নতুন দেশ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন | নতুন দেশ কবিতাটিতে প্রকাশিত হয়েছে অজানাকে জানার সীমাহীন কৌতহল এবং প্রকৃতির রহস্য উন্মােচনের অপার আকাঙ্ক্ষার পরিচয়। একটি কিশাের নদীর ঢেউয়ে নৌকার দুলতে থাকার দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়। সে কল্পনা করে ভাটার টানে ভেসে নৌকা অজানা কোনাে এক দেশে পৌছে গেছে।
সেখানকার পরিবেশ ও প্রকৃতি মনােমুগ্ধকর। কিশাের ভাবে এমনিভাবে সেও যদি চলে যেতে পারত অজানা কোনাে দেশে। কোনাে অসীম সৌন্দর্য বা অজানা আনন্দ কিংবা অপার বিস্ময় যেখানে তার জন্য অপেক্ষা করে আছে। অজানার প্রতি তার এই ব্যাকুলতা সে আশপাশের সবার মধ্যেও দেখতে চায়।
নতুন দেশ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনশীল—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
শীতের ছুটিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে হৃদিতা বেড়াতে যায় সেন্টমার্টিন দ্বীপে। সেখানকার সামুদ্রিক প্রবাল, সারি সারি নারিকেল গাছ, মাছ ধরার বড় বড় নৌকা ওর মনে কৌতূহল জাগায়। দিগন্ত বিস্তৃত নীলাভ জলরাশি, পরিষ্কার আকাশ ওকে নিয়ে যায় অন্য এক জগতে। ওর ইচ্ছে হয় সমুদ্রের নানা রঙের মাছের সঙ্গে খেলা করতে—আবার কখনো বা আকাশে পাখি হয়ে উড়ে বেড়াতে।
ক. নীল আকাশের মাঝে কী সাজে?
খ. ‘থাকি ঘরের কোণে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. হৃদিতার সেন্টমার্টিনে দেখা দৃশ্যে ‘নতুন দেশ’ কবিতায় চিত্রিত কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি যেন ‘নতুন দেশ’ কবিতার মূলভাবকে ধারণ করে আছে।”—উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. নীল আকাশের মাঝে পাহাড়-চূড়া সাজে।
খ. ‘থাকি ঘরের কোণে’ বলতে কবি সেই সীমাবদ্ধ জীবনযাত্রার কথা বোঝাতে চেয়েছেন, যেখানে মানুষ চার দেয়ালের মাঝে বন্দী থাকে এবং নতুন জগৎ, নতুন দেশ কিংবা প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখার সুযোগ পায় না। এটি শিশু মনোভাবেরও প্রকাশ, যেখানে শিশুদের মনে অজানার প্রতি কৌতূহল থাকে, তারা দূর দেশ, নতুন স্থান, অজানা পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চায়। কবিতার বক্তব্য অনুযায়ী, কবি নিজেকে ঘরের কোণে বন্দী মনে করেন এবং নতুন দেশ দেখার আকাক্সক্ষা প্রকাশ করেন।
গ. হৃদিতার সেন্টমার্টিনে দেখা দৃশ্য ‘নতুন দেশ’ কবিতায় চিত্রিত অজানা দেশ ও প্রকৃতির প্রতি কৌতূহল এবং অন্বেষণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। কবিতায় কবি দূরদেশে ভেসে যাওয়া নৌকার দিকে তাকিয়ে ভাবেন, সেখানে কেমন মানুষ থাকে, তারা কেমন পোশাক পরে, কীভাবে জীবনযাপন করে। কবি নতুন দেশ, অচেনা প্রকৃতি, পাহাড়-পর্বত, বন-জঙ্গল ও সাগরের ওপারের সৌন্দর্য সম্পর্কে জানার আকাক্সক্ষা প্রকাশ করেন।
একইভাবে, হৃদিতাও সেন্টমার্টিনের নতুন ও মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি দেখে অভিভূত হয়। তার মনে কৌতূহল জাগে প্রবাল, নারিকেল গাছ, মাছ ধরার নৌকা, নীল জলরাশি ও আকাশের সৌন্দর্য দেখে। সে চায় সমুদ্রের রঙিন মাছের সঙ্গে খেলা করতে এবং পাখির মতো আকাশে উড়ে বেড়াতে। এ থেকে বোঝা যায়, হৃদিতার অভিজ্ঞতায় কবিতার সেই নতুন দেশ দেখার আকাক্সক্ষা ও অজানার প্রতি বিস্ময় প্রতিফলিত হয়েছে।
ঘ. ‘উদ্দীপকটি যেন ‘নতুন দেশ’ কবিতার মূলভাবকে ধারণ করে আছে।’—উক্তিটি যথার্থ, কারণ উদ্দীপকের মূল ভাবনা ও ‘নতুন দেশ’ কবিতার মূলভাবের মধ্যে গভীর সাদৃশ্য রয়েছে।
‘নতুন দেশ’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নতুন দেশ ও প্রকৃতি সম্পর্কে জানার আকাক্সক্ষা প্রকাশ করেছেন। তিনি দূরের দেশ, অপরিচিত মানুষ, নতুন বন-জঙ্গল, পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র ও জীবজগতের প্রতি বিস্ময় প্রকাশ করেন। কবিতার বালক চরিত্রটি ঘরের কোণে থেকে দূরদেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে এবং অজানা সৌন্দর্য আবিষ্কারের ইচ্ছা পোষণ করে।
অন্যদিকে, উদ্দীপকের হৃদিতাও নতুন জায়গা সেন্টমার্টিনে গিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়। সমুদ্রের প্রবাল, নীল জলরাশি, সারি সারি নারিকেল গাছ দেখে তার মনে কৌতূহল জাগে। সে চায় সমুদ্রের রঙিন মাছের সঙ্গে খেলা করতে এবং আকাশে পাখির মতো উড়তে। তার মনও কবিতার বালকের মতো নতুন পরিবেশ ও প্রকৃতির সৌন্দর্যে হারিয়ে যায়।
উদ্দীপকের হৃদিতার অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা ‘নতুন দেশ’ কবিতার মূলভাবকে ধারণ করে আছে। কারণ উভয় ক্ষেত্রেই নতুনকে জানার আকাক্সক্ষা, প্রকৃতির প্রতি মুগ্ধতা এবং অজানার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে। তাই বলা যায়, উক্তিটি যথার্থ।
সৃজনশীল—২: নিচের কবিতাংশটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
দেখ চেয়ে ওই ঝর্ণা ধারা কেমন ব’য়ে যায়
ঝিকমিকিয়ে মাঠের পর ছায়াপথের প্রায়।
ঘুমিয়ে ছিল সে এতদিন মেঘের স্বপন-লোক
বনগিরির শীর্ষে নেমে খুলল তাহার চোখ।
পাথর-নুড়ির সংঘাতে তার বাজে গানের সুর
আর্শি সম পেশানি তার স্বচ্ছ-সুমধুর।
সাগর পানে যায় ছুটে সে দুরন্ত দুর্বার
চলা ছাড়া জানে না সে অন্য কিছু আর।
ক. নৌকো কোথায় বাঁধা আছে?
খ. ‘নৌকো জলের ঢেউয়ে নাচে’—বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের কবিতাংশের সাথে ‘নতুন দেশ’ কবিতার কোন দিকটির সাদৃশ্য আছে দেখাও।
ঘ. “উদ্দীপকের ঝরনা ‘নতুন দেশ’ কবিতার নৌকোরই সমার্থক”—উক্তিটির সত্যতা যাচাই কর।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. নৌকা ঘাটের কাছে বাঁধা আছে।
খ. ‘নৌকো জলের ঢেউয়ে নাচে বলতে’—ঢেউয়ের কারণে নৌকার দুলে ওঠাকে বোঝায়। নৌকো যখন ঘাটে বাঁধা থাকে তখন নদীর ঢেউ এসে নৌকোর তলদেশে আছড়ে পড়ে তখনই নৌকোটি দুলে ওঠে এবং তা উঁচু নিচু হতে থাকে। এই অবস্থাকে কবি নৌকো জলের ঢেউয়ে নাচে বলা হয়েছে।
গ. উদ্দীপকের ঝরনাধারার ছুটে চলার সাথে ‘নতুন দেশ’ কবিতার মাঝনদীতে নৌকোর ভাটার টানে ছুটে চলার বিষয়টির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ‘নতুন দেশ’ কবিতায় বলা হয়েছে যে নৌকোটি ঘাটে বাঁধা ছিল সেটি আজ ভাটার টানে মাঝনদীতে বয়ে চলেছে। এটি এখন কোথায় গিয়ে পৌঁছবে তার কোনো ঠিক নেই। হয়তো নতুন কোনো দেশে বা নতুন পরিবেশে গিয়ে তা পৌঁছাবে। নৌকোর এই চলমানতা যেন বিশেষ কোনো অর্থ প্রকাশ করে।
উদ্দীপকে উল্লেখ করা হয়েছে ঝরনাধারা বয়ে চলার কথা। ঝরনাধারা ছায়াপথের মতো নিচে নেমে আসে। বনগিরির শীর্ষে নেমে যেন তার চোখ খুলে যায়। পাথর শাড়ির সংঘাতে তার কণ্ঠে গানের সুর ভেসে ওঠে। এই ঝরনা ধারা দুরন্ত দুর্বার গতিতে সাগরের পানে ছুটে যায়। সে ছুটেই চলে। নতুন দেশ কবিতায়ও ভাটার টানে নৌকোগুলো বয়ে যায়। তাই নৌকোয় বয়ে যাওয়ার সাথে ঝরনাধারায় বয়ে চলা সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. “উদ্দীপকের ঝরনা ‘নতুন দেশ’ কবিতার নৌকোরই সমার্থক”—কথাটি যুক্তিযুক্ত। ‘নতুন দেশ’ কবিতায় কবি একটি প্রবহমান নদীতে নৌকোর বয়ে চলার কথা উল্লেখ করেছে। যে নৌকাগুলো ভাটার টানে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছে। কবিতার শিশুটি যেন অমনি একটি নৌকোয় চেপে দূরদূরান্তে চলে যেতে চায়। প্রকতির রহস্য অনুসন্ধানে যেন এমনি একটি নৌকোর প্রয়োজন।
উদ্দীপকে ঝরনাধারা তার আপন গতিতে ছুটে চলেছে। এই ঝরনা এতদিন মেঘের দেশে ঘুমিয়েছিল। এখন সে নেমে এসে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে সাগরের পানে। চলার পথে তার পাথর-নুড়ির সাথে সংঘর্ষ লেগে যেন গানের সুর বেজে ওঠে।
তাই উদ্দীপকে ঝরনাধারা ও ‘নতুন দেশ’ কবিতার নৌকো একইভাবে নিরুদ্দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। বিরামহীন ছুটে চলাই যেন তার ধর্ম। তাই উদ্দীপকের ঝরনাধারা ও ‘নতুন দেশ’ কবিতায় নৌকো সত্যিকার অর্থেই সমার্থক।
নতুন দেশ কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সৃজনশীল—৩: নিচের চিত্রটি লক্ষ্য করো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
ক. ছোটদের জন্য লেখা রচনাগুলো নিয়ে সংকলিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বইটির নাম কী?
খ. বরফ ভেঙে ডিঙিয়ে যাওয়া বলতে কী নির্দেশ করা হয়েছে—ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের ছবিটি ‘নতুন দেশ’ কবিতার কোন দিকটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের ছবিটি ‘নতুন দেশ’ কবিতাটিকে পুরোপুরি ধারণ করতে পারেনি”—বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল—৪: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
“নৌকা তোমার ঘটে বাঁধা আছে-যাবে কি অনেক দূরে?
পায়ে পড়ি মাঝি, সাথে নিয়ে চলো মোরে আর ছোকানুরে।
আমারে চেনো না? আমি-যে কানাই! ছোকানু আমার বোন
তোমার সঙ্গে বেড়াবো আমরা মেঘনা, পদ্মা, শোন।
অনেক রঙের পাল আছে মাঝি? বেগুনি, বাদামি, লাল?
হলদেও? —তবে সেটা দাও আজ, বেগুনিটা দিয়ো কাল।
সবগুলো নদী দেখাবে কিন্তু!—আগে পদ্মায় চলো,
দুপুরে রোদে ঝলমল জল ব’য়ে যায় ছলোছলো
শুয়ে-শুয়ে দেখি অবাক আকাশ, আকাশ মস্ত বড়,
পৃথিবীর সব নীল রং বুঝি সেখানে করেছে জড়ো।
ওটা চর বুঝি? একটু রাখো না! —এ তো ভারি সুন্দর,
এ যেন নতুন কার্পেট পাতা—এই পদ্মার চর?”
ক. ‘নতুন দেশ’ কবিতাটি কোন গ্রন্থ থেকে চয়ন করা হয়েছে?
খ. ভাটার টান বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের কবিতাংশের সাথে ‘নতুন দেশ’ কবিতার সাদৃশ্য নির্ণয় কর।
ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশ ‘নতুন দেশ’ কবিতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হলেও পরিপূর্ণ ভাব ধারণ করতে পারেনি—কথাটি বিচার কর।
আরও দেখো—সপ্তম শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সমাধান
সপ্তম শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের সপ্তবর্ণা বাংলা বই থেকে নতুন দেশ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য ৪টি প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়া হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক অনুধাবনমূলক, জ্ঞানমূলক এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post