দেনাপাওনা সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর : রবীন্ধবনাথ ঠাকুরের গল্পওচ্ছ থেকে “দেনাপাওনা’ গল্পটি সংকলিত হয়েছে। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের রামসুন্দর পাচ পুত্র এবং এক কন্যার জনক। আদরের কন্যার প্রতাপশালী রায়বাহাদুরের একমাত্র পুত্রের সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের সময় পাত্রের পিতা রায়বাহাদুর দশ হাজার টাকা নগদসহ অন্যান্য সামগ্রী বিয়ের যৌতুক হিসেবে দাবি করেন। কন্যার বাপ রাজি হন।
বিয়ের সময় নগদ অর্থ বাকি পড়ে যায়। শুরু হয় পিতা ও কন্যার ওপর মানসিক নির্যাতন । নিরুপমার আত্মবিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় আমাদের সমাজের এই ভয়াবহ ব্যাধির কাহিনি । “দেনাপাওনা” গল্পে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অত্যন্ত সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গিতে সমাজে প্রচলিত যৌতুক প্রথার মর্মান্তিক রূপ উপস্থাপন করেছেন। যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভিন্ন মত গড়ে তুলতে গল্পটি
সহায়ক।
দেনাপাওনা সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
১. হৈমুর বাবা পেশায় অধ্যাপক। তাঁর একমাত্র মেয়েকে বৌ করে ঘরে তুলতে অনেকের আগ্রহ। তাদের বিশ্বাস হৈমুর বাবার সমস্ত সম্পত্তির মালিক হবে হবু বর। এ লড়াইয়ে বিজয়ী হলো অপূর্বদের পরিবার। শ্বশুরবাড়িতে বউয়ের মর্যাদা অশেষ। একসময় তারা জানতে পেল, অগাধ ধনসম্পত্তি দূরে থাক, মেয়ের বিয়েতে বাবা মোটা অঙ্কের ঋণ করেছেন। এতে শ্বশুরবাড়িতে হৈমুর প্রতি ভালোবাসা এবং তার বাবার প্রতি শ্রদ্ধাভক্তির এতটুকু ঘাটতি কখনোই দেখা দেয় নি। বরং তাঁকে ঋণ থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য এগিয়ে যায় হৈমুর শ্বশুর।
ক. নিরুপমার বিয়েতে বরপক্ষ কত টাকা পণ চেয়েছিল?
খ. ‘বর্তমান শিক্ষার বিষময় ফল’ বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের হৈমুর বাবার সাথে দেনাপাওনা গল্পের নিরুপমার বাবার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের হৈমু ও ‘দেনাপাওনা’ গল্পের নিরুপমাকে একসূত্রে গাঁথা যায় কি? যুক্তিসহ প্রমাণ করো।
২. ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের, গ্রামের নয়Ñ আলো ঝলমলে শহরের। বিয়ের তিন মাসের মাথায় অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে তৃষা এখন হাসপাতালে আর তার স্বামী বিপ্লব নারী নির্যাতনের মামলায় কারাগারে। বিপ্লব উচ্চশিক্ষিত ও সম্পদশালী তৃষাও। শ্বশুরের কাছে বিয়ের পর থেকেই বিপ্লব একটি নতুন গাড়িপ্রাপ্তির জন্যে স্ত্রীর উপর ক্রমাগত চাপ দিচ্ছিল। তৃষার ইঙ্গিতে তার বাবা এ হীন চাপকে উপেক্ষা করে আসছিলেন।
ক. ‘দেনাপাওনা’ গল্পটি লেখকের কোন গ্রন্থ থেকে সংকলিত?
খ. ‘নিরু বাপের মুখ দেখিয়া সব বুঝিতে পারিল’ ব্যাখ্যা করো।
গ. সময়ের পরিবর্তন হলেও গ্রাম কিংবা শহরে সমস্যা আজও একই উদ্দীপক ও ‘দেনাপাওনা’ গল্পের আলোকে সমস্যাটি চিহ্নিত করো।
ঘ. “বিপ্লবের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপগুলোই পারে নিরু বা তৃষাদের করুণ পরিণতি থেকে মুক্তি দিতে।” আলোচনা করো।
৩. মকবুল বুড়োর তিন স্ত্রী। তবুও সে সম্পত্তির লোভে আম্বিয়াকে বিয়ে করতে চায়। আম্বিয়ার একটি বসতবাড়ি, নৌকা ও এক টুকরো জমি আছে। আম্বিয়ার পরিবারে হাঁপানী রয়েছে জেনেও লোভী মকবুল ভাবে, “আগে বিয়ে করে সম্পত্তি হাত করি, পরে না হয় তালাক দিব।
ক. নিরুপমার বিয়েতে বরপক্ষ কত টাকা পণ চেয়ে বসল?
খ. ‘বাপও কাঁদে মেয়েও কাঁদে’ – কেন?
গ. উদ্দীপকের বুড়ো মকবুলের ভাবনাটি ‘দেনাপাওনা’ গল্পের কোন দিকটির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ভাবগত পার্থক্য থাকলেও মকবুল বুড়ো ও রায়বাহাদুরের মানসিকতার মধ্যে ভিন্নতা নেই।Ñ মূল্যায়ন করো।
৪. যৌতুকের বলি এক অসহায় কন্যার আর্তচিৎকার!….. “বাবা তুমি আইসা আমারে নিয়া যাইও, ওরা আমারে মাইরা ফালাইতাছে।” মুঠোফোনে এভাবে গীতারাণী বেঁচে থাকার জন্য আকুতি জানিয়েছিলেন তার বাবা নিতাই চন্দ্র পালের কাছে। আদরের মেয়েকে বাঁচাতে ঠিক তখনই বাড়ি থেকে ছুটে যান বাবা নিতাই চন্দ্র পাল। কিন্তু গীতার শ্বশুরবাড়ি গিয়ে দেখতে পান মেয়ের নিথর দেহ। নিতাই চন্দ্র পালের অভিযোগ, যৌতুকের জন্য তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে।
ক. ‘দেনাপাওনা’ গল্পটি কোন গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে?
খ. ‘বর্তমান শিক্ষার বিষময় ফল’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের গীতারাণীর সাথে ‘দেনাপাওনা’ গল্পের কোন চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপক ও ‘দেনাপাওনা’ গল্পের বিষয়বস্তুর সাদৃশ্য থাকলেও দৃষ্টিভঙ্গিতে ভিন্নতা আছে” – মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো।
৫. নগেন বাবু একমাত্র কন্যা মিনাকে বি.এ পাস করিয়েছেন অতিকষ্টে। মেয়েকে সুখী করতে নরেন্দ্র নাথের উচ্চশিক্ষিত বড় ছেলে নয়নের সাথে বিয়ে দেন। বিয়ের সময় পুকুর ও ভিটেমাটি বিক্রি করেও পণের পাঁচ হাজার টাকা দিতে পারেননি। পণের টাকা বাকি পড়েছে বিধায় ছেলের বাবা-মা মিনার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। পরিশেষে, নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে মিনা এখন বাবার বাড়িতেই দিনাতিপাত করছে।
ক. নিরুপমার বিয়েতে বরপক্ষ কত টাকা পণ চেয়েছিল?
খ. “টাকা হাতে না পাইলে বর সভাস্থ করা যাইবে না”-এ কথার অর্থ কী
গ. উদ্দীপকের মিনা আর ‘দেনাপাওনা’ গল্পের নিরুপমার জীবনের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরো।
ঘ. উদ্দীপকের নরেন্দ্র নাথ, ‘দেনাপাওনা’ গল্পের রায়বাহাদুর চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করেÑ মূল্যায়ন করো।
৬. বাণীর বিয়ের জন্য পাত্র দেখা হচ্ছিল। এমন সময় একটা ভালো ছেলের সন্ধান পাওয়া গেল। পাত্রপক্ষ বাণীর বাবার কাছে যৌতুক হিসেবে পাঁচ লক্ষ টাকা আর একটা মোটরসাইকেল দাবি করল। বাণীর দরিদ্র বাবা যৌতুক দিয়ে মেয়ের বিয়ে দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিলেন।
ক. রামসুন্দর মেয়েকে বাড়িতে আনার প্রস্তাব করার আগে কত টাকা সংগ্রহ করেছিলেন?
খ. নিরুপমার জন্য তার শ্বশুরবাড়ি শরশয্যা হয়ে উঠল কেন?
গ. উদ্দীপকের বাণীর বাবার সাথে ‘দেনাপাওনা’ গল্পের রামসুন্দরের বৈসাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বরপক্ষের সাথে বাণীর বাবার আচরণের যৌক্তিকতা ‘দেনাপাওনা’ গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১. নিরুপমা তার কয়টি ভাইয়ের পর জন্মেছিল?
উত্তর : নিরুপমা তার পাঁচটি ভাইয়ের পর জন্মেছিল।
২. রায়বাহাদুর কী হাতে না পেলে বর সভাস্থ করা যাবে না বলে জানালেন?
উত্তর : রায়বাহাদুর টাকা হাতে না পেলে বর সভাস্থ করা যাবে না বলে জানালেন।
৩. রায়বাহাদুর নিজের সন্তানের মাঝে কিসের বিষময় ফল প্রত্যক্ষ করলেন?
উত্তর : রায়বাহাদুর নিজের সন্তানের মাঝে বর্তমান শিক্ষার বিষময় ফল প্রত্যক্ষ করলেন।
৪. রামসুন্দর পণের টাকা জোগাড়ের জন্য কী বিক্রি করার চেষ্টা করতে লাগলেন?
উত্তর : রামসুন্দর পণের টাকা জোগাড়ের জন্য বসতবাড়ি বিক্রি করার চেষ্টা করতে লাগলেন।
৫. কার বাড়িতে মস্ত চুরি হয়ে গিয়েছে বলে রামসুন্দর বেহাইকে খবর দিলেন?
উত্তর : হরেকৃষ্ণর বাড়িতে মস্ত চুরি হয়ে গিয়েছে বলে রামসুন্দর বেহাইকে খবর দিলেন।
৬. নবীনমাধব ও রাধামাধবের মাঝে তুলনা করার সময় রামসুন্দর কার নিন্দা করলেন?
উত্তর : নবীনমাধব ও রাধামাধবের মাঝে তুলনা করার সময় রামসুন্দর নবীনমাধবের নিন্দা করলেন।
৭. রামসুন্দরের নাতির বহুদিন হতে কিসে চড়ে হাওয়া খাওয়ার শখ হয়েছে?
উত্তর : রামসুন্দরের নাতির বহুদিন হতে ঠেলাগাড়িতে হাওয়া খাওয়ার শখ হয়েছে।
৮. নিরুপমার স্বামী বিয়ের পর কী হয়ে দেশান্তরি হন?
উত্তর : নিরুপমার স্বামী বিয়ের পর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে দেশান্তরি হন।
৯. সংসর্গদোষে হীনতা শিক্ষা হওয়ার ওজরে কাদের সাথে নিরুপমার সাক্ষাৎকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে?
উত্তর : সংসর্গদোষে হীনতা শিক্ষা হওয়ার ওজরে বাপের বাড়ির আত্মীয়দের সাথে নিরুপমার সাক্ষাৎকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
১০. রায়বাহাদুরবাবু ছেলের দ্বিতীয় বিয়েতে কত টাকা আদায় করেন?
উত্তর : রায়বাহাদুরবাবু ছেলের দ্বিতীয় বিয়েতে বিশ হাজার টাকা আদায় করেন।
১১. ‘রায়বাহাদুর’ কোন আমলের সরকারি খেতাব?
উত্তর : ‘রায়বাহাদুর’ ব্রিটিশ আমলের সরকারি খেতাব।
দেনাপাওনা সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
১২. ‘শরশয্যা’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : ‘শরশয্যা’ শব্দের অর্থ মৃত্যুশয্যা।
১৩. ‘দেনাপাওনা’ গল্পটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোন গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে?
উত্তর : ‘দেনাপাওনা’ গল্পটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গল্পগুচ্ছ’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
১৪. কার আত্মবিসর্জনের মধ্য দিয়ে ‘দেনাপাওনা’ গল্পের কাহিনি শেষ হয়?
উত্তর : নিরুপমার আত্মবিসর্জনের মধ্য দিয়ে ‘দেনাপাওনা’ গল্পের কাহিনি শেষ হয়।
১৫. ‘দেনাপাওনা’ গল্পে কোন ঘৃণ্য সামাজিক ব্যাধির কথা বলা হয়েছে?
উত্তর : ‘দেনাপাওনা’ গল্পে সামাজিক ব্যাধি-যৌতুকের কথা বলা হয়েছে।
১৬. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
১৭. কত বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বনফুল’ কাব্য প্রকাশিত হয়?
উত্তর : পনেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বনফুল’ কাব্য প্রকাশিত হয়।
১৮. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোন কাব্যগ্রন্থের জন্য নোবেল পুরস্কার পান?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য নোবেল পুরস্কার পান।
১৯. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত সালে নোবেল পুরস্কার পান?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান।
২০. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৪১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তর
১. বরপক্ষ মোটা অঙ্কের পণ ও বহুল দানসামগ্রী চাইলেও রামসুন্দর মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি হলেন কেন?
উত্তর : ভালো পাত্র হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় মোটা অঙ্কের পণ ও বহুল দানসামগ্রীর বিনিময়েই মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি হলেন রামসুন্দর। রামসুন্দর তাঁর আদরের মেয়ের বিয়ের জন্য অনেক খোঁজাখুঁজির পর মস্ত এক রায়বাহাদুরের একমাত্র ছেলেকে পাত্র হিসেবে নির্বাচন করেন। পাত্রপক্ষ দশ হাজার টাকা পণ ও বহুল দানসামগ্রী দাবি করে। কিন্তু রামসুন্দর কিছুতেই এমন পাত্র হাতছাড়া হতে দিতে রাজি নন। তাই নিজের সামর্থ্যরে কথা না ভেবেই বিয়েতে মত দিয়ে বসেন।
২. বিবাহসভায় একটা তুমুল গোলযোগ বেধে গেল কেন?
উত্তর : পণের টাকা বাকি পড়ায় বিবাহসভায় একটা তুমুল গোলযোগ বেধে গেল।
ক্ষ দশ হাজার টাকা পণ ও বহুল দানসামগ্রীর বিনিময়ে রামসুন্দর তাঁর মেয়ের বিয়ে স্থির করেছিলেন। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরও তিনি পণের অধিকাংশ টাকাই জোগাড় করতে ব্যর্থ হন। বিয়ের দিন অতিরিক্ত সুদে একজন বাকি টাকা ধার দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু সে তার কথা রাখল না। পণের সম্পূর্ণ টাকা হাতে না পেলে বরপক্ষ দিয়ে ভেঙে দেবে। এ নিয়েই বিবাহসভায় গোলযোগ বেধে গেল।
৩. ভাবী শ্বশুরকুলের প্রতি যে তাহার খুব একটা ভক্তি কিংবা অনুরাগ জন্মিতেছে তাহা বলা যায় নাÑ উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : শ্বশুরবাড়ির মানুষের ঘৃণ্য যৌতুকলিপ্সা যে নিরুপমার মনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করেছিল সে কথাটিই উক্তিটির মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে। বিয়ের দিন উপস্থিত হলেও নিরুপমার বাবা পণের সম্পূর্ণ অর্থ জোগাড় করতে ব্যর্থ হলেন। এদিকে বরপক্ষও সব টাকা বুঝে না পেলে বিয়ে সম্পন্ন করতে রাজি নয়। এ নিয়ে বিয়ের সভায় গোলযোগ বেধে গেল। শ্বশুরবাড়ির লোকদের কছে যে নিরুপমার চেয়ে অর্থই বড় এটি স্পষ্ট। শ্বশুরকুলের প্রতি তাই নিরুপমার বিরাগ জন্মানোই স্বাভাবিক।
৪. ‘ইতিমধ্যে একটা সুবিধা হইল’ কেন?
উত্তর : পণের টাকা না পেলেও বর বিয়ে না করে বাড়ি ফিরতে চায় না – এ বিষয়টিকেই সুবিধা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
ক্ষ পণের টাকার সম্পূর্ণটা নগদ হাতে না পেলে রায়বাহাদুরবাবু ছেলের বিয়ে দেবেন না। তাই বিবাহসভায় গোলযোগ এবং অন্তঃপুরে কান্নার রোল পড়ে গেল। হঠাৎ বর তার পিতার অবাধ্য হয়ে উঠল। তার সাফ কথাÑ ‘বিবাহ করিতে আসিয়াছি, বিবাহ করিয়া যাইব।’ বিয়েতে বরের সম্মতির বিষয়টিই ফুটে উঠেছে আলোচ্য উক্তির মাধ্যমে।
৫. “বিবাহ একপ্রকার বিষণœ নিরানন্দভাবে সম্পন্ন হইয়া গেল” – কেন?
উত্তর : বরপক্ষের লোকদের অমত সত্ত্বেও বরের ইচ্ছায় বিয়ে হওয়ায় অনুষ্ঠানে কোনো আনন্দ ছিল না। বিয়ের দিন উপস্থিত হলেও নিরুপমার পিতা বরপক্ষের দাবিকৃত পণের সব টাকার বন্দোবস্ত করতে পারেন নি। ফলে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তু বর টাকা-পয়সার হিসাব বুঝতে চায় না। সে বিয়ে করতে এসেছে বিয়ে করেই যাবে বলে ঘোষণা দেয়। বরের পিতা ও আত্মীয়স্বজন নিতান্ত অনিচ্ছায় বিয়েতে সম্মতি দেয়। ফলে বিয়ের অনুষ্ঠানে স্বাভাবিক যে উচ্ছ্বাস থাকা উচিত, তা চোখে পড়ে না।
৬. বেহাই বাড়িতে রামসুন্দরের কোনো প্রতিপত্তি ছিল না কেন?
উত্তর : পণ হিসেবে প্রতিশ্রুত টাকা পুরোপুরি পরিশোধ করতে না পারায় বেহাইবাড়িতে রামসুন্দরের কোনো প্রতিপত্তি ছিল না। কন্যার বিয়ের সময় বরপক্ষ রামসুন্দরের কাছে নগদ দশ হাজার টাকা পণ দাবি করে। কিন্তু সময়মতো রামসুন্দর সম্পূর্ণ টাকা জোগাড় করতে ব্যর্থ হন। বর পিতার মতকে উপেক্ষা করে বিয়ে করে।
কিন্তু নিরুপমার শ্বশুরবাড়িতে রামসুন্দরকে পদে পদে অপদস্থ হতে হয়। বেহাইবাড়ির কেউই এমনকি চাকর-বাকরদের কাছেও তাঁর কোনো সম্মান ছিল না। এর একমাত্র কারণ বেহাইবাড়ির মানুষদের যৌতুকলিপ্সা মেটাতে না পারা।
৭. রামসুন্দরের বসতবাড়ি বিক্রি স্থগিত হলো কেন?
উত্তর : ছেলেদের প্রবল বাধার মুখে রামসুন্দরের বাড়ি বিক্রয় স্থগিত হলো। রামসুন্দর তার কন্যার বিয়েতে প্রতিশ্রুত পণের টাকার সম্পূর্ণটা দিতে পারেননি। সেই টাকা জোগাড় করতে নিরুপায় হয়ে তিনি বসতবাড়ি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তার ছেলেরা এতে প্রচণ্ড আপত্তি তোলে। বড় তিনটি ছেলে বিবাহিত এবং তাদের কারও সন্তানও আছে। শেষ সম্বল এই বাড়িটি বিক্রি করার পক্ষে তাই তারা কিছুতেই মত দিতে পারেনি। এ কারণে রামসুন্দর বাড়ি বিক্রি স্থগিত করতে বাধ্য হন।
৮. “থাক, বেহাই, ওতে আমার কাজ নেই।” – রায়বাহাদুর কথাটি কেন বললেন?
উত্তর : রামসুন্দর পণের বাকি টাকার ভগ্নাংশ দেওয়ার চেষ্টা করলে রায়বাহাদুরবাবু তাঁকে অবজ্ঞা করে কথাটি বলেন। মোটা অঙ্কের পণের বিনিময়ে রামসুন্দর নিরুপমার বিয়ে দিয়েছিলেন রায়বাহাদুরবাবুর একমাত্র ছেলের সাথে। কিন্তু বিয়ে হলেও বাকি রয়ে যায় পণের অধিকাংশ টাকাই। এ কারণে রামসুন্দর ও তাঁর কন্যার ওপর বেহাইবাড়ির লোকদের মানসিক নির্যাতন নেমে আসে।
কন্যার সুখের জন্য রামসুন্দর পণের বাকি টাকাগুলো জোগাড়ের প্রাণান্ত চেষ্টা করেন। শেষমেশ মাত্র তিন হাজার টাকার বন্দোবস্ত করতে সমর্থ হন। সেই টাকাটিই বেহাইয়ের হাতে তুলে দিতে গেলে তিনি তা নিতে অস্বীকৃতি জানান। টাকা ফিরিয়ে দিয়ে রামসুন্দরকে অপমান করেন।
৯. নিরুপমা বাবার ওপর অভিমান করল কেন?
উত্তর : বারবার খবর পাঠানোর পরও বাবা দেখা করতে না আসায় নিরুপমা বাবার ওপর অভিমান করল। নিরুপমার বিয়ের পণের সম্পূর্ণ টাকা জোগাড় করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেন তার বাবা রামসুন্দর। কিন্তু হতদরিদ্র পিতার পক্ষে সেটি প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। এদিকে বেহাইবাড়িতে তাঁর ও তাঁর কন্যার ওপর চলছে অসহ্য মানসিক নির্যাতন। রামসুন্দর তাই প্রতিজ্ঞা করেন যত দিন সম্পূর্ণ টাকা জোগাড় করতে না পারবেন তত দিন আর বেহাইবাড়িতে যাবেন না। নিরুপমা লোকের পর লোক পাঠালেও বাবার দেখা পায় না। এ কারণেই নিরুপমা বাবার ওপর অভিমান করল।
১০. “তোদের জন্য কি আমি নরকগামী হব?” – উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : কন্যার বিয়েতে প্রতিশ্রুত পণের টাকা পরিশোধ না করতে পারলে বিরাট পাপ হবে- এ ভাবটিই প্রকাশিত হয়েছে আলোচ্য চরণে। নিরুপমার শ্বশুরবাড়িতে কোনোরূপ মর্যাদা নেই নিরুপমা ও তার পিতার। পণের টাকার জন্য পদে পদে তাদের অপদস্থ হতে হয়। মেয়ের এমন অপমান পিতা হয়ে সহ্য করতে পারেন না রামসুন্দর। তাছাড়া পণের টাকা দেবেন বলে তিনিও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ছেলেদের না জানিয়েই তাই বাড়ি বিক্রি করে পণের টাকা জোগাড় করে মেয়েকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে আসেন তিনি। কিন্তু বেহাইবাড়িতে এসে উপস্থিত হয় তাঁর বড় ছেলে। বাবা যে বাড়ি বিক্রি করে সবাইকে পথে বসিয়েছে সে সত্য গোপন নেই তার কাছে। ছেলে গোপন কথাটি জেনে ফেলেছে দেখে রামসুন্দরের আক্রোশের সীমা থাকে না। ক্রুদ্ধ হয়ে তিনি উক্তিটি করেন।
উপরে দেয়া ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে দেনাপাওনা সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর pdf ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post