কোর্সটিকায় ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বইয়ের সমাধান দেওয়া শুরু হয়েছে। আজকে তোমাদের জন্য নবম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হবে। নাটক পরিচ্ছেদ আলোচনা শেষে তোমাদের নেওয়া হবে একটি ক্লাস। ক্লাসে নাটক পরিচ্ছেদ ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এই পরিচ্ছেদে দেওয়া কাজগুলো কীভাবে করবে তাও বলে দেওয়া হয়েছে।
এখানে, নাটক পরিচ্ছেদ আলোচনার পাশাপাশি তোমরা পেয়ে যাচ্ছো এই পরিচ্ছেদের উপর একটি ক্লাস। যা তোমাদের জন্য এই পরিচ্ছেদকে আরও সহজ করে তুলবে। ৯ম শ্রেণির বাংলা বইয়ের প্রতিটি পরিচ্ছেদের সমাধান এভাবে পড়লে তোমরা তোমাদের বাংলা বইটি অতিসহজে বুঝতে পারবে। সেই সাথে বাংলা বইয়ে দেওয়া বাড়ির কাজগুলো কীভাবে করবে তাও বুঝতে পারবে।
নবম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ সমাধান
কোনো একটি বিষয় নির্ধারণ করে তার উপরে নাটক রচনা করো।
তোমার লেখা নাটকের ভিত্তিতে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও-
- নাটকটির কাহিনি কী নিয়ে?
- কাহিনি তুলে ধরার জন্য কোন কোন ঘটনা এসেছে?
- ঘটনাগুলো আলাদা আলাদা দৃশ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে কি না?
- নাটকে কোন কোন ধরনের চরিত্র আছে?
- চরিত্র অনুযায়ী সংলাপ দেওয়া হয়েছে কি না?
- নাটকের নামকরণ যথাযথ হয়েছে কি না?
নাটক কী
সংলাপের মাধ্যমে রচিত সাহিত্যের শাখাকে নাটক বলে। নাটক মূলত অভিনয়ের জন্য রচনা করা হয়। নাটকের মূল উপাদান ৪টি: কাহিনি, দৃশ্য, চরিত্র ও সংলাপ।
কাহিনি: নাটকে বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে কাহিনি সাজানো হয় এবং সেই কাহিনি ধীরে ধীরে পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। এই কাহিনি বাস্তবতানির্ভর কিংবা কল্পনামূলক হতে পারে। নাটকের কাহিনি সরলরেখায় চলে না, এখানে ঘাত-প্রতিঘাত ও দ্বন্দ্ব থাকে। এই ঘাত-প্রতিঘাত ও দ্বন্দ্ব মূলত জীবন থেকে নেওয়া।
দৃশ্য: নাটকের ঘটনাগুলো আলাদা আলাদা দৃশ্যে উপস্থাপন করা হয়। প্রতিটি দৃশ্য কোথায় ঘটছে, তা দৃশ্যের শুরুতে উল্লেখ করা থাকে। কয়েকটি দৃশ্য মিলে তৈরি হয় অঙ্ক। একটি নাটকে এক বা একাধিক অঙ্ক থাকে। প্রাচীন নাটকে পাঁচটি অঙ্ক দেখা যেত। এই পাঁচ অঙ্কে কাহিনি এভাবে সাজানো হতো: কাহিনির আরম্ভ, কাহিনির বিস্তার, কাহিনির চূড়ান্ত অবস্থা, কাহিনির পরিণতি এবং কাহিনির পরিসমাপ্তি।
চরিত্র: ঘটনা ফুটিয়ে তুলতে চরিত্রের প্রয়োজন হয়। নাটকে ভালো-মন্দ সব ধরনের চরিত্র থাকে। প্রতিটি চরিত্র ব্যক্তিত্ব ও আচরণের দিক দিয়ে আলাদা হয়। নাট্যকার চরিত্রগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করে তৈরি করেন।
সংলাপ: সংলাপ নাটকের প্রাণ। সংলাপের মাধ্যমে ঘটনা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে এবং কাহিনি এগিয়ে যায়। তাই সংলাপ রচনায় নাট্যকারকে যত্নশীল হতে হয়।
নাটক যেহেতু অভিনয়ের উদ্দেশ্যে রচিত হয়, তাই নাটকের সঙ্গে অভিনয়, মঞ্চ ও দর্শক অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নাটকের চরিত্রের সাথে একাত্ম হয়ে যারা নাটকের সংলাপ উচ্চারণ করেন এবং অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন, তাদের বলে অভিনেতা। নাটকের চরিত্রের সাথে মিলিয়ে অভিনেতারা পোশাক পরেন এবং রূপসজ্জা করেন।
মঞ্চে ও স্টুডিওতে নাটকের দৃশ্য অনুযায়ী কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করা হয়। মঞ্চ ও স্টুডিওতে আলোক প্রক্ষেপণ ও শব্দ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকে। দর্শকের কাছে নাটকটি অধিক আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য নাটকের মহড়া বা অনুশীলনের দরকার হয়।
বিষয় অনুযায়ী নাটক অনেক রকমের হতে পারে; যেমন- সামাজিক নাটক, ঐতিহাসিক নাটক, রাজনৈতিক নাটক ইত্যাদি। আবার নাটকের প্রকৃতি অনুযায়ী নাটককে ট্র্যাজেডি, কমেডি, প্রহসন ইত্যাদি ভাগেও ভাগ করা হয়ে থাকে।
নাটক পড়ি
মমতাজউদদীন আহমদ (১৯৩৫-২০১৯) বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত নাট্যকার। তাঁর উল্লেখযোগ্য নাটক “কী চাহ শঙ্খচিল”, “স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা”, ‘সাত ঘাটের কানাকড়ি”, “বকুলপুরের স্বাধীনতা”, ‘রাজা অনুস্বারের পালা” ইত্যাদি।
তোমাদের জন্য মমতাজউদদীন আহমদের লেখা “স্বাধীনতার সংগ্রাম’ নাটকটি দেওয়া হলো। নাটকটি ১৯৭১ সালের ২১শে মার্চ রচিত হয়।
স্বাধীনতার সংগ্রাম
মমতাজউদদীন আহমদ
চরিত্র
বর্গিওয়ালা: বয়স ৫৫
হুকমত খাঁ: বয়স ৩৫
দুখু মিঞা: বয়স ৩৫
বৃদ্ধ: বয়স ৬০
ফারুক: বয়স ২৬
গায়ক: বয়স ৩০
জহুরুল: বয়স ২৮
ঝকড়ু: বয়স ৩৫
প্রথম দৃশ্য
[সময় সন্ধ্যা, রাজপথের মোড়। অকস্মাৎ সান্ধ্যআইন ঘোষিত হয়েছে। থমথমে পরিবেশ]
বর্গি :এসব কে লাগিয়েছে, হকমত খাঁ?
হুকুমত : দেখলে তো দুশমনের বুকের লহ শুষে লিতাম। এই দুখু মিঞা তুমি দেখেছ?
দুখু : আমি দেখিনি
বর্গি : দেখোনি তো খুব মরদের কাজ করেছ! কারফিউর মধ্যে দুশমন এসে মনের সুখে দেয়ালে পোস্টার সেটে গেল, আর তুমি দেখোনি? যেখানেই নজর পড়ছে, একই লেখা-এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। স্বাধীনতা মাঙছে। কেন? আমরা কি স্বাধীন না? কী দুখু মিঞা, স্বাধীনতা কেন?
দুখু : আমি জানি না বর্গিওয়ালাজি।
বর্গি :তা জানবে কেন? সব তো আমাদের জানতে হবে। এ মুল্লুকে বন্যার পানি রোখা গেল না কেন, দায়ী এই বর্গিওয়ালা। সাইক্লোন তুফানে দশ লাখ মানুষ মরে গেল, দায়ী কে? এই বর্গিওয়ালা। তোমার সাড়ে সাত কোটি আদমের আওলাদ খেতে পায় না, আমি দায়ী? বাট হোয়াই? আমি কেন রে দাদা? আমার কলকারখানা আছে, ব্যাংক ইন্সুরেন্স করেছি, সে কি তুমি টাকা দিয়েছ?
আমার মাথার মগজ খাটিয়ে, আল্লাহর মেহেরবানিতে টাকা করেছি, পুঁজি বানিয়েছি-করেছি তো তোমার বাপের কী? উঃ! তামাশা দেখো। বেশ আমি পুঁজিপতি। কিন্তু তাতেই সব দোষ আমার হয়ে গেল। আমি কি তোদের মতো দিনে রাতে দু সের চালের ভাত খাই? খাই তো আধ পোয়া আটার রুটি আর স্রেফ দুটো আন্ডা, রাতে আধা সের গোরুর দুধ।
আর তোরা স্বাধীনতাওয়ালারা বস্তা বস্তা ভাত, মাছ, নুন, তেল, মরিচ খেয়ে দেশটাকে ছোবড়া ছোবড়া করে দিলি, সেদিকে তো নজর নাই। বলে কি না, আমরা সম্পদ চুষে খাচ্ছি। হকুমত খাঁ, দুশমনদের শায়েস্তা করতে হবে।
হুকমত : দুশমনের সিনা ছিড়ে লিব বর্গিওয়ালাজি।
বর্গি : আলবত, আপনা জান কোরবান করে ওয়াতানের সামাল করো। এসব খুব বুড়ি বাত। এরা কীসের স্বাধীনতা চায় আ? আমরা তো ভাই ভাই। যত সব বেইমান, ধর্ম নাই, ইমান নাই, আজাদি লিবে। আমরা কি ইংরেজ? আমরা তো তোদের জানের ভাই বেরাদর।
হুকমত : জাহাজে জাহাজে সিপাহি লিয়ে আসেন। এ মুল্লুকের ঘরে ঘরে দেশের দুশমন কা বাচ্চা তড়পাচ্ছে।
বর্গি :আর কত দিন তড়পাবে! এসব ফুসর ফাসুর আলাপ আলোচনার মধ্যে আমার বিশ্বাস নাই। ঘরে ঘরে ঢুকে পড়ো। টেনে আনো, চাবুক চালাও, সব বিলকুল ঠিক হয়ে যাবে। দেশটা মগের মুল্লুক হয়ে গেল না কি!
হুকমত : বর্গিজি এসব লেখা ছিঁড়ে ফেলে দিই?
বর্গি :জরুর। এই দুখু মিঞা, যাও তামাম পোস্টার ছিড়ে নিয়ে এসো।
দুখু :আমি?
বর্গি :হ্যাঁ তুমি। তোমার ভালোবাসার ভাইরা তো টাঙিয়েছে। ছিড়ে ফেলে পাপ ক্ষয় করো। লেখার নকশা দেখো! অ আ ক খ। উর্দু জবান শিখব না। শিখো না। যখন দোজখের আগুনে জ্বলবি তখন বুঝবি। দুখু মিঞা, বেকুবের মতন দাঁড়িয়ে থেক না, পোস্টার ছিড়ে লিয়ে এসো। যাবে না? হকমত খাঁ।
হুকমত : দুখু মিঞা, এক দো তিন বলব। যদি না যাও, এক, দো-
[ দুখু যাচ্ছে। দুজনের হাসি। ]
বর্গি : সাবাস! কুত্তার লেজ রাইফেলের ধাক্কায় সোজা হয়ে গেল। এইতো এনেছ ছিড়ে, ধন্যবাদ। যাও দেয়ালের ঐদিকে আরো পোস্টার লেগে আছে, সবকিছু ছিড়ে এনে জ্বালিয়ে দাও। দেশের কাজ করো।
হুকমত : দুখুকে একদিন এমন বসিয়ে দেবো বর্গিজি।
বর্গি : বেশি বাঁকা পথ ধরলে আলবত বসিয়ে দেবে। বেহুদারা সুযোগ পেলেই কামড়াতে চায়। কোনো রহম কোরো না। হকমত, যেমন করে পারো ওদের কোমর ভেঙে দাও।
হুকমত : হুকুম করেন তো আজ রাতের মধ্যেই-
বর্গি :উহ, থোড়া আস্তে। ওদিকে ফুসুর ফাসুর তামাশা চলুক, আর এদিকে আমরা জাহাজ খালাসকরি, আমাদের মালামাল সব পশ্চিমে চালান করে দিই। তারপর একদিন ঠিক সময়মতো সিগন্যাল এসে যাবে-তখন-
হুকমত : দেরি হবে না তো?
বর্গি : দেরি? সেনাবাহিনী আর আমরা একজোট হলে আল্লাহর গজবকেও তোয়াক্কা করি না হকমত খাঁ।
হুকমত : আল্লাহর গজব?
বর্গি :কেন করব! সব কিছু ঠিকঠাক করে নিলে তখন ফের আল্লাহর মেহেরবানির জন্য কান্নাকাটি করব, দু আনা চার আনা খয়রাত করব। এরা বলবে, বাহ! কেমন দিলওয়ালা লোক। আমাদের তারিফ করার জন্য কেতাবে লিখতে বলব, বর্গিজি প্রাইজ দিব দশ হাজার টাকা। মাশাল্লাহ তখন দেখো কেমন সুরসুর করে ছুটে আসবে। কিন্তু খুব সাবধান, এবার যদি আমি তুমি হেরে যাই, তাহলে আমিও শেষ তুমিও খতম।
হুকমত : আমরাও খতম?
বর্গি : না খেয়ে মরে যাবে। তোমাকে দিলের কথা বলে দিই। তোমার আমার বাঁচাতো এ মুল্লুকের জোরে। এদের মাটির মতন এমন সোনার মাটি কোথায় পাবে? পাট আর ধান।
হুকমত : মাগার, আপনারা যে বলেন, বিদেশ থেকে চাল না দিলে এরা না খেয়ে মরে যাবে।
বর্গি : চুপ! সে সব বহুত কিসসা। বন্যা সমস্যা মিটে গেলে এদেশে ধানের বন্যা বয়ে যাবে। রা হুকমত : তো বন্যা মিটিয়ে ফেলেন।
বর্গি : উ! মিটিয়ে ফেলব? তাহলে তোমার আমার মরুভূমি আর নুনের মাটি আবাদ হবে কেমন করে! পাহাড় রাজধানী বানাব কী করে? তোমার সেনাবাহিনীর জন্য টাকা দেবে কে?
হুকমত : কেড়ে লিব দুশমনদের কাছ থেকে।
শব্দের অর্থ
আওলাদ: সন্তান।
আঁসু: চোখের পানি।
আজাদি: স্বাধীনতা।
আলবত: নিশ্চয়।
ওয়াতান: দেশ।
কওম: জাতি।
কিসসা: কাহিনি।
খতম: শেষ।
খয়রাত: দান।
খামোখা: বিনা কারণে।
গাদ্দারি: বিশ্বাসঘাতকতা।
গায়েব: অদৃশ্য।
জীবনের সাথে নাটকের সম্পর্ক খুঁজি
”স্বাধীনতার সংগ্রাম” নাটকের আলোকে নিচে কয়েকটি প্রশ্ন দেওয়া হলো। ১৫০-২০০ শব্দের মধ্যে প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রস্তুত করো এবং পরে সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনে নিজের উত্তর সংশোধন করো।
১। ”স্বাধীনতার সংগ্রাম” নাটকটি কোন সময়ে এবং কোন প্রেক্ষাপটে রচিত?
২। এই নাটকের বর্গিওয়ালা চরিত্রটি তৎকালীন পাকিস্তানের কোন শ্রেণির মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করে? এই চরিত্রটিকে নাট্যকার কীভাবে চিত্রিত করেছেন?
৩। নাটকে ঝকড়ু চরিত্রের পরিবর্তন হলো কেন?
8। বয়োজ্যেষ্ঠ কারো কাছ থেকে শোনা হানাদার বাহিনী কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কোনো নির্যাতন বা গণহত্যার ঘটনা লেখো।
শিক্ষার্থীরা, উপরে নবম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বাংলা বইয়ের নাটক পরিচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা শেষে তোমাদের একটি ক্লাসের লিংক দেওয়া হয়েছে। এই ক্লাসটি করলে তোমরা নাটক পরিচ্ছেদ সম্পর্কে সহজে বুঝতে পারবে ও এই পরিচ্ছেদে যেসকল কাজ করতে দেওয়া হয়েছে সেগুলোও করতে পারবে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post