আজকাল যুবক বা যুবতী যে কারোরই প্রায়ই যে সমস্যাটি দেখা দেয় সেটি হচ্ছে চুল পড়ে যাওয়া। যখন চুল পড়ে গিয়ে মাথায় চুলের পরিমাণ অনেক কমে যায় তখন তারা নতুন চুল গজানোর উপায় গুলো জানতে চায়। চুল গজানোর আগে আমাদের আগে চুল পড়া আগে কমাতে হবে। কেননা, চুল পড়া যদি কমাতে না পারি তাহলে নতুন চুল যতই হোক নে কেন সেই চুলও ঝড়ে পড়বে।
চুল বিভিন্ন কারণে পড়ে। তার মধ্যে কিছু কারণ হচ্ছে- জিনগত, পরিবেশগত, ভিটামিনের অভাব কিংবা লাইফস্টাইলের ধরন। প্রথমে কি কারণে চুল পড়ছে সেই অনুযায়ী চুল পড়া কমাতে হবে। তারপরে নতুন চুল গজাতে হবে। আজকে আমরা চুল গজানোর জন্য এমন কিছু উপায় দেবো, যে উপায়গুলো দিয়ে চুল গজানোর পাশাপাশি আপনার চুল পড়াও কমিয়ে দেবে।
নতুন চুল গজানোর উপায়
নতুন চুল গজানোর জন্য এবং পুরাতন চুলগুলো পড়া বন্ধ করার জন্য আপনাকে আপনার চুলের সাধারণ যত্নে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে, খাবার-দাবারে পরিবর্তন আনতে হবে। এবং সেই পরিবর্তনগুলো আনার পরে আপনাকে নতুন চুল গজানোর জন্য কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই নিয়মগুলো-
চুলের সাধারণ যত্নে কিছুটা পরিবর্তন
আপনি এমনিতে চুলের যা যত্ন নেন সেভাবেই যত্ন নিতে হবে। তবে একটু ভিন্নভাবে যত্ন নিতে হবে। যেমন-
১. শ্যাম্পুর ব্যবহার
মাথার তালু থেকে নতুন চুল গজায়। কিন্তু, মৃত কোষের প্রভাবে নতুন চুল গজানো বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাই, প্রতিদিন কিছুটা পরিমাণ শ্যাম্পু নিয়ে মাথার তালু ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কার করা হয়ে গেল ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে দৈনিক অন্তত একবার করুন।
২. নতুন চুল গজানোর উপায় | খুশকি দূর করুন
মাথার মধ্যে খুশকি থাকলে মৃত কোষগুলো দূর করা কঠিন হয়ে যায়। নতুন চুল গজানোর উপায় গুলো মানার পাশাপাশি খুশকিগুলোকেও দূর করতে হবে। খুশকি বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। তার মধ্যে মাথা অপরিষ্কার থাকা, অতিরিক্ত তেল ব্যবহার ছাড়া আরও কিছু কারণ রয়েছে।
খুশকিগুলোকে দূর করার জন্য চুল পরিষ্কার রাখতে হবে। খুশকি দূর করার জন্য আরও কিছু উপায় রয়েছে যার মাধ্যমে সহজে ও কম সময়ে খুশকি দূর করা যায়। তার জন্য দেখে আসতে পারেন ৫ মিনিটে খুশকি দূর করার উপায় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে।
৩. নিয়মিত চুল পরিষ্কার করা
নিয়মিত চুল পরিষ্কার না করলে খুশকি ছাড়া আরও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যার জন্য নিয়মিত চুল পরিষ্কার করতে হবে। চুল পরিষ্কার করার জন্য কন্ডিশনার কিংবা শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪. কালোজিরা তেলের ব্যবহার
কালোজিরা তেল বিভিন্ন ধরনের কাজে ব্যবহৃত হয়। চুল পড়া বন্ধ ও নতুন চুল গজানোর জন্যও কালোজিরা তেল ভালো কাজ করে। যদি সম্ভব হয় তাহলে প্রতিদিন অন্তত একবার করে কালোজিরা তেল ব্যবহার করা।
খাবার-দাবারে পরিবর্তন
নতুন চুল গজানোর উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে দৈনন্দিন খাবারে পরিবর্তন আনা। খাবারের মাধ্যমে আমরা শরীরে শক্তি পাই ও শরীরের বিভিন্ন অংশ বৃদ্ধি হয়। তাই আমাদের আমাদের চুল বৃদ্ধির জন্য শরীর ও চুল বৃদ্ধিকারক কিছু খাবার দৈনিক খাবার তালিকায় রাখতে হবে।
১. নতুন চুল গজানোর উপায় | প্রোটিন খান
দৈনিক খাবারের তালিকায় কিছু অংশ হলেও প্রোটিন রাখার চেষ্টা করুন। শরীরের যে কোন অংশ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রোটিন খুবই গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রোটিন রাখলে নতুন চুল গজানোর কাজটি কম সময়ে ও সহজে হওয়া সম্ভব। সেজন্য প্রতিদিন খাবারের তালিকায় মাছ, মাংস, দুধ কিংবা ডিম রাখা উচিত।
২. আয়রন ও জিঙ্ক
শরীরে নতুন টিস্যু তৈরিতে আয়রন ও জিঙ্ক এই দুটি পদার্থ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন খাবারের তালিকায় আয়রন ও জিঙ্ক রাখলে সেগুলো নতুন টিস্যু গজাতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন অন্তত কিছু পরিমাণে বাদাম, কলিজা খাওয়া যেতে পারে।
সবচেয়ে ভালো হয় দুধ কিংবা মাংস খেলে। এতে শরীরে প্রোটিন ও জিঙ্ক দুটোরই প্রয়োজনীয়তা একইসাথে পূরণ হয়ে যাবে।
৩. শাক-সবজি ও ফলমূল
দৈনিক খাবারে তালিকায় শাক-সবজি রাখা উচিত। শাক-সবজি শরীরের বিভিন্ন ধরনের চাহিদা পূরণ করে। তাই নতুন চুল গজানোর উপায় গুলোর মধ্যে শাক-সবজি খাওয়াকে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় বলা যেতে পারে। কেননা, যখন শরীরের চাহিদা পূরণ হবে তখনই তো শরীরের বিভিন্ন অংশ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে।
বিশেষ করে আশ জাতীয় সবজি রাখার চেষ্টা করুন। এবং ভিটামিন সি ও ই জাতীয় খাদ্য খাবার চেষ্টা করুন। মটরশুঁটি, কমলালেবু ও লেবুর মধ্যে এই ভিটামিনগুলো ভালো পাওয়া যায়।
চুল গজানোর জন্য এক্সটা কিছু নিয়ম
উপরে কিছু নিয়ম নিয়মের কথা ইতিমধ্যে বলা হয়েছে। তবে সেগুলো প্রায়ই সবগুলোই প্রতিদিনের প্রয়োজনে করতে হয়। এখন কিছু নিয়মের কথা বলবো যেগুলো শুধু চুল গজানোর জন্যই অনুসরণ করতে হবে।
১. নতুন চুল গজানোর উপায় | ভিটামিন ই ব্যবহার করুন
ভিটামিন ই চুল পড়া রোধে ও চুলের বৃদ্ধিতে প্রচুর ভূমিকা রাখে। বাজারে ভিটামিন ই জাতীয় বিভিন্ন ধরনের খাদ্য পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে ভালো হয় বাজার থেকে ভিটামিন ই ক্যাপসুল কিনে নিয়ে সেগুলো নিময়মাফিক খাওয়া। এবং সেই ক্যাপসুল গুলো থেকে ভিটামিন ই নিয়ে মাথায় ম্যাসাজ করা।
প্রতিদিন অন্তত এক চামচ ভিটামিন ই নিয়ে এভাবে একবার করে মাথা ম্যাসাজ করুন। এভাবে চুলের গোঁড়া শক্ত হবে, চুল পড়া বন্ধ হবে ও নতুন চুল গজানো শুরু করবে।
২. পেঁয়াজের রস
নতুন চুল গজানোর উপায় গুলো প্রায়ই সবগুলোতেই অর্থের খরচ করতে হচ্ছে। অনেকে চান ঝামেলায় না গিয়ে সহজ উপায়ে কাজ করতে। তারা পেঁয়াজের রস ব্যবহার করতে পারেন। ৩/৪ টি পেঁয়াজ নিয়ে সেই পেয়াজগুলো থেকে রস বের করে সেই রস মাথায় মালিশ করুন। এভাবে পেঁয়াজের রস দিয়ে মাথায় ম্যাসাজ করার পরে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করে শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এভাবে ২ দিন পর পর করতে থাকুন।
৩. নতুন চুল গজানোর উপায় | নিমপাতার ব্যবহার করুন
ত্বকের নানা সমস্যা সারাতে বেশ পরিচিত নিমপাতা। শুধু ত্বক নয়, চুলের যত্নেও নিমপাতা বেশ কার্যকরী। নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে এই পাতা। এক মুঠো নিমপাতা নিয়ে এক লিটার পানিতে ফুটিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি ঠাণ্ডা করে বোতলে সংরক্ষণ করুন। শ্যাম্পু করার পর সপ্তাহে একদিন নিমের এই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। মাথার ত্বকে কোনো ধরনের সংক্রমণ বা খুশকির সমস্যা থাকলে তা দূর করতে সাহায্য করবে। এতে চুলের গোঁড়া শক্ত হবে এবং নতুন চুল গজানো শুরু হবে।
৪. কালোজিরা ও মেথি
চুলের জন্য মেথি ও কালোজিরা দুটোই খুবই উপকারী। মেথি ও কালোজিরা দুটোই নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। মেথি ও কালোজিরা দুটোই আলাদাভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, সবচেয়ে ভালো হয় দুটোর মিশ্রণ একসাথে ব্যবহার করলে। এভাবে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
প্রথমে কিছু মেথি ও কালোজিরা পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর শুকানো মেথি ও কালোজিরাগুলো পিষে গুড়ো করতে হবে। এই মিশ্রণটি ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করার পরে কোন ব্যবহারযোগ্য চুলের তেলে মিশিয়ে দিয়ে সেই তেল ব্যবহার করুন। এভাবে একটি মিশ্রণ ১০/১৪ দিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
চুল গজানোর জন্য কিছু নিয়মের কথা উপরে বলা হয়েছে যার বেশীরভাগই বলা হয়েছে মাথায় কিছু না কিছু দেওয়ার কথা। অধিকাংশ ব্যক্তিই যে ভুল করে থাকে তা হচ্ছে- একসাথে একাধিক উপায় ফলো করে। অর্থাৎ, একইসাথে মাথায় কালোজিরাও দেয় আবার ভিটামিন ই ও দেয়।
মনে রাখবেন একসাথে সবকিছু মাথায় দিতে হবে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই একটি উপায় ব্যবহার করা হয়ে গেলে অন্য উপায় ব্যবহার করতে পারেন।
শেষ কথা
উপরে নতুন চুল গজানোর উপায় গুলো বলা হলো। শুধু এই উপায়গুলোই না আরও উপায় রয়েছে তবে এগুলো সবচেয়ে কার্যকরী উপায়। উপায়গুলো পড়ার পড়ে এই উপায়গুলো দৈনিক ফলো করতে হবে। তাহলেই ফলাফল পাবেন। যদি সপ্তাহে দুদিন উপায়গুলো ফলো করেন আবার দু’দিন বাদ দেন এভাবে করলে কাজ নাও হতে পারে। আর হলেও হয়তো বা অনেক দেরিতে হতে পারে।
Picture by Pexels
Discussion about this post