কোর্সটিকায় ইতোমধ্যে নতুন কারিকুলামের ৯ম শ্রেণির প্রতিটি বইয়ের সমাধান দেওয়া শুরু হয়েছে। আজকে আমরা নবম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ২য় অধ্যায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো। ৯ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষার এই অধ্যায়ের নাম হচ্ছে– ইবাদাত। আজকের আলোচনা শেষে তোমরা পেয়ে যাবে এই অধ্যায়ের ওপর একটি ক্লাস।
উক্ত ক্লাসে ইবাদাত অধ্যায়টি ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে এই অধ্যায়ে যেসকল কাজ করতে বলা হয়েছে সেসকল কাজ কীভাবে সম্পন্ন করবে সেটাও বলে দেওয়া হয়েছে। ৯ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের সমাধান এভাবে তোমরা ইসলাম শিক্ষা বইটি সহজে বুঝতে পারবে।
নবম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ২য় অধ্যায় সমাধান
পৃথিবীর সকল মাখলুককে মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। আর মানুষ ও জিন জাতিকে শুধু আল্লাহর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, “আমি সৃষ্টি করেছি জ্বিন এবং মানুষকে এই জন্য যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে”। (সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ৫৬) ইবাদাতের মুল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্ট অর্জন করা। সুতরাং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শরিয়ত সমর্থিত যেকোনো উত্তম কাজই ইবাদাত।
ইবাদাত অর্থ আনুগত্য করা, বিনয় প্রকাশ করা, নমনীয় হওয়া, দাসত্ব করা। ইসলামের পরিভাষায় জীবনের সকল কাজ-কর্মে আল্লাহর বিধি-বিধান মেনে চলাকে ইবাদাত বলে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে তোমরা ইবাদাতের পরিচয়, তাৎপর্য ও প্রকারভেদ সম্পর্কে জেনেছ। ইসলামের প্রধান কয়েকটি ইবাদাত সালাত (নামায), সাওম (রোযা) ও যাকাত সম্পর্কে জানতে পেরেছ। এখানে আমরা ইসলামের মৌলিক ইবাদাতগুলোর মধ্যে সালাত (নামায), সাওম (রোযা), যাকাত ও হজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
সালাত
করেছ। এখন নিশ্চয়ই বাস্তব জীবনে সেগুলো অনুশীলন ও চর্চা করো। নবম শ্রেণির এই অধ্যায় থেকে চারটি ইবাদাত সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ধারণা অর্জন করবে। এভাবে এই অধ্যায়ের বিভিন্ন অংশে শিক্ষণ নির্দেশনা অনুযায়ী ইবাদাতগুলো নিজে অনুশীলন ও চর্চা করার মাধ্যমে ইবাদাতের মূল শিক্ষা আত্মস্থ ক; পারবে।
এই অধ্যায়ের পাঠের আলোচনা শুরুর পূর্বেই একটু মনে করার চেষ্টা করো, পূর্বের শ্রেণির ইবাদাত অধ্যায়ে তুমি কী কী পড়েছিলে বা শিখেছিলে? এই ব্যাপারে তোমার সহপাঠী বন্ধুদের সহায়তা নাও, প্রয়োজনে শ্রেণি শিক্ষকের সহায়তা নাও। শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসারে এই অধ্যায়ের বিভিন্ন কার্যক্রমে তুমি অংশগ্রহণ করবে। তাহলে চলো, আমরা এই ইবাদাত- সংক্রান্ত আলোচনা শুরু করি।
নামাজ শব্দটি ফারসি ভাষার। আরবিতে সালাত। সালাত সর্বোত্তম ইবাদাত। সালাতই একমাত্র ফরয ইবাদাত যা নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব, সুস্থ-অসুস্থ প্রত্যেক মু’মিন বান্দার ওপর প্রতিদিন পাঁচবার আদায় করা ফরয। কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার সালাতের হিসাব নেওয়া হবে। কোনো কারণে দাড়িয়ে সালাত আদায় করতে না পারলে, বসে আদায় করতে হবে, বসে আদায় করতে না পারলে শুয়ে সালাত আদায় করতে হবে। তাও সম্ভব না হলে ইশারায় সালাত আদায় করতে হবে।
শারীরিক অসুস্থতার কারণে ওযু করতে না পারলে বা পানি পাওয়া না গেলে তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করতে হবে। কিন্তু প্রত্যেক বান্দাকে সালাত আদায় করতেই হবে। কোনো কারণে যদি সালাত কাযা হয়েই যায়, তাহলে অবশ্যই কাযা সালাত আদায় করে নিতে হবে।
তোমরা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে সালাত আদায়ের প্রয়োজনীয় নিয়মাবলি শিখেছ ও অনুশীলন করেছ। অষ্টম শ্রেণিতে সালাতুল আওয়াবিন, সালাতুত তাহাজ্জুদসহ বিভিন্ন নফল সালাত সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছ। প্রয়োজনীয় নিয়মাবলি ও সালাতের ধর্মীয় ও সামাজিক গুরুত্ব সম্পর্কে শিখবে। তাহলে চলো এবার আলোচনা শুরু করা যাক।
সালাতের ইমাম
ইমাম শব্দটি একবচন, বহুবচনে আইম্মাহ। ইমাম শব্দের অর্থ নেতা, সর্দার, প্রধান, অগ্রণী, দিক-নির্দেশক, দলপতি ইত্যাদি। পরিভাষায় জামা’আতে সালাত আদায়ের সময় মুসল্লিগণ যাকে অনুসরণ করে সালাত আদায় করে, তাকে ইমাম বলা হয়। ইমাম সালাত পরিচালনা করেন।
ইমামের যোগ্যতা
একজন ইমামের জন্য নিম্নোক্ত যোগ্যতা থাকা অপরিহার্য।
১. মুসলমান হওয়া;
২. প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া;
৩. সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হওয়া;
8. পুরুষ হওয়া;
৫. বিশুদ্ধভাবে কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত করতে সক্ষম হওয়া ও নামাযের বিধি-বিধান সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান থাকা।
ইমামতের জন্য সর্বাধিক যোগ্য ব্যক্তি
উপস্থিত মুসল্লিগণের মধ্যে যখন নির্ধারিত ইমাম অথবা রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তিদের কেউ উপস্থিত না থাকেন, তখন নিম্নবর্ণিত ব্যক্তিগণ পর্যায়ক্রমে ইমামতের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন।
১. যিনি নামাযের মাসয়ালা-মাসায়েল সম্পর্কে বেশি জানেন, তিনিই ইমাম নির্বাচিত হবেন।
২. এ গুণে সবাই সমান হলে বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াতকারী ব্যক্তি ইমাম হবেন।
৩. এক্ষেত্রেও সবাই সমান হলে যিনি সবচেয়ে বেশি খোদাভীরু তিনি ইমাম হবেন।
৪. এতেও যদি সমান হয়, তাহলে যিনি বয়সে বড় তিনিই ইমাম হবেন।
৫. এতেও যদি সকলে সমান হন, তাহলে উপস্থিত মুসল্লিগণের মতামতের ভিত্তিতে ইমাম নির্বাচিত হবেন।
ইমামের দায়িত্ব পালনের নিয়ম
ইমাম নামায শুরু করার সময় মুসল্লিগণ কাতার সোজা করে দাঁড়াবেন। মুসল্লিগণ প্রতিটি ক্ষেত্রে ইমামকে অনুসরণ করবেন। অর্থাৎ ইমাম তাকবিরে তাহরিমা বাঁধার পর মুক্তাদিগণ তাকবিরে তাহরিমা বাঁধবেন। ইমাম রুকুতে যাওয়ার পর মুক্তাদিগণ রুকুতে যাবেন। কোনো ক্ষেত্রে মুক্তাদি ইমামের আগে রুকু, সিজদা বা কোনো রুকন আদায় করলে মুক্তাদির নামায ভেঙে যাবে। ইমামের পেছনে নামায আদায়ের সময় মুক্তাদি সূরা কিরাআত পড়বেন না।
ইমাম তিলাওয়াতে ভুল করলে বা অন্য কোনো ভুল করলে, নিকটবর্তী মুক্তাদি সংশোধন করে দেবেন। কোনো কারণে ইমামের নামায ভেঙে গেলে মুক্তাদির নামাযও ভেঙে যাবে। তাই ইমামকে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে নামায আদায় করতে হয়। যদি ইমামের ওযুভঙ্গ হয়, তবে অন্য কাউকে ইমাম বানিয়ে পেছনে চলে আসতে হবে। নামাযে ইমাম বা মুক্তাদি যে কেউ ঘুমিয়ে পড়লে, বেহুশ হয়ে গেলে অথবা অট্টহাসি দিলে নতুনভাবে ওযু করে পুনরায় নামায শুরু করতে হবে।
ইমামের দায়িত্ব
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইমাম ও মুয়াজ্জিনের জন্য দোয়া করেছেন। প্রিয় রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “ইমাম হলেন জিম্মাদার আর মুয়াজ্জিন হলেন আমানতদার। হে আল্লাহ! আপনি ইমামদের সুপথে পরিচালিত করুন এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করে দিন”। (আবু দাউদ, তিরমিযি )
ইমামতি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব। ইমামকে মানবতার পথপ্রদর্শক ও সরল পথের দিশারি হতে হবে। একজন প্রকৃত ইমামই পারেন, দিগভ্রান্ত মানুষকে সরল পথে পরিচালিত করতে এবং আল্লাহর সঙ্গে মানুষকে পরিচয় করিয়ে দিতে। ইমাম শুধু পীচ ওয়াক্ত নামায পড়িয়ে নিজেকে দায়িত্বমুক্ত ভাবলে তা কখনো কাম্য নয়। মানুষ, মনুষ্যত্ব ও সমাজ নিয়েও একজন ইমামকে ভাবতে হবে। তাঁকে মানুষের সংশোধনের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
যদি মুসল্লিদের নামাযে ভুল-ত্রুটি হয়, তাহলে কিছু সময় বের করে তাদেরকে সঠিকভাবে নামায আদায় করা শেখাতে হবে। যাঁরা কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত শিখেনি, তাদের কুরআন মাজিদ শেখার ব্যবস্থা করতে হবে। কুরআন মাজিদের অন্তত যতটুকু অংশ সঠিকভাবে তিলাওয়াত করতে জানলে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা যায়, এতটুকু তিলাওয়াত শেখা ফরয।
মুসল্লিদের ফরয পরিমাণ কিরাআত শুদ্ধ না থাকলে এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। নামাযের প্রতি অলস ও উদাসীনকে সচেতন করতে হবে, নামাযের গুরুত্ব বুঝাতে হবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামা’আতের সঙ্গে আদায়ের প্রতি উৎসাহিত করতে হবে। সমাজের কেউ শরিয়তবিরোধী কাজ করলে ধীরে ধীরে তাকে সংশোধনের চেষ্টা করাও একজন ইমামের দায়িত্ব।
সালাতুল ইশরাক
ইশরাক অর্থ উদয়, প্রভাত বা সকাল। ইশরাকের নামায হলো প্রভাতের বা সকালের নামায। সূর্যোদয়ের পর যে সালাত আদায় করা হয়, তাকে ইশরাকের নামায বলে। হাদিসে এ সালাতকে সালাতুদ দোহাও বলা হয়েছে। সালাতুল ইশরাক বা ইশরাকের নামায আদায় করা সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা অর্থাৎ আদায় করলে সাওয়াব পাওয়া যায়, আদায় না করলে কোনো গুনাহ হয় না।
সূর্যোদয়ের পর থেকে দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত এ সালাত আদায় করা যায়। তবে ওয়াক্তের শুরুতেই ইশরাকের নামায পড়ে নেওয়া উত্তম। ফজরের সালাত আদায় করে সূর্যোদয় পর্যন্ত নামাযের স্থানে বসে দু’আ, দুরুদ, তাসবিহ পাঠ করে এরপর সূর্য পরিপূর্ণ উদয় হলে ২ রাকা’আত করে ৪, ৬ বা ৮ রাকা’আত নামায আদায় করতে হয়।
ইশরাকের নামাযের আগে দুনিয়ার কোনো কাজকর্ম না করা উত্তম। কোনো কাজকর্ম করলেও সালাত আদায় করা যাবে, তবে তাতে সাওয়াব কম হবে। যেহেতু সূর্যোদয়ের সময় নামায পড়া হারাম, তাই সূর্যোদয়ের সময় থেকে অন্তত ১৫-২০ মিনিট সময় দেরি করে ইশরাকের নামায আদায় করতে হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই নামাযের জন্য দাঁড়ানো উচিত নয়। কারণ, তাতে গুনাহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ইশরাকের নামায অনেক ফযিলতপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ফযিলত সম্পর্কে বলেন, “যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামা’আতে আদায় করে, তারপর সূর্যোদয় পর্যন্ত সেখানেই বসে থাকে এবং আল্লাহর যিকর করে, তারপর দুই রাকা’আত সালাত আদায় করে, সে একটি হজ ও একটি ওমরাহ এর সাওয়াবের সমান সাওয়াব পাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) পূর্ণ (সাওয়াব) কথাটি তিনবার বলেছেন”। (তিরমিযি)
এ নামায আদায়কারীর সগিরা গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.), সাহাবিগণ ও আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ এ নামায আদায় করতেন। আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভ ও অধিক সাওয়াব অর্জনের জন্য আমরা নিয়মিত ইশরাকের নামায আদায় করব।
সালাতুল ইসতিসকা
ইসতিসকা অর্থ পানি বা বৃষ্টি প্রার্থনা করা। অনাবৃষ্টির সময় আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করে যে সালাত আদায় করা হয়, তাকে ইসতিসকার নামায বলে। এ নামায সুন্নাত। প্রিয় নবি (সা.) বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে বলতেন: হে আল্লাহ! তোমার বান্দা ও পশুপালকে পানি দান করো। তাদের প্রতি তোমার অনুগ্রহ বর্ষণ করো। মৃত জমিনকে জীবিত করো। (আবু দাউদ)
উপরে নবম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ২য় অধ্যায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হলো। আলোচনা শেষে ইবাদাত অধ্যায়ের উপর একটি ক্লাস দেওয়া হয়েছে। উপরের আলোচনার মাধ্যমে তোমরা এই অধ্যায়টি সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবে। ক্লাসটি করার মাধ্যমে এই অধ্যায়ের কঠিন বিষয়গুলো সহজে বুঝতে পারবে ও ইবাদাত অধ্যায়ে দেওয়া বাড়ির কাজগুলো করতে পারবে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post