লাইফস্টাইল পরিবর্তন, শারীরিক পরিশ্রম না করা সহ অনেক কারণে মানুষের পা কামড়ানো তথা লেগ ক্র্যাম্পের সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমেরিকায় প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে ৬০% মানুষ কখনো না কখনো রাতে পা কামড়ানো সমস্যায় ভুগেছেন। আপনিও যদি ভুগে থাকেন তবে ঘরোয়া উপায়ে পা কামড়ানো কমানোর উপায় গুলো অনুসরণ করার মাধ্যমেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারে।
পা কামড়ানোর অনেক কারণ থাকতে পারে। স্বাভাবিকভাবে একটি বয়সের পর মানুষ শারীরিক পরিশ্রম করা বন্ধ করে দেয়। তাদের পা কামড়ানোর এর সমস্যা বেশী দেখা দেয়। উক্ত কারন ছাড়াও পা কামড়ানোর সম্ভাব্য যত কারণ রয়েছে এবং পা কামড়ানো কীভাবে কমাবেন তাও বলে দেওয়া হবে-
পা কামড়ানো কমানোর উপায়
পা কামড়ানো কমানোর জন্য আগে আমাদের জানতে হবে আমাদের পা মূলত কি কারণে কামড়ায়। আমরা সেই সমস্যাগুলো সমাধান করলেই আমাদের পা কামড়ানো এর মতো সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। তবে এই কাজগুলো এক নাগাড়ে এক সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত করতে হবে পারে। তাহলেই স্থায়ীভাবে পা কামড়ানোর এর মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
পা কামড়ানো কি কি উপায়ে কমাবেন তা জানার আগে চলুন জেনে নেওয়া যাক পা কামড়ানো মূলত কি ও কেন হয়ে থাকে।
পা কামড়ানো কী
পায়ের পেশি সংকোচনের ফলে আমাদের পায়ে যে অনুভূতি হয় তাকেই আমরা পা কামড়ানো বলে থাকি চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে লেগ ক্র্যাম্প বা মাসল ক্র্যাম্প বলা হয়ে থাকে। বেশীরভাগ সময় পা কামড়ানো রাতের দিক শুরু হয়। পা কামড়ানো সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত এক নাগাড়ে চলতে থাকে। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এটি কয়েক মিনিট ধরে একনাগাড়ে চলতে থাকে।
পা কামড়ানোর হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে তবে ডাক্তারদের মতে রক্তে লবণের পরিমাণ কম হওয়া, মাংসপেশিতে রক্তপ্রবাহ কম হওয়া, পায়ে রক্ত চলাচলে বিঘ্নতার কারণে, পায়ের পেশিতে টান পড়লে, পুষ্টির অভাব ছাড়াও আরও অন্যান্য কারণ রয়েছে পা কামড়ানোর। যে কারণেই পা কামড়াক না কেন ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হওয়া সম্ভব।
এটি হঠাৎ করেই শুরু হয় আবার কয়েক মিনিট স্থায়ী থেকে আবার দূর হয়ে যায়। তবে সাময়িক সময়ের জন্য হলেও তা অসুবিধার কারণও বটে। তাই হঠাৎ করে পা কামড়ানো শুরু হলে কি ব্যবস্থা নেবেন এবং স্থায়ীভাবে এটি বন্ধ করার জন্য কি কি ব্যবস্থা নেবেন তা চলুন জেনে নেওয়া যাক-
সাময়িকভাবে পা কামড়ানো কমানোর উপায়
পা কামড়ানোর মূল কারণ হচ্ছে পায়ের পেশিতে টান পড়া কিংবা পায়ে রক্ত চলাচল কম হওয়া। তাই যখনই আমাদের পা কামড়ানো শুরু হবে তখন আমরা যদি আমাদের পায়ের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করতে পারি তাহলে অতিদ্রুত আমরা পা কামড়ানো থেকে সুস্থতা লাভ করবো।
পায়ে রক্ত চলাচল বৃদ্ধির জন্য সামান্য সরিষার তেল ও তিন কোয়া পরিমাণ রসুন নিয়ে সেই তেলটি গরম করে পায়ের পাতা থেকে হাঁটু পর্যন্ত মালিশ করতে থাকুন। এভাবে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পেলে পা কামড়ানো অনেকখানি কমে যাবে।
স্থায়ীভাবে পা কামড়ানো কমানোর উপায়
স্থায়ীভাবে পা কামড়ানো কমানোর উপায় অনেকগুলো রয়েছে। স্থায়ীভাবে পা কামড়ানো কমাতে চাইলে আমাদের এমন কারণগুলো হতে বিরত থাকতে হবে যেগুলোর কারণে আমাদের পায়ে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয় কিংবা পেশিতে সংকোচন হয়। পায়ের মধ্যে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। চলুন আস্তে আস্তে সেসব জানবো।
যথেষ্ট হাঁটাচলা করতে হবে
পা কামড়ানো সমস্যা হওয়ার পিছনে মূল কারণ হচ্ছে আমাদের আধুনিক জীবন যাপন। আমরা এখন দীর্ঘ সময় কম্পিউটারে বসে থাকি, অফিসে বসে কাজ করি, হাটা-হাটি করার বদলে রিকশা কিংবা অন্যান্য যানবাহন ব্যবহার করি, শুয়ে বসে সময় কাটাই। যার কারণে মূলত পায়ের মধ্যে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাটা-চলা করা।
পা কামড়ানো কমানোর উপায় সঠিক ভঙ্গিতে ঘুমাতে হবে
পা কামড়ানোর মতো সমস্যার পিছনে বড় ধরনের কারণ হতে পারে ভুল ভঙ্গিতে ঘুমানো। আকা-বাঁকা হয়ে দীর্ঘ সময় শুয়ে থাকলে পায়ের পাতা ও উপরের দিকের পেশিতে টান পরে। যার ফলে পা কামড়ানোর মতো সমস্যা হয়ে থাকে। আকা-বাঁকা হয়ে না ঘুমিয়ে সোজা হয়ে ঘুমান।
ঋতু পরিবর্তনের সময় সতর্ক থাকা
ঋতু পরিবর্তনের সময়ও পা কামড়ানোর মত সমস্যা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিশেষ করে যখন গরম ও শীতের শুরুতে পা কামড়ানোর মতো সমস্যা বেশী শুরু হয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে বয়স্কদের এই সমস্যা হয়ে থাকে। এই সময় পা কামড়ানোর সমস্যা পেশিতে নয় বরং নার্ভে হয়ে থাকে। এই সময়টাতে রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধিকারক খাবার খেতে পারেন, তা ভালো কাজে দিবে।
পা কামড়ানো কমানোর উপায় পানিশূন্যতা পূরণ করতে হবে
পা কামড়ানো কমানোর উপায় হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায় বলা যেতে পারে পানিশূন্যতা পূরণ করাকে। হঠাৎ করে পা কামড়ানোর মতো সমস্যার মূল কারণ হতে পারে পানিশূন্যতা। বিশেষ করে গ্রীষ্ম ও শীতে এই সমস্যা বেশী হয়ে থাকে। অতিরিক্ত তাপ কিংবা বায়ুর আর্দ্রতার কারণে শরীরে পানির অভাব হতে শুরু করে। পানির অভাবে শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট এর ভারসম্য নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে পা কামড়ানোর মতো সমস্যা হয়ে থাকে। শীতকালে ও গরমকালে পানি খাওয়া আগের চেয়ে বাড়িয়ে দিতে হবে।
পুষ্টির অভাব পূরণ করা
ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে হতে পারে হাত ও পা কামড়ানোর সমস্যা। এগুলো থেকে উৎপন্ন ইলেক্ট্রোলাইটগুলো শরীরের মধ্যে রক্ত ও পেশিতে তরলের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু এগুলোর অভাবে শরীরে তরলের ভারসম্য নষ্ট হয়ে পা কামড়ানো শুরু হয়। যার কারণে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। যারা কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানেন, তারা জেনে থাকবেন যে দৈনিক একটি কলা ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস হতে পারে।
দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা যাবে না
যারা দাঁড়িয়ে কাজ করেন তাদের জন্য পা কামড়ানো কমানোর উপায় হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হতে পারে এটি। যারা দাঁড়িয়ে কাজ করেন কিংবা সারাদিন বসে বসে থাকেন তাদের পা কামড়ানোর মতো সমস্যা বেশী দেখা দেয়।
কেউ যদি দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকে কিংবা বসে থাকে তাহলে শরীরের পানি ও রক্তের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে তা নিচের অংশে এসে বেশী পরিমাণে জমা হয়। যার ফল হতে পারে পা কামড়ানোর মতো সমস্যা। তাই পা কামড়ানোর মতো সমস্যা থেকে দূরে থাকতে চাইলে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে কিংবা বসে থাকবেন না।
গর্ভাবস্থায় পা কামড়ানো হলে যা করতে হবে
প্রেগন্যান্সি থাকাকালীন গর্ভবতী মায়ের মাথা ব্যথা ও পা কামড়ানো এর মতো সমস্যা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। প্রায়ই মহিলাদের এই সমস্যা হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় ওজন বৃদ্ধি কিংবা সঞ্চালন ব্যাহত হওয়ার জন্য এমন সমস্যা বেশী হয়। এমতাবস্থায় মূলত কিছু করার থাকে না। পায়ের মধ্যে তেল মালিশ করলে পা কামড়ানো অনেকখানি কমে যাবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে পা কামড়ালে যা করতে হবে
বাতব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ ও হতাশার কারণেও হতে পারে পা কামড়ানোর মতো সমস্যা। উক্ত সমস্যাগুলোর কারণে মাংসপেশিতে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। অনেকের ক্ষেত্রে স্নায়ু জটিলতার প্রভাবেও পা কামড়ানোর মতো সমস্যা হতে পারে।
পায়ের অতিরিক্ত ব্যায়াম করা যাবে না
পায়ের ব্যায়াম বেশী করলে কিংবা খেলাধুলা বেশী করলে পায়ের পেশিতে টান পড়ার সম্ভাবনা থাকে। পায়ের পেশিতে টান পড়লে পা ব্যথা কিংবা পা কামড়ানোর মতো সমস্যা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। এমন হলে টান পড়া পেশিতে একটু তেল দিয়ে মালিশ করে নিলেই পা কামড়ানো অনেকটা কমে যাবে।
বার্ধক্যকালীন সময় পা কামড়ালে যা করতে হবে
বার্ধক্য হলে হাটা-চলার পরিমাণ কমে যায়। তখন মানুষ শুয়ে বসেই অধিকাংশ সময় কাটিয়ে দেয়। বার্ধক্য হলে মানুষের পেশি সংকোচন ও দুর্বল হয়ে পড়ে। উচ্চরক্ত চাপ ও নিম্ন রক্তচাপ সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ ঘিরে করে। এমন অবস্থায় পা কামড়ানোর সমস্যা প্রতিনিয়ত দেখা দেয়। যদি পা কামড়ানোর সমস্যা মাঝে মধ্যে হয়ে থাকে তাহলে ঘরোয়া উপায় অনুযায়ী কাজ করুন। আর যদি প্রতিনিয়ত এই সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
সবশেষে যা জানা দরকার
পা কামড়ানো সমস্যা হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে পায়ের পেশিতে টান পড়া ও রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হওয়া। দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেক ধরনের কাজ করে থাকি যে কাজগুলোর মাধ্যমে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয় কিংবা পেশিতে টান পরে। আমাদের এই ধরনের কাজগুলো হতে বিরত থাকা উচিত। পাশাপাশি পা কামড়ানো কমানোর উপায়গুলো অনুসরণ করা উচিত। তবেই পা কামড়ানোর কমানো সম্ভব।
Discussion about this post