পরিবার ও বিদ্যালয়ে শিশুর ভূমিকা : সাধারণত মা, বাবা ও ভাইবোন নিয়ে পরিবার গঠিত হয়। এছাড়াও যৌথ পরিবারে চাচা, চাচি, ফুপু এবং চাচাতো ভাইবোন থাকে। অনেক পরিবারে দাদা, দাদি কিংবা অন্য কোনো বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিও রয়েছেন।
পরিবারে ভাইবোনদের মধ্যে কেউ আমাদের চেয়ে ছোটো, আবার কেউ বড়ো। পরিবারের বড়ো সদস্যগণ আমাদেরকে লালনপালন করেন, আদর স্নেহ করেন এবং যত্ন নেন। আবার পরিবারের ছোটো সদস্যরা আমাদেরকে ভালোবাসে, সম্মান করে।
পরিবার ও বিদ্যালয়ে শিশুর ভূমিকা
পরিবারের ছোটো এবং বড়ো সকলের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। পরিবারের বড়ো সদস্যগণের আদেশ ও নির্দেশ আমরা মেনে চলব। তাঁদেরকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করব। পরিবারের কাজে তাঁদেরকে সাহায্য করব।
পরিবারের ছোটোদেরকে আমরা ভালোবাসব ও স্নেহ করব। তাদেরকে খেতে সাহায্য করব। খেলতে নিয়ে যাব। পরিবারের কোনো সদস্য অসুস্থ হলে আমরা তাদের সেবা করব।
অনেক পরিবারে দাদা-দাদি, নানা-নানি কিংবা অন্য কোনো বয়স্ক ব্যক্তি রয়েছেন। তাঁরা আমাদের অনেক স্নেহ করেন এবং আমাদের কল্যাণ কামনা করেন। তাই আমরা তাঁদের নিকট কৃতজ্ঞ। তাঁদের কেউ কেউ বয়সের কারণে অনেক দুর্বল। তাঁরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারেন না।
অনেকে অন্যের সাহায্য ছাড়া নিজের কাজকর্মগুলোও করতে পারেন না। তাঁরা অনেক সময় একা হয়ে যান। তাই তাঁদেরকে ভালোবাসতে হবে, সঙ্গ দিতে হবে, গল্প করতে হবে এবং বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। প্রয়োজনীয় সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে এবং তাঁদের উপদেশ মেনে চলতে হবে।
পরিবারের সুরক্ষা
পরিবার আমাদের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। তবে পরিবারের কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। দুর্ঘটনায় পড়তে পারে। ঘরে আগুন লেগে যেতে পারে। বাড়িতে চুরি বা ডাকাতিও হতে পারে। কেউ মারাত্মকভাবে আহত হতে পারে। এগুলো থেকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন সেবাদানকারী সংস্থা রয়েছে।
যেমন- হাসপাতাল, ফায়ার ব্রিগেড, পুলিশ বাহিনী ইত্যাদি। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বাড়িতে আগুন লাগলে ফায়ার ব্রিগেড তা নেভাতে সাহায্য করে। পুলিশ চোর-ডাকাত ধরে ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করে।
আমাদের প্রতিবেশীরা সবচেয়ে কাছে থাকেন। তাই তাঁরা যেকোনো বিপদ-আপদে সবার আগে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেন। বিপদে তাঁদেরকে সবার আগে জানাতে হয়। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সাহায্যের জন্য তা নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে জানাতে হয়।
এজন্য কোন প্রতিষ্ঠান কোন সেবা দেয় তা আমাদের জানা প্রয়োজন। তাদের সাহায্য গ্রহণের জন্য দ্রুত যোগাযোগ করার কিছু হেল্পলাইন/হটলাইন ফোন নম্বর আছে। ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স এবং পুলিশি সেবা পেতে জাতীয় হেল্প ডেস্ক হিসেবে ‘৯৯৯’ নম্বর চালু করা হয়েছে।
এ নম্বরে যেকোনো দিন যেকোনো সময় বিনা খরচে ফোন করা যায়। ফোন করার সময় বাড়ির ঠিকানা এবং অন্যান্য তথ্য দিতে হয়। ফোন করা ছাড়াও নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অফিসে সরাসরি গিয়ে যোগাযোগ করা যায়।
পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় আমি | পরিবার ও বিদ্যালয়ে শিশুর ভূমিকা
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ সবার পছন্দ। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেখতে সুন্দর, তাতে মশা-মাছি জন্মে না, ধুলোবালি জমে না, রোগজীবাণু জন্মে না, দুর্গন্ধ ছড়ায় না। এজন্য পরিচ্ছন্ন পরিবেশ স্বাস্থ্যকর।
আমাদের নিজ বাড়ির আশপাশে অবস্থিত বাড়িঘর, পাড়া-প্রতিবেশী, গাছপালা, রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ ইত্যাদি নিয়ে গঠিত হয় আমাদের নিকট পরিবেশ। দিনের একটা বড়ো সময় আমরা বিদ্যালয়ে অবস্থান করি। তাই নিকট পরিবেশ এবং বিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতা আমাদের জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ ইত্যাদি স্থানে ঠোঙা, কাগজ, চিপসের প্যাকেট, চকোলেটের প্যাকেট ইত্যাদি না ফেলে ডাস্টবিন বা ময়লার ঝুড়িতে ফেলব। ডাস্টবিন না থাকলে বড়োদের সহায়তায় ডাস্টবিন স্থাপনের ব্যবস্থা করব। বিদ্যালয়ের করিডোর, আঙিনা, মাঠ ইত্যাদি স্থানে কাগজের টুকরা, পলিথিন বা এ জাতীয় কিছু পড়ে থাকতে দেখলে তা কুড়িয়ে ময়লার ঝুড়িতে ফেলব। বিদ্যালয়ের ওয়াশরুম ব্যবহারের পর পানি ঢেলে আমরা তা পরিচ্ছন্ন রাখব।
এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজ
ক. সঠিক উত্তরের পাশে টিক (✓) চিহ্ন দিই।
১। বাড়িতে কোনো বিপদ হলে কারা সবার আগে এগিয়ে আসেন?
ক) শিক্ষক
খ) প্রতিবেশী
গ) আত্মীয়
ঘ) সহপাঠী
২। সাহায্য পেতে দ্রুত যোগাযোগ করার জন্য কোন নম্বরটি চালু রয়েছে?
ক) ১১১
খ) ৩৩৩
গ) ৭৭৭
ঘ) ৯৯৯
৩। বাদামের খোসা, চিপসের খালি প্যাকেট, ঠোঙ্গা ইত্যাদি কোথায় ফেলব?
ক) টয়লেটে
খ) ড্রেনে
গ) ডাস্টবিনে
ঘ) মাঠে
খ. সঠিক শব্দ দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করি।
১. পরিবার আমাদের সবচেয়ে _______ আশ্রয়স্থল।
২. পরিচ্ছন্ন _______ স্বাস্থ্যকর।
৩. পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে _______ করব।
৪. পরিবারের _______ সদস্যরা আমাদের অনেক স্নেহ করেন।
গ. বাম পাশের সাথে ডান পাশের মিল করি।
বাম পাশ | ডান পাশ |
ফায়ার সার্ভিস | অসুস্থ ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতে সহায়তা করে |
অ্যাম্বুলেন্স | আইনী সহায়তা প্রদান করে |
পুলিশি সেবা | আগুন নেভাতে সহায়তা করে |
ঘ. সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন।
১. পরিবার কীভাবে গঠিত হয়?
২. ছোটোদের সাথে আমরা কেমন ব্যবহার করব?
৩. সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম লিখি।
ঙ. বর্ণনামূলক প্রশ্ন।
১. পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের প্রতি দায়িত্ব পালন করা উচিত কেন?
২. বিদ্যালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নিচের ছক অনুযায়ী একটি পরিকল্পনা তৈরি করি।
কী করব – কখন করব – কারা করবে
◉ আরও দেখো: তৃতীয় শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সকল অধ্যায়ের সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় মূল বই থেকে ৭ম অধ্যায় পরিবার ও বিদ্যালয়ে শিশুর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজগুলোর সমাধান পেতে উপরের উত্তরমালা অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে।
Discussion about this post