নবম শ্রেণির বিজ্ঞান ১ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর : পানির দ্বারা শরীর গঠনের নানা প্রয়োজনীয় উপাদান দেহের সর্বত্র পরিবাহিত হয়। বিপাকের ফলে দেহে উৎপন্ন ইউরিয়া, অ্যামোনিয়া ইত্যাদি শরীরের জন্য ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থগুলোকে পানি মূত্র ও ঘাম হিসেবে দেহ থেকে নিষ্কাশন করে। এছাড়া পানি দেহ থেকে ঘাম নিঃসরণে ও বাষ্পীভবনের দ্বারা দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। দেহকোষ গঠন ও কোষের যাবতীয় শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলো পানি ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
নবম শ্রেণির বিজ্ঞান ১ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
১. ল্যাকটোজ ও গ্লাইকোজেন কিসে পাওয়া যায়?
উত্তর: ল্যাকটোজ বা দুধ শর্করা গরু, ছাগল ও অন্যান্য প্রাণীর দুধে থাকে। গ্লাইকোজেন মানুষ, পশু ও পাখি জাতীয় প্রাণীর যকৃৎ ও মাংসে (পেশি) থাকে।
২. যেসব ড্রাগে আসক্তি সৃষ্টি হয় সেগুলো কী কী?
উত্তর: উল্লেখযোগ্য ড্রাগ যেগুলোর ওপর মানুষের আসক্তি সৃষ্টি হয়, সেগুলো হচ্ছে আফিম ও আফিমজাত পদার্থ, হেরোইন, মদ, পেথিডিন, বারবিচুরেট, কোকেন, ভাং, চরস, ম্যারিজুয়ানা, এলএসডি ইত্যাদি।
৩. ভিটামিন A এর উৎস কী কী?
উত্তর: প্রাণিজ উৎসের মধ্যে ডিম, গরুর দুধ, মাখন, ছানা, দই, ঘি, যকৃৎ ও বিভিন্ন তেলসমৃদ্ধ মাছে বিশেষ করে কড মাছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন A পাওয়া যায়। উদ্ভিজ্জ উৎসের মধ্যে ক্যারোটিন সমৃদ্ধ শাকসবজি, যেমন—লালশাক, কচুশাক, পুঁইশাক, কলমিশাক, ডাঁটাশাক, পুদিনা পাতা, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, ঢেড়স, বাঁধাকপি, মটরশুঁটি এবং বিভিন্ন ধরনের ফল যেমন: আম, পাকা পেঁপে, কাঁঠাল ইত্যাদিতে ভিটামিন অ উল্লেখযোগ্য হারে আছে।
৪. অধিক ভিটামিন D শরীরে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় কেন?
উত্তর: দৈনিক চাহিদা অপেক্ষা অধিক পরিমাণে ভিটামিন D গ্রহণ করলে শরীরের ক্ষতি হয়। এতে অধিক ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষিত হওয়ায় রক্তে এদের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে বৃক্ক, হৃৎপিণ্ড, ধমনি ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম জমা হতে থাকে।
৫. মানবদেহে ভিটামিন E-এর কাজ কী?
উত্তর: মানবদেহে ভিটামিন E হলো এন্টিঅক্সিডেন্ট, যা ধমনিতে চর্বি জমা রোধ করে এবং সুস্থ ত্বক বজায় রাখে। এ ছাড়া ভিটামিন E কোষ গঠনে সহায়তা করে এবং বেশ কিছু শারীরবৃত্তিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। ভিটামিন ঊ মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর বন্ধ্যাত্ব দূর করে। ভিটামিন E-এর অভাবে জরায়ুর মধ্যে ভ্রূণের মৃত্যুও হতে পারে।
৬. ভিটামিন C-এর অভাবে কী হয়?
উত্তর: ভিটামিন C-এর তীব্র অভাবে স্কার্ভি (দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া) রোগ হয়। এর অভাবে—(i) অস্থির গঠন শক্ত ও মজবুত হতে পারে না। (ii) ত্বকে ঘা হয়, ক্ষত শুকাতে দেরি হয়। (iii) দাঁতের মাড়ি ফুলে দাঁতের ইনামেল উঠে যায়। দাঁত দুর্বল হয়ে অকালে ঝরে পড়ে। (iv) রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে গিয়ে সহজে ঠাণ্ড লাগে।
৭. দেহে পানির কাজ কী কী?
উত্তর: জীবদেহে পানি দ্রাবকের কাজ করে। পানি খাদ্য উপাদানের পরিপাক ও পরিশোষণে সাহায্য করে। পানির দ্বারা শরীর গঠনের নানা প্রয়োজনীয় উপাদান দেহের সর্বত্র পরিবাহিত হয়। বিপাকের ফলে দেহে উৎপন্ন ইউরিয়া, অ্যামোনিয়া ইত্যাদি শরীরের জন্য ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থগুলোকে পানি মূত্র ও ঘাম হিসেবে দেহ থেকে নিষ্কাশন করে। এছাড়া পানি দেহ থেকে ঘাম নিঃসরণে ও বাষ্পীভবনের দ্বারা দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। দেহকোষ গঠন ও কোষের যাবতীয় শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলো পানি ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
৮. সবার জন্য প্রযোজ্য এমন সুষম খাবারে খাদ্য উপাদান কী অনুপাতে হবে?
উত্তর: ক্যালরি প্রাপ্যতার ওপর ভিত্তি করে সাধারণভাবে সবার জন্য প্রযোজ্য এমন খাবার হলো:
১. প্রোটিন জাতীয়: মোট ক্যালরির ১৫ শতাংশ,
২. শর্করা জাতীয় (বেশির ভাগই কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট হবে, চিনি জাতীয় হবে না): মোট ক্যালরির ৫০Ñ৬০ শতাংশ; এবং
৩. চর্বি জাতীয়: ক. সম্পৃক্ত (স্যাচুরেটেড) স্নেহ পদার্থ—মোট ক্যালরির ৭ শতাংশ। খ. অসম্পৃক্ত (আনসেচুরেটেড) স্নেহ পদার্থ—মোট ক্যালরির ২০ শতাংশ পর্যন্ত।
৯. সুষম খাদ্য তালিকা তৈরির সময় কী কী বিষয় খেয়াল রাখতে হবে?
উত্তর: সুষম খাদ্যতালিকা তৈরির সময় মানুষের বয়স, লিঙ্গভেদ, কী রকম কাজ করে অর্থাৎ অধিক পরিশ্রমী, মাঝারি পরিশ্রমী, স্বল্প পরিশ্রমী ইত্যাদি বিবেচনা করা দরকার। কারণ শিশু ও বৃদ্ধ, বাড়ন্ত শিশু, গর্ভবতী মহিলা এদের কোনো নির্দিষ্ট সুষম খাদ্য প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না। সুষম খাদ্য তৈরি করে নিতে হয়।
১০. খাদ্য তালিকায় রাফেজযুক্ত খাবার গুরুত্বপূর্ণ কেন?
উত্তর: রাফেজভুক্ত খাবারের গুরুত্ব নিম্নরূপ:
১. এটি পরিপাকে সহায়তা করে। রাফেজ পানি শোষণ করে এবং মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
২. শরীর থেকে অপাচ্য খাদ্য নিষ্কাশনে সাহায্য করে।
৩. এটি শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
৪. বারবার ক্ষুধার প্রবণতা কমাতে এটি কাজ করে।
১১. দুপুরের খাবারের গুরুত্ব কী?
উত্তর: আমাদের দেশে দুপুরের খাবারকে সাধারণত প্রধান খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দুপুরের খাবারে অবশ্যই সুষম খাদ্যতালিকার সাহায্য নিয়ে সেভাবে খাদ্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। কারণ দুপুরের খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১২. আমাদের রাতের খাবার কেমন হওয়া উচিত?
উত্তর: আমাদের রাতের খাবার সাধারণত সহজপাচ্য হওয়া উচিত। রাতে আমিষ জাতীয় খাবার কম খাওয়া ভালো। রাতে শাক বা টক জাতীয় কোনো খাদ্য গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ছাত্রছাত্রীদের প্রতিদিন রাতে শোয়ার আগে আর্থিক সামর্থ্য অনুসারে দুধ বা অন্য শক্তি উৎপাদক তরল খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।
১৩. সংরক্ষণকৃত খাদ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোন বিষয় খেয়াল রাখতে হবে?
উত্তর: সংরক্ষিত খাদ্য ব্যবহারের পূর্বে লক্ষ করতে হবে-যদি খাদ্যের রঙের পরিবর্তন ঘটে অথবা খাদ্য ফুলে উঠে, খাদ্যের উপর সাদা অথবা কালো আস্তরণ সৃষ্টি হয় এবং খাদ্যের ওপরটা পিচ্ছিল হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে খাদ্যে পচনক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ খাদ্যের বিষক্রিয়ার ফলে শারীরিক ক্ষতি হবে।
১৪. খাদ্য সংরক্ষণে লবণের ব্যবহার ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: বিভিন্ন লবণ ব্যবহার করে খাদ্য সংরক্ষণ করা যায়। সালফেটের লবণ যেমন Sodium bisulphite অথবা Potassium-meta bisulphite ব্যহার করে ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য অণুজীবের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করা যায়। Benszonic acid-এর লবণ Sodium benzoate। এটি বিশেষ করে ছত্রাক ঈষ্ট এর বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে। ফলের রস, ফলের শাঁস ইত্যাদি সংরক্ষণের জন্য Sodium benzoate খুব উপযোগী।
এছাড়াও Propionic Acid-এর লবণ এবং Sorbic Acid-এর লবণ Sorbates ব্যবহার করে দই, মিষ্টি, পনির, মাখন ও বেকারি সামগ্রী সংরক্ষণ করা হয়।
১৫. ঈস্ট জাতীয় ছত্রাক কী কী খাদ্য নষ্ট করে?
উত্তর: ঈস্ট জাতীয় ছত্রাক ফলের রস, টমেটোর সস, জেলি, মিষ্টি আচার, শরবত ইত্যাদি খাবার দ্রুত নষ্ট করে ফেলে। এতে খাবার টক গন্ধ হয় এবং ঘোলাটে হয়ে যায়।
আরও দেখো—নবম ও দশম শ্রেণির বিজ্ঞান সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
নবম-দশম শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের নবম শ্রেণির বিজ্ঞান ১ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমূলক এবং সৃজনশীল প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post