৯ম শ্রেণির প্রতিটি বইয়ের সমাধান কোর্সটিকায় ইতোমধ্যে দেওয়া শুরু হয়েছে। আজকে আমরা নবম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো। বাংলা বইয়ের এই পরিচ্ছেদ এর নাম হচ্ছে– কল্পনানির্ভর লেখা। এই পরিচ্ছেদে যেসকল কঠিন বিষয় রয়েছে আজকের আলোচনায় সেগুলোকে সহজভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
আজকের আলোচনা শেষে তোমরা বাংলা বইয়ের কল্পনানির্ভর লেখা পরিচ্ছেদের উপর একটি ক্লাস পেয়ে যাবে। তোমরা যদি ক্লাসটি কর তাহলে এই পরিচ্ছেদ সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পারবে সেই সাথে বাড়ির কাজগুলো কীভাবে করবে তাও বলে দেওয়া হয়েছে। ৯ম শ্রেণির বাংলা বইয়ের প্রতিটি পরিচ্ছেদের সমাধান এভাবে পড়লে বাংলা বইটি তোমরা অতিসহজে বুঝতে পারবে।
নবম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ সমাধান
নিচে গোলাম মুরশিদের লেখা একটি কল্পনানির্ভর রচনা দেওয়া হলো। রচনাটি আমেরিকান লেখক লিও বুসকাগলিয়ার (১৯২৪-১৯৯৮) কাহিনির ছায়া অবলম্বনে রচিত।
গোলাম মুরশিদ (জন্ম ১৯৪০) বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত প্রাবন্ধিক ও গবেষক। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘আশার ছলনে ভুলি’, ‘হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি’, ‘বিদ্রোহী রণক্লান্ত’ ইত্যাদি।
কিশলয়ের জন্য মৃত্যু
গোলাম মুরশিদ
কখন যে বসন্ত চলে গেছে টেরই পাইনি। গরমের সুন্দর হাওয়া গা জুড়িয়ে দিচ্ছে। আমার জন্ম মাটি থেকে অনেকটা উঁচুতে, পাহাড়ের গায়ে। তাই ভারি ভালো লাগছে এই উষ্ণ হাওয়া। আমার নাম কিশলয়। এখনো কিশোর আমি। প্রথম আমি চোখ মেলে তাকিয়েছিলাম বসন্তের এক ভোরবেলায়। অবাক বিস্ময়ে চেয়ে দেখছিলাম চারদিকটা। আমার বাসা একটা বড়ো গাছের মগডালে।
আমার চারদিকে আমারই মতো শত শত পাতা। তোমরা বোধহয় পাতাগুলোকে ভাবো একই চেহারার। কিন্তু একটু খেয়াল করে দেখো, হুবহু একই চেহারার দুটি পাতা পাবে না তুমি। আমার ধারেই থাকে ‘আলো”। আলোর মতোই তার স্বভাবটা হালকা–খিলখিল করে হাসে। আর ডান পাশে বেণু। পর্ণা থাকে একটু সামনে, ওপরের দিকে।
ছেলেবেলা থেকে আমরা সবাই বাতাসের সঙ্গে গাইতে শিখেছি, নাচতে শিখেছি। রোজ রোদে যান করি। কী যে ভালো লাগে! তারপর বিকেল বেলা যখন আলো কমে আসে; আমার মন খারাপ করে তখন। আলো, বেণু, পর্ণা–ওদেরও করে বোধহয়।
মাঝেমধ্যে বৃষ্টি নামে। তার ধারায় স্নান করতে আমার খুব ভালো লাগে। সমস্ত শরীরটা ধুয়ে যায়। সে বৃষ্টিও কি এক রকম! কখনো ঝিরঝির করে ঝরতে থাকে। কখনো অঝোর ধারায় যেন রাগ করে ঝরতে থাকে। সমস্ত আকাশ কাঁপিয়ে সে গর্জন করতে থাকে। তার রাগী চোখের দৃষ্টি দিয়ে সমস্ত আকাশটাকে আলোতে ঝলসে দেয়। কিন্তু একটু পরই যখন তার মেজাজ ভালো হয়, তখন রোদ হেসে ওঠে।
আলোর কথা বলেছি, বেণুর কথা বলেছি, পর্ণার কথাও। কিন্তু এখনো শোনোনি আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধুর কথা। তার নাম ঋষি। সে অনেক কিছু জানে।
ঋষিই একদিন বলেছিল আমাকে, আমরা নাকি সবাই একটা গাছের অংশ। গাছটা আছে একটা ছোটো গাঁয়ের এক পাশে–একটা বাগানে। গায়ের লোকেরা একে বলে পার্ক। সবুজ ঘাস বিছানো একটা মাঠ আছে সেই বাগানে। চারদিকে অনেক গাছ। নানা ধরনের গাছ। কোনোটার পাতা বড়ো, কোনোটার ছোটো। কারও পাতা বেশ গোল, কারও লম্বাটে। যে গাছে আমার জন্ম তার পাশেই আছে একটা দেবদারু গাছ। লম্বা লম্বা কোঁকড়ানো পাতা।
কিন্তু দূরে আছে একটা মজার গাছ। তার পাতাগুলো খুব সরু আশের মতো। যখন তার গায়ে হাওয়া লাগে, তখন শৌ শৌ করে সে গান করে। অন্য গাছের পাতারা চুপ করে শোনে। মাঝেমধ্যে তারা ঝরঝর মড়মড় করে তালি দেয়। পাতার মতোই–অনেক গাছে ফল ধরে, আবার অনেক গাছে ফল ধরে না। যে গাছে আমার জন্ম, সে গাছে কোনো ফল ধরে না।
একদিন ঋষি বলেছিল, গাছগুলো মাটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু মাটির তলায় আছে তাদের শেকড়। লম্বা, মোটা, খুব শক্ত শেকড়। মাটি আকড়ে ধরেই গাছগুলো দাঁড়িয়ে থাকে। রোজ গাছের ডালে এসে বসে নানা রকমের পাখি। গাছের ডালেই তারা বাসা বাঁধে। রাতের বেলা ঘুমিয়ে থাকে। কিন্তু রাত পোয়ানোর আগেই তাদের ঘুম ভেঙে যায়।
একদিন ঋষি বলেছিল, গাছগুলো মাটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু মাটির তলায় আছে তাদের শেকড়। লম্বা, মোটা, খুব শক্ত শেকড়। মাটি আকড়ে ধরেই গাছগুলো দাঁড়িয়ে থাকে। রোজ গাছের ডালে এসে বসে নানা রকমের পাখি। গাছের ডালেই তারা বাসা বাঁধে। রাতের বেলা ঘুমিয়ে থাকে। কিন্তু রাত পোয়ানোর আগেই তাদের ঘুম ভেঙে যায়।
আমি যে একটা পাতা–এটা ভাবতে খুব ভালো লাগে আমার। ভালো লাগে আশপাশের বন্ধুদের। আর আমি সত্যি ভালোবাসি যে গাছে আমার জন্ম, তাকে। সেই তো আমার মা। তার রস খেয়েই নাকি আমরা বেঁচে আছি মায়ের দুধের মতো। আমি যে ঘুড়ির মতো আকাশে ভেসে থাকি, হাওয়ার সঙ্গে তালে তালে নাচি–সে কথা ভাবতেই আমার শরীরটা কেমন শিউরে ওঠে।
এবার গরমের সময়ে অনেকেই বেড়াতে এসেছে এই বাগানে। ছেলেমেয়েরা। বুড়োবুড়িরা। নানা বয়সের অনেক লোক। অনেকে এসে বসেছে আমাদেরই ছায়ায়। ছায়া দিতে আমার ভারি ভালো লাগে। একদিন পর্ণাকে জিগগেস করেছিলাম, সে বলেছিল ছায়া দিতে তারও নাকি খুব ভালো লাগে। ঋষি তো সবই জানে! একদিন সে আমাকে বলেছিল, ছায়া দেওয়া নাকি আমাদের জীবনের একটা লক্ষ্য।
লক্ষ্য? আমি অবাক হয়ে শুনেছিলাম। তারপর ঋষিকে জিগগেস করলাম, “লক্ষ্য কী?”
ঋষি বলল, “লক্ষ্য হলো বেঁচে থাকার একটা উদ্দেশ্য।” তারপর বুঝিয়ে বলল, ‘আমরা যে জন্মেছি, আমরা যে বেঁচে আছি, এর কারণ কী? বেঁচে থেকে যদি অন্যদের জীবনটাকে একটু সুখ দিতে পারি, অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে পারি, তাহলে বাঁচার একটা মানে হয়। তাই না?
যেমন ধরো, গরমে বেশ কাতর হয়ে বুড়োবুড়িরা বাড়ি থেকে বাগানে আসে হাওয়া খেতে, শরীরটা জুড়াতে, একটু বিশ্রাম করতে, তখন আমরা ছায়া দিলে তাদের ভালো লাগে। নয়তো তারা কোথায় বসবে, বলো? বাচ্চারা খেলতে আসে এই পার্কে। তারা কি গরম রোদের মধ্যে খেলবে? আমাদের ছায়ায় খেলে, তাই না? রোজ বাড়িতে খায় সবাই।
একদিন একটু ফুর্তি করার জন্য খাবারদাবার নিয়ে বাগানে আসে। বনভোজন করতে। আসে ছেলেমেয়ে নিয়ে। চেয়ে দেখো, কেউ এসে মাঠের মধ্যিখানে বসে না। বসে মাঠের ধারে, গাছের তলায়। কারণ, সেখানটাই একটু ঠান্ডা। এভাবে সবার কাজে লাগতে পারলে জীবনের একটা মানে হয়। তাই না?” একসঙ্গে অনেক কথা বলে ঋষি চুপ করল।
যারা বেড়াতে আসে তাদের সবাইকে আমি ভালোবাসি। কিন্তু সবচেয়ে ভালোবাসি বুড়োবুড়িদের। আর বাচ্চাদের। বুড়োবুড়িরা ঠান্ডা ছায়ায় কেমন চুপচাপ বসে থাকে। বেশি নড়াচড়া করে না। কথা বলে আস্তে আস্তে যেন ফিসফিস করে!
ছোট ছেলেমেয়েদেরও আমি পছন্দ করি। কিন্তু তারা একটু দুরন্ত হয়। কেউ কেউ আমার মা-গাছকে আঘাত করে। কেউ কেউ গাছের বাঁকলে নিজেদের নাম লেখে। কেউ আবার আমাদেরই ছিঁড়ে নেয়। আমার সাথিদের ছিড়তে দেখে আমার কষ্ট হয়, বেচারাদের জন্য কান্না পায়। কিন্তু তবু ছোটদের হৈচৈ করে খেলতে দেখে আমার ভালো লাগে। সেদিন দুটো ছেলেমেয়ে এসেছিল তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে। কী মিষ্টি চেহারা তাদের!
এভাবে দেখতে দেখতে গরমের সময়টা আমার চলে গেল।
তারপর এলো হেমন্ত। কার্তিকের রাতে কেমন শীত শীত করতে শুরু করল। অঘ্রানের শুরুতে এক রাতে সত্যি খুব ঠান্ডা লাগল। রাতের বেলা শীতে ঠক ঠক করে কাঁপছিলাম। মনে হচ্ছিল শরীরটা কে যেন ভিজিয়ে দিচ্ছে। পরের দিন ভোরের আলোতে দেখলাম, আমার গায়ে কী যেন সাদা সাদা লেগে আছে। অন্যদের দিকে চেয়ে দেখলাম, তাদের গাও সাদা সাদা।
ঋষিকে জিগগেস করলাম, “এটা কী, ভাই?” সে বলল, “রাতের বেলা হিম পড়েছিল।” “হিম? হিম কী?” আমি আবার জিগগেস করলাম। সে বুঝিয়ে বলল– বেশি ঠান্ডা পড়লে বাতাসে যে বাষ্প থাকে, তা-ই জমে গিয়ে নাকি হিম পড়ে। “বুঝলে, কিশলয়! হিম থেকে বোঝা যাচ্ছে শীতকাল এসে গেছে। দেখবে কী রকম শীত পড়ে। আর চারদিকটাই ঢেকে যাবে সাদা বরফে। মনে হবে যেন কে সাদা চাদর দিয়ে ঢেকে দিয়েছে!” ঋষি বলল, সবজান্তার মতো।
হিম পড়ার পর কদিন কেটে গেছে। একদিন বিকেলে এদিকে-ওদিকে চেয়ে দেখলাম। কেমন যেন মনে হলো। মনে হলো সমস্ত বাগানটার রং বদলে যাচ্ছে। হয়তো আগে থেকেই রং বদল শুরু হয়েছে। কিন্তু আমার চোখে পড়েনি। অল্প দিন আগেও চারদিকটা কেমন সবুজে ছেয়ে ছিল। মনে হতো যেন সবুজের বান ডেকেছে বাগানে, মাঠে, গাছগুলোর ওধারের দিঘিতে, এমনকি আকাশের কানায় কানায়। সেই সবুজ যেন কেমন ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে। তার বদলে এ কী রঙের খেলা শুরু হলো পাতায় পাতায়!
শব্দার্থ ও টীকা
অন্তহীন: অশেষ।
বান: বন্যা।
অবলীলায়: অনায়াসে।
মগডাল: গাছের সবচেয়ে উঁচু যে ডাল।
কিশলয়: নতুন পাতা।
মরশুম: মৌসুম।
পড়ে কী বুঝলাম
“কিশলয়ের জন্ম মৃত্যু” রচনার ভিত্তিতে নিচে কয়েকটি প্রশ্ন দেওয়া আছে। তোমার একজন সহপাঠীর সাথে এগুলো নিয়ে আলোচনা করো এবং সংক্ষেপে উত্তর তৈরি করো।
ক. লেখক এই রচনায় প্রকৃতির পালাবদলের কেমন ছবি এঁকেছেন?
খ. মানুষের জীবনের সাথে গাছের পাতার মিল কোথায়?
গ. এই রচনায় জীবন সম্পর্কে লেখকের কোন মনোভাবের প্রতিফলন ঘটেছে?
লেখা নিয়ে মতামত
”কিশলয়ের জন্ম মৃত্যু” রচনাটির যেসব বক্তব্য নিয়ে তোমার মতামত রয়েছে বা মনে প্রশ্ন জেগেছে, তা নিচে লেখো। কাজ শেষে কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে উত্তর মেলাও এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো। একটি নমুনা দেওয়া হলো।
“কিশলয়ের জন্ম মৃত্যু” রচনায় যা আছে
- আমরা সবাই আসি একটা কাজ নিয়ে। একটা ভূমিকা পালন করতে।
আমার মতামত ও জিজ্ঞাসা
- এই বর্ণনার মধ্য দয়ে লেখক আসলে পাতার নয়, প্রকারান্তরে মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য তুলে ধরেছেন।
কল্পনানির্ভর লেখা
চারপাশের যে জগৎ আমরা দেখতে পাই, তাকে বলে বাস্তব জগৎ। কল্পনানির্ভর রচনায় থাকে কাল্পনিক ও অবাস্তব ঘটনা কিংবা চরিত্র। বিভিন্ন ধরনের কল্পনানির্ভর রচনা রয়েছে:
রূপকথা: এ ধরনের রচনায় রাজা, রানি, দৈত্য-দানব ইত্যাদি থাকে। এসব গল্প সাধারণত মানুষের মুখে মুখে চলতে থাকে এবং একটি গল্পের কাঠামো পায়।
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি: এ ধরনের রচনায় ভবিষ্যতের জগৎ, বিজ্ঞানের অনাবিষ্কৃত এলাকা, গ্রহান্তরের কাল্পনিক ধারণা ইত্যাদি যুক্ত থাকে।
রম্যরচনা: এ ধরনের রচনায় লেখক সরস ভঙ্গিতে কোনো বক্তব্য বা কাহিনি তুলে ধরেন। অনেক সময়ে কৌতুক-হাস্যরস, কিংবা ব্যঙ্গ- বিদ্রুপ ব্যবহার করে এ ধরনের লেখাকে আকর্ষণীয় করা হয়ে থাকে।
এছাড়া অতিকল্পনা রয়েছে এমন গল্প-উপন্যাসকেও কল্পনানির্ভর রচনা হিসেবে গণ্য করা হয়। ‘কিশলয়ের জন্ম- মৃত্যু” এ ধরনের একটি কল্পনানির্ভর রচনা।
শিক্ষার্থীরা, উপরে নবম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনা শেষে কল্পনানির্ভর লেখা পরিচ্ছেদের উপর একটি ক্লাসের লিংক দেওয়া হয়েছে। এই ক্লাসে কল্পনানির্ভর লেখা পরিচ্ছেদ সম্পর্কে আলোচনার পাশাপাশি বইয়ে দেওয়া কাজগুলো কীভাবে করবে তাও বলে দেওয়া হয়েছে। এই পরিচ্ছেদ সম্পর্কে আরও জানতে ও কাজগুলো কীভাবে সমাধান করবে তা জানতে ক্লাসটি করার পরামর্শ রইলো।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post