হঠাৎ করে পা অল্প ফুলতে শুরু করলে অনেকে এই বিষয়টাকে খেয়ালই করে না। আবার খেয়াল করলেও ডাক্তারের কাছে যেতে অলসতা করে। পা ফোলা বড় কোন ধরনের রোগের প্রাথমিক ইঙ্গিতও হতে পারে। তাই পা ফোলা দেখলে, পা ফুলে যাওয়ার কারণ জেনে সেই অনুযায়ী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
পা ফোলা হতে পারে সামান্য কোন সমস্যার লক্ষণ আবার বড় কোন রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। যে কারণেই পা ফুলে যাক না কেন পা ফোলার কারণ চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। অধিকাংশ সময়ই পা ফোলার সমস্যার জন্য চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়।
আমাদের শরীরের পানি ও রক্তের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য শরীরের প্রতিটি অঙ্গ কাজ করে। এই অঙ্গগুলোর মধ্যে কোন একটি অঙ্গে সমস্যা হলে তার ফল পুরো শরীরেই পড়তে পারে। যার ফল হতে পারে শরীরে পানির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে হা ও পা ফুলে যাওয়া।
পা ফুলে যাওয়ার কারণ
পা ফুলে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। তবে তার মধ্যে মুখ্য কারণগুলো যদি বিবেচনা করা হয় তাহলে তিনটি কারণ বের হবে। আমরা আজকে সেই তিনটি কারণসহ আরও সম্ভাব্য কত ধরনের ও কি কি কারণ থাকতে পারে তার সবটাই আপনাদের জানানোর চেষ্টা করবো।
পা ফুলে যাওয়ার মূল কারণগুলো হচ্ছে-
- ইডিমা
- ডিভিটি
- প্রদাহ
এক পা ফোলার মূল করণ ডিভিটি
পায়ে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে পা ফুলে গেলে সেটাকে ডিভিটি বলা হয়। হৃৎপিণ্ড থেকে শিরা ও উপশিরার মাধ্যমে রক্ত চলাচল করে। উপশিরার মাধ্যমে রক্ত পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। আর শিরার মাধ্যমে তা আবার ফিরে আসে। কোন কারণে যখন শিরার কার্যক্রম ব্যাহত হয় তখন রক্ত আর হৃৎপিণ্ডে ফিরে আসতে পারে না। তখন রক্ত উপশিরার মাধ্যমে প্রতিটি অঙ্গে গিয়ে জমা হতে শুরু করে। যার ফলে পায়ে রক্ত জমে পা ফুলতে শুরু করে।
রক্তের চলাচল যখন ব্যাহত হয় তখন রক্ত জমে পায়ের ফোলা বৃদ্ধি পায়। অনেকেই বলতে পারেন এক পা ফুললেই সেটাকে কি ডিভিটি ধরে নিবো। না, এমন ধরার কোন কারণ নেই। তবে বেশিরভাগ সময়ই এক পা ফুললে তার কারণ ডিভিটিই হয়। কারণ একই সাথে দুই পায়ে রক্ত চলাচল বন্ধ হয় এমন হওয়ার সম্ভাবনা কম।
দুই পা ফোলার মূল কারণ ইডিমা
শরীরের কোন অঙ্গে তরল জাতীয় কোন কিছু জমে সেই অঙ্গ ফুলে উঠাকে ইডিমা বলা হয়। পায়ের ক্ষেত্রে তরল জমলে দেখা যায় দুই পায়েই জমে। তাই বলা যায় দুই পা ফুলে যাওয়ার কারণ হচ্ছে ইডিমা। ইডিমা হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। দীর্ঘদিন ঘরে কোন রোগ থাকলে, অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয় এমন কোন জায়গায় দীর্ঘদিন কাজ করলেও হতে পারে এই সমস্যা। এছাড়া ইডিমা হওয়ার আরও একাধিক কারণ রয়েছে যেমন- অলস জীবনযাপন করা, শরীরচর্চা না করা ও ওজন বৃদ্ধি পাওয়া।
বেশিরভাগ সময়ই দেখা দেয় অলস জীবনযাপন করে ও স্থূল মানুষদের এই রোগ হতে দেখা যায়। তাই অলসতা পরিহার কর্মক্ষম হলেই ইডিমা হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে ইতিমধ্যে এই সমস্যা হয়ে গেলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
প্রদাহ পা ফুলে যাওয়ার কারণ
প্রদাহ অনেক কারণে হতে পারে, যার ফলে পা ফুলে যায়। পায়ের কোন লিগামেন্ট কোন কারণে ছিঁড়ে গেলে, টিস্যু ছিঁড়ে গেলে বা পা মচকে গেলে পা ফোলার মতো সমস্যা হয়ে থাকে। পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়লে জ্বালা করে সেই সঙ্গে ব্যথাও থাকে। এভাবে এক পর্যায়ে দেখা যায় পা ফুলতে শুরু করেছে। কারণে কিংবা অকারণেই হোক পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়লে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে দেরি করা উচিত না।
পা ফুলে যাওয়ার অন্যান্য কারণগুলো
উক্ত কারণগুলো ছিলো পা ফুলে যাওয়ার মূল কারণ। বেশিরভাগ সময়ই উক্ত কারণগুলোর জন্যই পা ফুলে। উক্ত কারণগুলো ছাড়াও আরও কিছু কারণ রয়েছে যেগুলোও পা ফুলে যাওয়ার কারণ এর মধ্যে পড়ে। তবে এগুলো মূল কারণ নয়। চলুন এই কারণগুলো জেনে নেওয়া যাক-
কিডনি রোগ হওয়ার কারণে
শরীরের পানি পরিশোধন করে দূষিত পদার্থ বের করে দেওয়াটাই কিডনির কাজ। কিন্তু, কিডনি যখন তার কাজ করতে ব্যর্থ হয় তখন শরীরে দূষিত পদার্থ ও পানি জমতে শুরু হয়। যার ফলে হাত, মুখ ও পা ফোলা শুরু হয়। যারা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগেন তাদের এই ধরনের সমস্যা বেশী হয়ে থাকে। কিডনি সুস্থ রাখতে অনেকে ঘরোয়া উপায় যেমন- তুলসী পাতার রস খেয়ে থাকেন। তুলসী পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা হিসেবে কিডনির বিভিন্ন রোগ ও পাথর হওয়া রোধ হয়।
যকৃতের রোগের ফলে পা ফোলার সমস্যা
যকৃত বা লিভারের সমস্যা হলে শরীরের মধ্যে ও পেটে পানি জমতে শুরু করে। পরে আস্তে আস্তে পায়েও পানি জমতে শুরু করে। যার ফলে শরীর ও পা ফুলে যেতে শুরু করে। এই রোগ হলে এর লক্ষণ হিসেবে হলুদ প্রস্রাব, অরুচি ও রক্ত বমি হতে দেখা দেয়।
গর্ভাবস্থায় পা ফুলে যাওয়ার কারণ
প্রেগন্যান্সি থাকাকালীন মহিলাদের মাথা ব্যথা, পা কামড়ানো ও পা ফোলার মতো সমস্যা হয়ে থাকে। প্রেগন্যান্ট থাকাকালীন শেষ চার মাস সময়ের মধ্যে অনেকের পা ফোলার মতো সমস্যা দেখা দেয়। যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে ডাক্তারের কাছে গিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করলে ইনশাল্লাহ সুস্থ হবেন।
শুধু কি উক্ত কারণগুলোর জন্যই পা ফুলে
শুধু উক্ত কারণগুলোর জন্যই পা ফুলে এটা বললে ভুল হবে। পা ফুলার অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে উপরে যা যা কারণ বলা হয়েছে সেগুলোর জন্যই সবচেয়ে বেশী পা ফোলার সমস্যা হয়ে থাকে। উক্ত কারণ ছাড়াও সম্ভাব্য আরও যত ধরনের কারণ রয়েছে চলুন সেগুলো জেনে আসা যাক-
১. অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার দীর্ঘদিন খাওয়ার কারণে
২. লসিকা প্রবাহ ও লসিকা গ্রন্থি নষ্ট হয়ে যাওয়ার জন্য
৩. অনেকদিন ধরে শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি হলে
৪. পায়ে আঘাত লাগার কারণে
৫. পোকা কামড়ানোর ফলে
৫. বিচ্ছুর কামরের ফলে
৬. হার্ট ফেইলিউর হওয়া
৭. মাসিকের কিছুদিন পূর্বে
৮. ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
৯. পায়ে ইনফেকশনের জন্য
শেষ কথা
উপরে পা ফুলে যাওয়ার কারণ গুলো আলোচনা করা হয়েছে। প্রায়ই সব কারণই আলোচনা করা হয়েছে। কিছু কারণ রয়েছে যেগুলোর জন্য পা ফুললে ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হওয়া সম্ভব। তবে পা ফুললে ঘরোয়াভাবে চিকিৎসা নিয়ে দেখতে হবে, যদি কমে তাহলে কমে যাবে। যদি না কমে তাহলে ডাক্তারের কাছে যাওয়াই শ্রেয়।
Discussion about this post