নিমগাছ গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : নিমগাছ তার বন্ধন ছেড়ে যেতে চাইলেও সেটা সম্ভব না হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে বাক্যটি দ্বারা। ‘নিমগাছ’ গল্পের নিমগাছ সবাইকে অকাতরে সেবা দিয়ে গেলেও বিনিময়ে পায় নিদারুণ অবহেলা। তাই সহানুভূতিশীল কোনো মানুষ যখন তার প্রশংসা করে তখন নিমগাছের ইচ্ছা হয় লোকটার সাথে চলে যেতে।
কিন্তু বহু বছর ধরে নিমের শেকড় মাটির অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে গিয়েছে। তাই সে চাইলেও যেতে পারে না। এখানে নিমের শেকড়ের প্রতীকে মানুষের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের শৃঙ্খলকেই তুলে ধরা হয়েছে।
নিমগাছ গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. নিমগাছটি না কাটলেও কেউ তার যত্ন করে না কেন?
উত্তর: ঔষধি গুণসম্পন্ন বলে নিমগাছ যত্ন না করলেও বেড়ে ওঠে। আর ঔষধি গুণ আছে বলেই বাড়ির আশপাশে জন্মালে কেউ কাটে না।
বনফুলের প্রতীকী ও তাৎপর্যপূর্ণ গল্প ‘নিমগাছ’। লেখক এখানে নিমগাছ ও নিমপাতার গুণাগুণ বর্ণনা করেছেন। নিমগাছ চর্মরোগ, কৃমিনাশক, পেটের পীড়া প্রভৃতি নিরাময়ে অব্যর্থ ওষুধ হিসেবে কাজ করে। নিমগাছের ছাল পাতা এবং নিমফল থেকে উৎপন্ন নিমতেল ওষুধ প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। নানাবিধ উপকারিতার জন্য এ গাছ কেউ সহজে কাটে না।
২. নিমগাছটার লোকটার সাথে চলে যেতে ইচ্ছে করে কেন?
উত্তর: সবাই নিমগাছকে উপেক্ষা করে চললেও কবি নিমগাছকে মন থেকে ভালোবাসেন। তাই নিমগাছ কবির সাথে চলে যেতে চায়।
নিমগাছের কাছ থেকে সবাই নানাভাবে উপকার পায়। কিন্তু সবার অবজ্ঞা ছাড়া নিমগাছ আর কিছুই পায় না। অন্যদিকে সৌন্দর্যের পূজারি কবি নিমগাছের রূপ দেখে মুগ্ধ হন। নিমগাছ থেকে কোনো উপকার নেওয়ার পরিবর্তে তিনি নিঃস্বার্থভাবে তার প্রশংসা করেন। নিমগাছের তাই ইচ্ছে হতে থাকে কবির সাথে চলে যেতে। মমতাশূন্য জীবন থেকে সে মুক্তি পেতে চায়। ‘নিমগাছ’ গল্পে বনফুল নিমগাছ প্রতীকের আড়ালে মানবমনেরই একটি বেদনাময় অনুভূতির চিত্রায়ণ করেছেন।
৩. ‘মাটির ভিতরে শিকড় অনেক দূরে চলে গেছে’—কথাটি কেন বলা হয়েছে?
উত্তর: নিমগাছ তার বন্ধন ছেড়ে যেতে চাইলেও সেটা সম্ভব না হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে বাক্যটি দ্বারা।
‘নিমগাছ’ গল্পের নিমগাছ সবাইকে অকাতরে সেবা দিয়ে গেলেও বিনিময়ে পায় নিদারুণ অবহেলা। তাই সহানুভূতিশীল কোনো মানুষ যখন তার প্রশংসা করে তখন নিমগাছের ইচ্ছা হয় লোকটার সাথে চলে যেতে। কিন্তু বহু বছর ধরে নিমের শেকড় মাটির অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে গিয়েছে। তাই সে চাইলেও যেতে পারে না। এখানে নিমের শেকড়ের প্রতীকে মানুষের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের শৃঙ্খলকেই তুলে ধরা হয়েছে।
৪. বিজ্ঞরা নিমগাছ কাটতে নিষেধ করে কেন?
উত্তর: নিমগাছ ঔষধি গুণসম্পন্ন বলে বিজ্ঞরা নিমগাছ কাটতে নিষেধ করেন।
নিম অত্যন্ত উপকারী একটি গাছ। এর ডাল, পাতা, ছাল ইত্যাদি ঔষধি গুণের কারণে সুপরিচিত। মানব শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য নিমের বিভিন্ন অংশের নানাবিধ ব্যবহার রয়েছে। এমনকি নিমের হাওয়াও স্বাস্থ্যকর। এসব কারণেই বিজ্ঞরা নিমগাছ কাটতে নিষেধ করেন।
৫. ‘বাড়ির গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মীবউটার ঠিক এক দশা।’—কথাটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: ‘নিমগাছ’ গল্পে বর্ণিত গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মীবউয়ের মনোবেদনার চিত্র প্রকাশিত হয়েছে উক্তিটি দ্বারা।
আলোচ্য বাক্যটি ‘নিমগাছ’ গল্পের ম্যাজিক বাক্য। একটি মাত্র কথার ভেতর দিয়ে বনফুল বলে দিয়েছেন অনেক কথা। গল্পটিতে তিনি নিমগাছের প্রতীকের আড়ালে প্রতিষ্ঠা করেছেন মানবজীবনের গভীর একটি সত্যকে। নিমগাছের মতোই বাড়ির লক্ষ্মীবউটি সবাইকে হাসিমুখে সেবা দিয়ে যায়। অথচ নিমগাছের মতোই তার দিকে কারও কোনো মনোযোগ থাকে না। অবহেলা পাওয়ার দিক থেকে লেখক নিমগাছ ও বাড়ির গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মীবউটিকে এক বিন্দুতে দাঁড় করিয়েছেন।
৬. নতুন লোকটা মুগ্ধ দৃষ্টিতে নিমগাছের দিকে চেয়ে রইল কেন?
উত্তর: নিমগাছের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে নতুন লোকটা মুগ্ধদৃষ্টিতে নিমগাছের দিকে চেয়ে রইল।
নতুন লোকটি একজন কবি। কবির কাছে প্রয়োজনের চেয়ে সৌন্দর্যই মুখ্য। অন্য সবাই নিমগাছকে প্রয়োজনের দিক থেকে বিচার করলেও তিনি দেখেছেন শৈল্পিক দৃষ্টি দিয়ে। তাই নিমগাছের সবুজ পাতা আর থোকা থোকা সাদা ফুল তাকে মুগ্ধ করেছে। সেই মুগ্ধতা এতটাই গভীর যে, ফুলগুলোকে তাঁর একঝাঁক নক্ষত্র মনে হয়েছে।
৭. “আবর্জনা জমে এসে চারিদিকে।”—কেন?
উত্তর: প্রশ্নের উক্তিতে নিমগাছের চারদিকে আবর্জনা জমার কথা বলা হয়েছে। কারণ অযতেœ অবহেলায় সেখানে আবর্জনা জমে।
‘নিমগাছ’ একটি প্রতীকী গল্প। এখানে নিমগাছের প্রতীকে এক গৃহবধূর সংসারজীবন তুলে ধরা হয়েছে। নিমগাছ মানুষের নানা কাজে লাগে। অথচ এ গাছটির প্রতি কেউ তেমন কোনো দায়িত্ব পালন বা যতœ করে না। কেউ গাছটিকে যথাযথ বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেয় না। ফলে গাছটির চারদিকে আবর্জনা জমে।
৮. ‘নিমগাছ’কে কেন প্রতীকী গল্প বলা হয়েছে?
উত্তর: নিমগাছের প্রতীকাশ্রয়ে গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মীবউটির জীবনবাস্তবতা বর্ণিত হয়েছে—তাই ‘নিমগাছ’ গল্পটিকে প্রতীকী গল্প বলা হয়েছে।
গল্পকার সমস্ত গল্পজুড়ে নিমগাছের ঔষধি গুণ, উপকারিতা ও সৌন্দর্য বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়াও তিনি তুলে ধরেছেন নিমগাছের প্রতি মানুষের অবহেলার চিত্র। তবে গল্পের শেষ বাক্যটিতে এসে গল্পকার নিমগাছের সঙ্গে বাড়ির লক্ষ্মীবউটির তুলনা করে প্রতীকী তাৎপর্য সৃষ্টি করেছেন। নিমগাছের গুণাগুণ বর্ণনার মধ্য দিয়ে মূলত তিনি বাড়ির বউটির গুণাগুণ উপস্থাপন করেছেন। এমনকি নিমগাছের শেকড় মাটির গভীরে চারদিকে বিস্তৃত হওয়ার সঙ্গে বাড়ির বউটির সংসার জালে আবদ্ধ হওয়াকেও বুঝিয়েছেন। তাই ‘নিমগাছ’ গল্পটিকে প্রতীকী গল্প বলা হয়েছে।
৯. নিমগাছের গোড়া কেউ কেউ শান দিয়ে বাঁধিয়ে দেয় কেন?
উত্তর: নিমগাছের গোড়া কেউ কেউ শান দিয়ে বাঁধিয়ে দেয় নিমগাছের উপকারী দিক চিন্তা করে।
নিমগাছ গল্পে সাধারণ অর্থে নিমগাছ ভেষজ গুণসম্পন্ন একটি গাছ। নিমগাছের ছাল, পাতা, ডাল ইত্যাদি নানাভাবে মানুষের রোগ উপশম করে। নিমগাছ নিঃস্বার্থভাবে অন্যের উপকার করে। কেউ এ গাছের যত্ন না নিলেও এটি স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে ওঠে। নিমগাছ সর্বরোগের মহৌষধ বলে গ্রহণীয়। এ কারণে কেউ কেউ এই গাছের গোড়ার চারপাশ শান দিয়ে বাঁধিয়ে দেয়। তাতে নিমগাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি অনেকটা ব্যহত হয়। তাই বলা যায় যে, নিমগাছের ঔষধি গুণ থাকার কারণে কেউ কেউ নিমগাছের গোড়া শান দিয়ে বাঁধিয়ে দেয়।
১০. “একঝাক নক্ষত্র নেমে এসেছে যেন নীল আকাশ থেকে সবুজ সায়রে”—এখানে একঝক নক্ষত্র’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: “একঝাঁক নক্ষত্র নেমে এসেছে যেন নীল আকাশ থেকে সবুজ সায়রে!”—এখানে একঝাক নক্ষত্র’ বলতে নিমফুলের সৌন্দর্যকে বোঝানো হয়েছে।
নিমগাছে থোকা থোকা ফুল ধরে। ফুলের রং সাদা, আকারে ক্ষুদ্র। নিমগাছের মাথাজুড়ে সাদা সাদা ফুলের থোকা ঝুলে থাকে। ফুলের সুবাসে চারদিক মাতোয়ারা হয়। নিমপাতা সবুজ। আকাশের বুকে যেমন নক্ষত্র ফুটে থাকে রাতের বেলায়, দূর থেকে ফুলযুক্ত নিমগাছের দিকে তাকালেও সেরকম নক্ষত্র মনে হয়। আলোচ্য লাইনে ‘একঝাঁক নক্ষত্র’ বলতে সেটিই বোঝানো হয়েছে।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে নিমগাছ গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post