৯ম শ্রেণির প্রতিটি বইয়ের সমাধান কোর্সটিকায় ইতোমধ্যে দেওয়া শুরু হয়েছে। আজকে আমরা নবম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো। বাংলা বইয়ের এই পরিচ্ছেদ এর নাম হচ্ছে– বিশ্লেষণমূলক রচনা। এই পরিচ্ছেদে যেসকল কঠিন বিষয় রয়েছে আজকের আলোচনায় সেগুলোকে সহজভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
আজকের আলোচনা শেষে তোমরা বাংলা বইয়ের বিশ্লেষণমূলক রচনা পরিচ্ছেদের উপর একটি ক্লাস পেয়ে যাবে। তোমরা যদি ক্লাসটি কর তাহলে এই পরিচ্ছেদ সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পারবে সেই সাথে বাড়ির কাজগুলো কীভাবে করবে তাও বলে দেওয়া হয়েছে। ৯ম শ্রেণির বাংলা বইয়ের প্রতিটি পরিচ্ছেদের সমাধান এভাবে পড়লে বাংলা বইটি তোমরা অতিসহজে বুঝতে পারবে।
নবম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ সমাধান
আবদুল হক (১৯১৮-১৯৯৭) বাংলাদেশের একজন সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। তাঁর লেখা গ্রন্থের মধ্যে আছে “বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ”, “ভাষা আন্দোলন: আদি পর্ব” ইত্যাদি। নিচে ১৯৭৩ সালে রচিত আবদুল হকের একটি প্রবন্ধ দেওয়া হলো। এটি লেখকের “সাহিত্য ও স্বাধীনতা” বই থেকে নেওয়া হয়েছে। রচনাটি নীরবে পড়ো এবং এই লেখার মধ্যে লেখকের যে দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে তা খেয়াল করো।
বাংলা ভাষা: সংকট ও সম্ভাবনা
আবদুল হক
বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর হলো ষোলোই ডিসেম্বর, বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচাইতে বিখ্যাত এবং উজ্জ্বল দিবসে। কোনো নবজাত রাষ্ট্রের সংবিধান রচনাই বড়ো ঘটনা, কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধান রচনার একটা গুরুত্ব এই যে, ইতিহাসে এই প্রথম বাংলা ভাষায় একটি রাষ্ট্রের সংবিধান রচিত হলো।
রাজনৈতিক সংগ্রাম ছাড়াও এ সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে। আর এই কারণে শুধু রাজনৈতিক সংগ্রামের নয়, ভাষা আন্দোলনেরও শ্রেষ্ঠতম বিজয়স্তম্ভ বাংলাদেশের সংবিধান। বিজয় দিবস, সংবিধান দিবস এবং ভাষা আন্দোলনের একটি বিশেষ পরিণতি লাভ একসঙ্গে মিশে গেল।
বাংলা ভাষার এবং ব্যাপকতম অর্থে বাংলা সাহিত্যের অগ্রগতির দিক দিয়ে দেখতে গেলে এই সংবিধান রচনার একটা তাৎপর্য হচ্ছে এই, এটি ভাষার বিশেষ এক গুণগত পরিণতি লাভের উদাহরণ। সংবিধানের কাজ রাষ্ট্রীয় আদর্শ ও কাঠামোকে ধরে রাখা, এমন ভাষায় যার মধ্যে ভাবাবেগ, অস্পষ্টতা, দ্ব্যর্থতা, বাহুল্য অথবা অন্য কোনো প্রকার ত্রুটি এবং শৈথিল্যের অবকাশ নেই।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংবিধান যৌথ রাষ্ট্রচিন্তাকে রূপদান করে, যাঁরা সংবিধান রচনায় ব্যাপৃত থাকেন শুধু তাঁদের চিন্তা নয়, সমগ্র জাতির চিন্তাও। সেই সঙ্গে কয়েক শতাব্দীর আন্তর্জাতিক চিন্তা ও অভিজ্ঞতাও এর উপর ছায়াপাত করে। যাঁরা সংবিধানের প্রকৃত রচয়িতা এবং জনসমাজের রাজনৈতিক প্রতিনিধি তাঁরা বাংলা ভাষাবিদগণেরও সহায়তা নিয়েছেন।
সম্মিলিতভাবে তাঁদের মনে রাখতে হয়েছে আদালতে এবং ময়দানের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জের কথা। প্রতিটি বাক্য এবং শব্দকে সোনার মতো সূক্ষ্মভাবে ওজন ও যাচাই করে দেখতে হয়েছে, সেই সঙ্গে দেখতে হয়েছে যেন সংবিধানের ভাষা বাংলা হয়, শুদ্ধ বাংলা হয় এবং পাঠযোগ্য বাংলা হয়।
জাতীয় সংসদে, নিশ্চিতভাবে ধরা যায়, এখন থেকে বাংলা ভাষাতেই আইন প্রণীত হবে। প্রধানমন্ত্রী বিচারপতিদের অনুরোধ করেছেন বাংলায় মামলার রায় লিখতে। দু-একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে বাংলা ভাষায়। এসবই বাংলার জন্য নতুন কাজ। একেবারে আনকোরা কাজ বোধ হয় বলা চলে না, তবে এসব ক্ষেত্রে এমন সর্বাত্মক আত্মনিয়োগের দায়িত্ব আর কখনো ভাষার উপর এসে পড়েনি।
এসব কাজে আবেগে, বাহুল্যে, শৈথিল্যে, অস্পষ্টতার ভারে তার নুয়ে পড়ার অবকাশ নেই, নিটোলদেহ কর্মীর মতো তাকে ফিটফাট হয়ে উঠতে হবে। কোনো রকম সাহিত্য সৃষ্টি নয়, বাস্তব কর্মনিপুণতাই হবে তার যোগ্যতার মাপকাঠি।
আরো দুটি ক্ষেত্রে বাক্য ও শব্দকে সবসময়ে ঠিক ঐ রকম সোনার মতো ওজন করার দরকার না হলেও যথেষ্ট কর্মনিপুণ হতে হবে। সেই দুটি ক্ষেত্র হচ্ছে প্রশাসন ও উচ্চশিক্ষা। প্রশাসনের ভাষা এবং উচ্চশিক্ষার মাধ্যম, সঠিকভাবে বলতে গেলে প্রধান মাধ্যম হবে বাংলা। সব রকমের জ্ঞান ধরে রাখতে হবে এবং ছাত্রদের কাছে পরিবেশন করতে হবে বাংলা ভাষায়, যে সব দুরূহ বিষয়ে বাংলা ভাষায় কখনো কিছু লেখা হয়নি সেসব বিষয়েও।
শিক্ষণীয় সব বিষয়ের মাধ্যম হবে বাংলা, যদিও বিশেষজ্ঞ খ্যাতনামা বিদেশি পণ্ডিতদের লেখা বই চিরদিন ইংরেজি ভাষায় পড়তে হবে শিক্ষার এবং জ্ঞানের পূর্ণতার জন্য। শুধু ইংরেজি ভাষায় কেন, সকল উন্নত ভাষায়। দুরূহ বিষয়কে প্রকাশ করার ক্ষমতা বাংলা ভাষার আছে, এ পরিচয় উনিশ শতক থেকেই কমবেশি পাওয়া যাচ্ছে।
সংবিধান, আইন এবং মামলার রায়, প্রশাসনিক চিঠিপত্র এবং সরকারি আধা-সরকারি সংস্থাসমূহের ব্যবস্থাপনা ও প্রতিবেদন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষণীয় বিচিত্র প্রকার বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিষয় সংক্রান্ত গ্রন্থ, যন্ত্রবিদ্যা এবং অন্যান্য বাস্তব কাজের বিষয় সংক্রান্ত প্রকাশনা সাহিত্য নয়, কিন্তু এরা সকলে মিলে ভাষার প্রকাশ ক্ষমতাকে সম্প্রসারিত করে এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতির পটভূমি রচনা করে।
পশ্চিমবঙ্গ অপেক্ষা বাংলাদেশেই এর সম্ভাবনা অধিক প্রশস্ত; কেননা এদেশে সকল ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা অপ্রতিদ্বন্দ্বী। জ্ঞান ও সংস্কৃতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জন্য যতখানি ইংরেজির প্রয়োজন তার অতিরিক্ত সবকিছু ধারণ ও প্রকাশের দায়িত্ব নিতে হবে বাংলা ভাষাকে। পক্ষান্তরে পশ্চিমবঙ্গে অনেকগুলি ক্ষেত্র থেকে শুধু সর্বভারতীয় প্রয়োজনে ইংরেজিকে সরানো যাবে না। এবং অনেক ক্ষেত্রে একই প্রয়োজনে হিন্দিকে জায়গা দিতে হবে, জ্ঞান ও সংস্কৃতির নিজস্ব প্রয়োজনে নয়।
এই কারণে পশ্চিমবঙ্গ অপেক্ষা বাংলাদেশেই বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ অধিকতর উজ্জ্বল। অধিকন্তু ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম এবং বিশেষ করে সশস্ত্র সংগ্রামের যে বিপুল অভিজ্ঞতা বাঙালির হয়েছে তাও একটা মহৎ সাহিত্যের রূপ পাওয়ার জন্য প্রতীক্ষা করছে। অপ্রতিরোধ্য প্রয়োজনের চাপেই বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বাংলাদেশে সমৃদ্ধ হতে হবে, হওয়ার সম্ভাবনা অপরিসীম।
শব্দের অর্থ
অবিচ্ছেদ্য: পৃথক করা যায় না এমন।
আনকোরা: নতুন।
কর্মনিপুণ: কাজে দক্ষ।
চ্যালেঞ্জ: বাধা।
ছায়াপাত: প্রতিফলন।
নবজাত: নতুন জন্মপ্রাপ্ত।
দ্ব্যর্থতা: যার অর্থ দুই রকম।
রাষ্ট্রচিন্তা: রাষ্ট্র সংক্রান্ত চিন্তা।
শৈথিল্য: শিথিলতা।
পড়ে কা বুঝলাম
বাংলা ভাষা: সংকট ও সম্ভাবনা রচনার ভিত্তিতে নিচে কয়েকটি প্রশ্ন দেওয়া আছে। তোমার একজন সহপাঠীর সাথে এগুলো নিয়ে আলোচনা করো এবং সংক্ষেপে উত্তর তৈরি করো।
ক. ১৬ই ডিসেম্বর তারিখটি কোন দুটি কারণে লেখকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ?
খ. বাংলা ভাষায় সংবিধান রচনার ব্যাপারটি লেখকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কেন?
গ. বাংলাদেশে বাংলা ভাষার প্রসার ও সমৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি কেন? তোমার মতামত দাও।
লেখা নিয়ে মতামত
“বাংলা ভাষা: সংকট ও সম্ভাবনা” রচনাটির যেসব বক্তব্য নিয়ে তোমার মতামত রয়েছে বা মনে প্রশ্ন জেগেছে, তা নিচে লেখো। কাজ শেষে কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে উত্তর মেলাও এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো। একটি নমুনা দেওয়া হলো।
“বাংলা ভাষা: সংকট ও সম্ভাবনা’ রচনায় যা আছে
- প্রধানমন্ত্রী বিচারপতিদের অনুরোধ করেছেন বাংলায় মামলার রায় লিখতে।
আমার মতামত ও জিজ্ঞাসা
- লেখাটি ১৯৭৩ সালের। কিন্তু কথাটি এখনো প্রাসঙ্গিক।
বিশ্লেষণমূলক রচনা
বিশ্লেষণমূলক রচনার উপকরণ দুই ধরনের: উপাত্ত এবং তথ্য।
উপান্ত বলতে বোঝানো হয় একই ধরনের কিছু পরিমাণগত বা গুণগত বৈশিষ্ট্য, যেগুলো এলোমেলোভাবে সাজানো থাকতে পারে। যেমন: প্রতিদিন ভোরে হাবিব সাহেব ২ মাইল দৌড়ান, রহমান সাহেব ১ মাইল দৌড়ান এবং জামিল সাহেব ১.৫ মাইল দৌড়ান। এটি পরিমাণগত উপান্তের উদাহরণ। আবার সেলিম ফুটবল খেলে, আবেদ ক্রিকেট খেলে, সুমন দাবা খেলে, জিসান হাড়ুডু খেলে। এটি গুণগত উপাত্তের উদাহরণ।
উপাত্ত ও তথ্য বিশ্লেষণ করে নতুন নতুন তথ্য তৈরি হয়। এভাবে বিশ্লেষিত তথ্য দিয়ে যে রচনা লেখা হয়, তাকে বিশ্লেষণমূলক রচনা বলে। “বাংলা ভাষা: সংকট ও সম্ভাবনা” রচনায় লেখক কিছু তথ্য বিশ্লেষণ করে নতুন তথ্য তৈরি করেছেন। যেমন, পাকিস্তান-পর্বে ভাষা আন্দোলন হয়েছে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে, ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে এবং ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদে গৃহীত বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হয়েছে বাংলা ভাষায়।
এই তিনটি তথ্যের মধ্যে প্রাবন্ধিক যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন এবং মন্তব্য করেছেন, “বিজয় দিবস, সংবিধান দিবস এবং ভাষা আন্দোলনের একটি বিশেষ পরিণতি লাভ এক সঙ্গে মিশে গেল।” তাঁর মতে, ভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করেছে বাংলা ভাষায় সংবিধান রচনার মধ্য দিয়ে। প্রাবন্ধিকের এই মন্তব্যটি বিশ্লেষণমূলক।
শিক্ষার্থীরা, উপরে নবম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনা শেষে বিশ্লেষণমূলক রচনা পরিচ্ছেদের উপর একটি ক্লাসের লিংক দেওয়া হয়েছে। এই ক্লাসে বিশ্লেষণমূলক রচনা পরিচ্ছেদ সম্পর্কে আলোচনার পাশাপাশি বইয়ে দেওয়া কাজগুলো কীভাবে করবে তাও বলে দেওয়া হয়েছে। এই পরিচ্ছেদ সম্পর্কে আরও জানতে ও কাজগুলো কীভাবে সমাধান করবে তা জানতে ক্লাসটি করার পরামর্শ রইলো।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post