পল্লিসাহিত্য প্রবন্ধের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : জীবন ও জগৎ সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় কোনো অভিজ্ঞতা যখন হৃদয়গ্রাহী ভাষারূপ লাভ করে তখন তাকে প্রবাদ-প্রবচন বলে। ‘প্রবচন’ মানে প্রকৃষ্ট যে বচন। সংক্ষেপে ও সুন্দরভাবে অনেক ক্ষেত্রে ছন্দমিল কিংবা উপমা প্রভৃতি ব্যবহার করে প্রবাদে সমাজের কোনো মূল্যবান অভিজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
আমাদের দৈনন্দিন কথাবার্তায় প্রবাদ-প্রবচনগুলো অলংকারের কাজ করে। এতে বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। যেমন—‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা নেই’; ‘আপনি বাঁচলে বাপের নাম’ ইত্যাদি।
পল্লিসাহিত্য প্রবন্ধের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. ‘আধুনিক শিক্ষার কর্মনাশা স্রোত’—বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: লেখক “আধুনিক শিক্ষার কর্মনাশা স্রোত” বলতে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার প্রভাবের কারণে পল্লিসাহিত্যগুলোর বিলুপ্তির বিষয়টি বোঝাতে চেয়েছেন। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা পল্লিসাহিত্যের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে সহায়ক নয়, কারণ এতে পল্লিসাহিত্যের ব্যাপারে জানার বা শেখার কোনো ব্যবস্থা নেই। এই শিক্ষাব্যবস্থা মানুষকে শুধুমাত্র কর্মমুখী হতে উৎসাহিত করছে, অথচ তাদের আত্মপরিচয় বা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য জানার কোন সুযোগ নেই। পল্লিসাহিত্যের অভাব শিক্ষার্থীদের আত্মচেতনা সম্পর্কে উদাসীন করে তুলছে। আজকাল শিশুরা রূপকথা বা উপকথা শোনে না, কারণ এইসব গল্প শিক্ষাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় তারা সেগুলো থেকে অজ্ঞ থাকে। লেখক শিক্ষাব্যবস্থায় পল্লিসাহিত্যের অবহেলা এবং আধুনিক শিক্ষার চাপের ফলে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন।
২. ফোকলোর সোসাইটির পরিচয় দাও।
উত্তর: ফোকলোর সোসাইটি লোকসাহিত্যসংক্রান্ত একটি সমিতি।
১৯৪৮ সালে প্রথম লন্ডনে এই সমিতি গঠিত হয়। ফোকলোর সোসাইটির কাজ হলো লোকসাহিত্য নিয়ে গবেষণা করা, সংরক্ষণ করা এবং প্রচার করা। ফোকলোর সোসাইটি সাধারণত বিভিন্ন প্রকার লোকশিল্প, গান, উৎসব-অনুষ্ঠান ও খেলাধুলার উপাদান সংগ্রহ করে এবং প্রচারের জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। ইউরোপ-আমেরিকার মতো আমাদের লোকসাহিত্যের জন্যও এ ধরনের সমিতির প্রয়োজন আছে।
৩. ‘নচেৎ এ সকল কেবলি ভুয়া, কেবলি ফক্কিকার’—লেখক এ কথা কেন বলেছেন?
উত্তর: লেখক ‘নচেৎ এ সকল কেবলি ভুয়া, কেবলি ফক্কিকার’ বলেছিলেন কারণ, তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে যদি পল্লিসাহিত্য এবং তার বিভিন্ন অমূল্য রত্ন সংরক্ষণ ও প্রচারের জন্য যথাযথ উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তবে তা ধ্বংসের দিকে চলে যাবে। পল্লিসাহিত্যের প্রতি আগ্রহ ও গুরুত্ব যদি সমাজের লোকজন, বিশেষ করে পল্লির মানুষদের মধ্যে না থাকে, তাহলে এসব সাহিত্য একসময় অবহেলিত হয়ে পড়বে এবং কেবলমাত্র একটি পুরনো ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় হিসেবে রয়ে যাবে, যা কোনো কাজে আসবে না। এই ধরনের পরিস্থিতিতে পল্লিসাহিত্যের ঐতিহ্য এবং মূল্য হারিয়ে যাবে, এবং তার কোনও গুরুত্ব বা প্রাসঙ্গিকতা থাকবে না।
৪. ‘পল্লিসাহিত্য সম্পদের মধ্যে এই গানগুলো অমূল্য রত্নববিশেষ’—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: জারিগান, সারিগান, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, রাখালি, মারফতি ইত্যাদি গানকে লেখক অমূল্য রত্নবিশেষ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
পল্লিসাহিত্যের ভাণ্ডারে আছে বিচিত্র ধরনের পল্লীগান। জারি, সারি, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, রাখালি, মারফতি, মুর্শিদি গানগুলোর তুলনা হয় না। পল্লীর মাঠে-ঘাটে ছড়িয়ে থাকা অফুরন্ত প্রেম, আনন্দ, সৌন্দর্য, তত্ত্বজ্ঞানের কথা বলে শেষ করা যাবে না। যুগ যুগ ধরে এগুলো পল্লীবাসীর মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে আসছে। এসব গানের আবেদন পল্লীপ্রধান বাংলার মানুষের কাছে কখনোই শেষ হওয়ার নয়। তাই লেখক এগুলোকে অমূল্য রত্ন বলেছেন।
৫. পল্লিজননীর বুকের কোণে কী লুকিয়ে আছে?
উত্তর: পল্লিজননীর বুকের কোণে সাহিত্যের অমূল্য খনি লুকিয়ে আছে। পল্লিবাংলা অমূল্য পল্লিসাহিত্য-সম্পদে ভরপুর। সাহিত্যের এই মহামূল্যবান সম্পদ পল্লির মাঠে, ঘাটে, আলো-বাতাসে পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে। সাহিত্যের ভাণ্ডারে দান করার মতো পল্লিসাহিত্যের সম্পদের অভাব নেই। কিন্তু অযত্ন ও অবহেলায় অনেক মূল্যবান সাহিত্য সম্পদ হারিয়ে যাচ্ছে। পল্লিজননীর বুকের কোণে লুকিয়ে থাকা এসব সাহিত্য সম্পদ আমাদের সংরক্ষণ করা উচিত।
পল্লিসাহিত্য সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
৬. অতীতের রূপকথা কীভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে?
উত্তর: আধুনিক শিক্ষার কর্মনাশা স্রোতে অতীতের রূপকথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পল্লিগ্রামে বুড়ো-বুড়ির মুখের যেসব কথা শুনে ছেলেমেয়েরা ঘুমিয়ে পড়ত সেগুলো কতই না মনোহর! কত চকমপ্রদ! আরব্য উপন্যাসের আলাউদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপ, আলিবাবা ও চল্লিশ দস্যু প্রভৃতির চেয়ে পল্লির উপকথাগুলোর মূল্য কোনো অংশে কম নয়। আধুনিক শিক্ষার কর্মনাশা স্রোতে সেগুলো বিস্মৃতির অতলগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে। এখনকার শিক্ষিত জননী সন্তানকে আর রাখালের পিঠা গাছের কথা, রাক্ষসপুরীর ঘুমন্ত রাজকন্যার কথা, বা পঙ্খিরাজ ঘোড়ার কথা শোনান না, তাদের কাছে বলেন আরব্য উপন্যাসের গল্প কিংবা Lamb’s Tales from Shakespeare–এর গল্পের অনুবাদ। ফলে সুদূর অতীতের এই রূপকথা নষ্ট হয়ে অতীতের সঙ্গে আমাদের সম্বন্ধ লোপ করে দিচ্ছে। এভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অতীতের সব রূপকথা।
৭. সময় ও রুচির পরিবর্তনে কী ধ্বংসের পথে দাঁড়িয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: সময় ও রুচির পরিবর্তনে বাংলার পল্লিসাহিত্য অনাদৃত হয়ে ধ্বংসের পথে দাঁড়িয়েছে। এক সময় বাংলায় বিরাট পল্লিসাহিত্য ছিল। তখন নায়ের দাঁড়ি-মাঝি থেকে গৃহস্থের বউ-ঝি পর্যন্ত, বালক থেকে বুড়ো পর্যন্ত সবাই এগুলোর আনন্দ উপদেশ বিলাত। কিন্তু বর্তমানে পাড়াগাঁয়ের লোক ছাড়া সেগুলোর আর কেউ আদর করে না। তাই তার কঙ্কাল বিশেষ এখনও কিছু আছে। কিন্তু সময় ও রুচির পরিবর্তনে পল্লিসাহিত্য আজ ধ্বংসের পথে দাঁড়িয়েছে।
৮. প্রবাদ-প্রবচন বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: জীবন ও জগৎ সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় কোনো অভিজ্ঞতা যখন হৃদয়গ্রাহী ভাষারূপ লাভ করে তখন তাকে প্রবাদ-প্রবচন বলে। ‘প্রবচন’ মানে প্রকৃষ্ট যে বচন। সংক্ষেপে ও সুন্দরভাবে অনেক ক্ষেত্রে ছন্দমিল কিংবা উপমা প্রভৃতি ব্যবহার করে প্রবাদে সমাজের কোনো মূল্যবান অভিজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। আমাদের দৈনন্দিন কথাবার্তায় প্রবাদ-প্রবচনগুলো অলংকারের কাজ করে। এতে বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। যেমন—‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা নেই’; ‘আপনি বাঁচলে বাপের নাম’ ইত্যাদি।
৯. পল্লিসাহিত্যকে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: অতীতের সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্বন্ধের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়ার জন্য পল্লিসাহিত্যকে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
পল্লিসাহিত্যগুলো বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। পল্লির ঘাটে, মাঠে, পল্লির আলো-বাতাসে, পল্লির প্রত্যেক পরতে পরতে এ সাহিত্য ছড়িয়ে আছে। জাতির পুরোনো ইতিহাসের অনেক গোপন বিষয় এ সাহিত্যের মাঝে খুঁজে পাওয়া যায়। অথচ সময় ও রুচির পরিবর্তনের ফলে পল্লিসাহিত্য অনাদৃত হয়ে বিলীন হতে চলেছে। অথচ এগুলো ধ্বংস হলে জাতির অতীত ঐতিহ্যের স্মৃতি লোপ পাবে। তাই এগুলোকে উদ্ধার করে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। আর পল্লিসাহিত্য সংরক্ষণ করতে হলে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।
১০. পল্লিসাহিত্য সম্পদের মধ্যে যেগুলো অমূল্য রতœবিশেষ তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
উত্তর: পল্লিসাহিত্য সম্পদের মধ্যে পল্লির গানগুলো অমূল্য রতœবিশেষ।
পল্লিজীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পল্লি গানগুলো যুগ যুগ ধরে মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে। গানগুলোর কথায় সুরে রয়েছে প্রেম, আনন্দ, বেদনা, সৌন্দর্য ও তত্ত্বজ্ঞান। তাই এই গানগুলো অমূল্য রত্নবিশেষ। জারি গান, ভাটিয়ালি গান, রাখালি গান, মারফতি গান সবই যেন এর অন্তর্ভূক্ত।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে পল্লিসাহিত্য প্রবন্ধের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post