পৌরনীতি ও নাগরিকতা ৪র্থ অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর : একনায়কতান্ত্রিক সরকার কাম্য নয়। কারণ একনায়কতন্ত্র গণতন্ত্রবিরোধী, এটি ব্যক্তি স্বাধীনতাকে স্বীকার করে না। এটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব করে, ফলে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। একনায়কতন্ত্র স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করে।
এতে ব্যক্তির স্বাধীনতা, চিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার সুযোগ নেই। এ শাসনব্যবস্থা একক নেতার নেতৃত্বে চলে, বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে ওঠার সুযোগ থাকে না। এ শাসনব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। সর্বদা বিপ্লবের ভয় থাকে। একনায়কতন্ত্রে উগ্র জাতীয়তাবোধ ধারণ ও লালন করা হয়। এ ধরনের মনোভাব আন্তর্জাতিক শান্তির পরিপন্থী।
পৌরনীতি ও নাগরিকতা ৪র্থ অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
১. রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে পার্থক্য:
১. রাষ্ট্র গঠিত হয় চারটি মৌলিক উপাদানের সমন্বয়ে। যেমন—জনসমষ্টি, ভূখ-, সরকার এবং সার্বভৌমত্ব। সরকার রাষ্ট্রের চারটি উপাদানের মধ্যে একটি মাত্র।
২. রাষ্ট্র একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠান। সরকার রাষ্ট্রের অংশ বিশেষ।
৩. রাষ্ট্র একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান। এর কোনো পরিবর্তন নেই। সরকার একটি অস্থায়ী ও পরিবর্তনশীল ব্যবস্থা।
৪. রাষ্ট্র সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। সরকার সার্বভৌম ক্ষমতা বাস্তবায়নকারী।
২. সম্পত্তির মালিকানার ক্ষেত্রে পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য লেখ।
উত্তর: সম্পত্তির মালিকানার ক্ষেত্রে পুঁজিবাদি রাষ্ট্রে সম্পত্তির ব্যক্তিমালিকানা স্বীকৃত। নাগরিকগণ সম্পদের মালিকানা ও ভোগের ক্ষেত্রে স্বাধীন। পক্ষান্তরে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সম্পত্তির ব্যক্তিমালিকানা স্বীকার করা হয় না। এতে উৎপাদনের উপকরণগুলো রাষ্ট্রীয় মালিকানায় থাকে। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে উৎপাদন ও বণ্টনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
৩. আমরা কীভাবে গণতান্ত্রিক আচরণ করতে পারি তার পাঁচটি উদাহরণ দাও।
উত্তর:
১. আমাদের পরমতসহিষ্ণু হতে হবে, অন্যের মতকে শ্রদ্ধা করতে হবে।
২. ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থপরতা পরিহার করে দেশের মঙ্গলকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করতে হবে।
৩. নিজের অধিকার আদায়ের পাশাপাশি সচেতন থাকতে হবে। নিজের অধিকার আদায় যেন অন্যের অধিকার ভঙ্গের কারণ না হয়।
৪. বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং দলের মধ্যে সম্প্রীতি, সহযোগিতা ও সহনশীলতা বজায় রাখতে হবে।
৫. ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যকে শ্রদ্ধা করতে হবে।
৪. একনায়কতান্ত্রিক সরকার কেন কাম্য নয়? পক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর: একনায়কতান্ত্রিক সরকার কাম্য নয়। কারণ একনায়কতন্ত্র গণতন্ত্রবিরোধী, এটি ব্যক্তি স্বাধীনতাকে স্বীকার করে না। এটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব করে, ফলে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। একনায়কতন্ত্র স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করে। এতে ব্যক্তির স্বাধীনতা, চিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার সুযোগ নেই। এ শাসনব্যবস্থা একক নেতার নেতৃত্বে চলে, বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে ওঠার সুযোগ থাকে না। এ শাসনব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। সর্বদা বিপ্লবের ভয় থাকে। একনায়কতন্ত্রে উগ্র জাতীয়তাবোধ ধারণ ও লালন করা হয়। এ ধরনের মনোভাব আন্তর্জাতিক শান্তির পরিপন্থী।
৫. পুঁজিবাদী রাষ্ট্র বলতে কী বোঝ?
উত্তর: পুঁজিবাদী রাষ্ট্র বলতে বোঝায় যেখানে জনগণের মালিকানা সম্পত্তির ওপর আরোপ করা হয়। এ সরকারব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণ (ভূমি, শ্রম, মূলধন, সংগঠন) ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকে। এর ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। অবাধ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উৎপাদন ও সরকার ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। এ ধরনের রাষ্ট্রে নাগরিকগণ সম্পদের মালিকানা ও ভোগের ক্ষেত্রে স্বাধীন।
৬. একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে লেখ।
উত্তর: একনায়কতন্ত্র একধরনের স্বেচ্ছাচারী শাসনব্যবস্থা। এতে রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা জনগণের হাতে থাকে না, থাকে একজন স্বেচ্ছাচারী শাসক বা দল বা শ্রেণির হাতে। এ ব্যবস্থায় গণমাধ্যমগুলো (রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র ইত্যাদি) নেতা ও তার দলের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এতে মনে করা হয়, সবকিছুই রাষ্ট্রের জন্য। এর বাইরে বা বিরুদ্ধে কিছুই নয়।
৭. একনায়কতন্ত্রকে চরম স্বেচ্ছাচারী শাসনব্যবস্থা বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: একনায়কতন্ত্র একধরনের স্বেচ্ছাচারী শাসনব্যবস্থা। কারণ, একনায়ককে কারো কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। তার কথাই আইন। এতে ব্যক্তির স্বাধীন চিন্তা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার সুযোগ নেই। এ ব্যবস্থা নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব করে বলে একে স্বেচ্ছাচারী শাসনব্যবস্থা বলে।
৮. গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: যে শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা সমাজের সকল সদস্য তথা জনগণের হাতে ন্যস্ত থাকে তাকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে। এটি এমন এক রাষ্ট্রব্যবস্থা যেখানে শাসনকাজে জনগণের সকলে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং সকলে মিলে সরকার গঠন করে। এটি জনগণের অংশগ্রহণে, জনগণের দ্বারা এবং জনগণের স্বার্থে পরিচালিত একটি শাসনব্যবস্থা। এতে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় অর্থাৎ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তিত হয়। বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ইত্যাদিসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা রয়েছে।
৯. যুক্তরাষ্ট্র বলতে কী বোঝ? বুঝিয়ে বল।
উত্তর: এ ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন কাজের সুবিধার জন্য সংবিধানের মাধ্যমে কেন্দ্র ও প্রদেশ বা অঞ্চলের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে পাশাপাশি অবস্থিত কতকগুলো ক্ষুদ্র রাষ্ট্র একত্রিত হয়ে একটি বড় রাষ্ট্র গঠন করে বলে রাষ্ট্রটি শক্তিশালী হয়। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকার সম্পদ আহরণ করে একটি বৃহৎ অর্থনীতি গঠনপূর্বক রাষ্ট্রকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও একটি যুক্তরাষ্ট্র।
১০. কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর: যে রাষ্ট্র জনগণের দৈনন্দিন ন্যূনতম চাহিদা পূরণের জন্য কাজ করে তাকেই কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলা হয়। এ ধরনের রাষ্ট্র জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য কর্মের সুযোগ সৃষ্টি করে, বেকার ভাতা প্রদান করে, বিনা খরচে শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। সচ্ছলদের ওপর উচ্চহারে এবং অসচ্ছলদের ওপর কম কর ধার্য করে গরিব ও দুস্থদের সাহায্য ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে। কৃষক, শ্রমিক ও মজুরদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ন্যূনতম মজুরির ব্যবস্থা করে তাদের জীবনযাত্রার মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করে। সমবায় সমিতি গঠন ও শ্রমিক কল্যাণ সমিতি গঠন করে কৃষক, শ্রমিক ও মজুরদের স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে।
আরও দেখো—পৌরনীতি ও নাগরিকতা অধ্যায়ভিত্তিক সৃজনশীল
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের পৌরনীতি ও নাগরিকতা ৪র্থ অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য এই অধ্যায় থেকে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর দেওয়া হলো—প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক সৃজনশীল এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্নের জন্য উপরের লিংকটি ভিজিট করো।
Discussion about this post