পিরিয়ড নিয়মিত করার উপায় অনেক গুলো রয়েছে। তবে তার মধ্যে কিছু কার্যকরী উপায় রয়েছে। যেগুলো অনুসরণ করে অনেকে তাদের পিরিয়ড নিয়মিত করতে পেরেছেন। আমরা আজকে সে সকল উপায়গুলো নিয়েই আলোচনা করবো।
পিরিয়ডের সময় অনেক নারী অনেক ধরনের সমস্যায় পড়ে থাকেন। অনেক নারী আজও এই বিষয়টি লজ্জার বলে গ্রহণ করে থাকে। যার কারণে কোন সমস্যায় পড়লে সহজে কাউকে বলেও না আবার ডাক্তারের কাছে যেতেও পারে না। যার কারণে তাদের ইচ্ছে থাকা সত্বেও তারা তাদের নারীস্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন হতে পারে না।
পিরিয়ড দেরিতে হওয়ার কারণ যেমন রয়েছে ঠিক তেমনই পিরিয়ড হওয়ার প্রাকৃতিক উপায়ও অনেকগুলো রয়েছে সাথে রয়েছে পিরিয়ড হওয়ার ঔষধ। যে ঔষধগুলো খেলে ও উপায়গুলো অবলম্বন করলে দ্রুত সময়ে পিরিয়ড শুরু হয়ে থাকে এবং পিরিয়ডও নিয়মিত করা সম্ভব।
পিরিয়ড নিয়মিত করার উপায়
পিরিয়ড শেষ হওয়ার পর থেকে পরবর্তী পিরিয়ড ২৮ দিনের মধ্যে শুরু হয়ে থাকে। বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণে পিরিয়ড যদি এক সপ্তাহ দেরিতেও শুরু হয় তাহলেও তাকে স্বাভাবিকই বলা হয়। তবে সমস্যা বাধে তখন, যখন পিরিয়ডের তারিখের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েও পিরিয়ড হয় না। অনিয়মিত পিরিয়ডের জন্য অনেক ঘরোয়া উপায় রয়েছে সেগুলোই আজকে আমরা আলোচনা করবো।
অনিয়মিত পিরিয়ড নারীদের একটি স্বাভাবিক সমস্যা। ডাক্তারি ভাষায় একে অলিগোমেনোরিয়া বলা হয়ে থাকে। বিভিন্ন সমস্যার কারণে এটি হয়ে থাকে। যেমন- ইস্ট্রোজেন হরমোনের তারতম্য, ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার নিয়ম না মানা, ইমার্জেন্সি পিল বেশি খাওয়ার পর পিরিয়ড অনিয়মিত কিংবা ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার পর অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়া স্বাভাবিক বিষয়।
চলুন জেনে নেওয়া যাক যে উপায়গুলোর মাধ্যমে পিরিয়ড নিয়মিত করবেন।
১. পিরিয়ড নিয়মিত করার উপায় কাঁচা পেঁপে খেতে হবে
পিরিয়ড নিয়মিত করার জন্য কাঁচা পেঁপে খুবই ভালো কাজ করে। কাঁচা পেঁপে জরায়ুর পেশী তন্তুকে সংকুচিত করে থাকে। দুমাস নিয়মিত কাঁচা পেঁপের রস পান করলে পিরিয়ড সঠিক সময়ে হতে শুরু করবে। তবে পুরো মাস কাঁচা পেঁপের রস পান করলেও, পিরিয়ড চলাকালীন এটি পান করা উচিত নয়। এতে পিরিয়ডের সমস্যা হতে পারে।
২. হলুদের ব্যবহার
শরীরে হরমোনের ব্যাল্যান্স ঠিক করতে ও অনিয়মিত পিরিয়ডকে নিয়মিত করতে হলুদ খুবই ভালো কাজ করে। হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। সেই সাথে হলুদ জরায়ুর মাংসপেশি সংকোচন ও প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ করে পিরিয়ড নিয়মিত করতে সাহায্য করে। দুধ বা মধুর সঙ্গে এক চা চামচের চার ভাগের একভাগ হলুদ নিয়ে মিশ্রিত করে খেতে হবে। এভাবে এক মাস খেলে পিরিয়ড অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে।
৩. অ্যালোভেরার ব্যবহার
রূপচর্চা এর পাশাপাশি হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে পিরিয়ড নিয়মিত করতে অ্যালোভেরা সাহায্য করে। অ্যালোভেরা ব্যবহার করার জন্য প্রথমে একটি অ্যালোভেরা পাতার ভেতর থেকে জেল বের করে আনতে হবে। তারপর মধুর সঙ্গে এক চা চামচ অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে সকালের নাস্তা খাওয়ার আগে তা খেতে হবে। প্রতিদিন একবার করে এভাবে দুমাস খেতে হবে। তবে, পিরিয়ডের সময় অ্যালোভেরা খাওয়া হতে বিরত থাকুন।
৪. পিরিয়ড নিয়মিত করার উপায় আদার ব্যবহার করতে হবে
ঘরোয়া উপায়ে পিরিয়ড নিয়মিত করার উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আদা ব্যবহার। এক চা চামচ আদা পানিতে কিংবা চা’য়ে দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর উক্ত পানি অথবা চায়ের মধ্যে মধু মিশিয়ে তা পান করতে হবে। এভাবে দৈনিক অন্তত দুবার করে দুমাস আদা চা পান করলে পিরিয়ড অনেকখানি নিয়মিত করা সম্ভব।
৫. জিরার ব্যবহার
বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসায় জিরার প্রচুর ব্যবহার রয়েছে। অনিয়মিত পিরিয়ড থেকে মুক্তি পেতেও জিরা ভালো কাজে দেয়। জিরার সাহায্য অনিয়মিত পিরিয়ড থেকে মুক্তি পেতে চাইলে ২ চামচ জিরা, এক গ্লাস পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে এই পানি ও জিরা উভয়ই খেয়ে ফেলুন। এভাবে দুমাস চালিয়ে গেলে সঠিক সময়ে পিরিয়ড হওয়া শুরু করবে।
৬. পিরিয়ড নিয়মিত করার উপায় দারুচিনি খেতে হবে
দারুচিনিকে আমরা সকলেই মশলা হিসেবে চিনি। তবে এটি শুধু মশলা হিসেবে নয়, মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণে ও মাসিকের সময় ব্যথা কমাতেও দারুণ কাজে দেয়। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য গরম দুধ, চা কিংবা লেবুর রসের সঙ্গে এক চা চামচ দারুচিনি গুঁড়ো করে মিশিয়ে দিতে হবে। এভাবে একমাস ব্যবহার করলে পিরিয়ডের ব্যথাও কমবে সেই সাথে পিরিয়ডও হবে নিয়মিত।
৭. যোগব্যায়াম এবং মেডিটেশন
যোগব্যায়াম এবং মেডিটেশন হচ্ছে পিরিয়ড নিয়মিত করার উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম। অনিয়মিত পিরিয়ড বা সঠিক সময়ে পিরিয়ড না হওয়ার অন্যতম কারণ হলো স্ট্রেস বা মানসিক চাপ। মানসিক চাপে থাকলে শরীরে হরমোনের তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। ফলে পিরিয়ড আগেই হয়ে যাওয়া যা পিরিয়ড অনেক দেরিতে শুরু হয়ে থাকে।
যদি মানসিক চাপে বা স্ট্রেসে থাকেন তাহলে মেডিটেশন ও যোগব্যায়াম এর মাধ্যমে হরমোনের সমতা রক্ষা করে পিরিয়ড নিয়মিত করা সম্ভব। সেই সাথে নারীদের শরীরের ইস্টোজেন হরমোন বৃদ্ধিকারক খাবার গুলো খেলে অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা দ্রুত নিরাময় হবে।
৮. শরীরচর্চা করতে হবে
আধুনিক জীবন যাপন করতে গিয়ে মানুষ শারীরিক পরিশ্রম করা প্রায়ই বাদই দিয়েছে। তাই শরীরচর্চা ও শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। শরীরচর্চা করলে শরীরে হরমোন কমে যেতে পারে না কিংবা খুব বেশী হরমোন বেড়ে গেলে সেটিও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। তাই প্রতিদিন শারীরিক পরিশ্রম করুন বা শরীরচর্চা করুন।
৯. ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে
খুব বেশী ওজন বেড়ে গেলে কিংবা ওজন খুব কম হয়ে গেলে শরীরে হরমোনের ব্যালেন্স নষ্ট হয়। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে ওজন যাতে খুব বেশী বৃদ্ধি না পায় কিংবা খুব কম ওজন যাতে না হয়। তার জন্য সবসময় পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং ফাস্ট ফুড, খুব বেশী লবণ ও চিনিযুক্ত খাবার হতে বিরত থাকতে হবে।
১০. পিরিয়ড নিয়মিত করার উপায় ভিটামিন খেতে হবে
শরীরে ভিটামিনের অভাবের ফলেও অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে। বিশেষ করে ভিটামিন ডি ও ভিটামিন বি এর ঘাটতির ফলে অনিয়মিত পিরিয়ড হতে দেখা যায়। তাই পিরিয়ড নিয়মিত করার উপায় গুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায় হচ্ছে ভিটামিন জাতীয় খাদ্য খাওয়া। তাই খাওয়া-দাওয়ার মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন উপস্থিত কি না তা খেয়াল রাখতে হবে।
১১. ফল ও সবজির জুস খাওয়া
খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ফল ও সবজির জুস রাখা উচিত। বিভিন্ন ধরনের সবজির জুস শরীর ঠাণ্ডা রাখে সেই সাথে শরীরে হরমোন ব্যালেন্স করতেও সাহায্য করে। বিশেষ করে আঙুর ও গাজরের রস হরমোন ব্যালেন্স করতে ভালো কাজ করে। তাই গাজর কিংবা আঙুরের রস খাওয়ার চেষ্টা করুন।
১২. অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার
অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে রক্তে ইনসুলিন ও সুগারের মাত্রা কম-বেশী হওয়া। এমনটি যদি হয়ে থাকে। তাহলে এটি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত পিরিয়ড নিয়মিত করা সম্ভব না। ইনসুলিন ও সুগারের মাত্রা বজায় রাখার জন্য এক গ্লাস পানিতে দুই চা চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে খাবারের আগে খেতে হবে। এভাবে দুমাস খেলে পিরিয়ড অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে।
শেষ কথা
সময়ের আগে বা সময় শেষ হওয়ার পরেও অনেকের পিরিয়ড হয়ে থাকে। এর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। বিশেষ করে বিবাহিত মহিলারা যারা বিভিন্ন ধরনের পিল খেয়ে থাকেন, বিশেষ করে যারা ইমার্জেন্সি পিল খেয়ে থাকেন তাদের পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়া স্বাভাবিক বিষয়। ইমার্জেন্সি পিল বেশি খেলে থাকলে কিংবা নিয়ম না মেনে ইমার্জেন্সি পিল খেলে এই সমস্যাটি বেশীরভাগ সময়ই হয়ে থাকে। আমরা উক্ত সমস্যা সহ পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়ার অন্যান্য কারণ সমূহ আলোচনা করেছি এবং পিরিয়ড নিয়মিত করার উপায় বলে দিয়েছি।
Discussion about this post