৯ম শ্রেণির প্রতিটি বইয়ের সমাধান কোর্সটিকায় ইতোমধ্যে দেওয়া শুরু হয়েছে। আজকে আমরা নবম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো। বাংলা বইয়ের এই পরিচ্ছেদ এর নাম হচ্ছে– ধ্বনির উচ্চারণ। এই পরিচ্ছেদে যেসকল কঠিন বিষয় রয়েছে আজকের আলোচনায় সেগুলোকে সহজভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
আজকের আলোচনা শেষে তোমরা বাংলা বইয়ের ধ্বনির উচ্চারণ পরিচ্ছেদের উপর একটি ক্লাস পেয়ে যাবে। তোমরা যদি ক্লাসটি কর তাহলে এই পরিচ্ছেদ সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পারবে সেই সাথে বাড়ির কাজগুলো কীভাবে করবে তাও বলে দেওয়া হয়েছে। ৯ম শ্রেণির বাংলা বইয়ের প্রতিটি পরিচ্ছেদের সমাধান এভাবে পড়লে বাংলা বইটি তোমরা অতিসহজে বুঝতে পারবে।
নবম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ সমাধান
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বিখ্যাত কাব্যের মধ্যে আছে “সোনার তরী”, “চিত্রা, “বলাকা”, “পুনশ্চ” ইত্যাদি। তিনিই প্রথম বাংলা ছোটোগল্প রচনা করেন। রবীন্দ্রনাথের উল্লেখযোগ্য নাটক ‘অচলায়তন”, “ডাকঘর”, “রক্তকরবী’”, “রাজা” ইত্যাদি।
এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি কবিতা দেওয়া হলো। কবিতাটি কবির “কাহিনী” কাব্য থেকে নেওয়া। কবিতাটি প্রথমে নীরবে পড়ো; এরপর সরবে পাঠ করো। সরবে পাঠ করার সময়ে ধ্বনির উচ্চারণে সতর্ক থাকতে হবে।
দুই বিঘা জমি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
শুধু বিঘে-দুই ছিল মোর ভুঁই আর সবই গেছে ঋণ।
বাবু বলিলেন, ‘বুঝেছ উপেন? এ জমি লইব কিনে।”
কহিলাম আমি, “তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই–
চেয়ে দেখো মোর আছে বড়ো-জোর মরিবার মতো ঠাঁই।”
শুনি রাজা কহে, “বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখানা,
পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দিঘে সমান হইবে টানা–
ওটা দিতে হবে।” কহিলাম তবে বক্ষে জুড়িয়া পাণি
সজল চক্ষে, “করুন রক্ষে গরিবের ভিটেখানি।
সপ্তপুরুষ যেথায় মানুষ সে মাটি সোনার বাড়া,
দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে এমনি লক্ষ্মীছাড়া!”
আঁখি করি লাল রাজা ক্ষণকাল রহিল মৌনভাবে,
কহিলেন শেষে ক্রুর হাসি হেসে, “আচ্ছা, সে দেখা যাবে।”
পরে মাস দেড়ে ভিটে মাটি ছেড়ে বাহির হইনু পথে–
করিল ডিক্রি, সকলই বিক্রি মিথ্যা দেনার খতে।
এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরি ভুরি,
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
মনে ভাবিলাম, মোরে ভগবান রাখিবে না মোহগর্তে,
তাই লিখি দিল বিশ্বনিখিল দু বিঘার পরিবর্তে
সন্ন্যাসীবেশে ফিরি দেশে দেশে হইয়া সাধুর শিষ্য–
কত হেরিলাম মনোহর ধাম, কত মনোরম দৃশ্য।
ভূধরে সাগরে বিজনে নগরে যখন যেখানে ভ্রমি
তবু নিশিদিনে ভুলিতে পারিনে সেই দুই বিঘা জমি।
একদিন শেষে ফিরিবারে দেশে বড়োই বাসনা হলো
থিক ধিক ওরে, শত ধিক তোরে, নিলাজ কুলটা ভূমি,
যখনি যাহার তখনি তাহার-_এই কি জননী তুমি!
সে কি মনে হবে একদিন যবে ছিলে দরিদ্রমাতা
আঁচল ভরিয়া রাখিতে ধরিয়া ফলফুল শাক-পাতা!
আজ কোন রীতে কারে ভুলাইতে ধরেছ বিলাসবেশ–
পাঁচরঙা পাতা অঞ্চলে গাঁথা, পুষ্পে খচিত কেশ!
আমি তোর লাগি ফিরেছি বিবাগি গৃহহারা সুখহীন,
তুই হেথা বসি ওরে রাক্ষসী, হাসিয়া কাটাস দিন!
ধনীর আদরে গরব না ধরে! এতই হয়েছ ভিন্ন–
কোনোখানে লেশ নাহি অবশেষ সে দিনের কোনো চিহ্ন!
কল্যাণময়ী ছিলে তুমি অয়ি, ক্ষুধাহরা সুধারাশি।
যত হাসো আজ যত করো সাজ ছিলে দেবী- হলে দাসী।
বিদীর্ণহিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া চারি দিকে চেয়ে দেখি–
প্রাচীরের কাছে এখনো যে আছে, সেই আমগাছ একি!
বসি তার তলে নয়নের জলে শান্ত হইল ব্যথা,
একে একে মনে উদিল স্মরণে বালক কালের কথা।
সেই মনে পড়ে, জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে রাত্রে নাহিকো ঘুম,
অতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি আম কুড়াবার ধুম।
সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর, পাঠশালা-পলায়ন–
ভাবিলাম হায়, আর কি কোথায় ফিরে পাব সে জীবন!
সহসা বাতাস ফেলি গেল শ্বাস শাখা দুলাইয়া গাছে,
দুটি পাকা ফল লভিল ভূতল আমার কোলের কাছে।
ভাবিলাম মনে, বুঝি এতখনে আমারে চিনিল মাতা।
স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে বারেক ঠেকানু মাথা ॥
হেনকালে হায় যমদূতপ্রায় কোথা হতে এলো মালী।
ঝুঁটিবীধা উড়ে সপ্তম সুরে পাড়িতে লাগিল গালি।
কহিলাম তবে, ‘আমি তো নীরবে দিয়েছি আমার সব–
দুটি ফল তার করি অধিকার, এত তারি কলরব।”
চিনিল না মোরে, নিয়ে গেল ধরে কাঁধে তুলি লাঠিগাছ;
বাবু ছিপ হাতে পারিষদ-সাথে ধরিতেছিলেন মাছ-
শুনি বিবরণ ক্রোধে তিনি কন, “মারিয়া করিব খুন।”
বাবু যত বলে পারিষদ-দলে বলে তার শতগুণ।
আমি কহিলাম, “শুধু দুটি আম ভিখ মাগি মহাশয়!”
বাবু কহে হেসে, “বেটা সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয়!”
আমি শুনে হাসি আঁখিজলে ভাসি, এই ছিল মোরে ঘটে
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে ॥
শব্দের অর্থ
উড়ে: ওড়িশার লোক।
উদিল: উদয় হলো।
ক্রুর: নিষ্ঠুর; নির্দয়।
ক্ষুধাহরা: ক্ষুধা দূর করে এমন।
খত: ঋণের দলিল।
ঘটে থাকা: ভাগ্যে থাকা।
ঠাঁই: স্থান
ঠেকানু: ঠেকালাম।
ডিক্রি: আদালতের নির্দেশপত্র।
দিঘে: দৈর্ঘ্যে
ধাম: তীর্থস্থান
স্বরধ্বনির বৈশিষ্ট্য
বাংলা স্বরবর্ণ এগারোটি। কিন্তু মৌলিক স্বরধ্বনির সংখ্যা সাতটি। যথা: ই, এ, অ্যা, আ, অ, ও, উ। স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ফুসফুস থেকে বেরিয়ে আসা বাতাস বাকযন্ত্রের কোথাও বাধা পায় না। কিন্তু একেকটি স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভের অবস্থান ও ঠোঁটের অবস্থা একেক রকম হয়।
ই: “ই” স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে–
- জিভ উঁচু হয়; তাই এটি উচ্চ স্বরধ্বনি।
- জিভ সামনের দিকে উঁচু হয়; তাই এটি সম্মুখ স্বরধ্বনি।
- ঠোঁট প্রসারিত হয়; তাই এটি প্রসৃত স্বরধ্বনি।
- ঠোঁট অল্প খোলে; তাই এটি সংবৃত স্বরধ্বনি।
এ: “এ” স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে–
- জিভ একটু উঁচু হয়; তাই এটি মধ্য স্বরধ্বনি।
- জিভ সামনের দিকে উঁচু হয়; তাই এটি সম্মুখ স্বরধ্বনি।
- ঠোঁট প্রসারিত হয়; তাই এটি প্রসৃত স্বরধ্বনি।
- ঠোঁট অল্প খোলে; তাই এটি সংবৃত স্বরধ্বনি।
অ্যা: “অ্যা” স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে–
- জিভ একটু উঁচু হয়; তাই এটি মধ্য স্বরধ্বনি।
- জিভ সামনের দিকে উঁচু হয়; তাই এটি সম্মুখ স্বরধ্বনি।
- ঠোঁট প্রসারিত হয়; তাই এটি প্রসৃত স্বরধ্বনি।
- ঠোঁট বেশি খোলে; তাই এটি বিবৃত স্বরধ্বনি।
আ: “আ” স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে–
- জিভ নিচু থাকে; তাই এটি নিয় স্বরধ্বনি।
- জিভ মাঝখানে নিচু থাকে; তাই এটি মধ্য স্বরধ্বনি।
- ঠোঁট গোল ও প্রসারিত হয়; তাই এটি গোলাকৃত ও প্রসৃত স্বরধ্বনি।
- ঠোঁট বেশি খোলে; তাই এটি বিবৃত স্বরধ্বনি।
অ: “অ” স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে–
- জিভ একটু উঁচু হয়; তাই এটি মধ্য স্বরধ্নি।
- জিভ পিছনের দিকে উঁচু হয়; তাই এটি পশ্চাৎ স্বরধ্বনি।
- ঠোঁট গোল হয়; তাই এটি গোলাকৃত স্বরধ্বনি।
- ঠোঁট বেশি খোলে; তাই এটি বিবৃত স্বরধ্বনি।
ও: “ও” স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে–
- জিভ একটু উঁচু হয়; তাই এটি মধ্য স্বরধ্মনি।
- জিভ পিছনের দিকে উঁচু হয়; তাই এটি পশ্চাৎ স্বরধ্বনি।
- ঠোঁট গোল হয়; তাই এটি গোলাকৃত স্বরধ্বনি।
- ঠোঁট অল্প খোলে; তাই এটি সংবৃত স্বরধ্বনি।
উ: “উ” স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে–
- জিভ উঁচু হয়; তাই এটি উচ্চ স্বরধ্মনি।
- জিভ পিছনের দিকে উঁচু হয়; তাই এটি পশ্চাৎ স্বরধ্বনি।
- ঠোঁট গোল হয়; তাই এটি গোলাকৃত স্বরধ্বনি।
- ঠোঁট অল্প খোলে; তাই এটি সংবৃত স্বরধ্বনি।
জিভের অবস্থানের ভিত্তিতে স্বরধ্বনি
“ই” উচ্চারণের সময়ে জিভ সামনে উঁচু হয়; তাই উপরের ছকে “ই’” স্বরধ্বনিকে সম্মুখ অবস্থানে দেখানো হয়েছে। এর মানে জিভের অবস্থানের ভিত্তিতে “ই’ সম্মুখ স্বরধ্মনি। একইভাবে “এ” ‘অ্যা–এগুলোও সম্মুখ স্বরধ্মনি।
আবার “উ’ উচ্চারণের সময়ে জিভ পিছনে উঁচু হয়; তাই ”উ” স্বরধ্বনিকে পশ্চাৎ অবস্থানে দেখানো হয়েছে। এর মানে জিভের অবস্থানের ভিত্তিতে “উ” পশ্চাৎ স্বরধ্বনি। একইভাবে “ও”, “অ’–এগুলোও পশ্চাৎ স্বরধ্বনি। ‘আ’ উচ্চারণের সময়ে জিভের অবস্থান মাঝখানে থাকে; তাই ‘আ’ মধ্য স্বরধ্বনি।
যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণে জিভ বেশি উঁচু হয়, সেগুলো উচ্চ স্বরধ্বনি। ই, উ-_এ দুটি উচ্চ স্বরধ্মনি। আবার ”আ” উচ্চারণে জিভ নিচু থাকে; তাই এটি নিয়ন স্বরধ্বনি। বাকি স্বরধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময়ে জিভ একটু উঁচু হয়; তাই এ, অ্যা, অ, ও মধ্য স্বরধ্বনি।
ঠোঁটের অবস্থার ভিত্তিতে স্বরধ্বনি
যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ঠোঁট প্রসারিত হয়, সেগুলোকে বলে প্রসৃত স্বরধ্বনি। “ই”, “এ” ‘অ্যা– এগুলো প্রসৃত স্বরধ্বনি। যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ঠোঁট গোল হয়, সেগুলোকে বলে গোলাকৃত স্বরধ্বনি। “উ”, “ও”, “অ”–এগুলো গোলাকৃত স্বরধ্বনি।
যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ঠোঁট কম খোলে, সেগুলোকে বলা হয় সংবৃত স্বরধ্বনি। ই, “এ, “উ “ও” এগুলো সংবৃত স্বরধ্বনি। আর যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ঠোঁট বেশি খোলে, সেগুলোকে বলে বিবৃত স্বরধ্বনি। ‘অ্যা, ‘আ’, ‘অ’–এগুলো বিবৃত স্বরধ্বনি।
শিক্ষার্থীরা, উপরে নবম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনা শেষে ধ্বনির উচ্চারণ পরিচ্ছেদের উপর একটি ক্লাসের লিংক দেওয়া হয়েছে। এই ক্লাসে ধ্বনির উচ্চারণ পরিচ্ছেদ সম্পর্কে আলোচনার পাশাপাশি বইয়ে দেওয়া কাজগুলো কীভাবে করবে তাও বলে দেওয়া হয়েছে। এই পরিচ্ছেদ সম্পর্কে আরও জানতে ও কাজগুলো কীভাবে সমাধান করবে তা জানতে ক্লাসটি করার পরামর্শ রইলো।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post