কোর্সটিকায় ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বইয়ের সমাধান দেওয়া শুরু হয়েছে। আজকে তোমাদের জন্য নবম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হবে। গল্প পরিচ্ছেদ আলোচনা শেষে তোমাদের নেওয়া হবে একটি ক্লাস। ক্লাসে গল্প পরিচ্ছেদ ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এই পরিচ্ছেদে দেওয়া কাজগুলো কীভাবে করবে তাও বলে দেওয়া হয়েছে।
এখানে, গল্প পরিচ্ছেদ আলোচনার পাশাপাশি তোমরা পেয়ে যাচ্ছো এই পরিচ্ছেদের উপর একটি ক্লাস। যা তোমাদের জন্য এই পরিচ্ছেদকে আরও সহজ করে তুলবে। ৯ম শ্রেণির বাংলা বইয়ের প্রতিটি পরিচ্ছেদের সমাধান এভাবে পড়লে তোমরা তোমাদের বাংলা বইটি অতিসহজে বুঝতে পারবে। সেই সাথে বাংলা বইয়ে দেওয়া বাড়ির কাজগুলো কীভাবে করবে তাও বুঝতে পারবে।
নবম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ সমাধান
তোমার দেখা বা শোনা কোনো ঘটনা অবলম্বন করে একটি গল্প রচনা করো। লেখা হয়ে গেলে দলে ভাগ হয়ে নিজেদের গল্প নিয়ে আলোচনা করো।
তোমার লেখা গল্পের ভিত্তিতে নিচের প্রশ্নগুলোর জবাব দাও:
- তোমার গল্পের বিষয় কী?
- গল্পের কাহিনি কী নিয়ে?
- গল্পে কী কী ঘটনা ঘটেছে?
- গল্পে কোন কোন চরিত্র আছে?
- চরিত্রের মুখের সংলাপগুলো কোন ভাষারীতিতে লেখা?
গল্প কী
বাস্তব বা কাল্পনিক বিষয় নিয়ে গদ্য ভাষায় রচিত কাহিনিকে গল্প বলে। গল্পের কাহিনির মধ্যে এক বা একাধিক ঘটনা থাকে। ঘটনা তৈরি হয় চরিত্রের বিভিন্ন রকম কাজকর্ম ও ভূমিকার মধ্য দিয়ে। গল্পের চরিত্রকে জীবন্ত করার জন্য চরিত্রের মুখে প্রায়ই সংলাপ যোগ করা হয়।
গল্পের এক বিশেষ শ্রেণিকে বলে ছোটোগল্প। ছোটোগল্পের আয়তন সাধারণত ছোটো হয়। ছোটোগল্পের কাহিনি যে কোনো ঘটনা থেকে শুরু হতে পারে, আবার হঠাৎ করে শেষ হয়ে যেতে পারে। ছোটোগল্প পড়ার পরে পাঠকের কিছুটা অতৃপ্তি তৈরি হতে পারে–মনে হতে পারে আরেকটু পড়তে পারলে ভালো লাগত।
গল্প পড়ি ১
রিজিয়া রহমান (১৯৩৯-২০১৯) বাংলাদেশের একজন গল্পকার ও ঔপন্যাসিক। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বইয়ের নাম “ঘর ভাঙা ঘর”, “উত্তর পুরুষ”, “রক্তের অক্ষর”, “বং থেকে বাংলা” ইত্যাদি। নিচে লেখকের ”অলিখিত উপাখ্যান” উপন্যাসের খানিক অংশ দেওয়া হলো।
অলিখিত উপাখ্যান
রিজিয়া রহমান
অরণ্য কেটে বসতি স্থাপন করছে মানুষ। সুন্দরবনের দীর্ঘ গাছের ডালপালার জটাজাল সূর্যকে বর্ম-ঢাকা সেনাদলের মতো প্রতিহত করে। আলো ঢুকতে পারে না স্যাঁতসেঁতে মাটির বুকে। হিন্তাল বনে ব্যাঘ্র পরিবার নির্বিঘ্নে বিচরণ করে। বন্য শূকর, নীলগাই, বুনো মহিষেরা স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায়। হরিণের পালের খুরের শব্দ তীব্র গতিতে বাতাসের নৈঃশব্দ্য ভঙ্গ করে।
জোয়ার স্ফীত আরণ্যক নদীর কুমির ডাঙায় উঠে রোদ পোহায়। গাছের ডালে শরীর জড়িয়ে মাথা দোলায় অজগর। বিচিত্র ভয়াল সুন্দরবন। সেখানে বেজে ওঠে উপনিবেশবাদী মানুষের কণ্ঠস্বর অসংখ্য কুঠারের শব্দ বনের পশুকে সচকিত করে। জঙ্গলে বড় তুলে ছুটে পালায় হরিণের দল।
দুপুরের সূর্যের আলো বনের মধ্যে ঢুকতে না পারলেও তার আভায় বনভূমি আলোকিত। হাতির পিঠে দুলতে দুলতে জঙ্গল কাটার কাজ তদারক করছিল হেনরি। অনেকদিন হয়ে গেল সে লোকজন নিয়ে জঙ্গল কাটতে এসেছে। সঙ্গে এসেছে হাতি মহারাজ। তাঁর প্রিয় ঘোড়া হাওয়ার্ড। আরো এসেছে পঞ্চাশ জন মজুর। এরা সবাই মোরেলদের কয়েদখানার কয়েদি।
কয়েদিরা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে, সেইজন্য প্রত্যেকের পায়ে পরানো আছে লোহার শিকল। এছাড়া রয়েছে ঠিকাদার। আর আছে মোহন খাঁ। যাকে কয়েদিরা সাহেবের চেয়েও বেশি ভয় পায়। অবাধ্যদের শাস্তি দেবার ভয়াবহ নৃশংস সব কলাকৌশল জানা আছে তার। দিনকয়েক আগে কয়েকজন কয়েদি জঙ্গল কাটা ফেলে মধুর চাক ভাঙতে গিয়েছিল, কঠিন শাস্তি দিয়েছিল মোহন খাঁ।
মৌচাকের নিচে আগুনের ধোয়া দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিল মৌমাছিদের। আর সেই ক্রুদ্ধ মৌমাছির ঝাঁকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল অপরাধীদের। মৌমাছির কামড়ে পরদিন তাদের চোখ-মুখ-শরীর ফুলে এমন বীভৎস চেহারা হয়েছিল যে, হেনরিই তাদের চিনতে পারেনি। দুদিন আগে এক কয়েদি জঙ্গল কাটা ফেলে বসেছিল। ঠিকাদারের চাবুক পড়েছিল তার ওপরে। ঠিকাদার চাবুক মারতে মারতে চিৎকার করে গালাগাল দিচ্ছিল- তোদের কি এখানে বসে হাওয়া খাবার জন্য আনা হয়েছে! নবাবের মতো হাত-পা ছড়িয়ে বসে আছিস!
কয়েদিটা ক্ষীণ কণ্ঠে বলেছিল বড়ো পানির পিপাসা। সারাটা দিনে মাত্র তিনবার খাবার পানি পাই। তেষ্টায় যে বুকটা শুকিয়ে থাকে। কুড়োল চালাতে পারি না। ঠিকাদার খেঁকিয়ে উঠেছে–ওঃ কী আমার নবাবপুত্তুর রে! ঘণ্টায় ঘণ্টায় পানির গেলাস চাই। জানিস, মিঠা পানি কত দূর থেকে আনতে হয়?
শব্দের অর্থ
অবদমিত: দমন করা হয়েছে এমন।
অ্যাডভেঞ্চার: অভিযান।
আঁজলা: জোড়বদ্ধ দুই হাতের তালু।
আজ্ঞাবহ: অনুগত।
আত্মপ্রসাদ: আত্মতৃপ্তি।
আরণ্যক: বন সম্পর্কিত
আস্তাবল: ঘোড়া রাখার ঘর।
উপনিবেশবাদী: অন্য দেশ দখল করার মানসিকতা-সম্পন্ন।
কয়েদখানা: জেলখানা।
কয়েদি: কারাগারে বন্দি ব্যক্তি।
কুড়াল: কুঠার।
ক্যানেস্তারা: টিনের তৈরি চারকোনা বাক্স
ক্রোশ: সোয়া তিন কিলোমিটার।
খাটিয়া: এক ধরনের খাট।
জীবনের সাথে গল্পের সম্পর্ক খুঁজি
১০০-১৫০ শব্দের মধ্যে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখো। এরপর সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে তোমার উত্তর সংশোধন করো।
১. “অলিখিত উপাখ্যান” গল্পটি কোন সময়ের ও কোন প্রেক্ষাপটে লেখা?
২. গল্পে উপনিবেশবাদী কারা? তারা কীভাবে স্থানীয় মানুষের উপর অত্যাচার করেছে?
৩. “বড়ো বড়ো গাছ কুড়ালের ক্রমাগত আঘাতে প্রাচীন ডাইনোসরের মতো আর্তনাদ করে লুটিয়ে পড়ছে।”–আলোচনা করো।
৪. প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয়?
গল্প পড়ি ২
সেলিনা হোসেন (জন্ম ১৯৪৭) বাংলাদেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ কথাসাহিত্যিক। তাঁর মধ্যে আছে “পোকামাকড়ের ঘরবসতি”, “যাপিত জীবন”, “যুদ্ধ’, “গায়ত্রী সন্ধ্যা”, “মানুষটি” ইত্যাদি। নিচের উল্লেখযোগ্য বইয়ের গল্পটি লেখকের ‘আকাশপরি’ উপন্যাসের অংশবিশেষ।
আকাশপরি
সেলিনা হোসেন
মেয়েটি মায়ের কপালে হাত রেখে আলতো স্বরে ডাকে, ওঠো। আর কত ঘুমুবে।
মা ভীষণ আদরের অনুভবে পাশ ফিরে শোয়। মেয়েটি আবার ডাকে। বলে, ওঠো ভোর হয়েছে। ভোরের আলো দেখবে না? তুমি না ভোরের আলো ভীষণ ভালোবাসো।
–হ্যাঁ, ভীষণ ভালোবাসি। আমি ভোরের আলো দেখব। রোজ ভোরেই তো দেখতে চাই। কিন্তু হয়ে ওঠে না।
–ছাদে এসো। আমি যাচ্ছি।
মা ধড়মড়িয়ে উঠে বসে। কিন্তু পাশে কেউ নেই। কে ডাকল তাকে? মা চোখ মুছে চারদিকে তাকায়। কেউ কোথাও নেই। সঙ্গে সঙ্গে বুঝে যায়, কে তাকে ডেকেছে। মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছাদে উঠে আসে।
–বাহ্, কী অপূর্ব আলো। স্নিগ্ধ, নরম।
মা নিজেকে বলে। মেয়েটি খিলখিল করে হেসে ওঠে।
মা চারদিকে তাকায়। বলে, আমি তো ঐ আলোর ভেতর তোমাকে দেখতে পাই। তুমি কি আছ?
মেয়েটি কথা বলে না। স্নিগ্ধ বাতাস মাকে ছুঁয়ে যায়। মা দুহাতে মুখ ঢাকে। তার চোখ দিয়ে জল গড়ায়।
–কেঁদো না। মেয়েটির কণ্ঠ।
–এভাবে ছুঁয়ে গেলে তো হবে না। আমি তো তোমাকে দেখতে চাই।
–আমি এভাবেই তোমার কাছে থাকি। আমি তো জানি তুমি টের পাও কখন আমি তোমার পাশে এসে দাঁড়াই।
–পাই, পাই।
মা চোখ মুছতে মুছতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসে। মাঝে মাঝে চোখের ওপর রেগে যায় সে, এত জল কোথা থেকে আসে এই চোখে। জল ফুরোয় না কেন? এসব ভাবলে জল আরো দ্বিগুণ বেগে বের হয়। মেয়েটা তখন কড়া স্বরে ধমক দিয়ে বলে, তুমি এত ফ্যাঁচফ্যাঁচ করো কেন বলো তো! মায়ের কণ্ঠে উত্তর নেই। মা উত্তর দিতে জানে না।মা কান্নার বেগ সামলানোর জন্য রেলিং ধরে ঝুঁকে থাকে।
তখন বাড়ির সবাই ঘুম থেকে জেগে উঠেছে। যে যার কাজে যাবার জন্য রেডি হবে। মায়েরও এখন অনেক কাজ। সবাইকে নাশতা দিতে হবে। নিজের অফিসে যেতে হবে। যাবার পথে শিশু হাসপাতালে যেতে হবে তপুকে দেখতে। ওর ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে। এটা নিয়ে মা ভীষণ চিন্তায় আছে। যদিও ডাক্তার বলেছে, তপু বিপদমুক্ত, কিন্তু মায়ের ভাবনা কাটে না।
মা চোখের জল মুছে রান্নাঘরে যায়। চটপট অনেকগুলো স্যান্ডউইচ বানায়। ঘড়ি দেখে। স্যান্ডউইচের প্লেটটা নিয়ে ডাইনিং টেবিলে যাবার সময়ে থমকে দাঁড়ায় মা। বুক ভেঙে যায়। টেবিলের একটি চেয়ারে মেয়েটি আর এসে বসে না। এঁ একটি চেয়ার ওর প্রিয় জায়গা ছিল। ওই চেয়ারটিতে না বসলে নাকি ওর ভাত খাওয়া হতো না। এখন কোন চেয়ারে বসে ও ভাত খায়? এই ভাবনার মাঝে মা স্যান্ডউইচের প্লেট হাতে নিয়ে হাবার মতো দাড়িয়ে থাকে। মনে হয় যেন চেয়ারটার একটি পা নেই।
যেন পা-হীন চেয়ারটাকে কেউ সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের জাতিসংঘ দপ্তরের ভবনগুলোর সামনে রেখে দিয়েছে। মায়ের মনে হয়, সে তার মেয়েটিকে নিয়ে সেই ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনে মিলে হী করে বিশাল চেয়ারটাকে দেখছে। মায়ের কানে মেয়েটির কণ্ঠ বাজে, কী ভাবছ মা? – তুমি আর আমি সুইজারল্যান্ডে গিয়েছিলাম, সে কথা মনে পড়ছে।
মেয়েটি খিলখিল করে হেসে ওঠে। মায়ের কানে সে হাসি বড়ো মধুর লাগে। মা বুঝতেই পারে না যে অন্য ঘরে এষা ওর বাবার সঙ্গে মজা করছে আর হেসে গড়িয়ে পড়ছে। মায়ের মনে হয় চেয়ারটা দেখতে দেখতে সে শক্ত করে মেয়েটির হাত চেপে ধরেছে। মেয়েটি একদিন ওকে বলেছিল, জানো মা আমার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ ভীষণ মূল্যবান। আমার একটি পা না থাকলে আমি আর প্লেন চালাতে পারব না।
শব্দের অর্থ
অভিভূত: মুগ্ধ।
আঁতকে ওঠা: ভয়ে চমকে ওঠা।
জঞ্জাল: আবর্জনা।
দপ্তর: অফিস।
বিস্ফোরণ: ফেটে পড়া।
ভূমিমাইন: মাটির নিচে পুঁতে রাখা হয় এমন বোমা।
মহামারি: সংক্রামক ব্যাধিতে বহু মানুষের মৃত্যু।
স্যান্ডউইচ: দুই টুকরা পাউরুটির মাঝখানে সবজি ও মাংস দিয়ে বানানো খাবার বিশেষ।
জীবনের সাথে গল্পের সম্পর্ক খুঁজি
১০০-১৫০ শব্দের মধ্যে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখো। এরপর সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে তোমার উত্তর সংশোধন করো।
১. ‘আকাশপরি’ গল্পের মেয়েটির মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল বলে তোমার ধারণা?
২. গল্পের মা চরিত্রটির মনের অবস্থা তুলে ধরো।
৩. “আমাদের ঢাকা শহরটা সুন্দর হয় না কেন?” একই রকম প্রশ্ন তোমার এলাকা সম্পর্কে করা হলে তার জবাব কী হতে পারে সংক্ষেপে লেখো।
৪. ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের করণীয় কী আলোচনা করো।
শিক্ষার্থীরা, উপরে নবম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বাংলা বইয়ের গল্প পরিচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা শেষে তোমাদের একটি ক্লাসের লিংক দেওয়া হয়েছে। এই ক্লাসটি করলে তোমরা গল্প পরিচ্ছেদ সম্পর্কে সহজে বুঝতে পারবে ও এই পরিচ্ছেদে যেসকল কাজ করতে দেওয়া হয়েছে সেগুলোও করতে পারবে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post