ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ হচ্ছে নামাজ। সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন ও প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি ব্যক্তির জন্য নামাজ আদায় ফরজ। অতি গুরুত্বের সাথে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে। নামাজ আদায়ের সময় নামাজ ভঙ্গের কারণ গুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যাতে কোনভাবে নামাজ ভেঙ্গে না যায়। কোন কারণে নামাজ ভেঙ্গে গেলে আবার নামাজ আদায় করে নিতে হবে।
কোরআন ও হাদিসে নামাজে ভঙ্গের বহু কারণের কথা উল্লেখ রয়েছে। বহু কারণের মধ্যে কিছু কারণ রয়েছে যেগুলো সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। আজকে আমরা সেসকল কারণগুলোই আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
নামাজ ভঙ্গের কারণ
প্রত্যেক ইবাদতের কিছু নিয়ম রয়েছে। নিয়মের ব্যতিক্রম করলে সেই ইবাদত নষ্ট হয়ে যায়। তেমনই নামাজেরও কিছু নিয়ম রয়েছে। নামাজের নিয়মের ব্যতিক্রম করলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক কি কি নিয়ম ভঙ্গ করলে নামাজ হবে না।
১. নামাজ পড়ার নিয়ম অনুযায়ী নামাজ না পড়া। নামাজের ফরজ, নামাজের ওয়াজিব ও নামাজের নিয়মগুলো ক্রমান্বয়ে যথাযথভাবে পালন না করলে করলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
২. নামাজে অশুদ্ধভাবে কেরাত পাঠ করা। কেরাতে যদি এমনভাবে পাঠ করা হয় যে, সেই সুরার অর্থ ও উদ্দেশ্য পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে তাহলে নামাজ ভেঙে যাবে। আবার নামাজ আদায় করা সেই ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব। (ফাতাওয়ায়ে শামি: ১/৬৩৩-৬৩৪)
৩. নামাজ পড়াকালীন অর্থবোধক কোন শব্দ বা কথা বললে নামাজ ভেঙে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে শামি: ১/৬১৩)
৪. নামাজ পড়া অবস্থায় কাউকে সালাম দেওয়া। (ফাতাওয়ায়ে শামি: ২/৯২)
৫. সালামের উত্তর দেওয়া। (সহীহ বুখারী, হাদিস: ১২১৭)
৬. নামাজরত অবস্থায় ব্যথা কিংবা দুঃখের কারণে উহ-আহ শব্দ তৈরি করলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে। (আদ্দুররুল মুখতার: ১/৬১৯)
৭.বিনা কারণে কাশি দেওয়া। (ফাতাওয়ায়ে শামি: ৩/৬১৮)
৮. আমলে কাসির হওয়া। ফিকাহবিদদের মতে, কোন ব্যক্তি নামাজে থাকাকালীন নড়া-চড়ার কারণে বাইরের কোন ব্যক্তি যদি দেখে মনে করে আপনি নামাজে নেই তাকে আমলে কাসির বলে। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত: ৩/৪৮৫)
৯. দুনিয়াবি কোন বিপদের কথা চিন্তা করে বা বেদনায় শব্দ করে কাঁদা। (ফাতাওয়ায়ে শামি: ১/৬১৯)
১০. তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় সতর খুলে থাকলে নামাজ হবে না। পুরুষদের ক্ষেত্রে নাভির নিচ হতে শুরু করে হাঁটু পর্যন্ত শরীরের কোন স্থান যদি তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় অনাবৃত থাকে তাহলে নামাজ ভঙ্গ হবে। এমনকি নামাজের সময় শার্ট বা প্যান্ট নাভির নিচ হতে সরে গিয়ে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় সতর অনাবৃত থাকলে নামাজ ভঙ্গ হবে।
নারীদের ক্ষেত্রে হাত, পা মুখ ছাড়া বাকি অংশ সতরের অন্তর্ভুক্ত। খেয়াল রাখতে হবে, নামাজের সময়ে যেন সতরের অন্তর্ভুক্ত অঙ্গগুলো ঢাকা থাকে। (আবু দাউদ, হাদিস: ৬৪১)
১১. মুক্তাদি ব্যতীত কোন ব্যক্তির লোকমা (ভুল সংশোধন) নেওয়া। (ফাতাওয়ায়ে শামি: ১/৬২২)
১২. সুসংবাদ বা দুঃসংবাদ শুনলে তার উত্তর দেওয়া। কোন কথা বলা বা কোন কথার উত্তর দেওয়া দুনিয়াবি কাজ। নামাজের মধ্যে দুনিয়াবি কাজ করলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে শামি: ১/৬১৩)
১৩. যে জায়গায় নামাজ আদায় করবেন সেই জায়গাটি অপবিত্র হলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/১১৫)
১৪. কিবলার দিক হতে সিনা (বুক) ঘুরে গেলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে। যানবাহনে ভ্রমণের সময় নামাজের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। (মারাকিল ফালাহ ১/১২১)
১৫. নামাজের মধ্যে কোনকিছু খাওয়া বা পান করলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে। এমনকি দাঁতের মধ্যে আটকে কিংবা লেগে থাকা খাবার খেলেও নামাজ ভেঙ্গে যাবে। (মারাকিল ফালাহ ১/১২১)
১৬. নামাজে উচ্চস্বরে হাসলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে। সেই সাথে শব্দ করে অট্টহাসি হাসা হতে পারে অযু ভঙ্গের কারণ। শব্দ করে হাসলে অযু ও নামাজ দুটোই আবার শুরু হতে পালন করতে হবে। (কানযুদ্দাকায়েক ১/১৪০)
১৭. হানাফি মাজহাব মতে, নামাজে সাংসারিক বা দুনিয়াবি কোন বিষয় প্রার্থনা করলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে; (ফাতাওয়ায়ে শামি: ১/৬১৯)। অন্যান্য মাজহাব এই মাসায়ালার সাথে ভিন্নমত পোষণ করেছে।
১৮. নামাজ পড়াকালীন অবস্থায় হাঁচির উত্তর দিলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে শামী ২/১১৭)
১৯. ইমামের আগে মুক্তাদির পায়ের গোড়ালি চলে গেলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে, মুক্তাদি যদি ইমামের পায়ের গোড়ালির পিছনে দাঁড়ায় অথচ মুক্তাদি লম্বা হওয়ার কারণে মুক্তাদির সিজদা ইমামকে অতিক্রম করে যায় তাহলে নামাজের কোন ক্ষতি হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে ১/১৫৯)
সবশেষে যা জানা দরকার
নামাজ ভঙ্গের কারণ আরও রয়েছে। তবে, এখানে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ মাসায়ালা ও হাদিসগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। উক্ত কারণগুলোর পাশাপাশি নামাজ ভঙ্গের অন্যতম কারণ হচ্ছে ফরজ বা ওয়াজিব ছুটে যাওয়া। নামাজের ফরজ ছুটে গেলে আবার নামাজ আদায় করে নিতে হবে। ওয়াজিব ছুটে গেলে সাহু সিজদাহ দিয়ে দিতে হবে নয়তো আবার নামাজ আদায় করে নিতে হবে। তবে, নামাজের মধ্যে সুন্নত ছুটে গেলে নামাজ ভঙ্গ হবে না।
Discussion about this post