পালকির গান সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত : প্রচণ্ড রোদে স্তব্ধ গ্রাম, জনমানবহীন পথ। গগন তলে আগুন ঝলসে উঠেছে, আর রৌদ্রে পোড়া গায়ে পালকি এগিয়ে চলে। ময়রা-মুদি অলস দুপুরে ঘুমে ঢুলছে, মাছি ভনভন করছে দুধের চাঁছিতে।
হাট শেষের ক্লান্ত পথিকেরা রুক্ষ বেশে ফিরে চলেছে, কুকুর ধুলো শুঁকছে, কেউবা ধুঁকছে ক্লান্ত দেহে। বাঁধের দিকে সূর্য হেলে পড়ছে, গঙ্গা ফড়িং লাফিয়ে চলেছে। কিন্তু পালকির গতি থামছে না, অঙ্গ ঢলে পড়ছে ভেতরে বসা যাত্রীর। আর কত দূর? আর দেরি কত? পালকি এগিয়ে চলেছে, সময় জানে না কেউ!
পালকির গান সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
কলকাতার কাছে নিমতা গ্রামে ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই ফেব্রুয়ারি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর কবিতায় ছন্দের দোলা ও শব্দের ঝংকার খুব ভালো লাগে। তাঁকে ‘ছন্দের যাদুকর’ বলা হয়। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘কুহু ও কেকা’, ‘অভ্র-আবীর’, ‘হসন্তিকা’ উল্লেখযোগ্য। ‘পালকির গান’ কবিতাটি ‘কুহু ও কেকা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে জুন কবি মৃত্যুবরণ করেন।
পালকির গান কবিতার শুরু এখানে
পালকি চলে!
পালকি চলে!
গগন তলে
আগুন জ্বলে!
স্তব্ধ গাঁয়ে
আদুল গায়ে
যাচ্ছে কারা
রৌদ্রে সারা!
ময়রা মুদি
চক্ষু মুদি,
পাটায় বসে
ঢুলছে কষে!
দুধের চাঁছি
শুষছে মাছি,
উড়ছে কতক
ভনভনিয়ে।
আসছে কারা
হনহনিয়ে?
হাটের শেষে
রুক্ষ বেশে
ঠিক দুপুরে
ধায় হাটুরে!
কুকুরগুলো
শুঁকছে ধুলো,
ধুঁকছে কেহ
ক্লান্ত দেহ।
গঙ্গা ফড়িং
লাফিয়ে চলে;
বাঁধের দিকে
সূর্য ঢলে।
পালকি চলে রে!
অঙ্গ ঢলে রে!
আর দেরি কত?
আরও কত দূর?
এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজ
১. জেনে নিই।
পালকির বেহারারা পালকি কাঁধে নিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যান। চলার পথে পা মেলাতে তারা তালে তালে গান গাইছেন। এই গানের কথায় গ্রামবাংলার চলমান জীবনের ছবি ফুটে উঠেছে।
২. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
গগন, আদুল, পাটা, ভনভনিয়ে, কষে, হাটুরে, ধুকছে, অঙ্গ, স্তব্ধ, ধায়, শুষছে
৩. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
পাটার, ময়রা, আদুল, হাটুরেরা, গগনে, দুধের চাঁছি, পালকি
ক. সকালে পূর্ব _______ সূর্য ওঠে।
খ. শিশুরা বাড়ির উঠানে _______ গায়ে খেলা করছে।
গ. _______ উপর বসে দোকানদার জিনিস বিক্রি করছেন।
ঘ. _______ মনের আনন্দে মিষ্টি বানাচ্ছেন।
ঙ. হাটের শেষে _______ বাড়ি ফিরছেন।
চ. খোকা _______ খেতে ভালোবাসে।
ছ. _______ চড়ে বউ নাইওরে যান।
৪. যুক্তবর্ণগুলো দেখি। যুক্তবর্ণ দিয়ে গঠিত শব্দগুলো পড়ি ও লিখি।
স্তব্ধ — স্ত = স+ত = ব্যস্ত, সস্তা
লব্ধ — ব্ধ = ব+ধ = লব্ধ, ক্ষুব্ধ
রৌদ্র — দ্র = দ + ্র (র-ফলা) = নিদ্রা, ভদ্র
ক্লান্ত — ক্ল = ক + ল = ক্লাস, ক্লেশ
শান্ত– ন্ত = ন+ত = শান্ত, পান্তা
৫. নিচের শব্দগুলো দেখি। এ ধরনের আরও কয়েকটি শব্দ লিখি।
ক. শনশন
খ. হনহন
গ. পিলপিল
৬. প্রশ্নগুলোর উত্তর বলি ও লিখি।
ক. দুপুরের রোদে পালকির বেহারাদের কী অবস্থা হয়েছে?
খ. পাটায় বসে ময়রা কী করছেন?
গ. হাটুরে কোথায় যাচ্ছেন?
ঘ. কুকুরগুলো ধুঁকছে কেন?
৭. বই দেখে ছন্দের তালে তালে কবিতাটি বারবার পড়ি।
৮. কবিতাটি না দেখে আবৃত্তি করি।
৯. কর্ম-অনুশীলন।
‘পালকির গান’ কবিতার অনুকরণে আমি একটি ছড়া বা কবিতা লেখার চেষ্টা করি।
◉ আরও দেখুন: চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বইয়ের সকল গল্প-কবিতার সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে পালকির গান সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কবিতাটি আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজগুলোর সমাধান পেতে উপরের উত্তরমালা অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে।
Discussion about this post