পৌরনীতি ও নাগরিকতা ৬ষ্ঠ অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর : স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল প্রথম বাংলাদেশের সরকার গঠিত হয়। বাংলাদেশ একটি গণপ্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রে সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। এছাড়াও বাংলাদেশ একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র।
এর কোনো প্রদেশ নেই এবং আমাদের দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা চালু রয়েছে। এ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি হলেও দেশের প্রকৃত শাসন ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিপরিষদের হাতে ন্যস্ত।
পৌরনীতি ও নাগরিকতা ৬ষ্ঠ অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
১. রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগপদ্ধতির পার্থক্য লিখ।
উত্তর: নিচে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগপদ্ধতির পার্থক্য তুলে ধরা হলো:
বাংলাদেশের শাসন বিভাগের সর্বোচ্চ ব্যক্তি হলেন রাষ্ট্রপতি। তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান। তবে তিনি নামমাত্র প্রধান। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে তিনি রাষ্ট্রের সকল কাজ পরিচালনা করেন। তিনি জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোটে নির্বাচিত হন। তার মেয়াদ পাঁচ বছর। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার কেন্দ্রবিন্দু এবং সরকারের প্রধান। তাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের শাসনকার্য পরিচালিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিসভা দেশের প্রকৃত শাসক। জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের আস্থাভাজন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। তার কার্যকাল পাঁচ বছর।
২. মন্ত্রিপরিষদের গঠন আলোচনা কর।
উত্তর: সরকার পরিচালনার জন্য দেশে একটি মন্ত্রিপরিষদ আছে। প্রধানমন্ত্রী এর নেতা। তিনি প্রয়োজন অনুযায়ী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন। মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রীগণ সাধারণত সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে নিযুক্ত হন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য কিন্তু সংসদ সদস্য নন এমন ব্যক্তিও মন্ত্রী নিযুক্ত হতে পারেন। তবে তার সংখ্যা মন্ত্রিপরিষদের মোট সদস্য সংখ্যার এক-দশমাংশের বেশি হবে না। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করেন। মন্ত্রিসভার সদস্যগণ একক ও যৌথভাবে সংসদের নিকট দায়ী থেকে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে বা কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে মন্ত্রিসভাও ভেঙে যায়। প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছে করলে মন্ত্রিসভার যেকোনো মন্ত্রীকে পরিবর্তন করতে পারেন। আবার যেকোনো মন্ত্রী ইচ্ছে করলে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। মন্ত্রিপরিষদের মেয়াদ পাঁচ বছর।
৩. প্রধানমন্ত্রীকে সরকারের স্তম্ভ বলা হয় কেন?
উত্তর: প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের কেন্দ্রবিন্দু এবং সরকার প্রধান। তাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের শাসনকার্য পরিচালিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিসভা দেশের প্রকৃত শাসক। তার নেতৃত্বে দেশে একটি মন্ত্রিসভা থাকে। তিনি মন্ত্রিসভার মূল স্তম্ভ এবং সংসদের নেতা। তাকে কেন্দ্র করে সরকার গঠিত, পরিবর্তিত ও পরিচালিত হয়। তিনিই দেশের প্রকৃত নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী। তাই প্রধানমন্ত্রীকে সরকারের স্তম্ভ বলা হয়।
৪. সংসদে কীভাবে বাজেট পাস হয়?
উত্তর: জাতীয় সংসদে প্রতিবছর বাজেট পাস হয়। সংসদের অনুমতি ছাড়া কোনো বিল পাস হয় না। সংসদে বাজেট পাসের জন্য অর্থমন্ত্রী প্রথমে বাজেটের খসড়া সংসদে উপস্থাপন করেন। এরপর সংসদ সদস্যগণ দীর্ঘ বিতর্ক ও আলোচনার মাধ্যমে সংশোধনীসহ তা পাস করেন। এভাবে সংসদে বাজেট পাস হয়।
৫. বাংলাদেশ সরকারের স্বরূপ বর্ণনা কর।
উত্তর: স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল প্রথম বাংলাদেশের সরকার গঠিত হয়। বাংলাদেশ একটি গণপ্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রে সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। এছাড়াও বাংলাদেশ একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র। এর কোনো প্রদেশ নেই এবং আমাদের দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা চালু রয়েছে। এ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি হলেও দেশের প্রকৃত শাসন ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিপরিষদের হাতে ন্যস্ত।
৬. জেলা জজ কী কী মামলা পরিচালনা করেন?
উত্তর: জেলা আদালতের প্রধান জেলা জজ। তার কাজে সহায়তার জন্য আছেন অতিরিক্ত জেলা জজ ও সাব জজ। এই আদালত জেলা পর্যায়ে দেওয়ানি (জমিজমা সংক্রান্ত, ঋণচুক্তি ইত্যাদি) ও ফৌজদারি (সংঘাত, সংঘর্ষ সংক্রান্ত) মামলা পরিচালনা করে।
৭. মন্ত্রিপরিষদের গঠন ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: সরকার পরিচালনার জন্য দেশে একটি মন্ত্রিপরিষদ আছে। প্রধানমন্ত্রী এর নেতা। তিনি যেরূপ সংখ্যক প্রয়োজন মনে করেন, সেরূপ সংখ্যক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন।
মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রীগণ সাধারণত সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে নিযুক্ত হন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য কিন্তু সংসদ সদস্য নন এমন ব্যক্তিও মন্ত্রী নিযুক্ত হতে পারেন। তবে তার সংখ্যা মন্ত্রিপরিষদের মোট সদস্য সংখ্যার এক-দশমাংশের বেশি হবে না।
৮. বিভাগীয় প্রশাসন সম্পর্কে কী জান?
উত্তর: বাংলাদেশে আটটি বিভাগ আছে। প্রতিটি বিভাগের প্রশাসনিক প্রধান হলেন একজন বিভাগীয় কমিশনার। কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি বিভাগের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তার কাজের জন্য কেন্দ্রের নিকট দায়ী থাকেন। বিভাগীয় কমিশনার জেলা প্রশাসকদের কাজ তদারকি করেন। বিভাগের উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন ও তত্ত্বাবধান করেন।
৯. আপিল বিভাগের ক্ষমতা ও কাজ বর্ণনা কর।
উত্তর: বাংলাদেশের বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্ট। সুপ্রিমকোর্টের একটি বিভাগ হলো আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায়, ডিক্রি বা দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল গ্রহণ করে শুনানির ব্যবস্থা করতে পারে। রাষ্ট্রপতি আইনের কোনো ব্যাখ্যা চাইলে আপিল বিভাগ এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিয়ে থাকে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে কোনো ব্যক্তিকে আদালতের সামনে হাজির হতে ও দলিলপত্র পেশ করার আদেশ জারি করতে পারে। আপিল বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত আইন হাইকোর্ট বিভাগের জন্য অবশ্যই পালনীয়। এভাবে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ আইনের ব্যাখ্যা, ন্যায়বিচার সংরক্ষণ ও পরামর্শ দান করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১০. হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতা ও কাজের ব্যাখ্যা দাও।
উত্তর: বাংলাদেশের বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্ট। সুপ্রিমকোর্টের একটি বিভাগ হলো হাইকোর্ট বিভাগ। হাইকোর্ট বিভাগ নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে। অধস্তন কোনো আদালতের মামলায় সংবিধানের ব্যাখ্যাজনিত জটিলতা দেখা দিলে উক্ত মামলা হাইকোর্টে স্থানান্তর করে মীমাংসা করতে পারে। অধস্তন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল গ্রহণ করে। সকল অধস্তন আদালতের কার্যবিধি প্রণয়ন ও পরিচালনা করে। আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ মিলে সুপ্রিমকোর্ট সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে দেশের সংবিধান ও মৌলিক অধিকার রক্ষা করে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে।
আরও দেখো—পৌরনীতি ও নাগরিকতা অধ্যায়ভিত্তিক সৃজনশীল
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের পৌরনীতি ও নাগরিকতা ৬ষ্ঠ অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য এই অধ্যায় থেকে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর দেওয়া হলো—প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক সৃজনশীল এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্নের জন্য উপরের লিংকটি ভিজিট করো।
Discussion about this post