কোর্সটিকায় ইতোমধ্যে নতুন কারিকুলামের ৯ম শ্রেণির প্রতিটি বইয়ের সমাধান দেওয়া শুরু হয়েছে। আজকে আমরা নবম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ৪র্থ অধ্যায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো। ৯ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষার এই অধ্যায়ের নাম হচ্ছে– আখলাক। আজকের আলোচনা শেষে তোমরা পেয়ে যাবে এই অধ্যায়ের ওপর একটি ক্লাস।
উক্ত ক্লাসে আখলাক অধ্যায়টি ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে এই অধ্যায়ে যেসকল কাজ করতে বলা হয়েছে সেসকল কাজ কীভাবে সম্পন্ন করবে সেটাও বলে দেওয়া হয়েছে। ৯ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের সমাধান এভাবে তোমরা ইসলাম শিক্ষা বইটি সহজে বুঝতে পারবে।
নবম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ৪র্থ অধ্যায় সমাধান
প্রিয় শিক্ষার্থী,
তোমরা তোমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলাফেরার সময় অনেক কাজ করো। তাই না? কিন্তু তুমি যে কাজগুলো করো তার সবগুলো কি সঠিক বা ইসলামসম্মত? আমরা আলোচ্য অধ্যায়ে আখলাকের গুরুত্ব এবং কতিপয় ভালো ও মন্দ চরিত্র সম্পর্কে জানব। আখলাক শব্দটি আরবি “খুলুকুন” শব্দের বহুবচন। খুলুকুন এর আভিধানিক অর্থ স্বভাব, চরিত্র, আচরণ, অভ্যাস ইত্যাদি।
আখলাক বলতে ভালো স্বভাব আর খারাপ স্বভাব উভয়কেই বোঝায়। আখলাক হলো মানুষের স্বভাবসমূহের সমন্বিত রুপ। পরিভাষায় মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ভালো বা মন্দ সকল আচার-আচরণ, চিন্তা-ভাবনা, মানসিকতা এবং কর্মপন্থাকে একত্রে চরিত্র বা আখলাক বলা হয়। এককথায়, মানুষের সকল কাজ ও নীতির সমষ্টিকেই আখলাক বলা হয়। তাহলে চলো, আখলাক সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
আখলাকের গুরুত্ব
আখলাক মানব জীবনের অমূল্য সম্পদ। ইসলামে আখলাকের গুরুত্ব অপরিসীম। যে জাতির চরিত্র যত উন্নত, সে জাতি তত সমৃদ্ধ। চরিত্রহীন জাতির দ্বারা শান্তি, নিরাপত্তা, সামাজিক ঐক্য, সংহতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়। সমাজে অরাজকতা ও অশান্তি বিস্তার লাভ করে। নবি-রাসুলগণ ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তাঁরা নিজ নিজ জাতিকে উত্তম চরিত্রের শিক্ষা দিয়েছেন। মহানবি (সা.) বলেন: উত্তম চরিত্রের পরিপূর্ণতা দানের জন্যই আমি প্রেরিত হয়েছি। (বায়হাকি)
উত্তম চরিত্রই উন্নত জাতির জীবনীশক্তি। ইহ ও পরকালীন সুখ-শান্তি উত্তম আখলাকের ওপরই নির্ভরশীল। চরিত্রবান ব্যক্তি যেমন সমাজের চোখে ভালো, তেমনি মহান আল্লাহর নিকটও প্রিয়। মহানবি (সা.) বলেন: আল্লাহ তা’আলার নিকট সেই লোকই অধিক প্রিয়, যার চরিত্র উত্তম। (ইবনে হিব্বান)
উত্তম চরিত্র মানুষকে তাকওয়া অর্জনের দিকে নিয়ে যায়। আর চরিত্রবান ব্যক্তিকে সবাই শ্রদ্ধা-সম্মান ও বিশ্বাস করে এবং ভালোবাসে। তাঁর বিপদে-আপদে সবাই এগিয়ে আসে। তিনি সমাজে মর্যাদার উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হন। অপরদিকে দুশ্চরিত্র ব্যক্তিকে সবাই ঘৃণা ও নিন্দা করে। কেউ তাকে ভালোবাসে না, বিশ্বাস করে না, এড়িয়ে চলে। তার বিপদাপদেও কেউ তাকে সাহায্য করে না। যার চরিত্র যত উন্নত আমলের দিক থেকেও সে তত অগ্রসর। নবি করিম (সা.) বলেন: উত্তম চরিত্রই নেক কাজ। (মুসলিম)
উত্তম চরিত্র মু’মিন জীবনের ভূষণ। চরিত্রবলেই মানুষ সর্বত্র সমাদৃত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে যেমন উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন তেমনি মানবজাতিকে সচ্চরিত্র গঠনের শিক্ষা দিয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ মু’মিন হওয়ার জন্য তিনি সৎ ও নৈতিক স্বভাব অনুশীলনের নির্দেশ দিয়েছেন। উন্নত চরিত্র মানুষকে ইমানের পূর্ণতার দিকে নিয়ে যায়।
মহানবি (সা.) বলেন, ‘মু’মিনগণের মধ্যে সেই পূর্ণ ইমানের অধিকারী, যে তাদের মধ্যে চরিত্রের বিচারে সবচেয়ে উত্তম।” (তিরমিযি) প্রকৃতপক্ষে উত্তম চরিত্র পরকালীন জীবনেও মানুষের কল্যাণের হাতিয়ার ও মুক্তির উপায় হবে।
আর চরিত্রহীন ব্যক্তি সকল প্রকার পাপাচারে লিপ্ত থাকে। সে আল্লাহ তা’আলার অবাধ্য হয়। আল্লাহ তা’আলা ‘তাকে ভালোবাসেন না। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা চরিত্রহীন ব্যক্তিকে কঠিন শাস্তি দেবেন। মহানবি (সা.) বলেছেন: দুশ্চরিত্র ও রূঢ় স্বভাবের মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (আবু দাউদ)
উত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি পরকালে অত্যধিক মর্যাদা লাভ করবে। উত্তম চরিত্র মিযানের পাল্লায় অত্যন্ত ভারী হবে। উন্নত চরিত্র মানুষকে ভালো কাজের দিকে ধাবিত করে। আর ভালো কাজ মানুষের পাপকে মুছে দেয়। নবি করিম (সা.) বলেন, “উত্তম চরিত্র পাপকে এমনভাবে বিগলিত করে যেমনভাবে সূর্যতাপ বরফকে ‘বিগলিত করে।’ (বায়হাকি)
আখলাকে হামিদাহ (প্রশংসনীয় চরিত্র)
হামিদাহ শব্দের অর্থ প্রশংসনীয়। আখলাকে হামিদাহ হলো মানুষের প্রশংসনীয় চরিত্র, সুন্দর চরিত্র, উত্তম গুণাবলি, সচ্চরিত্র ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায়, যেসব স্বভাব বা চরিত্র আল্লাহ তা’আলা এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)- এর নিকট পছন্দনীয় ও সমাদৃত তাকে আখলাকে হামিদাহ বলা হয়।
এককথায়, মানব চরিত্রের উত্তম, সুন্দর, নির্মল ও মার্জিত গুণাবলিকে আখলাকে হামিদাহ বলা হয়। যেমন- ধৈর্য্য, সততা, সত্যবাদিতা, ওয়াদা পালন, মানব সেবা, দেশপ্রেম, দয়া, ক্ষমা ইত্যাদি।
আমরা তাওয়াক্কুল, শ্রমের মর্যাদা, সৌহার্দ্য ও সাম্য, শিশুদের প্রতি সদাচার, মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য, প্রবীণ ও বয়োজ্যেষ্ঠদের মর্যাদা ও অধিকার, হালাল উপার্জন ও সমাজসেবা প্রভৃতি প্রশংসনীয় গুণাবলি সম্পর্কে জানব। ৎ
তাওয়াক্কুল
তাওয়াক্কুল আরবি শব্দ। এর অর্থ ভরসা করা, নির্ভর করা, আস্থা রাখা ইত্যাদি। পরিভাষায়, যেকোনো প্রয়োজন কিংবা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ তা’আলার ওপর পূর্ণরূপে নির্ভর করাকেই তাওয়াক্কুল ‘বলে। অন্যকথায় তাওয়াক্কুল হলো, কল্যাণকর বিষয় অর্জনের জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করে ফলাফলের জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা করা এবং তাকদিরের ওপর বিশ্বাস রাখা।
তাওয়াক্কুলের গুরুত্ব ও ফযিলত
ইসলামে তাওয়াক্কুলের গুরুত্ব অপরিসীম। মহান আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুলের পরিমাণ যার যত বেশি, তার সফলতাও তত বেশি। কারণ সফলতা একমাত্র আল্লাহরই হাতে। তাওয়াক্কুলের গুণ অর্জনের জন্য পবিত্র কুরআনে অনেক নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করা মু’মিনের একটি অপরিহার্য গুণ।
আল্লাহর ওপর পূর্ণ তাওয়াক্কুলের মাধ্যমে ইমান বুদ্ধি পায়। বিশ্বাস মজবুত হয়। এটি ইমানের শর্ত। আল্লাহ তা’আলা বলেন: আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। সুতরাং মু’মিনগণ আল্লাহর ওপর নির্ভর করুক। (সূরা আত তাবাগুন, আয়াত: ১৩)
তাওয়াক্কুল একটি ইবাদাত। প্রতিটি কাজে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা মু’মিনের জন্য আবশ্যক। মু’মিন ব্যক্তি কাজের জন্য দৃঢ় সংকল্প করবে। কাজ সম্পাদনের জন্য সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করবে। সে সফল না হলে মুষড়ে পড়বে না। কেননা, তাওয়াক্কুলকারী কখনো হতাশ হয় না। বিপদ-সংকটে ঘাবড়ে যায় না। ঘোর অন্ধকারে আশার আলো দেখে।
আল্লাহকে উপকার ও ক্ষতির একমাত্র মালিক বলে বিশ্বাস করে। সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা’আলার ওপর দৃঢ় আস্থা রাখে। এটি তাওয়াক্কুলের সর্বোচ্চ পর্যায়। আল্লাহ তা’আলা বলেন: অতঃপর আপনি কোনো সংকল্প করলে তখন আল্লাহর ওপর নির্ভর করবেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদের ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫৯)
কুরআন ও হাদিসে তাওয়াক্কুলের অনেক ফযিলত ও উপকারিতা বর্ণনা করা হয়েছে। কেউ যদি আল্লাহর ওপর শতভাগ তাওয়াক্কুল করে, তাহলে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। সে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করে। আর আল্লাহ তা’আলা তার রিজিকের জিম্মাদার হয়ে যান।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমরা যদি প্রকৃতভাবেই আল্লাহ তা’আলার ওপর নির্ভরশীল হতে, তাহলে পাখিদের যেভাবে রিযিক দেওয়া হয়, সেভাবে তোমাদেরও রিজিক দেওয়া হতো। এরা সকালবেলা খালি পেটে বের হয় এবং সন্ধ্যাবেলায় ভরা পেটে ফিরে আসে।” (তিরমিযি)
তাওয়াক্কুলের পদ্ধতি
তাওয়াক্কুল মানে চেষ্টা সাধনা না করে শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা করে হাত গুটিয়ে বসে থাকা নয়। আল্লাহ তা’আলা দুনিয়াকে জীবনোপকরণের কেন্দ্রবিন্দু বানিয়েছেন। তাই জীবন উপকরণ গ্রহণ করতে হবে। শরিয়ত সমর্থিত উপকরণ গ্রহণ করা তাওয়াক্কুল পরিপন্থী নয়; বরং চেষ্টা করার দায়িত্ব আমাদের আর পূর্ণতা দান করবেন আল্লাহ।
এ সম্পর্কে হাদিসে একটি ঘটনা বর্ণিত আছে। একবার এক বেদুইন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে এলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার বাহন তথা উট কোথায় রেখে এসেছ?” বেদুইন সাহাবি বললেন, “ইয়া রাসুলুল্লাহ! মসজিদের বাইরে বাঁধনমুক্ত অবস্থায় রেখে এসেছি এবং আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করেছি।
আল্লাহই দেখবেন আমার উট।” তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘আগে তোমার উটকে বাঁধো, তারপর আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করো।” (তিরমিযি) এ থেকে বোঝা যায়, পূর্ণ চেষ্টা-সাধনার পর আল্লাহ তা’আলার ওপর ভরসা করতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, তাওয়াক্কুল হলো তাওহিদের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। মহান আল্লাহ হলেন সর্বশক্তিমান এবং যাবতীয় উপকার ও ক্ষতির একমাত্র মালিক। তাই আমরা সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করব।
হালাল উপার্জন
মু’মিন জীবনে হালাল উপার্জন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। হালাল উপার্জনের ফলে মানুষের চিন্তা-চেতনা ও কর্মতৎপরতায় আসে পবিত্রতা। স্বভাব-চরিত্র সুন্দর হয়। সুকুমার বৃত্তির বিকাশ ঘটে। ধর্মানুরাগী হতে সহায়তা করে।
“হালাল” আরবি শব্দ। এর অর্থ বৈধ ও পবিত্র। সাধারণত শরিয়ত অনুমোদিত বিষয়কে হালাল বলা হয়। আর উপার্জন হলো, রোজগার ও আয়। সুতরাং হালাল উপার্জন বলতে বিধিসম্মত রোজগার, বৈধ আয়, বৈধ উপার্জন ইত্যাদিকে বুঝায়।
পরিভাষায়, ইসলামি শরিয়ত কর্তৃক অনুমোদিত পন্থায় আয়-রোজগার করাকে হালাল উপার্জন বলে। অন্য কথায় আল্লাহ তা’আলা প্রদত্ত ও রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্দেশিত পন্থায় কুরআন ও সুন্নাহর মূলনীতি অনুযায়ী উপার্জন করাকে হালাল উপার্জন বলে।
হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের শাস্তি ও নিরাপত্তা নির্ভর করে হালাল উপার্জনের ওপর। তাই মানবজীবনে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব অপরিসীম।
আল্লাহ তা’আলা মানুষকে হালাল জীবিকা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। হালাল জীবিকা গ্রহণের মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা নির্দেশ পালন করা যায়। হালাল উপার্জন ইমানের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফরয ইবাদাত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “হালাল জীবিকা উপার্জন করা ফরয ইবাদাতের পর আরেকটি ফরয কাজ।” (বায়হাকি) ইবাদাত কবুলের পূর্বশর্ত হলো হালাল জীবিকা গ্রহণ করা। তাই ইবাদাতে একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতার জন্য হালাল জীবিকা ভক্ষণ করা জরুরি।
উপরে নবম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ৪র্থ অধ্যায় সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হলো। আলোচনা শেষে আখলাক অধ্যায়ের উপর একটি ক্লাস দেওয়া হয়েছে। উপরের আলোচনার মাধ্যমে তোমরা এই অধ্যায়টি সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবে। ক্লাসটি করার মাধ্যমে এই অধ্যায়ের কঠিন বিষয়গুলো সহজে বুঝতে পারবে ও আখলাক অধ্যায়ে দেওয়া বাড়ির কাজগুলো করতে পারবে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post