হঠাৎ করে পেটে ব্যথা শুরু হয়নি এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। হঠাৎ করে পেটে ব্যথা শুরু হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। হঠাৎ করে পেটে ব্যথা শুরু হলে আতঙ্কিত না হয়ে প্রথমে পেটে ব্যথা কমানোর উপায় তথা ঘরোয়া উপায়গুলো ফলো করতে করতে হবে। যদি তারপরেও পেটে ব্যথা না কমে তাহলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
বেশীরভাগ সময়ই পেটে ব্যথা হঠাৎ করেই আসে আবার হঠাৎ করেই চলে যায়, এসব ব্যথা ততটা গুরুতর না। গুরুতর না হলেও এটা বিরক্তিকর বটে। সেজন্য যদি কখনো হঠাৎ করে পেটে ব্যথা শুরু হয় ঘরোয়া উপায়ে পেটে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করতে হবে।
পেটে ব্যথার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। সেটি হতে পারে গ্যাস তৈরি হওয়া, কৃমি কিংবা অন্ত্রের সমস্যা। এই উপায়গুলো অনুসরণ করে আপনি আপনি সাময়িক সময়ের জন্য আপনার পেটে ব্যথা কমাতে পারবেন কিংবা অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় একেবারেই কমে যায়। তবে যদি পেটে ব্যথা না কমে থাকে তাহলে অতিদ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
পেটে ব্যথা কমানোর উপায়
খাবারে অনিয়ম, অস্বাস্থ্যকর খাবার কিংবা গ্যাস্টিকের কারণে হঠাৎ করে পেট ব্যথা শুরু হতে দেখা দেয়। সেই সঙ্গে বমি হওয়া ও গলা জ্বালা করা শুরু হতে পারে। এমন হলে ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসা নিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে কমছে কি না, যদি না কমে তাহলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
যাদের গ্যাস্টিক এর সমস্যার জন্য মাঝে মধ্যেই পেটে ব্যথা হয়ে থাকে তাহলে আগে থেকে গ্যাস্ট্রিক এর ঔষধ বাসার মধ্যে রেখে দেওয়া উচিত। তবে বাসায় গ্যাস্টিক এর ঔষধ না থাকলেও অনেক উপায় রয়েছে সেগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে অনায়াসে পেট ব্যথা কমানো সম্ভব। চলুন সেগুলো জেনে নেওয়া যাক-
আদা
প্রাচীনকাল থেকে পেটে ব্যথা কমাতে, বমি ভাব দূর করতে, হজমের সমস্যা সমাধানে ও চিরতরে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় হিসেবে আদা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি ও প্রদাহ বিরোধি গুণ থাকায় এটি সকল প্রকার প্রদাহ দূর করতে পারে। আদা যেভাবে ব্যবহার করতে পারেন-
১. এক কাপ গরম পানিতে পরিমাণ মতো আদা, চাপাতি, গোলমরিচ গুঁড়া ও চিনি দিয়ে ফুটান। স্বাদ ও কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য এতে মধু দেওয়া যেতে পারে। এভাবে চা ফুটানো হয়ে গেলে সেই চা পান করুন।
২. লেবুর রস, পুদিনা পাতার রস ও আদার রস মিশিয়ে সেই মিশ্রণ খেয়ে সহজেই পেট ব্যথা কমানো সম্ভব। স্বাদ বৃদ্ধির জন্য অল্প পরিমাণ লবন দেওয়া যেতে পারে।
৩. অল্প পরিমাণ আদা, লবন দিয়ে সোজা চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে। বাসার মধ্যে আদাকুচি থাকলে সেটিও খাওয়া যেতে পারে।
ক্যামোমিল চা
ক্যামোমিল এক প্রকার ভেষজ উদ্ভিদ থেকে তৈরি চা। বদহজম, বমি ভাব ও পেটে ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে ক্যামোমিল চা দারুণ কার্যকর। এই চা খেলে পেটের এসব সমস্যা অল্প সময়ের মধ্যেই কমে যায়। ক্যামোমিল দেয় বদহজমের সমস্যা থেকে মুক্তি। যা পেট ব্যথার অন্যতম কারণ। তাই হঠাৎ পেট ব্যথা হলে খেয়ে নিন ক্যামোমিল চা।
পিপারমেন্ট চা
ক্যামোমিল এর মতো পিপারেমেন্টও এর প্রকার ভেষজ চা। স্বাভাবিকভাবে যাদের হজমশক্তি তুলনামূলক কম, তারা অনেকে হজম শক্তি বৃদ্ধির ট্যাবলেট খেয়ে থাকেন। তবে প্রাকৃতিকভাবে হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে চাইলে পিপারেমেন্ট ও ক্যামোমিল চা খান। হজমশক্তি বৃদ্ধি করা ছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, বদহজম ও পেট ব্যথার মতো সমস্যায় পিপারমেন্ট ভালো কাজে দেয়।
কলার মাধ্যমে পেটে ব্যথা কমানোর উপায়
পেট ব্যথা কমাতে কিংবা পেটের বিভিন্ন সমস্যায় কলার ব্যবহার আজ কারো অপরিচিত নয়। কাঁচকলা রান্না করে খেলে তা পেট ব্যথা ও পেটের বিভিন্ন প্রকার প্রদাহ কমাতে, বমি ভাব ও ডায়রিয়া কমাতে এটি সাহায্য করে। এছাড়া কাঁচকলায় রয়েছে ফাইবার, পটাশিয়াম ও ভিটামিন বি৬। শরীরের কোন পেশী ব্যথা হলে উক্ত উপাদানগুলো ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
দই
পেটের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়া বেড়ে যাওয়ায় পেট ব্যথা হতে পারে। দইয়ের মধ্যে রয়েছে প্রোবায়োটিক ও ল্যাকটোব্যাসিলাস। উক্ত উপাদানগুলো পেটের ভীতর ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। সেই সাথে প্রোবায়োটিক গোস ও পেটের অস্বত্বি তে ভালো কাজ করে। এই খাবারটি অন্ত্রের জন্য খুবই ভালো।
পুদিনা পাতা
পেটের ব্যথা কমাতে পুদিনা পাদা দারুণ কাজ করে। সেই সাথে বমি বমি ভাবের সমস্যাও দূর করে পুদিনা পাতা। পুদিনা পাতাতে রয়েছে প্রাকৃতিক ব্যথানাশক ঔষধ। পেটে ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে চায়ের সাথে মিশিয়ে কিংবা সরাসরি পুদিনা পাতা চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
হিটিং প্যাড এর মাধ্যমে পেটে ব্যথা কমানোর উপায়
যে কোন ধরনের পেটে ব্যথা কমাতে হিটিং প্যাড খুব কাজে দেয়। লন্ডনের একদল গবেষক গবেষণা করে জানান যে, পেটে ব্যথা হলে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের তাপমাত্রার কোন কিছু পেটের মধ্যে রাখলে আরাম অনুভূত হয়। এই কাজটি করলে ব্যথা যে একেবারে কমে যাবে তা নয়। তবে সাময়িক সময়ের জন্য আরাম বোধ করবেন।
এজন্য গরম পানির ব্যাগ বা বোতলে হালকা গরম পানি নিয়ে কিংবা বাজারে অনেক ধরনের হিটিং প্যাড পাওয়া যায় সেগুলোও কিনতে পারেন। পেট ব্যথা হলে সেই প্যাডগুলো ব্যথাযুক্ত স্থানে ধরে রাখতে হবে। খেয়াল রাখবেন প্যাডের তাপমাত্রা যেন বেশী না হয়। তাপমাত্রা বেশী হলে ব্যথা তো কমবেই না বরং তা আরও ত্বকের ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়াবে।
সবশেষে যা জানা দরকার
পেটে ব্যথা হলে আতঙ্কিত না হয়ে ঘরোয়া উপায়ে পেটে ব্যথা কমানোর উপায় গুলো অনুসরণ করুন। উপরে যা যা বলা হয়েছে তার প্রায়ই সবকিছু প্রত্যেক বাসা বাড়িতেই বিদ্যমান। তাই এগুলোর খোজ করতে বাইরেও যেতে হবে না। উপরোক্ত উপায়গুলো অনুসরণ করার পরেও যদি দেখেন দু ঘণ্টার মধ্যে ব্যথা কমছে না তাহলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
Discussion about this post