৯ম শ্রেণির প্রতিটি বইয়ের সমাধান কোর্সটিকায় ইতোমধ্যে দেওয়া শুরু হয়েছে। আজকে আমরা নবম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো। বাংলা বইয়ের এই পরিচ্ছেদ এর নাম হচ্ছে– বিবরণমূলক রচনা। এই পরিচ্ছেদে যেসকল কঠিন বিষয় রয়েছে আজকের আলোচনায় সেগুলোকে সহজভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
আজকের আলোচনা শেষে তোমরা বাংলা বইয়ের বিবরণমূলক রচনা পরিচ্ছেদের উপর একটি ক্লাস পেয়ে যাবে। তোমরা যদি ক্লাসটি কর তাহলে এই পরিচ্ছেদ সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পারবে সেই সাথে বাড়ির কাজগুলো কীভাবে করবে তাও বলে দেওয়া হয়েছে। ৯ম শ্রেণির বাংলা বইয়ের প্রতিটি পরিচ্ছেদের সমাধান এভাবে পড়লে বাংলা বইটি তোমরা অতিসহজে বুঝতে পারবে।
নবম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ সমাধান
নানা ধরনের বিবরণমূলক রচনার সঙ্গে তোমাদের পরিচয় আছে। একেক ধরনের রচনায় একেক ধরনের বিবরণ থাকে। কোন ধরনের রচনায় কী ধরনের বিবরণ প্রত্যাশা করা হয়, তার একটি তালিকা করো। প্রথমটি তৈরি করে দেওয়া হলো। লেখার পরে সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো।
বিবরণমূলক রচনার ধরণ
- ছবির বিবরণ
- ঘটনার বিবরণ
- স্থানের বিবরণ
- স্থাপনার বিবরণ
- প্রাণীর বিবরণ
- বস্তুর বিবরণ
- ভ্রমণের বিবরণ
- অতীতকালের বিবরণ
কী ধরনের বিবরণ থাকে
ছবির বিষয়: ছবিটির বক্তব্য কী? ছবিতে কী কী আছে? ছবিটি সম্পর্কে অনুভূতি বা প্রতিক্রিয়া কী?
বাকি বিবরণগুলো নিজে লেখার চেষ্টা কর।
মুহম্মদ আবদুল হাই (১৯১৯-১৯৬৯) একজন ভাষাবিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক। তাঁর বিখ্যাত একটি বইয়ের নাম “ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব’। এছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে আছে ‘সাহিত্য ও সংস্কৃতি, “তোষামোদ ও রাজনীতির ভাষা”, “ভাষা ও সাহিত্য” ইত্যাদি। নিচের লেখাটি লেখকের “বিলেতে সাড়ে সাতশো দিন’ গ্রন্থের অংশবিশেষ। এ রচনাটি লেখকের ভ্রমণ-অভিজ্ঞতার বিবরণ।
রচনাটি নীরবে পড়ো এবং এই লেখার মধ্যে লেখকের যে দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে তা খেয়াল করো।
বিলেতে সাড়ে সাতশো দিন
মুহম্মদ আবদুল হাই
প্রায় সাত মাস হলো এখানে এসেছি। সাত মাসে দিন পুনে দিন কুড়ির বেশি সূর্যের আলো দেখেছি বলে মনে হয় না। সকাল বেলায় যদিও সূর্য ওঠে, কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই বাতাসের বেগ প্রবল হয়, ঠান্ডার প্রকোপ বাড়তে থাকে। আকাশে টুকরো টুকরো মেঘ ভেসে বেড়াতে বেড়াতে জমাট বাঁধে।
আকাশ আঁধার হয়ে আসে; ধোঁয়ায়, কুয়াশায় আর মেঘের অন্ধকারে সারা লন্ডন দিনের বেলাটায় ধোঁয়াটে অন্ধকার হয়ে যায়। আমি যে পরিষ্কার সূর্যের দেশের লোক, আমার দেশে সকালে সূর্য ওঠে, সারাদিন প্রখর কিরণ ছড়িয়ে সন্ধ্যাবেলায় পশ্চিম দিগন্তে অস্ত যায়–পরিষ্কার আলোকিত দিনে মন যে সেখানে প্রফুল্ল থাকে, এই সাত মাস ইংল্যান্ডে বাস করে সে কথা ভুলেই যেতে বসেছি।
এই মেঘ, এই ধোয়া, এই বৃষ্টি, এই বাতাস, এই কনকনে হাড় ভেদ করা শীত__সবই এ দেশের মানুষের গা- সওয়া হয়ে গেছে। তাই দিনের বেলাকার গোড়ার দিকে হঠাৎ যখন এরা সূর্যের মুখ দেখে, স্নিদ্ধ রোদে চারিদিক যখন ঝলমল করে ওঠে, তখন এদের চোখেমুখে আনন্দের জ্যোতি উপচে পড়ে।
পরিচিতে পরিচিতে তো কথাই নেই–অপরিচিতও অপরিচিতকে পথ চলতে গিয়ে মনের আনন্দের ভাগ দেওয়া নেওয়ার জন্য ডেকে বলে– “কেমন সুন্দর দিনটা, না? হাউ লাভলি”। তার অনুগামী কি সহগামী তার আনন্দ ভাগ করে ভোগ করবার জন্যে ঠিক তেমনি ভাষায় সাড়া দেয়। কিন্তু আলাপ এদেশে বেশি জমে না। ওয়েদার-ই এদের আলাপের পুঁজি। সুতরাং পুঁজি ফুরোলেই চুপ করে যায়।
এরা যেমন চুপ করে থাকতে, আপনার মধ্যে ডুব মেরে থাকতে ভালোবাসে, তেমনি সামান্য কিছু একটা অবলম্বন পেলে প্রাণ খুলে হাসতেও জানে। যে হাসতে জানে, দেখা যায় সে বীচতেও জানে। হাসির লহরিতে সব ধুয়ে মুছে যায়। ইংরেজের জাতীয় চরিত্র বড্ড পাক-খাওয়া, কূটবুদ্ধির জন্যে এদের নাম আছে।
আর ডিপ্লোমেসির জোরেই এরা এতকাল ধরে দুনিয়াতে প্রভুত্ব করে এলো। কিন্তু এখানে এসে দেখছি ইংরেজ বড়ো কষ্টসহিষ্ণু জাতও। চারিদিকের সাগরের মধ্যে অবস্থিত ইংল্যান্ড একটি দ্বীপবিশেষ। জায়গায় জায়গায় পাহাড়ের মতো উঁচু আর তার পরেই সমতল ভূমির মতো নিচু
এদের দেশে খাদ্যশস্য বড়ো বেশি ফলে না, যা ফলে তাতে এদের কুলোয় না, তাই বিদেশের দিকে সব কিছুর জন্যেই এদের চেয়ে থাকতে হয়। কিছুদিন থেকে দেখছি গোশত একেবারে উধাও হয়ে গেছে। আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া থেকে এরা মাংস আমদানি করে। আমাদের মতো টাটকা মাংস এরা খেতে পায় না। বিদেশ থেকে ‘তিন চার মাস আগের জবাই করা গোরু, ভেড়া, শুয়োর, খরগোশ জাহাজ বোঝাই করে এদেশে আসে।
এরা অতি আদরে সেগুলো দোকানে দোকানে ঝুলিয়ে রাখে। আর মাথাপিছু রেশনে সামান্য একটু যা পায় তাই নিয়ে অতি আনন্দে খায়। দুধ ও দুধজাত জিনিস আসে নিউজিল্যান্ড থেকে। ভিন্ন দেশের জিনিসপত্র না হলে এদের আদৌ চলে না। তাই বলে কি এরা এদের দেশকে কম ভালোবাসে?
কত কবি যে এদের আপন দেশের প্রশংসায় মুখর হলেন তা বলে শেষ করা যায় না। এদের দেশ সত্যি ভারি সুন্দর। বৃহত্তম নগরী লন্ডন আর অসংখ্য সাজানো ছোটো গ্রাম আর উঁচুনিচু দিগন্তবিস্তৃত মাঠ নিয়ে সাগরের মাঝখানে গড়ে উঠেছে ইংল্যান্ড দ্বীপ। শেক্সপিয়ার তাঁর দেশকে তাই বলেছেন–রুপালি সমুদ্রের মাঝখানে যেন অমূল্য মণির মতো বসানো রয়েছে এই দেশ ইংল্যান্ড।
এদের প্রকৃতির এই রুদ্র-কঠোরতার কথা যত ভাবি ততই মনে হয় এ জাতটা বড্ড কষ্টসহিষ্ণু আর তেমনি সংগ্রামশীল। রুদ্র প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম করে এদেরকে বাঁচতে হয়। তাই মনে হয় কাজের চাপে এরা যেমন অকারণ কথা বলে দুদণ্ড সময় নষ্ট করার সুযোগ পায় না, আলাপ জমানোটা এরা যেমন ভুলেই গেছে, তেমনি কাজের বোঝা হালকা করে নেবার জন্যে এরা মুখ খুলে হাসতেও শিখেছে।
হাসতে পারা যে কত বড়ো কলা তা বোঝা যায় এদের দৈনন্দিন ব্যাবহারের খুঁটিনাটিতে। এদের আমোদ-প্রমোদ, খেলাধুলায়, সিনেমা- থিয়েটারে, প্যান্টোমাইম কি ব্যালেতে যত না দেখি গম্ভীরভাবে জীবনকে গড়ে তোলার তাগিদ, তার বেশি দেখা যায় হাসির মারপ্যাঁচ। ঘরভরা লোক কথায় কথায় হেসে যাচ্ছে। কোনো গোলমাল নেই-_হৈ চৈ নেই। বিরাট জনতার প্রাণখোলা হাসির হররায় সমস্তটা ঘর যেন গমগম করছে।
দোকানপাটে যাও-বিশেষ করে ছেলেপুলেদের বিভাগে গেলে দেখা যাবে ছেলেমেয়েদের হাসানোর জন্য কত রকমের খেলনার আয়োজন করে রাখা হয়েছে। এমনভাবে এলিস ইন দি ওয়ান্ডার ল্যান্ড, হামটি ডামটি, পিটার পান্ডা, হিফটি টিফটি প্রভৃতির গল্প বা ছড়াকে আকার দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। দোকানে ঢুকলেই মনে হয় যেন আপনা থেকে কাতুকাতু লাগছে। হাসির আবহাওয়াটাই ছোঁয়াচে।
লন্ডনের বিরাটত্বই মনকে ঘাবড়ে দেয়। পথে বেরোলে মনে হয় যেন নিজকে হারিয়ে ফেলছি। ফুটপাথে অগণিত জনতার ভিড় আর পথ দিয়ে পিঁপড়ের সারির মতো যানবাহন–সেই কোচ, ট্রাক, টিউব-বাস-ট্যাক্সি। তবু ভাগ্য ভালো– যানবাহনের ধাক্কায় জনস্রোত চাপা পড়ে না। তাদের পথ সুনির্দিষ্ট। শৃঙ্খলা প্রশংসাতীতভাবে সুন্দর। একটা পথের কিছু দূর যেতে না যেতেই জনতা যেন ডান বামের পথে কেটে পড়তে পারে তার সুবন্দোবস্ত আছে।
মোড় ঘুরবার সময় তো বটেই, তার আগেই গাড়িগুলো চলতে চলতে পথের মাঝে প্রয়োজনমতো যেন হঠাৎ দাঁড়িয়ে যায় আর স্তব্ধগতি গাড়ির সামনে দিয়ে অপেক্ষমাণ জনতা যেন মোড় ঘুরে যায়, সেজন্য রাস্তার মাঝে মাঝে যেমন স্ট্যান্ড থেকে প্রতি দুমিনিট অন্তর লাল হলুদ ও সবুজ বাতি জ্বলে উঠছে, তেমনি পথের বুকে খাঁজ- কাটা জায়গা দিয়েই যেন তারা এক পথ ডিঙিয়ে আর এক পথে যেতে পারে তার সুন্দর নিদর্শনও আছে।
শব্দের অর্থ
অ্যাটেনশনের ভঙ্গি: সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ভঙ্গি।
কলা: শিল্প।
কালেভদ্রে: কখনো-সখনো।
জনস্রোত: জনতার ভিড়।
টিউবরেল: লন্ডন শহরের রেল-ব্যবস্থা।
প্যান্টোমাইম: মূকাভিনয়।
বেজমেন্ট: দালানের মাটির নিচের তলা।
বোরো: পৌরসভার অংশ।
ব্যালে: বিশেষ ধরনের নাচ।
মিউনিসিপ্যালিটি: পৌরসভা।
রেশন: বরাদ্দকৃত খাদ্যপণ্য।
পড়ে কী বুঝলাম
“বিলেতে সাড়ে সাতশো দিন” রচনার ভিত্তিতে নিচে কয়েকটি প্রশ্ন দেওয়া আছে। তোমার একজন সহপাঠীর সাথে এগুলো নিয়ে আলোচনা করো এবং সংক্ষেপে উত্তর তৈরি করো।
ক. লন্ডন শহরে কী কী বৈশিষ্ট্য লেখকের ভালো লেগেছে এবং কী কী বৈশিষ্ট্য খারাপ লেগেছে?
খ. ইংরেজ জাতিকে লেখক কীভাবে মূল্যায়ন করেছেন?
গ.লন্ডনের আবহাওয়া ও পরিবেশের সঙ্গে তোমার এলাকার আবহাওয়া ও পরিবেশের তুলনা করো।
লেখা নিয়ে মতামত
”বিলেতে সাড়ে সাতশো দিন” রচনাটির যেসব বক্তব্য নিয়ে তোমার মতামত রয়েছে বা মনে প্রশ্ন জেগেছে, তা নিচের ছকে লেখো। কাজ শেষে কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে উত্তর নিয়ে আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো। একটি নমুনা দেওয়া হলো।
“বিলেতে সাড়ে সাতশো দিন” রচনায় যা আছে
১. ডিপ্লোমেসির জোরেই এরা এতকাল ধরে দুনিয়াতে প্রভুত্ব করে এলো।
আমার মতামত ও জিজ্ঞাসা
১. শুধু ডিপ্লোমেসি নয়, দুনিয়ায় প্রভুত্ব বিস্তারের ক্ষেত্রে অনৈতিক শক্তি ও সামরিক শক্তি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
বিবরণমুলক রচনা
স্থান, বস্তু, ব্যক্তি, প্রাণী, অনুভূতি, ঘটনা, ভ্রমণ, অতীতস্মৃতি, ছবি বা কোনো বিষয়ের বিবরণ দেওয়া হয় যে রচনায়, তাকে বিবরণমূলক লেখা বলে। বিবরণমূলক লেখায় লেখকের চিন্তা, অনুভূতি ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়। “বিলেতে সাড়ে সাতশো দিন’ রচনাটি লেখক তাঁর বাস্তব ভ্রমণ-অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে লিখেছেন।
লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর মূল্যবোধ, অভিজ্ঞতা ও শিক্ষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। কোনো কিছুর বিবরণ দিতে গিয়ে লেখক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটান। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনেক সময়ে পাঠককে প্রভাবিত করতে পারে। নিবিড় পাঠ ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পাঠকও লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করতে পারেন।
যেমন, ”বিলেতে সাড়ে সাতশো দিন” রচনায় লেখক বলেছেন: “কাজের চাপে এরা অকারণ কথা বলে দুদণ্ড সময় নষ্ট করার সুযোগ পায় না”। এ ধরনের বাক্যের মধ্য দিয়ে লেখক কর্মনিষ্ঠাকে প্রশংসিতভাবে উপস্থাপন করেন এবং পাঠককে কর্মনিষ্ঠ হতে উৎসাহী করতে চান। আবার, আরেক জায়গায় লিখেছেন: “আমাদের মতো টাটকা মাংস এরা খেতে পায় না।” এর মধ্য দিয়ে পাঠক বুঝতে পারেন, লেখক টাটকা মাংস পছন্দ করেন।
শিক্ষার্থীরা, উপরে নবম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনা শেষে বিবরণমূলক রচনা পরিচ্ছেদের উপর একটি ক্লাসের লিংক দেওয়া হয়েছে। এই ক্লাসে বিবরণমূলক রচনা পরিচ্ছেদ সম্পর্কে আলোচনার পাশাপাশি বইয়ে দেওয়া কাজগুলো কীভাবে করবে তাও বলে দেওয়া হয়েছে। এই পরিচ্ছেদ সম্পর্কে আরও জানতে ও কাজগুলো কীভাবে সমাধান করবে তা জানতে ক্লাসটি করার পরামর্শ রইলো।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post