দুই বিঘা জমি কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : বিত্তবান জমিদারের সম্পদের কোনো অভাব নেই। তবুও জমিদারের আরও চাই। জমিদারের জমির পাশেই ছিল ভিটেমাটি সর্বস্ব উপেনের জমি। রাজার খেয়াল হলো রাজা বাগান করবেন। কিন্তু বাগান বৃদ্ধি করতে হলে উপেনের জমিটি দরকার।
দুই বিঘা জমি কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. ‘রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি’ চরণটি সমাজের ক্ষমতাশালী ও ধনী শ্রেণির দ্বারা দরিদ্রদের শোষণের প্রতিচিত্র তুলে ধরে। কবিতায় দেখা যায়, ঋণের দায়ে দরিদ্র উপেনের দুই বিঘা জমি অন্যায়ভাবে দখল করা হয়, যা ক্ষমতাশালীদের শোষণের প্রতীক। এখানে ‘রাজা’ বলতে শুধু শাসক নয়, বরং সমাজের ধনী ও প্রভাবশালী শ্রেণিকে বোঝানো হয়েছে, যারা দরিদ্রদের শেষ সম্বলটুকুও কেড়ে নেয়। এটি বাস্তব জীবনের সেই নির্মম সত্যকে তুলে ধরে যেখানে ধনীরা বিভিন্ন উপায়ে গরিবদের সম্পদ আত্মসাৎ করে, আর দুর্বলরা অসহায় হয়ে পড়ে। কবির এই চরণ শুধু তাঁর ব্যক্তিগত দুঃখ নয়, বরং চিরকালীন সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ।
২. ‘তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে।’ উপেনের একথা বলার কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: নিজ ভিটেতে ফিরে এসে কুড়িয়ে নেওয়া আমের কারণে চোর হিসেবে চিহ্নিত হলে উপেন উদ্ধৃত উক্তিটি করে।
বাগান বাড়ানোর জন্য জমিদার মিথ্যা ঋণের দায়ে উপেনের কাছ থেকে জোর করে তার শেষ সম্বল দুই বিঘা জমি কেড়ে নেয়। দীর্ঘ দিন সন্ন্যাসী জীবন কাটানোর পর দেশে ফিরে সে শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত আমগাছের তলায় এসে আম পায়। কিন্তু সে কুড়িয়ে পাওয়া আমের ওপরও তার আর কোনো অধিকার নেই। তাই সে আজ জমিদারের চোখে চোর বলে বিবেচিত। উক্তিটিতে উপেনের মনে সে ক্ষোভই প্রকাশ পেয়েছে।
৩. রাজার কথা শুনে উপেনের চোখে জল আসে কেন?
উত্তর: রাজার কথা শুনে হৃদয়ের কষ্টে উপেনের চোখে জল আসে।
বহুদিন পর উপেন নিজের চির পরিচিত গ্রামে ফিরে আসে। ক্লান্ত-শ্রান্ত উপেন প্রাচীরঘেঁষা আমগাছটির নিচে বসে পরম শান্তি অনুভব করে। সেখানে বসে বসে ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করছিল। এরই মধ্যে বাতাসের ঝাঁপটায় দুটি পাকা আম পড়ে তার কোলের কাছে। আম দুটিকে সে জননীর স্নেহের দান মনে করে গ্রহণ করে। আর তখনই ছুটে আসে মালী। উপেনকে তারা ধরে নিয়ে যায় রাজার কাছে। জমিদার উপেনকে সাধুবেশী চোর বলে আখ্যায়িত করে। তখন এ চরম অপমানের নীরব কষ্টে উপেনের চোখে জল আসে।
৪. ‘স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে বারেক ঠেকানু মাথা’।—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে বারেক ঠেকানু মাথা’—চরণটি দ্বারা জননীর স্নেহের দানে উপেনের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পেয়েছে।
অনেক বছর পর উপেন যখন হারানো ভিটেতে এলো, তখন সেই পরিচিত ভূমি যেন চিনতে পারল না, শুধু এক আমগাছ ছাড়া। পুরনো আমগাছ দেখে উপেন তার নিচে বসতেই গাছ থেকে দুটো পাকা আম পড়ল। উপেন ভাবল, আমগাছটি তাকে চিনতে পেরেই আম দুটি দিয়েছে। তাই কৃতজ্ঞতা জানাতে আমগাছের গোড়ায় সে মাথা ঠেকালো।
৫. উপেন কেন তার জমিকে নিলাজকুলটা বলেছিল?
উত্তর: নিজের গ্রামে এসে বাস্তুভিটার পরিবর্তিত রূপ দেখে উপেন নিজ জমিকে ‘নিলাজ কুলটা’ বলেছে।
পৈতৃক ভিটার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে প্রায় দুদিন পর কুমোরের বাড়ি, রথতলা, হাটখোলা, মন্দির পেছনে ফেলে সে তার কাক্সিক্ষত জন্মভূমিতে এসে পৌঁছায়। কিন্তু জন্মভূমির সেই চিরচেনা রূপকে কালের বিবর্তনে পরবর্তিত হতে দেখে সে তাকে ‘নিলাজ কুলটা’ বলেছে।
৬. রাজা উপেনের দুই বিঘা জমি কিনে নিতে চেয়েছিল কেন?
উত্তর: রাজা বাগান দৈর্ঘ্যে প্রস্থে বাড়ানোর জন্য উপেনের দুই বিঘা জমি কিনে নিতে চেয়েছিল।
বিত্তবান জমিদারের সম্পদের কোনো অভাব নেই। তবুও জমিদারের আরও চাই। জমিদারের জমির পাশেই ছিল ভিটেমাটি সর্বস্ব উপেনের জমি। রাজার খেয়াল হলো রাজা বাগান করবেন। কিন্তু বাগান বৃদ্ধি করতে হলে উপেনের জমিটি দরকার।
৭. ‘চোখে আসে জল ভরে’—কেন? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: জল নিয়ে চলা বাংলারবধূদের মা বলে ডাকতে প্রাণ আনচান করে, আবেগে দু’চোখে জল ভরে আসে।
সন্ন্যাসীর বেশে হাটে, মাঠে, ঘাটে ঘুরতে ঘুরতে উপেনের ১৫-১৬ বছর কেটে গেল। একদিন তার দেশে ফেরার প্রচ- ইচ্ছা হলো। ঘন পাতাযুক্ত আমগাছ, দিঘির কালোজল, শীতল স্নেহ, ছায়া ঢাকা শান্তিময় ছোট ছোট গ্রামগুলোর কথা তার মনে পড়ল। সেখানে গাঁয়ের বধূরা নদী থেকে জলভরে কলসি কাঁখে ঘরে ফেরে। গভীর মমতায় তাদেরকে মা বলে ডাকতে মন আনচান করে। চোখ ভরে জল আসে।
৮. উপেন কেন তার জমি বিক্রি করতে চায়নি?
উত্তর: সাতপুরুষের বাসস্থান উপেনের দৃষ্টিতে পুণ্যস্থান বলে উপেন তার জমি বিক্রি করতে চায়নি।
জমিদার যখন বললেন, তার শখের বাগানকে দৈর্ঘ্য-প্রস্থে সমান করতে উপেনকে তার একমাত্র সম্বল ভিটাটুকু বিক্রি করতে হবে। উপেন তখন হাতজোড় করে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলল, ঐ ভিটেয় তার সাতপুরুষ জন্ম। ঐটুকু জমি তার কাছে সোনার চেয়েও মূল্যবান। অভাবের কারণে মাতৃতুল্য সামান্য জমি সে বেচে দেবে এমন লক্ষ্মীছাড়া সে নয়।
৯. ‘তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই’—কথাটি কেন বলা হয়েছে?
উত্তর: ‘তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই’—এই চরণটি দ্বারা উপেন রাজার অঢেল ভূসম্পত্তির দিকটিকে বুঝিয়েছে।
রাজার বাগান দৈর্ঘ্যে আর প্রস্থে সমান হওয়ার জন্য দু’বিঘা জমির প্রয়োজন ছিল। তাই রাজা উপেনের একমাত্র সম্বল দুই বিঘা জমি কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করল। কিন্তু দুই বিঘা জমি বিক্রি করলে উপেনের আর কিছুই থাকে না। তাই আলোচ্য চরণটি দ্বারা উপেন রাজাকে তার অগাধ ভূমির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
১০. ‘একদিন শেষে ফিরিবারে দেশে বড়ই বাসনা হলো’—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘একদিন শেষে ফিরিবারে দেশে বড়ই বাসনা হলো’—আলোচ্য চরণটি দ্বারা জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়ার জন্য উপেনের ইচ্ছা প্রকাশ পেয়েছে।
ভিটেমাটি হারিয়ে উপেন প্রায় পনেরো-ষোলো বছর বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছিল, ভূমি হারালেও উপেন নাড়ির টান ছাড়তে পারেনি। তাই বহু বছর পরও নিজগ্রামে ফেরার জন্য উপেনের মনে টান অনুভূত হলো। মূলত মাতৃভূমির টান কখনই উপেক্ষণীয় নয়। আলোচ্য চরণ দ্বারা এটাই প্রকাশ করা হয়েছে।
আরও দেখো—অষ্টম শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা বই থেকে দুই বিঘা জমি কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখানে দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও বাংলা বইয়ের গল্প-কবিতার সৃজনশীল, জ্ঞানমূলক, বর্ণনামূলক এবং বহুনির্বাচনি সমাধানের জন্য উপরের লিংকটি অনুসরণ করো।
Discussion about this post