পাহাড়পুর বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত পুরাকীর্তির ইতিহাস ও গুরুত্ব তুলে ধরে। এটি একটি সুপ্রাচীন বৌদ্ধবিহার, যা রাজা দ্বিতীয় ধর্মপাল প্রায় ১২শ বছর আগে নির্মাণ করেন। সোমপুর মহাবিহার নামেও পরিচিত এই বিহার একসময় ধুলাবালি ও মাটির স্তূপে ঢেকে গিয়ে পাহাড়ের মতো দেখাত বলে এর নাম হয় পাহাড়পুর।
১৮৭৯ সালে আলেকজান্ডার কানিংহাম এটি আবিষ্কার করেন। নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলায় অবস্থিত এই বিহার উচ্চশিক্ষার একটি প্রধান কেন্দ্র ছিল। এখানে ১৭৭টি কক্ষ, মন্দির, স্নানঘর, রান্নাঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে। বিহারের পাশেই রয়েছে একটি জাদুঘর, যেখানে প্রাপ্ত নিদর্শন সংরক্ষিত আছে।
পাহাড়পুর
চারিদিকে কোনো পাহাড় নেই, কিন্তু জায়গার নাম পাহাড়পুর। এটি বাংলাদেশের, এমনকি বিশ্বের একটি বিখ্যাত জায়গা। কিন্তু এর সম্পর্কে সবাই খুব ভালো জানে না। তোমরা কি জানো যে, পাহাড়পুর একটি সুপ্রাচীন বৌদ্ধবিহার?
প্রায় ১৪শ বছর আগে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ভিক্ষুগণ কোনো বিশেষ একটা জায়গায় থাকতেন। সেখানে তাঁরা নিজেদের ধর্মচর্চা করতেন আর শিষ্যদের শিক্ষা দিতেন। এরকম জায়গার নাম বিহার। বাংলাদেশের ভিতরে আরও বিহার আছে, যেমন কুমিল্লার ময়নামতির শালবন বিহার।
কিন্তু পাহাড়পুরের মতো বড় বিহার আর নেই। প্রাচীন এ বিহার একসময় খালি পড়ে ছিল। অনেকে মনে করেন যুগযুগ ধরে উড়ে আসা ধুলাবালি ও মাটি এটির চারদিকে জমতে থাকে। একসময় মাটির স্তূপে এটি ঢাকা পড়ে পাহাড়ের মতো হয়ে যায়। সেই থেকে নাম হয়ে যায় পাহাড়পুর। দীর্ঘকাল পরে ১৮৭৯ সালে আলেকজান্ডার কানিংহাম এই বিশাল পুরাকীর্তি আবিষ্কার করেন। এটির আরেক নাম সোমপুর বিহার বা সোমপুর মহাবিহার।
এই বিহারটি নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত। বিহার এলাকাটি প্রায় ৪০ একর জায়গা জুড়ে লালচে মাটির ভূমিতে বিস্তৃত। ২৭ একর জমির উপর এর বিশাল দালান। উত্তর-দক্ষিণে এটি ৯২২ ফুট আর পূর্ব-পশ্চিমে ৯১৯ ফুট বিস্তৃত। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাজা দ্বিতীয় ধর্মপাল প্রায় ১২শ বছর আগে এটি নির্মাণ করেন।
একদম নিচে মাটির অংশে এটি চারকোনা আকারের। বাইরের দেয়ালের গায়ে পোড়ামাটি দিয়ে নানান রকম ফুল-ফল, পাখি, পুতুল, মূর্তি ইত্যাদি বানানো আছে। উত্তর দিকের ঠিক মাঝখানে মূল দরজা। তার পরেই বড়ো হলঘর। পাশে দুটি ছোটো হলঘর।
চারিদিকে দেয়ালের ভিতরে সুন্দর সারি বাঁধা ১৭৭টি ছোটো ঘর। সামনে দিয়ে আছে লম্বা বারান্দা। বিহারটিতে আছে পুকুর, কূপ, স্নানঘাট, স্নানঘর, রান্নাঘর, খাবারঘর ও শৌচাগার। সব মিলিয়ে বিহারটিতে ৮০০ মানুষের থাকার ব্যবস্থা ছিল। পাহাড়পুর ছিল তখনকার দিনে উচ্চশিক্ষার প্রাণকেন্দ্র।
ভিতরটায় বিশাল উঠানের মাঝখানে বড়ো এক সুন্দর মন্দির। ধাপে ধাপে উচু করে মন্দিরটা বানানো হয়েছে। পোড়ামাটির দুই হাজার ফলকের চিত্র দিয়ে মন্দিরের বাইরে আর ভেতরে সাজানো। একই রকম ছোটোছোটো মন্দির পুরো বিহারের নানান জায়গায় আছে। বিহারটির পূর্ব-দক্ষিণ কোণে দেয়ালের বাইরে একটা বাঁধানো ঘাট আছে। এটাকে বলা হয় সন্ধ্যাবতীর ঘাট।
পাহাড়পুর বিহারের পাশে আছে দেখার মতো একটা জাদুঘর। সেখানে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা আছে বিহার থেকে খনন করে পাওয়া অনেক পুরাতন আর দুর্লভ জিনিসপত্র।
এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজ
১. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
বিহার, সুপ্রাচীন, ভিক্ষু, স্তূপ, বিশাল, প্রাণকেন্দ্র, দুর্লভ, আবিষ্কার, স্নানঘাট, ধর্মচর্চা
২. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
প্রাণকেন্দ্র, স্তূপ, দুর্লভ, বিশাল, বিহার, সুপ্রাচীন,
ক. পাহাড়পুর ছাড়াও আমাদের দেশে আরও রয়েছে।
খ. আমাদের দেশে মঠ রয়েছে।
গ. টেবিলের উপর ধুলোবালি পড়ে ময়লার হয়ে আছে।
ঘ. আকাশ অনেক
ঙ. ঢাকা বাংলাদেশের
চ. জাদুঘরে অনেক জিনিস দেখতে পাওয়া যায়।
৩. ঠিক উত্তরটিতে টিক (✔) চিহ্ন দিই।
ক. বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ভিক্ষুগণ থাকতেন-
১. বৌদ্ধ বিহারে
২. পাহাড়পুরে
৩. বদলগাছিতে
৪. জামালপুরে
খ. আলেকজান্ডার কানিংহাম এই পুরাকীর্তি আবিষ্কার করেন
১. ১৭৭৯ সালে
২. ১৮৭৯ সালে
৩. ১৯৭৯ সালে
৪. ১৬৭৯ সালে
গ. বিহার এলাকাটি বিস্তৃত –
১. ৫০ একর জুড়ে
২. ৪০ একর জুড়ে
৩. ৬০ একর জুড়ে
৪. ৩০ একর জুড়ে
৪. প্রশ্নগুলোর উত্তর বলি ও লিখি।
ক. পাহাড়পুর নামটা কীভাবে হলো?
খ. এখানে কতবছর আগে কারা থাকত?
গ. বিহারটির মাঝখানে কী কী আছে?
ঘ. বৌদ্ধ বিহারটির মাটি ও দেয়াল কোন রঙের এবং কী দিয়ে তৈরি?
৫. বাম পাশের শব্দাংশের সাথে ডান পাশের ঠিক শব্দাংশ মিলিয়ে বাক্য পড়ি ও লিখি।
পাহাড়পুর একটি সুপ্রাচীন | ১৭৭টি ছোট ঘর। |
ভিক্ষুগণ সেখানে | সোমপুর মহাবিহার। |
মাটির স্তূপে ঢাকা পড়ে | বৌদ্ধবিহার। |
পাহাড়পুরের আরেক নাম | সন্ধ্যাবতীর ঘাট। |
ভিতরে সুন্দর সারি বাঁধা | পাহাড় হয়ে যায়। |
বিহারের দক্ষিণ কোণে রয়েছে | ধর্মচর্চা করতেন। |
৬. বাক্য রচনা করি।
ভিক্ষু, ধর্মচর্চা, আবিষ্কার, প্রাণকেন্দ্র, স্নানঘাট
৭. কথাগুলো বুঝে নিই।
উড়ে আসা – বাতাসের সঙ্গে যা কিছু উড়ে আসতে পারে তাকে বলে উড়ে আসা। যেমন: উড়ে আসা গাছের পাতা, উড়ে আসা পাখি ইত্যাদি।
পাড়ি দেওয়া – এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পৌঁছানো বা পার হওয়াকে বলা হয় পাড়ি দেওয়া। যেমন-সাত সমুদ্র পাড়ি দেওয়া সবার কাজ নয়।
দুর্লভ জিনিসপত্র – যেসকল জিনিস সহজে লভ্য নয় বা পাওয়া যায় না, তাকেই দুর্লভজিনিসপত্র বলে।
৮. কর্ম অনুশীলন।
ক. পাঠে যেসব স্থান ও ব্যক্তির নাম আছে, সেসব নামের একটি তালিকা তৈরি করি। আমার তালিকাটি পাশের বন্ধুর সাথে মিলিয়ে নিই।
খ. ময়নামতির ‘শালবন বিহার’ দিয়ে ৫টি বাক্য লিখি।
◉ আরও দেখুন: চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বইয়ের সকল গল্প-কবিতার সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে পাহাড়পুর গল্পটি আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজগুলোর সমাধান পেতে উপরের উত্তরমালা অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে।
Discussion about this post