নোলক আল মাহমুদ : এই কবিতাটি হারিয়ে যাওয়া সোনার নোলকের খোঁজে প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানের কাছে অন্বেষণের এক অনন্য কাব্যিক চিত্র তুলে ধরে। কবির ভাষায়, প্রকৃতি যেন এক জীবন্ত চরিত্র হয়ে উঠেছে, যেখানে নদী, বন, পাখি, ফুল ও পাহাড় একে একে হারিয়ে যাওয়া গয়নার সন্ধানে অংশ নেয়।
কবিতায় রয়েছে এক ধরনের শৈশবসুলভ সারল্য ও মায়ের প্রতি গভীর মমত্ববোধ। কবির অনুসন্ধান শুধুমাত্র নোলকের জন্য নয়, বরং তা এক ধরনের মানসিক সংযোগের প্রতিফলন, যা প্রকৃতির সৌন্দর্যের মাঝে হারিয়ে যাওয়া শৈশবের এক আবেগময় অনুরণন সৃষ্টি করে।
নোলক আল মাহমুদ
কবি আল মাহমুদ ১৯৩৬ সালের ১১ই জুলাই বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন খ্যাতনামা কবি। ছোটোদের জন্য তিনি অনেক বিখ্যাত ছড়া ও কবিতা লিখেছেন। কথাসাহিত্যেও রয়েছে তাঁর অসামান্য অবদান। ছোটোদের জন্য তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: ‘পাখির কাছে, ফুলের কাছে’, ‘একটি পাখি লেজ ঝোলা’। তিনি ২০১৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
নোলক কবিতার শুরু এখানে
আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে
হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে।
নদীর কাছে গিয়েছিলাম, আছে তোমার কাছে?
হাত দিও না আমার শরীর ভরা বোয়াল মাছে।
বললো কেঁদে তিতাস নদী হরিণবেড়ের বাঁকে
শাদা পালক বকরা যেথায় পাখ ছড়িয়ে থাকে।
জল ছাড়িয়ে দল হারিয়ে গেলাম বনের দিক
সবুজ বনের হরিৎ টিয়ে করে রে ঝিকমিক
বনের কাছে এই মিনতি, ফিরিয়ে দেবে ভাই,
আমার মায়ের গয়না নিয়ে ঘরকে যেতে চাই।
কোথায় পাবো তোমার মায়ের হারিয়ে যাওয়া ধন
আমরা তো সব পাখপাখালি বনের সাধারণ।
সবুজ চুলে ফুল পিন্দেছি নোলক পরি না তো।
ফুলের গন্ধ চাও যদি নাও, হাত পাতো হাত পাতো-
বলে পাহাড় দেখায় তাহার আহার ভরা বুক।
হাজার হরিণ পাতার ফাঁকে বাঁকিয়ে রাখে মুখ।
এলিয়ে খোঁপা রাত্রি এলেন, ফের বাড়ালাম পা
আমার মায়ের গয়না ছাড়া ঘরকে যাবো না।
এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজ
১. কবিতাটির মূলভাব জেনে নিই।
অনন্য সুন্দর বাংলাদেশের প্রকৃতি। মায়ের নোলক হারিয়ে যাওয়ার গল্প বলতে বলতে কবি যেন এই প্রকৃতির সৌন্দর্যকে তুলে ধরেছেন। আমাদের চোখের সামনে ছবির মতো ধরা দিয়েছে এ দেশের নদী, পাখি, ফুল, বন ও পাহাড়। কবি তাঁর মায়ের হারিয়ে যাওয়া নোলক খুঁজে বেড়ান সারা বাংলাদেশে।
অন্ধকার রাত নেমে এলেও কবি ঘরে ফিরতে চান না। কিন্তু কেউই বলতে পারে না, কোথায় হারিয়ে গেছে তাঁর মায়ের নোলক। মূলত নোলক খুঁজতে খুঁজতে কবি আমাদের চিনিয়ে দিয়েছেন গ্রাম বাংলার সবুজ ও স্নিগ্ধ প্রকৃতিকে।
২. পাঠ থেকে শব্দগুলো খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
নোলক, হেথায়, হোথায়, যেথায়, হরিৎ, মিনতি, পিন্দেছি, ঘরকে, পাখপাখালি, সাধারণ, আহার, খোঁপা
৩. শূন্যস্থানে শব্দ বসাই।
ক. জল ছাড়িয়ে দল হারিয়ে গেলাম বনের দিক
সবুজ বনের _______ টিয়ে করে রে ঝিকমিক।
খ. কোথায় পাবো তোমার মায়ের হারিয়ে যাওয়া ধন
আমরা তো সব পাখপাখালি বনের _______।
৪. বাম পাশের শব্দের সঙ্গে ডান পাশের অর্থগুলো ঠিকভাবে মিলিয়ে পড়ি।
ঘরকে | ওখানে |
পিন্দেছি | এখানে |
হেথায় | ঘরে |
হোথায় | পরেছি |
৫. প্রশ্নগুলোর উত্তর জেনে নিই। উত্তরগুলো লিখি।
ক. নোলক কী? কার নোলক হারিয়ে গেছে?
খ. কবি কোথায় নোলক খুঁজছেন?
গ. কোন নদীর শরীর বোয়াল মাছে ভরা?
ঘ. সবুজ চুলে ফুল পরেছে কে?
ঙ. কবি কেন বাড়ি ফিরবেন না?
৬. পরিচিত পাখি, ফুল ও নদী সম্পর্কে লিখি।
পাখি, ফুল, নদী
◉ আরও দেখুন: পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ের সকল গল্প-কবিতার সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে নোলক আল মাহমুদ গল্পটি আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজগুলোর সমাধান পেতে উপরের উত্তরমালা অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে।
Discussion about this post