এলার্জি মারাত্মক একটি সমস্যা যা মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। এলার্জিতে আক্রান্ত হয়ে এলার্জির ঔষধের নাম খুঁজে খুঁজে আপনি হয়তো হয়রান। কিন্তু আপনি জানেন কি, ঔষধের পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপায়েও আপনি এলার্জিকে দূর করতে পারেন?
আজ কোর্সটিকায় আমরা এলার্জির ঔষধের নাম এবং প্রাকৃতিক সব উপায় আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। আপনি যদি এলার্জিতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে এই পরামর্শগুলো আপনার দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করুন।
এলার্জি কমানোর কিছু খাবার
১. Antioxidant
এন্টিঅক্সিডেন্ট মানুষের শরীরে ও প্রকৃতিতে বিদ্যমান রোগ প্রতিরোধের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। শরীরে ও প্রকৃতিতে তৈরি হওয়া Antioxidant গুলোর মধ্যে Vitamin C অন্যতম যা শক্তিশালী এলার্জি প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক উভয় গুণাগুণের জন্য প্রসিদ্ধ।
তাই দিনে ৩ বার ১০০০ থেকে ২০০০ মিলি গ্রাম করে Vitamin C গ্রহণ করুন। আপনার হাতের কাছেই পাবেন Vitamin C এর দারুণ সব উৎস। কাঁচা মরিচ, বাঁধাকপি, আলু, লেবু, বাতাবী লেবু, কমলা লেবু, এবং টমেটো থেকে আপনি Vitamin C পেতে পারেন। এছাড়াও আঙ্গুর, পেয়ারা, কামরাঙ্গাসহ বিভিন্ন টক জাতীয় ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। যা আপনার এলার্জি প্রতিরোধের অন্যতম উপায়।
২. Vitamin A এবং Zinc
মানুষের পাকস্থলীসহ অন্যান্য প্রদাহজনিত স্থানের প্রদাহ কমাতে Vitamin A এবং Zinc বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রকৃতির বিভিন্ন খাবারের মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে Vitamin A। যেমন: লেটুস পাতা, পালংশাক, টমেটো, মটরশুটি, গাজর ও কুমড়াতে যথেষ্ট পরিমাণে Vitamin A রয়েছে। পাশাপাশি মিষ্টিআলু, ধনিয়া পাতা, পীচ, কলা, পেঁপে, তরমুজ ও ভুট্টা প্রভৃতিতে Vitamin A রয়েছে ব্যপক হারে
অপরদিকে Zinc এর সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী একটি উৎস হলো ওয়স্টার মাশরুম যা এখন আমাদের দেশের সর্বত্রই পাওয়া যায়। অন্যান্য যেসব খাদ্যে Zinc বিদ্যমান সেগুলো হল: মিষ্টি কুমড়ার বীজ, শীম বীজ, বাদাম ও সূর্যমুখীর বীজ ইত্যাদি।
৩. Carotenoid
বিভিন্ন প্রকার রঙীন শাক-সবজি যেমন: গাজর, মিষ্টি কুমড়া, হলুদ, পালংশাক, ডাটা শাক ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে Carotenoid পাওয়া যায়। Carotenoid হচ্ছে উদ্ভিদের মধ্যে থাকা রঞ্জক বা রঙিন পদার্থ। এতে রয়েছে ক্যারোটিন, বিটা ক্যারোটিন, লুটিন, লাইকোপেন, ক্রিপটোজেন্থিন এবং জিজেন্থিন যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। এগুলো এলার্জির জন্য প্রাকৃতিক প্রতিষেধক হিসেবে দারুণ কাজ করে।
৪. ঋষি মাশরুম
এলার্জিজনিত চুলকানি কমাতে ঋষি মাশরুমের এক অসাধারণ ক্ষমতা আছে। এটি হিস্টামিন তৈরিতে বাধা প্রদান করে এবং শারীরিক নান প্রদাহ হৃাস করে।
এছাড়াও ঋষি মাশরুমের অন্যতম প্রধান কাজ হল দেহকে টক্সিনমুক্ত করা। এটি রক্ত ও দেহকোষকে টক্সিনমুক্ত করে, রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড এর মাত্রা কমিয়ে দেহের স্বাভাবিক ও প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তপ্রবাহ নিশ্চিত করে। যার ফলে মানুষের হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি ৯৫% পর্যন্ত কমে যায়।
এলার্জি দূরকরণের ঘরোয়া সব উপায়
এলার্জির কারণে অনেকেই তীব্র অস্বস্তিতে ভোগেন। আর চুলকানির যন্ত্রণা তো আছেই। যন্ত্রণাদায়ক এই এলার্জি সমস্যা যে কতটা তীব্র, তা শুধু আক্রান্তরাই জানেন। এলার্জির কারণে আমাদের খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হয় অনেক প্রিয় খাবার। কিন্তু আপনি চাইলে খুব সহজেই ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক সব উপায়ে বিদায় জানাতে পারেন এলার্জিকে। কিভাবে? চলুন, জেনে নেই।
১. নিমপাতা
এক কেজি পরিমাণ নিমপাতা ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিন। শুকনো নিমপাতা পাটায় পিষে বা যেকোন উপায়ে গুঁড়ো করুন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সাথে একটি কৌটায় ভরে রাখুন। এক চা চামচের ৩ ভাগের ১ ভাগ নিমপাতার গুঁড়া এবং ১ চা চামচ ইসবগুলের ভুষি ১ গ্লাস পানিতে আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন।
আধা ঘণ্টা পর চামচ দিয়ে ভালো করে নাড়ুন। ব্যাস! এভাবেই এই চমৎকার মিশ্রণটি তৈরি করে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে, দুপুরে ভরা পেটে এবং রাতে ঘুমানোর আগে পান করুন। সম্ভব হলে নিমপাতা মিশ্রিত কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন।
২. নারিকেল তেল
প্রসাধনী হিসেবে নারিকেল তেল ত্বকে ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ বলে ধরে নেয়া হয়। যে কোন প্রকার চুলকানি, পোকার কামড় বা অন্য কোন কারণে ত্বকে চুলকানি হলে যেখানে চুলকাবে সেখানে নারিকেল তেল দিন। যদি সম্পূর্ণ শরীরে চুলকানি হয় তবে পুরো শরীরে নারকেল তেল মাখতে পারেন। কুসুম গরম পানিতে নারকেল তেল মিশিয়ে গোসলও করে ফেলতে পারেন।
৩. পেট্রোলিয়াম জেলি
যদি আপনার ত্বক সেনসিটিভ হয়ে থাকে, তাহলে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে পারেন। ভালো কথা হচ্ছে পেট্রোলিয়াম জেলির কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কারণ, এতে কোন ধরণের বিষাক্ত পদার্থ নেই যা আপনার ত্বকের ক্ষতি করবে। শরীরের কোন অংশে চুলকানি হলে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করুন। এটি সবার ঘরেই থাকে, ফলে যেকোন সময়ই আপনি এটি ব্যবহার করতে পারবেন।
৪. বেকিং সোডা
চুলকানি প্রতিরোধে বেকিং সোডা অনেক বেশি কার্যকরী। এক কাপ পানির প্রায় এক তৃতীয়াংশ বেকিং সোডা দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এরপরে চুলকানির জায়গায় এই মিশ্রণ লাগান। এতে করে চুলকানি অনেক কমে যাবে।
চাইলে বেকিং সোডা দিয়ে গোসলও করতে পারেন। এক্ষেত্রে বড় এক বালতি পানিতে ১/২ কাপ বেকিং সোডা মেশাতে হবে। বেকিং সোডা মেশানো পানিতে কমপক্ষে ৩০ মিনিট শরীর ভিজিয়ে রাখার পর শরীর পানি দিয়ে না ধুয়ে শুকিয়ে ফেলতে হবে। এতে পুরো শরীরের চুলকানি দূর হয়ে যাবে।
৫. অ্যালোভেরা
সৌন্দর্য চর্চা ও ত্বকের যত্নে প্রাচীনকাল থেকেই অ্যালোভেরার ব্যবহার চলে আসছে। আর আপনি কি জানেন, চুলকানি প্রতিরোধ করতেও অ্যালোভেরা অনেক কার্যকরী? একটি তাজা অ্যালোভেরা পাতা থেকে এর আঠালো অংশ বের করে চুলকানির স্থানে লাগান। আপনার চুলকানি উধাও হয়ে যাবে।
৬. লেবু
ভিটামিন সি সমৃদ্ধি লেবুতে আছে ব্লিচিং উপাদান যা ত্বকের চুলকানি রোধ করে থাকে। ত্বকের যে স্থানে চুলকানি অনুভূত হচ্ছে সেস্থানে লেবুর রস লাগিয়ে শুকিয়ে নিন। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখবেন চুলকানি গায়েব।
৭. অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করলে অ্যালার্জির ফলে হওয়া চুলকানি ও লাল ছোপ কমে যাবে। এতে থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড সংক্রমণকেও দূর করতে বিশেষ সাহায্য করে। এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য। শুধু তাই নয়, এটি পান করলে ওজন হ্রাস, কোলেস্টেরল হ্রাস, রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস এবং ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলির উন্নতির জন্য খুব উপকারী।
৮. অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস ও Vitamin E যা ত্বককে স্বাভাবিক উপায়ে ফিরিয়ে আনতে বিশেষ সাহায্য করে। আক্রান্ত ত্বকে অলিভ অয়েল ও মধু মিশিয়ে মেখে ম্যাসাজ করুন। এলার্জির চুলকানি কমাতে যথেষ্ট উপকার পাবেন।
চুলকানির ট্যাবলেট এর নাম
দ্রুত চুলকানি কমার জন্য চুলকানির স্থানে পেভিসোন মলম লাগান। ৫ মিনিটের মধ্যেই আপনার চুলকানি কমে যাবে। পেভিসোন মলম ব্যবহারের পাশাপাশি সাথে এলাট্রল ট্যাবলেট খেতে পারেন। এটি খেলে কিছুটা ঝিমুনি বা ঘুম পেতে পারে।
এলার্জি জনিত চুলকানি হলে খাটি সরিষার তেলে ৬-৭ কোয়া রসুন ছেঁচে দিন এবং চুলায় ভাজুন। রসুনের রঙ বাদামী হলে নামিয়ে হালকা গরম থাকা অবস্থায় এলার্জির আক্রান্ত স্থানে মাখুন। চুলকানি কমে যাবে। তবে আরো ফল পেতে এর সাথেও এলাট্রল ট্যাবলেট খেতে পারেন।
ওরাডিন নামে আরেকটি ট্যাবলেট আছে, যা দ্রুত চুলকানি কমাতে ভালো কাজ করে। এলাট্রলের সাথে এর পার্থক্য হচ্ছে, ওরাডিন খেলে আপনার ঘুম পাবে না। তবে আপনি ওরাডিন বা এলাট্রল যেটিই খান না কেন, ২৪ ঘণ্টায় একটির বেশি খাওয়া যাবে না। এই ট্যাবলেটগুলো চুলকানির সময় একবার খেলে ১/২ ঘণ্টার মধ্যেই চুলকানি কমিয়ে দেয়ার সক্ষমতা রাখে।
►► আরো দেখো: গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণগুলো কি?
►► আরো দেখো: সিজারের পরে সহবাস কিভাবে করবেন?
►► আরো দেখো: গর্ভবতী হওয়ার আগে ভুলেও যা করা যাবে না
শেষ কথা
আমাদের শেয়ার করা এই পরার্শগুলো এলার্জিতে আপনাকে সাময়িক সময়ের জন্য প্রশান্তি এনে দেবে। কিন্তু শরীরে এলার্জি সমস্যা বেশিদিন জমিয়ে রাখা একদমই উচিত নয়। এর করে ভবিষ্যতে আরো বড় ধরনের চর্মরোগের সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে এলার্জি সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে খুব শীঘ্রই একজন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন এবং তার পরামর্শ নিন।
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সব টিপস পেতে আমাদের Facebook Page এ Like দিয়ে রাখুন। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করুন এই লিংক থেকে।
Discussion about this post