নোলক কবিতা ৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ : ‘নোলক’ কবিতায় কবি আল মাহমাদ ‘নোলক’ শব্দটিকে রূপক অর্থে ব্যবহার করেছেন। নোলক আবহমান বাঙালী মায়েদের নাকের অলংকার হলেও এটি শুধু তার অর্থগত আর সৌন্দর্যের কারণেই গুরুত্বপূর্ণ না, গুরুত্বপুর্ণ আরো বড় কারণে।
কবি এখানে আক্ষরিক অর্থের নোলক খোঁজেনি, খুঁজেছেন এর ঐতিহ্য এবং ঐশ্বর্যকে। একটা সময়ে বাংলাদেশের নদীভরা মাছের সমাহার ছিল। আর আজ সেই নদীতে মাছ তো নেই-ই বরং নদীগুলোই বিলুপ্তির পথে। বাংলার অপরূপ বন-অরণ্য এখন আর চোখে পড়ে না। চারিদিকে কৃত্রিমতা ছড়িয়ে গেছে। খেত ভরা ফসল নেই, গোলা ভরা ধান নেই।
নোলক কবিতা ৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ
একটা সময় এই বাংলাদেশের চারিদিক ছিল ঐশ্বর্য্য আর সমৃদ্ধি। মানুষ মাছভাত খেয়ে জীবন ধারণ করত, সুখে ছিল। কিন্তু এখন চারিদিক পাহাড়ের মত শূন্যতা বিরাজ করছে। কবি তার মায়ের নোলক খোঁজার মধ্য দিয়ে মূলত বাংলাদেশের এই হারানো ঐশ্বর্য্যকেই খুঁজতে চেয়েছেন।
কবি পরিচিতি
কবি: আল মাহমুদ
জন্ম—মৃত্যু: ১১ জুলাই, ১৯৩৬ — ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম: লোক লোকান্তর, কালের কলস, সোনালী কাবিন, মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো, আরব্য রজনীর রাজহাঁস, বখতিয়ারের ঘোড়া, অদৃশ্যবাদীদের রান্নাবান্না, ত্রিশেরা, উড়াল কাব্য।
পুরস্কার/সম্মাননা: বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৮), একুশে পদক (১৯৮৬)।
কবিতা বুঝি
শিক্ষকের নির্দেশ অনুযায়ী তোমরা দলে ভাগ হও। ‘নোলক’ কবিতায় কী বলা হয়েছে, তা দলে আলোচনা করে বোঝার চেষ্টা করো। কোন দল কেমন বুঝতে পেরেছে, তা যাচাই করার জন্য এক দল অপর দলকে প্রশ্ন করবে। এজন্য আগেই দলে আলোচনা করে কাগজে প্রশ্নগুলো লিখে রাখো। (মূল বইয়ের ১৩০ নম্বর পৃষ্ঠা)
নোলক কবিতা ৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ
১. ‘নোলক’ কবিতার কবির নাম কী?
উত্তর: ‘নোলক’ কবিতার কবির নাম- আল মাহমুদ।
২. কবি কোথায় তার মায়ের সোনার নোলক খুঁজে বেড়ান?
উত্তর: কবি সারা বাংলাদেশে তার মায়ের সোনার নোলক খুঁজে বেড়ান।
৩. কবি নদীর কাছে তার মায়ের নোলক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে নদী কী উত্তর দেয়?
উত্তর: নদী তার শরীরে হাত দিতে নিষেধ করে, কারণ তার সমস্ত শরীর বোয়াল মাছে ভরা।
৪. তিতাস নদী কবির মায়ের নোলকের সন্ধান কোথায় দিয়েছিল?
উত্তর: তিতাস নদী কবিকে সন্ধান দিয়েছিল যে, যেখানে শাদা পালক বকরা থাকে, সেখানে তার মায়ের নোলক আছে।
৫. কবি কার কাছে তার মায়ের গয়ণা ফেরৎ চেয়ে মিনতি করেন?
উত্তর: কবি বনের কাছে তার মায়ের গয়ণা ফেরৎ চেয়ে মিনতি করেন।
৬. কবি বনকে কী বলে সম্বোধন করেন?
উত্তর: কবি বনকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করেন।
৭. বন তার সবুজ চুলে কী পরে?
উত্তর: বন তার সবুজ চুলে ফুল পরে।
৮. বন কবিকে তার মায়ের নোলকের পরিবর্তে কী দিতে চায়?
উত্তর: বন কবিকে তার মায়ের নোলকের পরিবর্তে ফুলের গন্ধ দিতে চায়।
৯. হরিণের কাছে নোলকের সন্ধান চাইলে তারা কী করে?
উত্তর: হরিণ পাতার ফাঁকে মুখ বাঁকিয়ে রাখে।
১০. কবি কী ছাড়া ঘরে ফিরবেন না?
উত্তর: কবি তার ময়ের গয়ণা ছাড়া ঘরে ফিরবেন না।
১১. কবি কেন তার মায়ের গয়ণা ছাড়া ঘরে ফিরতে চান না?
উত্তর: নোলক বা গয়না কবিার মায়ের অতি প্রিয় বস্তু। সেটা হারিয়ে গেছে, তাই মায়ের মুখ আজ অলংকারহীন, মলিন। কবির দায়িত্ব হচ্ছে মায়ের সেই হারিয়ে যওয়ো অলংকার খুঁজে বের করা। কারণ মায়ের মুখের লাবণ্য ও মাকে খুশি করার জন্য গয়ণা খুব প্রয়োজন। তাই কবি গয়না ছাড়া ঘরে ফিরে যেতে চান না।
১২. ‘নোলক’ কবিতায় প্রকৃতির কোন কোন উপকরণের নাম উল্লেখ রয়েছে?
উত্তর: ‘নোলক’ কবিতায় নদী, সবুজ বন, পাখি, হরিণ, পাহার ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপকরণের নাম রয়েছে।
১৩. ‘নোলক’ কবিতায় নোলক শব্দটির মাধ্যমে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘নোলক’ কবিতায় নোলক শব্দটির মাধ্যমে আমাদের অতীত ঐতিহ্যকে বোঝানো হয়েছে।
বুঝে লিখি
‘নোলক’ কবিতাটি পড়ে কী বুঝতে পারলে তা নিচে লেখো। (মূল বইয়ের ১৩১ নম্বর পৃষ্ঠা)
‘নোলক’ কবিতায় কবি আল মাহমাদ ‘নোলক’ শব্দটিকে রূপক অর্থে ব্যবহার করেছেন। নোলক আবহমান বাঙালী মায়েদের নাকের অলংকার হলেও এটি শুধু তার অর্থগত আর সৌন্দর্যের কারণেই গুরুত্বপূর্ণ না, গুরুত্বপুর্ণ আরো বড় কারণে। কবি এখানে আক্ষরিক অর্থের নোলক খোঁজেনি, খুঁজেছেন এর ঐতিহ্য এবং ঐশ্বর্যকে। একটা সময়ে বাংলাদেশের নদীভরা মাছের সমাহার ছিল।
আর আজ সেই নদীতে মাছ তো নেই-ই বরং নদীগুলোই বিলুপ্তির পথে। বাংলার অপরূপ বন-অরণ্য এখন আর চোখে পড়ে না। চারিদিকে কৃত্রিমতা ছড়িয়ে গেছে। খেত ভরা ফসল নেই, গোলা ভরা ধান নেই। একটা সময় এই বাংলাদেশের চারিদিক ছিল ঐশ্বর্য্য আর সমৃদ্ধি। মানুষ মাছভাত খেয়ে জীবন ধারণ করত, সুখে ছিল। কিন্তু এখন চারিদিক পাহাড়ের মত শূন্যতা বিরাজ করছে। কবি তার মায়ের নোলক খোঁজার মধ্য দিয়ে মূলত বাংলাদেশের এই হারানো ঐশ্বর্য্যকেই খুঁজতে চেয়েছেন।
জীবনের সঙ্গে সম্পর্ক খুঁজি
‘নোলক’ কবিতাটির সাথে তোমার জীবনের বা চারপাশের কোনো মিল খুঁজে পাও কি না, কিংবা কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাও কি না, তা নিচে লেখো। (মূল বইয়ের ১৩২ নম্বর পৃষ্ঠা)
‘নোলক’ কবিতার সাথে আমাদের চারপাশের অনেক মিল পাই যা এখন হারিয়ে যাচ্ছে বা আগের মত এখন আর দেখা যাচ্ছে না। আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির অনেক কথা জানি, যেগুলো এক সময়ে খুব গুরুত্বের সাথে মানুষের জীবনের সাথে মিশে ছিল; কিন্তু এখন আর সেভাবে দেখা যায় না। যেমন- মাটি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্র, হাড়ি, কলস, বাসন বা পুতুলসহ অনেকরকম পণ্যসামগ্রী।
এগুলো যদিও এখন কিছু সৌখিন মানুষ ব্যবহার করে, কিন্তু সমাজের সকল মানুষ এসব ঐতিহ্যপূর্ণ উপকরণ এখন আর ব্যবহার করছে না। আমাদের প্রকৃতিতে বিভিন্ন গাছ-গাছালির সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। বন উজার করা হচ্ছে। বসবাসের জায়গার অভাব এবং শিকারের ফলে অনেক পাখি আজ বিলুপ্ত প্রায়। চাষযোগ্য জমিতে বাড়িঘর নির্মাণ হচ্ছে।
নাগরিক জীবনে খেলার মাঠ কমে যাচ্ছে। উন্মুক্ত খোলামাঠ নেই। ফলে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়াগারও আজ বড়ই অভাব। একসময়ে দূরবর্তী যোগাযোগের জন্য চিঠির অনেক কদর ছিল। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেই চিঠি এখন আর কেউ ব্যবহার করে না। সুতরাং আমাদের অতীত জীবনে হারিয়ে যাওয়া অনেক ঐতিহ্যই আজ বিলুপ্ত প্রায়। যা নোলক কবিতায় কবি রূপক অর্থে আমাদের বোঝাতে চেয়েছেন।
কবিতার বৈশিষ্ট্য খুঁজি
কবিতার কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার মাধ্যমে বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝার চেষ্টা করো। (মূল বইয়ের ১৩৪ নম্বর পৃষ্ঠা)
নোলক কবিতা ৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ
১ লাইনের শেষে কি মিল-শব্দ আছে?
২ পড়ার সময় কি তাল রক্ষা করতে হয়?
৩ লাইনগুলোতে কি শব্দসংখ্যা সমান?
৪ সুর করে গাওয়া হয় কি?
৫ এটি কি পদ্য-ভাষায় লেখা?
৬ এটি কি গদ্য-ভাষায় লেখা?
৭ এখানে কোনো কাহিনী পাওয়া যায়?
৮ এখানে কোনো চরিত্র আছে কি?
৯ এখানে কেনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি?
১০ এটি একাধিক অনুচ্ছেদে ভাগ করা কি না?
১১ এর মধ্যে কোনো সংলাপ আছে কি না?
১২ এটি অভিনয় করা যায় কি না?
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: ছকটি পিডিএফ উত্তরমালায় দেখানো হয়েছে)
কবিতা লিখি
কবিতা লেখা যায় যেকোনো বিষয় নিয়ে। এই বিষয় হতে পারে কোনো ব্যক্তি বা বস্তু, কোনো ঘটনা বা কাহিনী। কবিতার মধ্য দিয়ে মনের আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ পায়। নিচের ফাঁকা জায়গায় তুমি নিজে বানিয়ে বানিয়ে একটি কবিতা লেখো। লেখার সময় কবিতার বৈশিষ্ট্যগুলো খেয়াল রেখো। কবিতার একটি নাম দাও। (মূল বইয়ের ১৩৫ নম্বর পৃষ্ঠা)
আমার বন্ধুরা
– বেদদীপ্ত দাস (বয়স-৭)
টগরগাছে টুনটুনিটা রোজ এসে গান গায়,
কাঠঠোকরা কাঁঠালগাছে তবলা-ডুগি বাজায়।
জবাগাছে পিঁপড়েগুলো হেঁটে চড়ে বেড়ায়,
লেবুগাছে সবুজ পোকা শুধুই মাথা নাড়ায়।
চড়াইপাখি এদিক ওদিক কিচিরমিচির করে,
পায়রাগুলো বকবকিয়ে তিরতিরিয়ে চলে।
সকালবেলায় পুঁচকে বাগান আনন্দে ঝলমল,
কাক-বাবুরা কেবল শুধু খুঁজে বেড়ায় ছল।
খুটুর-খুটুর করে ওরা কেবল কুটো খোঁজে,
বাসা ওদের গড়তে হবে, কেমন করে বোঝে?
ওরা সবাই বন্ধু আমার, আমার সাথেই থাকে,
পুজোয় ওদের দেবোই কিছু,বলবো এবার মাকে।
যাচাই করি
তোমার লেখা কবিতায় নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো আছে কি না, যাচাই করে দেখো। (মূল বইয়ের ১৩৫ নম্বর পৃষ্ঠা)
১. লাইনের শেষে মিল-শব্দ আছে কি না। হ্যাঁ।
২. তালে তালে পড়া যায় কি না। হ্যাঁ।
৩. লাইনগুলো নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যে কি না। না।
৪. এর ভাষা গদ্যের ভাষার চেয়ে আলাদা কি না। হ্যাঁ।
৫. শব্দের চেহারায় কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না। হ্যাঁ।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির বাংলা সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা, উপরে আমরা তোমাদের বাংলা বইয়ের নোলক কবিতা ৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ শেয়ার করেছি। তোমাদের মূল বইতে যেভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, আমরা ঠিক সেভাবেই উত্তরগুলো তৈরি করেছি। আশা করছি, এই প্রশ্নের উত্তরগুলো তোমাদের জন্য অনেক হেল্পফুল হয়েছে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post