কোর্সটিকায় ইতোমধ্যে নতুন কারিকুলামের ৯ম শ্রেণির প্রতিটি বইয়ের সমাধান দেওয়া শুরু হয়েছে। আজকে আমরা নবম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ৩য় অধ্যায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো। ৯ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষার এই অধ্যায়ের নাম হচ্ছে– কুরআন ও হাদিস শিক্ষা। আজকের আলোচনা শেষে তোমরা পেয়ে যাবে এই অধ্যায়ের ওপর একটি ক্লাস।
উক্ত ক্লাসে কুরআন ও হাদিস শিক্ষা অধ্যায়টি ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে এই অধ্যায়ে যেসকল কাজ করতে বলা হয়েছে সেসকল কাজ কীভাবে সম্পন্ন করবে সেটাও বলে দেওয়া হয়েছে। ৯ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের সমাধান এভাবে তোমরা ইসলাম শিক্ষা বইটি সহজে বুঝতে পারবে।
নবম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ৩য় অধ্যায় সমাধান
মহান আল্লাহ মানুষকে তাঁর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। ইসলামি শরিয়ত নির্দেশিত পন্থায় এই ইবাদাত পালন করতে হবে। ইসলামি শরিয়তের প্রথম উৎস হচ্ছে আল কুরআন। এ গ্রন্থের অপর নাম ফুরকান। হক ও বাতিলের মধ্যে এ ঐশী গ্রন্থ যেহেতু পার্থক্য নির্ণয় করে, সেহেতু একে ফুরকান হিসেবে অভিহিত করা হয়। কুরআনের প্রতিটি শব্দ আল্লাহ প্রদত্ত।
কুরআন পড়া ও অনুধাবন করার সময় আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস থাকতে হবে। কুরআন নির্দেশিত পথে চলা আল্লাহর রহমত প্রাপ্তির একমাত্র পথ। কুরআন মানুষের জাগতিক ও পারলৌকিক জ্ঞানের আঁধার। তাই কুরআন পাঠ এবং অনুধাবন বান্দার একান্ত কর্তব্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জীবনাচার হচ্ছে সুন্নাহ। যা ইসলামি শরিয়তের দ্বিতীয় উৎস।
রাসুলুল্লাহ (সা.) যা বলেছেন, যা করেছেন এবং যে পথে চলেছেন তা অনুসরণ করলে কুরআনের নির্দেশ সঠিকভাবে পালন করা হয়। সুন্নাহ বা হাদিস ছাড়া কুরআন অনুধাবন করা ও মেনে চলা অসম্ভব। চলো শরিয়তের উৎস হিসেবে আল কুরআন ও আল হাদিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি।
পবিত্র কুরআনের পরিচয়
মহাবিশ্বের বিস্ময়কর গ্রন্থ আল-কুরআন আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে নাজিলকৃত সর্বশেষ আসমানি কিতাব। কুরআন শব্দটি কিরাআতুন থেকে উদ্ভূত। যার অর্থ পাঠ করা, আবৃত্তি করা, তিলাওয়াত করা ইত্যাদি। আরবি ব্যাকরণ অনুযায়ী কুরআন শব্দটি পঠিত অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ যা পাঠ করা হয়, তা-ই পঠিত গ্রন্থ। তবে কারো কারো মতে, কুরআন শব্দটি (কারনুন) থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ মিলিত।
পরিভাষায়, কুরআন হচ্ছে মহান আল্লাহর বাণী, যা মুহাম্মাদ (সা.)-এর ওপর দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে অবতীর্ণ হয়েছে। পবিত্র কুরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে কুরআনের সর্বপ্রথম সূরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত নাযিল হয়। কুরআনে সর্বমোট ১১৪টি সূরা আছে।
এ ছাড়াও আল কুরআন তিলাওয়াতের সুবিধার্থে ৭টি মনজিল ও ৩০টি পারায় বিভক্ত করা হয়েছে। ৫৪০টি রুকু ও ১৪টি সিজদা আছে। কেবল সূরা তাওবা ব্যতীত প্রতিটি সূরার শুরুতে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম” বাক্যটির উল্লেখ রয়েছে। মোট আয়াতের সংখ্যা প্রায় ৬,২৩৬ মতান্তরে ৬,৬৬৬টি।
বিশ্বজনীন এ গ্রন্থের আবেদন ও উপযোগিতা সব যুগে এবং সব স্থানেই কার্যকর রয়েছে। কুরআনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এ গ্রন্থ দুই পর্যায়ে নাযিল হয়েছে। প্রথমে সম্পূর্ণ কুরআন লাওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে “বাইতুল ইজ্জাহ’ নামকস্থানে নাযিল হয়েছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নবুওয়াতের ২৩ বছর ব্যাপী ধীরে ধীরে বিভিন্ন ঘটনা ও কারণ উপলক্ষ্যে এবং বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে নাযিল হয়েছে। কুরআনের সূরাগুলো মহান আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী সাজানো হয়েছে। এক্ষেত্রে অবতরণের ধারাবাহিকতা অনুসরণ করা হয়নি।
যখন ওহি অবতীর্ণ হতো, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) জিবরাঈল (আ:)-এর সঙ্গে সঙ্গে তা বারবার পড়তে থাকতেন যাতে করে মুখস্থ হয়ে যায়। সাহাবিদেরকেও মুখস্থ করার নির্দেশ দিতেন। কুরআন মাজিদ যেহেতু একসঙ্গে অবতীর্ণ হয়নি; বরং বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজন অনুসারে অল্প অল্প করে অবতীর্ণ হয়েছে, সেহেতু রাসুলুল্লাহ (সা.) -এর যুগে একত্রে গ্রন্থাকারে লিখে সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না।
সেজন্য কুরআন মুখস্থ করে রাখার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হতো। আসমানি গ্রন্থগুলোর মধ্যে আল্লাহ তা’আলা আল কুরআনকে এ বিশেষত্ব দান করেছেন যে, কলম-কাগজের চেয়েও একে অগণিত সংখ্যক হাফেজ কুরআনের স্মৃতিপটে সংরক্ষণ করেছেন।
ওহি
ওহি শব্দটি আরবি। এর অর্থ হলো গোপনে কোনো কিছু জানিয়ে দেওয়া। এ ছাড়াও শব্দটি ইঙ্গিত করা, লেখা এবং গোপন কথা অর্থেও ব্যবহৃত হয়। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে নবি- রাসুলদের ওপর অবতারিত বাণীকে ওহি বলে।
ওহি দুই প্রকার। যথা:
১. ওহি মাতলু (আল কুরআন)
২. ওহি গায়রে মাতলু (আল হাদিস)
১. ওহি মাতলু: মাতলু অর্থ পঠিত, যা পাঠ করা হয়। যে ওহির ভাব, ভাষা, অর্থ, বিন্যাস সকল কিছুই মহান আল্লাহর এবং মহানবি (সা.) তা হুবহু আল্লাহর ভাষায় প্রকাশ করেছেন, তাকে ওহি মাতলু বলে। এটিকে “ওহি জলি’ বা প্রত্যক্ষ ওহি বলা হয়। কুরআন মাজিদ যেহেতু সালাতে তিলাওয়াত করা হয়, তাই আল কুরআনকে ওহি মাতলু বলে।
২. ওহি গায়রে মাতলু: গায়রে মাতলু অর্থ অপঠিত। যে ওহির ভাব মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে, কিন্তু রাসুল (সা.) নিজ ভাষায় তা বর্ণনা করেছেন তাকে ওহি গায়রে মাতলু বলে। একে ওহি খফি বা প্রচ্ছদ ওহিও বলা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিস এ প্রকার ওহির উদাহরণ। এটি সালাতে কিরআত হিসেবে তিলাওয়াত করা হয় না বলে এটিকে অপঠিত ওহি বলা হয়।
কুরআন মাজিদের বিভিন্ন স্থানে প্রথম প্রকার ওহিকে “কিতাব’ বা গ্রন্থ এবং দ্বিতীয় প্রকার ওহিকে “হিকমাহ” বা প্রজ্ঞা বলে অভিহিত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি অবশ্য অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের নিজেদের মধ্য থেকে তাদের নিকট রাসুল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাঁর আয়াতসমূহ তাদের নিকট আবৃত্তি করেন, তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং কিতাব ও হিকমাহ তাদেরকে শিক্ষা দেন, যদিও তারা পূর্বে স্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যেই ছিল।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৪)
দ্বিতীয় প্রকারের ওহি “হাদিস” বা “সুন্নাত” নামে পৃথক ভাবে সংকলিত ও সংরক্ষিত হয়েছে।
ওহি অবতরণের পদ্ধতি
মহানবি (সা.) এর ওপর বিভিন্ন পদ্ধতিতে ওহি নাযিল হতো। প্রসিদ্ধ মতে মহানবি (সা.) এর ওপর সাত পদ্ধতিতে ওহি নাযিল হয়েছে, যা নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. ঘণ্টা ধ্বনির ন্যায়: এটা ওহি নাযিলের প্রথম পদ্ধতি। রাসুলের নিকট অধিকাংশ সময় এ পদ্ধতিতে ওহি নাযিল হতো। ওহি নাযিলের পূর্বে প্রথমে বিরতিহীনভাবে ঘণ্টাধ্বনির মতো শব্দ আসতে থাকত। মহানবি (সা.) নিজ কানে শুনতেন। এ সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) তীব্র শীতের মধ্যেও ঘর্মাক্ত হয়ে পড়তেন। তিনি আরোহী অবস্থায় থাকলে শক্তিশালী উটও ওহির ভার বহন করতে না পেরে বসে পড়ত। ওহি নাযিলের এ পদ্ধতি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য সবচেয়ে কষ্টকর ছিল।
২. মানুষের আকৃতিতে ফেরেশতার আগমন: হযরত জিবরাইল (আ.) কখনো কখনো মানুষের আকৃতিতে ওহি নিয়ে আসতেন। অধিকাংশ সময় বিশিষ্ট সাহাবী হযরত দাহিয়াতুল কালবি (রা.)-এর আকৃতিতে ‘জিবরাইল (আ.) আগমন করতেন। এ পদ্ধতিতে ওহি রাসুল (সা.) এর জন্য তুলনামূলক সহজ ছিল।
৩. জিবরাইল (আ.)- এর নিজস্ব আকৃতিতে আগমন: কখনো কখনো হযরত জিবরাইল (আ.) অন্য কোনো রূপ ধারণ না করে সরাসরি নিজ আকৃতিতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট ওহি নিয়ে আগমন করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনে এরূপ ঘটনা তিন বার ঘটে। প্রথমবার হেরা গুহায় কুরআনের প্রথম ওহি নিয়ে নিজ আকৃতিতে আগমন করেন । দ্বিতীয়বার মি’রাজ রজনীতে, তৃতীয়বার মহানবি (সা.) জিবরাইল (আ.)-কে আসল রূপে দেখার ইচ্ছা পোষণ করায় তিনি নিজস্ব আকৃতিতে আগমন করেছিলেন।
৪. সত্য স্বপ্ন যোগে: মহানবির প্রতি ওহি নাযিলের সূচনা হয়েছিল সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। কুরআন নাযিলের পূর্বে তিনি যা স্বপ্নে দেখতেন, তা-ই ছিল ওহি। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওহির সূচনা হয়েছিল ঘুমের মধ্যে সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। তিনি যখনই কোনো স্বপ্ন দেখতেন, তা প্রত্যুষের আলোর ন্যায় বাস্তবে প্রতিফলিত হতো।”
৫. আল্লাহ তা’আলার সরাসরি কথোপকথন: ওহি নাযিলের আর একটি পদ্ধতি ছিল, কোনো মাধ্যম ছাড়া সরাসরি আল্লাহর সঙ্গে বাক্যালাপ। এই পদ্ধতিকে বলা হয় কালামে ইলাহি। মি’রাজ রজনীতে মহানবি (সা.) সরাসরি মহান আল্লাহর সঙ্গে বাক্যালাপ করেছেন। এ সময়ই উম্মাতে মুহাম্মাদির প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছে।
৬. সরাসরি হৃদয়পটে ওহি ঢেলে দেওয়া: হযরত জিবরাইল (আ.) কখনো সামনে না এসে কোনো মাধ্যম ছাড়া সরাসরি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অন্তরে আল্লাহর বাণী ফুঁকে দিতেন। এক হাদিসে মহানবি (সা.) নিজেই বলেছেন, “হযরত জিবরাইল (আ.) আমার মানসপটে ফুঁকে দিয়েছেন।”
৭. হযরত ইসরাফিল (আ.)- এর মাধ্যমে ওহি প্রেরণ: কখনো কখনো আল্লাহ তা’আলা হযরত ইসরাফিল (আ.)- এর মাধ্যমে মহানবি (সা.)-এর ওপর ওহি নাযিল করতেন।
ওহির গুরুত্ব
ওহির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ফরয। এতে অবিশ্বাস বা সন্দেহ পোষণ করা কুফরি। ওহি মানব জাতির ইহকাল ও পরকালের শান্তি এবং কল্যাণের বার্তা নিয়ে আসে। এ বার্তা গ্রহণকারীর জন্য ওহি কল্যাণকর পথ সহজ করে দেয়। আর যারা ওহিকে অবিশ্বাস করে কিংবা অবজ্ঞা করে তাদের জন্য ভয়াবহ শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
হযরত আদম (আ.) থেকে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) পর্যন্ত অগণিত নবি-রাসুল আগমন করেছেন। নবি-রাসুলদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার মতো ওহির প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করা আবশ্যক। ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ‘নবি মুহাম্মাদ (সা.)- এর মতো পূর্ববর্তী নবিদের ওপর অবতীর্ণ ওহিকেও সত্যবাণী হিসেবে মেনে নেওয়া ইমানের অংশ।
উপরে নবম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ৩য় অধ্যায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হলো। আলোচনা শেষে কুরআন ও হাদিস শিক্ষা অধ্যায়ের উপর একটি ক্লাস দেওয়া হয়েছে। উপরের আলোচনার মাধ্যমে তোমরা এই অধ্যায়টি সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবে। ক্লাসটি করার মাধ্যমে এই অধ্যায়ের কঠিন বিষয়গুলো সহজে বুঝতে পারবে ও কুরআন ও হাদিস শিক্ষা অধ্যায়ে দেওয়া বাড়ির কাজগুলো করতে পারবে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post