পাখি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর লীলা মজুমদার : কিশােরী কুমু অসুস্থ হলে তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে পরিবার। সহপাঠীরা সবাই ওপরের ক্লাসে উঠে যাবে আর সে নিচের ক্লাসে পড়ে থাকবে এই নিয়ে কুমুর ভাবনার শেষ নেই। দ্রুত সুস্থতার জন্য কুমু সােনাঝুরিতে দিদিমার দোতলা বাড়ির উন্মুক্ত পরিবেশে আসে। সেখানে সে একটি অভূতপূর্ব ঘটনার সম্মুখীন হয়।
শিকারির বন্দুকের গুলির আঘাতে একটি বুনোহাস আহত হলে কুমু তার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। পাখিটিকে সুস্থ করে তােলার জন্য সে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। লাটুর সহযােগিতা নিয়ে কুমু পাখিটিকে বিপদ থেকে বাঁচাতে এবং দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে। গল্পটির একটি অসাধারণ দিক হচ্ছে পাখিটি সেরে ওঠার প্রতিটি ধাপ থেকে কুমুও সুস্থ হওয়ার প্রেরণা পায়। পাখিটির প্রতি দুজন কিশাের-কিশােরীর অকৃত্রিম মমত্ববােধ ও সমবেদনা গল্পটিকে এক অনন্য মাত্রায় উন্নীত করেছে।
পাখি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
সৃজনশীল—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
সহপাঠীদের সাথে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে একটি বিড়াল ছানার করুণ ডাক শুনে থমকে দাঁড়ায় শ্রেয়সী। হঠাৎ দেখে রাস্তার পাশে একটি গর্তে একটি বিড়াল ছানা অটিকে আছে। বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে শ্রেয়সী সেটিকে পরিষ্কার করে কোলে তুলে নেয়। বাড়িতে ফেরার পর শ্রেয়সীর সেবা-যত্নে বিড়াল ছানাটি যেন প্রাণ ফিরে পেল। খুব অল্প সময়ে সে তাদের পরিবারেরই একজন হয়ে উঠল। কিন্তু ওর ভাই সুজা তাকে সহ্য করতে পারত না, প্রায়ই মারধর করত। একদিন শ্রেয়সী স্কুল থেকে ফিরে বিড়াল ছানাটিকে আর খুঁজে পেল না।
ক. হাঁসরা গিয়ে কোথায় নামল?
খ. কুমু-লাটুর মনে কোনো সন্দেহ রইল না কেন?
গ. শ্রেয়সীর মাধ্যমে ‘পাখি’ গল্পের কোন বিশেষ দিকটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. দসুজার মানসিকতা কুমু বা লাটুর মতো হলে বিড়াল ছানাটিকে হারাতে হতো না শ্রেয়সীর’—বিশ্লেষণ কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. হাঁসরা বিলের জলে ঝুপঝাপ করে নামল।
খ. কুমু ও লাটুর মনে কোনো সন্দেহ রইল না, কারণ তারা দেখল যে পাখিটির ডানা পুরোপুরি সেরে গেছে এবং এটি বুনোহাঁসের ঝাঁকের সঙ্গে উড়তে শুরু করেছে। যদিও প্রথমে পাখিটি দল থেকে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছিল, তবুও ক্রমাগত ডানা ঝাপটিয়ে সামনে এগোতে থাকায় তারা বুঝতে পারল, পাখিটি আর অক্ষম নেই-এখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ এবং শিগগিরই নিজের দলে যোগ দিতে পারবে। পাখির এই উড়তে পারার ক্ষমতা কুমু ও লাটুর মনে আত্মবিশ্বাস জাগায় এবং তারা নিশ্চিত হয় যে, সে আর অসহায় নয়।
গ. উদ্দীপকে শ্রেয়সীর মাধ্যমে ‘পাখি’ গল্পের মানবিকতা, মমত্ববোধ এবং স্নেহের শক্তির দিকটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
গল্পে কুমু আহত বুনোহাঁসটিকে আশ্রয় দিয়ে পরম যতেœ সুস্থ করে তোলে, যাতে সে আবার উড়তে পারে। একইভাবে, শ্রেয়সী অসহায় বিড়াল ছানাটির করুণ অবস্থা দেখে থমকে দাঁড়ায় এবং তাকে রক্ষা করতে নিজের দায়িত্ব মনে করে। সে বন্ধুদের সাহায্যে বিড়াল ছানাটিকে উদ্ধার করে এবং নিজের ভালোবাসা ও যত্ন দিয়ে নতুন প্রাণ ফিরিয়ে আনে।
তবে গল্পের মতো শ্রেয়সীর ক্ষেত্রেও একটি বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হয়। ‘পাখি’ গল্পে কুমুর আশঙ্কা ছিল যে দিম্মা হয়তো পাখিটিকে তাড়িয়ে দেবেন, তেমনি শ্রেয়সীর ভাই সুজা বিড়াল ছানাটিকে সহ্য করতে পারত না এবং শেষ পর্যন্ত সেটি হারিয়ে যায়। কুমুর মতো শ্রেয়সীও এক নিষ্পাপ প্রাণীর প্রতি মমতা দেখিয়েছে, কিন্তু দুজনের ক্ষেত্রেই কিছু মানুষের নির্মমতা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘পাখি’ গল্প ও উদ্দীপক আমাদের শেখায় যে প্রকৃত ভালোবাসা ও যত্ন অসহায় প্রাণীদের নতুন জীবন দিতে পারে, তবে সমাজের কিছু মানুষের নিষ্ঠুরতা সেটাকে নষ্টও করতে পারে। ফলে এটি কেবল প্রাণীদের প্রতিই নয়, বরং আমাদের চারপাশের অসহায়, বিপদগ্রস্ত যেকোনো জীবের প্রতি সহমর্মিতা ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত করার বার্তা বহন করে।
ঘ. উদ্দীপকের ঘটনাটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শ্রেয়সী অসহায় বিড়াল ছানাটিকে আশ্রয় দিয়ে পরম মমতা ও যত্নে বড় করতে চেয়েছিল, কিন্তু তার ভাই সুজা সেটিকে সহ্য করতে পারেনি এবং তার প্রতি সহিংস আচরণ করেছে। ফলে শেষ পর্যন্ত বিড়াল ছানাটি হারিয়ে যায়। যদি সুজার মানসিকতা কুমু বা লাটুর মতো হতো, তাহলে বিড়াল ছানাটিকে হারাতে হতো না।
‘পাখি’ গল্পের কুমু ও লাটু ছিল সহানুভূতিশীল ও দায়িত্ববান। তারা আহত বুনোহাঁসটিকে দেখে সহমর্মিতা অনুভব করেছিল এবং প্রাণপণে সেটিকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করেছিল। কুমু জানত, সে নিজেও অসুস্থ, তাই পাখিটির কষ্ট সে গভীরভাবে অনুভব করেছিল। লাটুও বন্ধুর পাশে থেকে তাকে সাহায্য করেছিল। তারা শুধু পাখিটিকে আশ্রয়ই দেয়নি, বরং তার সঠিক পরিচর্যা করে তাকে উড়তে শেখানোর ব্যবস্থা করেছিল।
তাদের এই ভালোবাসা ও যতেœর ফলে শেষ পর্যন্ত পাখিটি সুস্থ হয়ে ফিরে যেতে পেরেছিল।
অন্যদিকে, সুজা ছিল নির্দয় ও সহমর্মিতাহীন। সে বিড়াল ছানাটিকে মেনে নিতে পারেনি এবং তার ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। তার এই নিষ্ঠুরতার ফলেই শ্রেয়সী শেষ পর্যন্ত বিড়াল ছানাটিকে হারিয়ে ফেলে। যদি সে কুমু বা লাটুর মতো দয়ালু, দায়িত্বশীল ও প্রাণীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতো, তাহলে বিড়াল ছানাটি সুরক্ষিত থাকত এবং সুস্থভাবে তাদের পরিবারের অংশ হয়ে থাকত।
এই তুলনা আমাদের শেখায় যে, মমতা ও সহানুভূতিই পারে দুর্বল ও অসহায়দের রক্ষা করতে, আর নির্মমতা ও হিংস্রতা শুধু ধ্বংসই ডেকে আনে।
সৃজনশীল—২: নিচের চিত্রটি লক্ষ্য করো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
ক. বুনো পাখিটার জন্য কোথায় বাসা বাঁধা হয়েছিল?
খ. কুমু ভালো করে হাঁটতে পারে না কেন?
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘পাখি’ গল্পের কোন দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে—বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে পাখি শিকারের প্রতি ‘পাখি’ গল্পের দিদিমার ঘৃণাই প্রকাশিত হয়েছে- বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল—৩: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
“পাখিটার বুকে যেন তীর মেরো না
ওকে গাইতে দাও
ওর কণ্ঠ থেকে গান কেরো না।”
[মোহাম্মদ রফি]
ক. ‘পাখি’ গল্পে কাকে মজার ছেলে বলা হয়েছে?
খ. লেখিকা লীলা মজুমদার ‘পাখি’ গল্পটি কেন লিখেছেন?
গ. উদ্দীপকের বক্তব্যের সাথে ‘পাখি’ গল্পের মূলভাবের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের চেতনা ‘পাখি’ গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল—৪: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
খাওয়ার উপযুক্ত হয়নি বলে হরিণ ছানাটি রক্ষা পায়। তারা তাকে লালন-পালন করতে থাকে নিজেদের বাড়িতে বড় করার জন্য। হরিণছানার খেলার সাথি হয় বাড়ির বোবা-কালা শিশুটি। হরিণ ছানাটির সাথে বড় হয় শিশুটিও। একসময় বাড়ির লোকেরা ঠিক করে হরিণটিকে জবাই করে তার মাংস বাজারে বিক্রি করবে। কিন্তু তাদের ইচ্ছেয় বাধ সাধে বোবা-কালা ছেলেটি। সে হরিণটিকে বাড়ির সকলের চোখ এড়িয়ে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে। তাকে প্রাণে বাঁচায়। তার বুদ্ধিতে বনের হরিণ বনে ফিরে যায়।
ক. ‘পাখি’ গল্পটির লেখক কে?
খ. কুমুর চোখ ঝাপসা হয়ে আসে কেন?
গ. উদ্দীপকের হরিণ ছানাটির সাথে ‘পাখি’ গল্পের বুনোহাঁসটির সাদৃশ্য তুলে ধর।
ঘ. ‘হরিণ ছানাটির সাথে বড় হয় শিশুটি’, উদ্দীপকের এ উক্তিটি ‘পাখি’ গল্পের কোন বিশেষ দিকটিকে ইঙ্গিত করে—বিশ্লেষণ কর।
আরও দেখো—সপ্তম শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সমাধান
সপ্তম শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের সপ্তবর্ণা বাংলা বই থেকে পাখি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য ৪টি প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়া হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক অনুধাবনমূলক, জ্ঞানমূলক এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post