কোর্সটিকায় ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বইয়ের সমাধান দেওয়া শুরু হয়েছে। আজকে তোমাদের জন্য নবম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হবে। কবিতা পরিচ্ছেদ আলোচনা শেষে তোমাদের নেওয়া হবে একটি ক্লাস। ক্লাসে কবিতা পরিচ্ছেদ ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এই পরিচ্ছেদে দেওয়া কাজগুলো কীভাবে করবে তাও বলে দেওয়া হয়েছে।
এখানে, কবিতা পরিচ্ছেদ আলোচনার পাশাপাশি তোমরা পেয়ে যাচ্ছো এই পরিচ্ছেদের উপর একটি ক্লাস। যা তোমাদের জন্য এই পরিচ্ছেদকে আরও সহজ করে তুলবে। ৯ম শ্রেণির বাংলা বইয়ের প্রতিটি পরিচ্ছেদের সমাধান এভাবে পড়লে তোমরা তোমাদের বাংলা বইটি অতিসহজে বুঝতে পারবে। সেই সাথে বাংলা বইয়ে দেওয়া বাড়ির কাজগুলো কীভাবে করবে তাও বুঝতে পারবে।
নবম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ সমাধান
তোমার জীবনে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা কিংবা সাম্প্রতিক কোনো বিষয় যা তোমার মনে বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছে, তার উপর ভিত্তি করে একটি কবিতা লেখো। তোমার রচিত কবিতাটি শিক্ষক ও সহপাঠীদের সামনে উপস্থাপন করতে পারো।
তোমার লেখা কবিতায় নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো আছে কি না, খুঁজে দেখো–
- কোনো বিষয় বা ভাবকে অবলম্বন করে রচিত কি না?
- লাইনগুলোতে অন্ত্যমিল আছে কি না?
- তাল দিয়ে দিয়ে পড়া যায় কি না?
- উপমা আছে কি না?
কবিতা
বিশেষ কোনো বিষয় বা ভাব নিয়ে কবিতা রচিত হয়। কবিতায় প্রতিফলিত হয় ব্যক্তিমনের আবেগ, অনুভূতি ও উপলব্ধি। কবিতার বাক্যগঠন ও ভাষাভঙ্গি গদ্যের বাক্যগঠন ও ভাষাভঙ্গির চেয়ে আলাদা হয়। কবিতার লাইনকে বলে চরণ এবং অনুচ্ছেদকে বলে স্তবক।
বিভিন্ন ধরনের অলংকার ও ছন্দ কবিতার ভাষাকে সুন্দর করে। নিচে কবিতার অলংকার ও ছন্দ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
অলংকার: অলংকার দুই ধরনের: শব্দালংকার ও অর্থালংকার।
শব্দালংকার: কবিতায় প্রতি লাইনের শেষে প্রায়ই অন্ত্যমিল দেখা যায়। এ ধরনের অন্ত্যমিলকে অনুপ্রাস বলে। যেমন: চলি–বলি, হাওয়া–যাওয়া ইত্যাদি। আবার, কখনো কখনো কবিতার চরণের মধ্যে একই ধ্বনির পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেখা যায়। যেমন: “গুরু গুরু মেঘ গুমরি গুমরি গরজে গগনে গগনে”–এখানে “গ” এবং “র” ধ্বনির পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। এই ধরনের পুনরাবৃত্তির নামও অনুপ্রাস। অনুপ্রাস এক ধরনের শব্দালংকার।
অর্থালংকার: কবিতায় উপমার ব্যবহার হয়। যেমন: ‘রুগ্ন বৃদ্ধ ভিখারির রগ-ওঠা হাতের মতন রুক্ষ মাঠ’–এখানে রুক্ষ মাঠকে ভিখারির রগ-ওঠা হাতের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। কোনো কিছুর বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলার জন্য অন্য কিছুর সঙ্গে এভাবে তুলনা বা সাদৃশ্য তৈরি করাকে উপমা বলে। উপমা এক ধরনের অর্থালংকার।
ছন্দ: ছন্দ বোঝার জন্য লয়, পর্ব ও মাত্রা সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার।
লয় হলো কবিতার গতি। পর্ব হলো কবিতার এক তাল থেকে আরেক তালের মধ্যকার অংশ। আর মাত্রা হলো পর্বের একক। নিচের পদ্যাংশটুকু তাল রক্ষা করে পড়ো এবং খেয়াল করো:
/জল ছাড়িয়ে /দল হারিয়ে /গেলাম বনের /দিক
/সবুজ বনের /হরিৎ টিয়ে /করে রে ঝিক/মিক
/বনের কাছে /এই মিনতি, /ফিরিয়ে দেবে /ভাই,
/আমার মায়ের /গয়না নিয়ে /ঘরকে যেতে /চাই।
উপরের অংশটুকু অপেক্ষাকৃত দ্রুতগতিতে না পড়লে শ্রুতিমধুর হয় না। পড়ার এই গতির নাম লয়। আবার বাঁকা দাঁড়ির মাঝখানে থাকা “জল ছাড়িয়ে, “দল হারিয়ে’, ”গেলাম বনের”, “দিক” এগুলো এক একটি পর্ব। ‘জল ছাড়িয়ে’ পর্বে ৪ মাত্রা আছে; যথা: জল+ছা+ড়ি+য়ে। একইভাবে “দল হারিয়ে” পর্বে ৪ মাত্রা: দল+হা+রি+য়ে; “গেলাম বনের” পর্বে ৪ মাত্রা: গে+লাম+ব+নের এবং “দিক” ১ মাত্রা।
লয়, পর্ব, মাত্রা বিবেচনায় ছন্দ তিন ধরনের: স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত। ছন্দভেদে মাত্রা গণনার ধরন আলাদা হয়ে থাকে।
স্বরবৃত্ত ছন্দ: এটি দ্রুত লয়ের ছন্দ। সাধারণত একেকটি পর্ব হয় ৪ মাত্রার। ছড়ার জন্য উপযোগী বলে একে ছড়ার ছন্দও বলা হয়। যেমন:
/এই নিয়েছে /ওই নিল যা
/কান নিয়েছে /চিলে।
/চিলের পিছে /ঘুরছি মরে
/আমরা সবাই /মিলে।
মাত্রাবৃত্ত ছন্দ: এই ছন্দের লয় মধ্যম গতির। মাত্রাবৃত্ত ছন্দে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৬ মাত্রার পর্ব হয়। এই ছন্দের মাত্রা-গণনা পদ্ধতি একটু আলাদা। যেমন:
/তোমাতে রয়েছে /সকল কেতাব /সকল কালের /জ্ঞান,
/সকল শাস্ত্র /খুঁজে পাবে সখা /খুলে দেখ নিজ /প্রাণ!
/তোমাতে রয়েছে /সকল ধর্ম, /সকল যুগাব/তার,
/তোমার হৃদয় /বিশ্ব-দেউল /সকলের দেব/তার।
অক্ষরবৃত্ত ছন্দ: এই ছন্দের লয় বা গতি ধীর। সাধারণত প্রতি পর্বে ৮ ও ৬ মাত্রা দেখা যায়। এই ছন্দের মাত্রা-গণনা পদ্ধতিও আলাদা। বর্ণ গুনে গুনেও এর মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যেমন:
/হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে /করেছ মহান!
/তুমি মোরে দানিয়াছ /খ্রিষ্টের সম্মান
/কণ্টক-মুকুট শোভা। /দিয়াছ, তাপস,
/অসঙ্কোচ প্রকাশের /দুরন্ত সাহস;
কবিতা পড়ি
গোলাম মোস্তফা (১৮৯৭-১৯৬৪) বাংলাদেশের একজন কবি। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে আছে “রক্তরাগ”, ‘খোশরোজ’”, ‘হাস্নাহেনা”, ”বনি আদম”, “বিশ্বনবী” ইত্যাদি। নিচের “জীবন বিনিময়” কবিতাটি কবির ‘বুলবুলিস্তান’ কাব্য থেকে নেওয়া হয়েছে।
কবিতাটি প্রথমে নীরবে পড়ো। এরপর সরবে আবৃত্তি করো।
পল্লি-মা
গোলাম মোস্তফা
পল্লি-মায়ের বুক ছেড়ে আজ যাচ্ছি চলে প্রবাস-পথে
মুক্ত মাঠের মধ্য দিয়ে জোর-ছুটানো বাষ্প-রথে।
উদাস হৃদয় তাকিয়ে রয় মায়ের শ্যামল মুখের পানে,
বিদায়বেলার বিয়োগ-ব্যথা অশ্রু আনে দুই নয়ানে।
স্নেহময়ী রূপ ধরে মা দাঁড়িয়ে আছে মাঠের পরে,
মুক্ত চিকুর ছড়িয়ে গেছে দিক হতে ওই দিগন্তরে;
দেখছে মা সেই সন্তানেরে পুলক-ভরা ভঙ্গিমাতে।
দেখছে মা সেই সন্তানেরে পুলক-ভরা ভঙ্গিমাতে।
ওই যে মাঠে গোরু চরে লেজ দুলিয়ে মনের সুখে,
ওই যে পাখির গানের সুখে কাঁপন জাগে বনের বুকে,
মাথাল মাথায় কাস্তে হাতে ওই যে চলে কালো চাষা,
ওরাই মায়ের আপন ছেলে-ওরাই মায়ের ভালোবাসা।
ওরা সবাই সহজভাবে ঠাঁই পেয়েছে মায়ের কোলে,
শান্তি-সুখে বাস করে সব, কাটায় না দিন গণ্ডগোলে,
গোরু-মহিষ যে ঠাঁই চরে, শালিক তাহার পাশেই চরে
কখনো বা পৃষ্ঠে চড়ে কখনো বা নৃত্য করে!
রাখাল ছেলে চরায় ধেনু বাজায় বেণু অশথ-মূলে
সেই গানেরই পুলক লেগে ধানের খেত ওই উঠল দুলে;
সেই গানেরই পুলক লেগে বিলের জলের বাঁধন টুটে
মায়ের মুখের হাসির মতো কমল-কলি উঠল ফুটে!
দুপুরবেলায় ক্লান্ত হয়ে রৌদ্র-তাপে কৃষক ভায়া
বসল এসে গাছের ছায়ায় ভুঞ্জিতে তার স্নিগ্ধ-ছায়া,
মাথার উপর ঘন-নিবিড় কচি কচি ওই যে পাতা,
ও যেন মার আপন হাতে তৈরি করা মাঠের ছাতা!
ঘাম-ভেজা তার ক্লান্ত দেহে শীতল সমীর যেমনি চাওয়া,
পাঠিয়ে দিল অমনি মা তার স্নিগ্ধ-শীতল আঁচল-হাওয়া,
কালো দিঘির কাজল জলে মিটাল তার তৃষ্ণা-জ্বালা,
কোন সে আদি কাল হতে মা রেখেছে এই জলের জালা।
সবুজ ধানে মাঠ ছেয়েছে, কৃষক তাহা দেখলে চেয়ে,
রঙিন আশার স্বপ্ন এলো নীল নয়নের আকাশ ছেয়ে;
ওদেরই ও ঘরের জিনিস, আমরা যেন পরের ছেলে,
মোদের ওতে নাই অধিকার-ওরা দিলে তবেই মেলে!
ওই যে লাউয়ের জাংলা-পাতা ঘর দেখা যায় একটু দূরে
কৃষক-বালা আসছে ফিরে নদীর পথে কলসি পুরে,
ওই কুঁড়েঘর–উহার মাঝেই যে-চিরসুখ বিরাজ করে,
নাইরে সে সুখ অট্টালিকায়, নাইরে সে সুখ রাজার ঘরে!
কত গভীর তৃপ্তি আছে লুকিয়ে যে ওই পল্লি-প্রাণে,
জানুক কেহ নাই বা জানুক-সে কথা মোর মনই জানে!
মায়ের গোপন বিত্ত যা তার খোঁজ পেয়েছে ওরাই কিছু
মোদের মতো তাই ওরা আর ছোটে নাকো মোহের পিছু।
শব্দের অর্থ
ধেনু: গোরু
কমল-কলি: পদ্মের মুকুল।
কৃষক-বালা: কৃষক-কন্যা।
চিকুর: চুল।
জাংলা: বাঁশের তৈরি মাচা।
জালা: মাটির বড়ো পাত্র
টোটা: দূর হওয়া।
তই: স্থান, জায়গা।
জীবনের সঙ্গে কবিতার সম্পর্ক খুঁজি
১০০-১৫০ শব্দের মধ্যে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখো। এরপর সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে তোমার উত্তর সংশোধন করো।
১. ”পল্লি-মা” কবিতায় কবি কী বলতে চেয়েছেন?
২. “ওরাই মায়ের আপন ছেলে—ওরাই মায়ের ভালোবাসা।”-কথাটি বিশ্লেষণ করো।
৩. ”পল্লি-মা” কবিতায় কবি গ্রামকে মায়ের সাথে তুলনা করেছেন কেন?
৪. কী কী প্রয়োজনে মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে আসে?
”পল্লি-মা” কবিতার বৈশিষ্ট্য
১. এই কবিতায় গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসী একজন মানুষের মনের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে।
২. এটি কয়েকটি স্তবকে বিভক্ত একটি সমিল কবিতা। কবিতাটির প্রতি জোড়া চরণের শেষে মিল আছে।
৩. কবিতাটিতে দুই ধরনের অনুপ্রাস আছে: ক. অন্ত্যমিল অনুপ্রাস: পথে–রথে, সুখে–বুকে ইত্যাদি; এবং খ. পুনরাবৃত্তি অনুপ্রাস: “মুক্ত মাঠের মধ্য দিয়ে”—এখানে “ম” ধ্বনির পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। এগুলো শব্দালংকারের উদাহরণ।
৪. কবিতায় উপমার ব্যবহার হয়েছে। যেমন: “মায়ের মুখের হাসির মতো কমল-কলি উঠল ফুটে”–এখানে পদ্মফুল ফোটাকে মায়ের হাসির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এটি এক ধরনের অর্থালংকার।
৫. কবিতাটির লয় দ্রুতগতির।
৬. কবিতাটি স্বরবৃত্ত ছন্দে লেখা।
৭. চরণগুলোর পর্ব-বিন্যাস এ রকম:
/পল্লি-মায়ের /বুক ছেড়ে আজ /যাচ্ছি চলে /প্রবাস-পথে
মুক্ত মাঠের /মধ্য দিয়ে /জোর-ছুটানো /বাষ্প-রখে।
শিক্ষার্থীরা, উপরে নবম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বাংলা বইয়ের কবিতা পরিচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা শেষে তোমাদের একটি ক্লাসের লিংক দেওয়া হয়েছে। এই ক্লাসটি করলে তোমরা কবিতা পরিচ্ছেদ সম্পর্কে সহজে বুঝতে পারবে ও এই পরিচ্ছেদে যেসকল কাজ করতে দেওয়া হয়েছে সেগুলোও করতে পারবে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post