পদ্মা কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : কবিতায় মানুষের সংগ্রামকে দৃঢ় এবং অটুটভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পদ্মার তীরের মানুষরা প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করে, জীবনের চাহিদা পূরণ করতে কঠোর সংগ্রামে লিপ্ত থাকে। তাদের সংগ্রাম সহজ নয়; তারা নদীর খরস্রোত মোকাবিলা করে, জমি চাষ করে, এবং জীবনের উন্নতির জন্য অক্লান্তভাবে পরিশ্রম করে। এভাবেই তারা কখনোই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয় না এবং জীবনের প্রতিটি বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যায়।
পদ্মা দুরন্ত স্রোতের অধিকারী। তার দুর্বার গতি স্থবিরতার মাঝে উদ্দীপনা জাগায়। মানুষের গতিহীন, স্তব্ধ মনে গতি সঞ্চারিত হয়। পদ্মার উদ্দাম প্রবাহ দেখে। পদ্মার ওপর নির্ভর করে নদীতীরের মানুষের জীবন। তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও গতি এনে দেয় পদ্মার গতিবেগ। অর্থাৎ পদ্মার প্রমত্ত ধারা যেন মানুষকে সকল জড়তা থেকে মুক্ত হওয়ার অনুপ্রেরণা জোগায়। এ বিষয়টি বোঝাতেই আলোচ্য কবিতায় পদ্মাকে মুক্তির স্বর্ণদ্বার বলা হয়েছে।
পদ্মা কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. ‘মৃত জড়তার বুকে খুলেছে মুক্তির স্বর্ণদ্বার’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘মৃত জড়তার বুকে খুলেছে মুক্তির স্বর্ণদ্বার’- বলতে মূলত স্থবির জনজীবনে পদ্মার গতি সঞ্চারের দিকটিকে বোঝানো হয়েছে।
পদ্মা তীব্র স্রোতঃম্বিনী নদী, প্রবল তার ঘূর্ণি। অশেষ তার উদ্দামতা। পদ্মার তীব্র বেগ ও গতি জনজীবনেও গভির প্লাবন নিয়ে আসে। প্রশ্ন সমাজ যেন জেগে ওঠে পদ্মার উচ্ছ্বাসে। পদ্মার তীব্র গতি মানুষের জীবনপ্রবাহের গতিহীন স্তব্ধতার বুকে এনে দেয় মুক্তির স্পন্দন। এ বিষয়টি বোঝাতেই প্রশ্নোত্ত কথাটি বলা হয়েছে।
২. ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে পদ্মাকে ঘিরে পুনরায় প্রাণস্পন্দন জেগে ওঠে কেন?
উত্তর: পদ্মা নদীর সাথে মানুষের গভীর মিতালি থাকায় এ নদীকে ঘিরেই সব হারানো মানুষ নতুন প্রাণস্পন্দন নিয়ে জেগে ওঠে।
পদ্মা নদী বর্ষা মৌসুমে বুদ্র রূপ ধারণ করে। এর তীব্র স্রোতে বিলীন হয়ে যায় মানুষের সাজানো সংসার, ভিটেমাটিসহ জীবনধারণের নানা সম্বল। বিপন্ন হয় মানুষের জীবনও। সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে মানুষ আবার নতুনভাবে জীবন গড়তে চায়। পদ্মাপাড়ের মানুষেরা এ নদীর স্রোতের মতোই তীব্র, সংগ্রামমুখর। পদ্মাকে কেন্দ্র করে আবার তারা নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে।
৩. ‘তোমার তরঙ্গভঙ্গে বর্ণ তার হয়েছে পাণ্ডুর’ – কেন বলা হয়েছে?
উত্তর: ‘তোমার তরঙ্গভঙ্গে বর্ণ তার হয়েছে পাণ্ডুর’ – পক্তিটির মধ্য দিয়ে পদ্মার ঘূর্ণি দেখে জলদস্যুদের ভীতসন্ত্রস্ত হওয়ার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
পদ্মা দুর্বার দুরন্ত নদী। ঘূর্ণি তার ভয়ংকর। পদ্মার ঘূর্ণি দেখে সাধারণ মানুষ তো বটেই দুর্র্ধষ জলদস্যুদের মনেও ভীতি জেগে ওঠে। জলদস্যুরা সাধারণত নদী আর সমুদ্রপথেই জীবন কাটায়। ঢেউ দেখে তারা অভ্যস্ত। কিন্তু পদ্মার ভয়ংকর ঘূর্ণি তাদের কাছেও ভীতিকর হয়ে ওঠে, শুধু তাই নয়, ভয়ে তারা বিবর্ণ হয়ে যায়। আলোচ্য পক্তিটিতেই এ কথাই ফুটে উঠেছে।
৪. ‘মুক্তির স্বর্ণদ্বার’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘মুক্তির স্বর্ণদ্বার’ বলতে মূলত সমাজ ও জীবনের জড়তা থেকে মুক্তি পেয়ে গতিময় জীবনের সম্ভাবনাকে নির্দেশ করা হয়েছে।
পদ্মা দুরন্ত স্রোতের অধিকারী। তার দুর্বার গতি স্থবিরতার মাঝে উদ্দীপনা জাগায়। মানুষের গতিহীন, স্তব্ধ মনে গতি সঞ্চারিত হয়। পদ্মার উদ্দাম প্রবাহ দেখে। পদ্মার ওপর নির্ভর করে নদীতীরের মানুষের জীবন। তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও গতি এনে দেয় পদ্মার গতিবেগ। অর্থাৎ পদ্মার প্রমত্ত ধারা যেন মানুষকে সকল জড়তা থেকে মুক্ত হওয়ার অনুপ্রেরণা জোগায়। এ বিষয়টি বোঝাতেই আলোচ্য কবিতায় পদ্মাকে মুক্তির স্বর্ণদ্বার বলা হয়েছে।
৫. ‘সংগ্রামী মানুষ তবু দুই তীরে চালায়ে লাঙল’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: পদ্মাতীরের সংগ্রামী মানুষ দুই তীরের জমিতে লাঙল চালিয়ে ফসলের সম্ভার সৃষ্টি করে, যা প্রশ্নোক্ত কথাটির মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
নদী-তীরবর্তী মানুষের জীবন নিয়ত সংগ্রামশীল। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে তাদের টিকে থাকতে হয়। অন্যদের তুলনায় তাদের ফসল উৎপাদন কিংবা জীবনধারণ বেশ কঠিন। লাঙল চালিয়ে ভূমিকে চাষাবাদের উপযোগী করে তুলতে হয়। এরপর কঠিন শ্রমে ফলাতে হয় শস্যদানা। প্রশ্নোক্ত কথাটির মাধ্যমে এদিকটিই বোঝানো হয়েছে।
৬. জলদস্যুরা কীভাবে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: জলদুস্যরা নদী বা সমুদ্রপথে ভ্রমণের মাধ্যমে অনেক অভিজ্ঞতার অধিকারী হয়।
নদী বা সমুদ্রপথে লুণ্ঠনে লিপ্ত দস্যুরাই জলদস্যু নামে পরিচিতি। তারা জীবনের অধিকাংশ সময়ই জলে ভেসে চলে। যাত্রাপথে উত্তাল স্রোত, প্রবল ঘূর্ণি ইত্যাদি প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয় তাদের। বছরের পর বছর এসব মোকাবিলা করেই তারা জলপথে ভ্রমণের গভীর অভিজ্ঞতা লাভ করে।
৭. নির্ভীক জওয়ান জীবন-মৃত্যুর দ্বন্দ্বে নিঃসংশয় কেন?
উত্তর: সংগ্রাম করে বেঁচে থাকাই একমাত্র নিয়তি বলে নির্ভীক জওয়ান জীবন-মৃত্যুর দ্বন্দ্বে নিঃসংশয়।
পদ্মা নদীর দুই তীরে সংগ্রামী মানুষদের বাস। তারা কেঠার পরিশ্রম করে চাষাবাদ করে ফসল ফলায়। তারা জানে, পরিশ্রম ভিন্ন তাদের অনিশ্চিত জীবনে অন্য কোনো উপায় নেই। কেননা, তা হলে তাদের না খেয়ে মরতে হবে। জীবন-মৃত্যুর দ্বন্দ্বে তাই তারা সংশয়মুক্ত, সংগ্রাম করে টিকে থাকাটাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।
পদ্মা কবিতার অনুধাবন প্রশ্নের উত্তর
৮. শস্যদানাকে ‘কঠিন শ্রমের ফল’ বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: শস্যদানা ফলাতে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয় বলে এটিকে ‘কঠিন শ্রমের ফল’ বলা হয়েছে।
পদ্মার দুই তীরে সংগ্রামী মানুষদের বাস। নদী তীরের জমি উর্বর হলেও এখান থেকে ফসল ফলানো মোটেও সহজ নয়। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কৃষকরা সবুজ ফসলের সম্ভারে দুই তীর ভরিয়ে তোলে। দিনরাত অমানুষিক পরিশ্রম করার পর তারা জীবিকা অর্জনের মাধ্যমে শস্যদানা লাভ করে। এ কারণেই এ শস্য দানা তাদের ‘কঠিন শ্রমের ফল’।
৯. অনেক ঘণিতে ঘুরে বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘অনেক ঘূর্ণিতে ঘুরে’ – বলতে উত্তাল নদী বা সমুদ্রপথে জলদস্যুদের ভ্রমণের বিস্তর অভিজ্ঞতাকে বোঝানো হয়েছে।
জলদস্যুরা নদী বা সমুদ্রপথে ডাকাতি করে থাকে। এ কারণে অগাধ জলরাশিই তাদের বিচরণের প্রধান স্থান। নদী ও সমুদ্রে তাদের উত্তাল, ঝঞ্ঝামুখর স্রোতের মুখোমুখি হতে হয়। এ বিষয়টিকে তুলে ধরতেই প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।
১০. ‘জীবনের পথে পথে অভিজ্ঞতা কুড়ায়ে প্রচুর’ – কোন প্রসঙ্গে কেন বলা হয়েছে?
উত্তর: “জীবনের পথে পথে অভিজ্ঞতা কুড়ায়ে প্রচুর”— বলতে এখানে জলদস্যুদের বহু নদী ও সমুদ্র পরিভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়েছে। জলদস্যুরা পেশাগত কারণে সারাদিন নদী আর সমুদ্রে ভেসে বেড়ায়। দস্যুবৃত্তির জন্য সমুদ্রের ঢেউ কিংবা নদীর স্রোতে তাদের অবগাহন অনিবার্য। কারণ জলপথেই তারা ওত পেতে থাকে শিকারের আশায়। ফলে নদী কিংবা সমুদ্রে ভাসার অভিজ্ঞতা তাদের অগাধ। কিন্তু পদ্মার প্রমত্ত রূপ এ অভিজ্ঞ জলদস্যুদেরও সন্ত্রস্ত করে। আলোচ্য পঙ্ক্তিটিতে এ দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
১১. কবিতায় পদ্মার তীরের মানুষদের কীভাবে চিত্রিত করা হয়েছে?
উত্তর: কবিতায় পদ্মার তীরের মানুষদের পরিশ্রমী এবং সংগ্রামী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। তারা নদীর তীরে বসবাস করে, জীবনযুদ্ধে কখনোই হার মানে না। তারা নদী বা প্রকৃতির বিপক্ষে নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করে, পদ্মার উর্বর চরে ফসল উৎপন্ন করে। তাদের পরিশ্রমই তাদের জীবনের মূল শক্তি এবং সমৃদ্ধি।
১২. “সবুজের সমারোহে জীবনের পেয়েছে সম্বল” – এই লাইনটি কী বোঝায়?
উত্তর: এই লাইনটি জীবনের উর্বরতা এবং প্রকৃতির সমৃদ্ধির কথা বলে। “সবুজের সমারোহ” বলতে প্রকৃতির শোভা এবং তার মাধ্যমে পাওয়া জীবনের সমৃদ্ধি, সাফল্য এবং সমর্থন বোঝানো হয়েছে। কবি এখান থেকে বলতে চেয়েছেন, প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্ক একে অপরকে পরিপূরক করে, যেখানে মানুষের পরিশ্রম প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং উর্বরতার সঙ্গে মিলিয়ে জীবনকে সমৃদ্ধ করে।
১৩. “পদ্মা” কবিতায় পদ্মার কী কী শক্তির উল্লেখ আছে?
উত্তর: “পদ্মা” কবিতায় পদ্মার দুটি রূপের কথা বলা হয়েছে। একদিকে পদ্মা একটি ভয়ানক, প্রমত্ত নদী, যা তার শক্তি দিয়ে জলদস্যুদেরও ভয় দেখায়। অন্যদিকে, পদ্মা উর্বর এবং জীবনদায়ী শক্তিরও প্রতীক, যা কৃষকদের জন্য প্রাকৃতিক সমৃদ্ধি ও ফসল উৎপাদনের উৎস। কবি এই দুটি রূপের মধ্য দিয়ে নদীর দ্বৈত প্রকৃতি Ñ ধ্বংস ও সৃষ্টি – তুলে ধরেছেন।
১৪. কবিতায় মানুষের সংগ্রামকে কীভাবে তুলে ধরা হয়েছে?
উত্তর: কবিতায় মানুষের সংগ্রামকে দৃঢ় এবং অটুটভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পদ্মার তীরের মানুষরা প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করে, জীবনের চাহিদা পূরণ করতে কঠোর সংগ্রামে লিপ্ত থাকে। তাদের সংগ্রাম সহজ নয়; তারা নদীর খরস্রোত মোকাবিলা করে, জমি চাষ করে, এবং জীবনের উন্নতির জন্য অক্লান্তভাবে পরিশ্রম করে। এভাবেই তারা কখনোই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয় না এবং জীবনের প্রতিটি বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যায়।
১৫. “জীবন-মৃত্যুর দ্বন্দ্বে নিঃসংশয়, নির্ভীক জওয়ান” – এখানে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: এই পঙ্ক্তিতে পদ্মার দুই তীরের মানুষের সাহসিকতা ও দৃঢ় মনোবলের কথা বলা হয়েছে। তারা জীবন-মৃত্যুর কঠিন দ্বন্দ্বের মধ্যে দাঁড়িয়েও ভয় পায় না। “নির্ভীক জওয়ান” বলতে সেইসব মানুষকে বোঝানো হয়েছে যারা কঠোর বাস্তবতা এবং বিপদের মুখেও সাহস হারায় না। এটি জীবনযুদ্ধে অবিচল থাকার এক অনন্য উদাহরণ।
◉ আরও দেখ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সকল গল্প-কবিতার CQ-MCQ সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা বই থেকে পদ্মা কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। আমি আশা করছি, এই প্রশ্নগুলো প্রাকটিস করলে তোমরা পরীক্ষার জন্য শতভাগ কমন পেয়ে যাবে। সবগুলো অনুধাবন প্রশ্নের উত্তর পিডিএফ আকারে সংগ্রহের জন্য উপরে ‘ANSWER SHEET’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post