নয়া পত্তন গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর : গল্পটি পাকিস্তানি শাসনামলের পটভূমিতে রচিত। গল্পে দেখা যায়, এনট্রান্স পাশ শনু পণ্ডিত গ্রামের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য জমিদারের সহায়তায় একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ঝড়ে জরাজীর্ণ স্কুলটি ভেঙে গেলে শনু পণ্ডিতসহ গ্রামবাসী সংকটে পড়েন। গ্রামের সম্পন্ন ব্যক্তি জুলু চৌধুরী কোনো সাহায্য করতে রাজি হন না।
আশেপাশের গ্রামেও আর স্কুল নেই। এ অবস্থায় সবাই সিদ্ধান্ত নেন একসঙ্গে পরিশ্রম করে নিজেদের স্কুল নিজেরাই পুনর্নির্মাণ করবেন এবং সন্ধ্যার মধ্যেই তাঁরা স্কুল ঘর তৈরি করতে সক্ষম হন। আবার তাঁদেরই উৎসাহে চাষি তোরাব আলী স্কুলের নাম ফলকে আগের নামের পরিবর্তে লেখেন ‘শনু পণ্ডিতের ইস্কুল’।
নয়া পত্তন গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর
বর্ণনামূলক প্রশ্ন—১: নিচের ক ও খ প্রশ্ন দুটির উত্তর দাও:
ক. শনু পণ্ডিত শহরে গিয়ে কী ধরনের সাহায্য আশা করেছিলেন? কেন করেছিলেন?
খ. শহরে গিয়ে তাকে কী ধরনের অবহেলা ও অপমানের সম্মুখীন হতে হয়েছিল?
১ নম্বর বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তর
ক. শহরে গিয়ে শনু পণ্ডিত সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য আশা করেছিলেন, যাতে তিনি গাঁয়ের স্কুলটি পুনরায় নির্মাণ করতে পারেন এবং সেখানে গাঁয়ের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা চালু রাখতে পারেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, সরকার যদি তাকে সাহায্য দেয়, তবে তিনি আবার তার স্কুলটির কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন। তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল গাঁয়ের শিশুদের লেখাপড়ার সুযোগ দেওয়া, যাতে তারা নিজেদের জীবন পরিবর্তন করতে পারে এবং ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে সক্ষম হয়। তিনি মনে করতেন যে, শিক্ষা সমাজের উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তার নিজে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে গাঁয়ের উন্নতি সাধন করতে পারে। তাই তিনি শহরে গিয়ে সরকারি সহায়তা চেয়েছিলেন, কারণ তার স্কুলটি ইতোমধ্যেই কিছুটা ভেঙে পড়েছিল এবং নতুন করে স্কুলটি চালু করার জন্য টাকা ও উপকরণের প্রয়োজন ছিল।
খ. শহরে গিয়ে শনু পণ্ডিতকে ভয়াবহ অবহেলা ও অপমানের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। প্রথমে, তিনি সরকারের কাছে স্কুলের জন্য সাহায্য চেয়ে যান। শিক্ষা বিভাগের বড়ো সাহেব শমসের খান তাকে অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণভাবে ধমক দেন। সাহেব বলেন, ‘কিছু করতে হবে না, সরকার ইতিমধ্যেই ইংলিশ স্কুল এবং হোটেলের জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করছে, আর আপনার স্কুলের জন্য এক পয়সাও নেই!’ তাকে এমনভাবে অপমান করা হয় যেন তিনি কোনো অপরাধ করেছেন, কারণ তিনি সাহায্য চেয়ে সরকারের দরবারে গিয়েছিলেন। এই ঘটনার পর, শনু পণ্ডিতের মনে গভীর হতাশা জন্ম নেয়।
এরপর, তিনি চৌধুরী সাহেবের কাছে সাহায্য চেয়ে যান। চৌধুরী সাহেব, যিনি একসময় তার স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য কিছু সাহায্য করেছিলেন, এখন আর কোনো সাহায্য দিতে আগ্রহী ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘টাকা নেই, আর সাহায্যও সম্ভব নয়। বর্তমানে আমরা নিজেরাই ভীষণ কষ্টে আছি, স্কুলে সাহায্য দেওয়া তো দূরের কথা।’ চৌধুরী সাহেবের এই অবহেলা তাকে আরও হতাশ করে তোলে।
এইসব ঘটনার পর, শনু পণ্ডিত বুঝতে পারেন যে, গাঁয়ের শিক্ষার উন্নতির জন্য তাকে কোনো সমর্থন বা সাহায্য মিলবে না। তার আশার বাতি নিভে গেছে, এবং তিনি এমন অবস্থায় ফিরে আসেন, যেখানে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য কোনো সহায়তা বা সমর্থন নেই। তার আত্মসম্মান ভেঙে যায়, কারণ সে যে মানুষদের কাছ থেকে সাহায্য আশা করেছিলেন, তারা সবাই তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তার কাজের গুরুত্বকেই মূল্যায়ন করেনি।
এছাড়া, গাঁয়ে ফিরে এসে তার সামনে উপস্থিত গ্রামবাসীরা তাকে প্রশ্ন করলে, তিনি আরো এক ধরনের সামাজিক অপমান অনুভব করেন। গ্রামের মানুষরা যখন জানতে পারে যে, চৌধুরী সাহেব বা সরকার তাকে কোনো সাহায্য দেয়নি, তখন তারা তাকে উপহাস ও বিদ্রুপ করে। এই অভিজ্ঞতা তার জন্য অত্যন্ত কষ্টকর ছিল, কারণ তার দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের কোনও মূল্যায়ন হয় না এবং সে এক অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যায়, যেখানে তার সংগ্রাম অযথা হয়ে যায়।
বর্ণনামূলক প্রশ্ন—২: নিচের ক ও খ প্রশ্ন দুটির উত্তর দাও:
ক. চৌধুরী সাহেবের সঙ্গে শনু পণ্ডিতের সম্পর্ক কেমন ছিল? তিনি কীভাবে স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য সাহায্য করেছিলেন?
খ. চৌধুরী সাহেব কেন স্কুলের পুনর্গঠন নিয়ে কোনো সাহায্য করতে রাজি হননি?
২ নম্বর বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তর
ক. চৌধুরী সাহেব এবং শনু পণ্ডিতের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ভালো এবং বন্ধুত্বপূর্ণ। একসময় শনু পণ্ডিত এবং চৌধুরী সাহেব গাঁয়ের কাছাকাছি ছিলেন এবং তারা একে অপরকে জানতেন ও বিশ্বাস করতেন। চৌধুরী সাহেব ছিলেন গাঁয়ের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, যিনি জমিদারির তদারকি করতেন এবং সমাজে সম্মানিত ছিলেন। একদিন, শনু পণ্ডিত যখন গাঁয়ের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার চিন্তা করেন, তখন তিনি প্রথমে চৌধুরী সাহেবের কাছে সাহায্য চান। চৌধুরী সাহেব এই প্রস্তাবে খুব আগ্রহ দেখান এবং তার সহযোগিতা দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
চৌধুরী সাহেব স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য সরাসরি বড় অর্থ সাহায্য না দিলেও, তিনি তার জমি দিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য জায়গা দেন এবং শহর থেকে মিস্ত্রি এনে স্কুলের জন্য কিছু টুল এবং টেবিল তৈরি করার ব্যবস্থা করেন। তার এই সাহায্যটি ছোট হলেও, গাঁয়ের একদম প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শনু পণ্ডিত তার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ স্কুলের নাম ‘জুলু চৌধুরীর স্কুল’ রাখেন এবং চৌধুরী সাহেবের নাম স্কুলের ফলকে লিখে দিয়ে তার অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। ফলে, চৌধুরী সাহেব এবং শনু পণ্ডিতের সম্পর্ক ছিল সহায়ক এবং আন্তরিক।
খ. চৌধুরী সাহেব, যিনি একসময় গাঁয়ের অন্যতম প্রভাবশালী এবং সমৃদ্ধ ব্যক্তিত্ব ছিলেন, এখন আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তার পূর্বেকার জমিদারি ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডির ফলে সমাজে তার একটি বড় সম্মান ছিল, এবং তিনি ছিলেন সমাজে অন্যদের সহায়তা করার এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তবে, তার আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনের কারণে, তিনি আর সেই সাহায্য দিতে সক্ষম ছিলেন না।
তার জমিদারি এবং ব্যবসার খরচ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, তিনি নিজের পরিবার এবং সম্পত্তি পরিচালনার জন্যও যথেষ্ট অর্থ জোগাড় করতে পারছিলেন না। একদিকে, তার জমিদারি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল, অন্যদিকে, তার ব্যবসার আয়ও কমে যাচ্ছিল। এসব কারণে, তার আর্থিক অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, তিনি অন্যদের সহায়তা করার মতো অবস্থায় ছিলেন না।
যখন শনু পণ্ডিত স্কুলের পুনর্গঠনের জন্য চৌধুরী সাহেবের কাছে সাহায্য চান, চৌধুরী সাহেব তার কঠিন বাস্তবতার কথা তুলে ধরে বলেন, “আমার কাছে টাকা নেই, আমি সাহায্য করতে পারব না।” তিনি আরও বলেন, “পকেটে যদি টাকা না থাকে, স্কুল বন্ধ করে চুপচাপ বসে থাকুন।” এর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, বর্তমানে তার পক্ষে কিছু করার ক্ষমতা নেই, কারণ তার নিজস্ব জীবনযাপনও কঠিন হয়ে পড়েছে।
এছাড়া, চৌধুরী সাহেবের এই অবস্থা সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপের ফলস্বরূপ। তার অতীতের শ্রীবৃদ্ধি ও সামাজিক মর্যাদা এখনও তাকে তার পুরনো বন্ধু এবং পরিচিতদের কাছে সম্মানিত রাখে, কিন্তু বাস্তবতা হল যে, এখন তিনি আর আগের মতো সাহায্য করতে সক্ষম নন। এই চিত্রটি আমাদেরকে সমাজে ব্যক্তির আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন এবং সেই পরিবর্তনের ফলস্বরূপ তাদের সিদ্ধান্ত এবং কর্মকাণ্ডে উপর কীভাবে প্রভাব ফেলে, তা দেখানোর চেষ্টা করেছে।
আরও দেখো—অষ্টম শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের আনন্দপাঠ বই থেকে নয়া পত্তন গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য ৩টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখানে দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও বাংলা বইয়ের গল্প-কবিতার সৃজনশীল, জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমূলক এবং বহুনির্বাচনি সমাধানের জন্য উপরের লিংকটি অনুসরণ করো।
Discussion about this post