রিক গুণাবলি অর্জনের উদ্দেশ্য : শিক্ষার্থীদের চারিত্রিক বিভিন্ন দিক এর আওতাভুক্ত। আনুগত্যবোধ সৃষ্টি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত, আত্মসংযমী প্রভৃতির মাধ্যমে শারীরিক শিক্ষার চারিত্রিক গুণাবলির উদ্দেশ্য অর্জিত হয়।
সামাজিক গুণাবলি অর্জনের উদ্দেশ্য : সমাজে চলাচলের ক্ষেত্রে ব্যক্তির বিভিন্ন ইতিবাচক দিক শারীরিক শিক্ষার এ উদ্দেশ্যের আওতায় অর্জন সম্ভব। সবার সাথে আচরণ, অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ, নেতৃত্বদানে সক্ষমতা প্রভৃতি বিষয় এ উদ্দেশ্যের আওতাভুক্ত। পরিশেষে উপরিউক্ত উদ্দেশ্যের আলোকে শারীরিক শিক্ষা একজন মানুষকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।
প্রশ্ন ॥ ঘ ॥ শারীরিক শিক্ষার কর্মসূচি বর্ণনা কর।
উত্তর : শারীরিক শিক্ষা বিভিন্ন স্থানে বা বিভিন্ন জায়গায় হতে পারে। যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলাধুলা, ব্যায়াম, স্বাস্থ্যসম্পর্কিত কোনো কার্যকলাপ পরিলক্ষিত হয় তাই শারীরিক শিক্ষার কর্মসূচি। শারীরিক শিক্ষার কর্মসূচিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নিচে এগুলো সম্পর্কে বর্ণনা দেওয়া হলো :
অত্যাবশ্যকীয় কর্মসূচি : অত্যাবশ্যকীয় কর্মসূচি হলো যেগুলো সরকারি নির্দেশ মোতাবেক হয়ে থাকে। এগুলো হলো- শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের ক্লাস, প্রতিযোগিতা, সমাবেশ ও স্থানীয় নির্দেশনা প্রভৃতি এ কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত বিষয়।
অন্তঃক্রীড়াসূচি : যখন একটি প্রতিষ্ঠানের চার দেয়ালের ভিতর বা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতার আকারে খেলাধুলার আয়োজন করা হয় তাই অন্তঃক্রীড়াসূচি। যেমন : বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, স্কুলে বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্রদের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন প্রভৃতি এর আওতাভুক্ত।
আন্তঃক্রীড়াসূচি : একটি প্রতিষ্ঠানের দেয়ালের বাইরে যখন কোনো খেলাধুলার আয়োজন করা হয় তাকে আন্তঃক্রীড়াসূচি বলে। এটি এক স্কুলের সাথে অন্য স্কুলের হতে পারে আবার অনেকগুলো স্কুল মিলিয়েও এ ধরনের সূচির আয়োজন করা যেতে পারে। সৌহার্দপূর্ণ প্রতিযোগিতার মনোভাব, উৎকর্ষতা প্রভৃতি বৃদ্ধি করতে আন্তঃক্রীড়াসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
►► আরো দেখো: নবম-দশম শ্রেণির শারীরিক শিক্ষা (সবগুলো অধ্যায়)
নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, উপরে দেয়া ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে দশম শ্রেণির শারীরিক শিক্ষা ১ম অধ্যায় প্রশ্নের উত্তর PDF ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post