নামাজের নিয়ম এর মধ্যে কিছু ফরজ কাজ রয়েছে আবার কিছু ওয়াজিব কাজ করেছে। নামাজের ফরজ এর পরেই ওয়াজিব এর স্থান। নামাজের মধ্যে ফরজ বাদ পড়লে পুনরায় নামাজ পড়তে হবে। যদি ওয়াজিব বাদ পড়ে যায় তাহলে সাহু সিজদাহ দিতে হবে। নয়তো নামাজ হবে না। সেজন্য চলুন জেনে নেওয়া যাক নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি।
নামাজের ফরজগুলো নামাজ আদায় এর আগে এবং নামাজ আদায়ের সময়ে পালন করতে হয়। কিন্তু নামাজের সকল ওয়াজিবগুলো নামাজের মধ্যে পালন করতে হবে।
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ব্যতীত বাকি নামাজ সমূহেও নামাজের ফরজ ও ওয়াজিবগুলো আদায় করতে হবে। কোন কারণে ফরজ কিংবা ওয়াজিব আদায় করতে ভুলে গেলে সেই ভুলটি সংশোধন করে নিতে হবে।
নামাজের ওয়াজিব কয়টি
নামাজের মোট ওয়াজিব ১৪ টি। নামাজের সকল ওয়াজিবগুলো নামাজের মধ্যেই আদায় করে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন ভুল না যায়। যদি একান্তই ভুল চলে যায় তাহলে সাহু সিজদাহ দিতে হবে।
চলুন নামাজের ওয়াজিবগুলো ক্রমান্বয়ে জেনে আসি।
১. নামাজে দাড়িয়ে সানার পরে সূরা ফাতিহা পাঠ করা। (বুখারী ১/১০৪, হাদিস: ৭৫৬)
২. নামাজের প্রথম ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে নামাজের ছোট সূরা সমূহ পড়তে হবে। যা অন্ততপক্ষে তিন আয়াত পরিমাণ হতে হবে। (বুখারী ১/১০৫, হাদিস: ৭৭৬)
৩. ফরজ নামাজ এর প্রথম দু’রাকাতকে কিরাত এর জন্য নির্ধারিত করা। (বুখারী ১/১০৫, হাদিস: ৭৭৬)
৪. সূরা ফাতিহার পরে অন্য সূরা পাঠ করা। (বুখারী ১/১০২, হাদিস: ৭৪৩)
৫. নামাজের সকল রুকনগুলো ধীর ও স্থিরভাবে আদায় করা। (বুখারী ১/১০৯, হাদিস: ৭৯৩)
রুকন যেভাবে আদায় করতে হবে: নামাজের মধ্যে রুকু, সিজদাহ ও রুকু হতে দাঁড়ানো স্থিরভাবে আদায় করা। এবং দুই সিজদাহ’র মাঝখানে সোজা হয়ে বসার পরে কমপক্ষে ১ তাসবিহ পরিমাণ দেরি করা।
৬. ১ম বৈঠকে বসা। তিন বা চার রাকাত নামাজ বিশিষ্ট নামাজে ২য় রাকাতের পর, ১ম বৈঠকে বসতে হবে। (বুখারী ১/১১৪, হাদিস: ৮২৮)
৭. ১ম ও ২য় উভয় বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পড়া। (বুখারী ১/১১৫, হাদিস: ৮৩০ ও ৮৩১)
৮. প্রত্যেক রাকাতে নামাজে ফরজ ও ওয়াজিব এর তারতিব (ধারাবাহিকতা) ঠিক রাখা। (বুখারী ২/৯২৪, হাদিস: ৬২৫১)
৯. ফরজ ও ওয়াজিব নিজে স্থানে আদায় করতে হবে। যেমন: ১ম সিজদাহ দেওয়ার পর ২য় সিজদাহ দেওয়া, ১ম বৈঠকে আত্তাহিয়াতু শেষ করার পরে তারপরের রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়া। (বুখারী ২/৯২৪, হাদিস: ৬২৫১)
১০. বিতর নামাজের ৩য় রাকাতে কিরাত পাঠ শেষে অন্য দোয়া পাঠ করতে হবে। ৩য় রাকাতে কিরাত পাঠ শেষে দোয়া কুনুত পড়লে ওয়াজিব ও সুন্নত দুটোই আদায় হয়ে যাবে। অন্যথায় শুধু ওয়াজিব আদায় হবে। (বুখারী ১/১৩৬, হাদিস: ১০০২)
১১. ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাজে অতিরিক্ত ৬ তাকবির বলা। (আবু দাউদ ১/১৬৩, হাদিস: ১১৫৩)
১২. ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাজের ২য় রাকাতে অতিরিক্ত তিন তাকবির বলে রুকুতে যাওয়া। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ ১/৪৯৫, হাদিস: ৫৭০৭)
১৩. যোহর, আছর, দিনের অংশে সুন্নত ও নফল নামাজে ইমাম আস্তে কিরাত পাঠ করবে। ফজর, মাগরিব, এশা,জুমা ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, তারাবি ও রমজান মাসে বিতর নামাজ পড়ানোর সময় কিরাত শব্দ করে পাঠ করবে। (মুসলিম ১/২৯১, হাদিস: ২৫৯)
বি:দ্র: কিরাত আস্তে পড়তে হবে এটার অর্থ মনে মনে পড়তে হবে, এটা নয়। আস্তে পড়বে হবে বলতে বোঝানো হয়েছে আওয়াজ ব্যতীত মুঝে উচ্চারণ করে পড়তে হবে।
১৪. সালাম ফিরানোর মাধ্যমে নামাজ শেষ করা। (বুখারী ১/১১৫, হাদিস: ৮৩৭)
শেষ কথা
কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি তা জানিয়েছি। উক্ত বিষয়গুলো শুধু জানলেই হবে না। জানার পাশাপাশি পালনও করতে হবে। নামাজের প্রতিটি রাকাতে নামাজের ফরজ ও ওয়াজিব গুলো সঠিকভাবে আদায় হচ্ছে কি না তার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
Discussion about this post