পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : আইন ফারসি শব্দ। আইনের ইংরেজি প্রতিশব্দ ষধ,িযা মূলত টিউটনিক মূল শব্দ ষবম থেকে এসেছে। উৎপত্তি অনুসারে এর অর্থ হল স্থির, অপরিবর্তনীয় অথবা সর্বক্ষেত্রে সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। আইন হলো এমন কতগুলো বিধিবদ্ধ নিয়মাবলী যা কেবল মানুষের বাহ্যিক আচরণ কে নিয়ন্ত্রণ করে। আইন সমাজে বেশিরভাগ লোক কর্তৃক স্বীকৃত, যা সার্বভৌম কোনো কর্তৃপক্ষ থেকে নিঃসৃত এবং ভঙ্গ করলে শাস্তির বিধান আছে।সর্বোপরি বলতে পারি আইন হচ্ছে ব্যক্তির আচরণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নিয়ম এর সমষ্টি যার সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত।
পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ৩য় অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন ১: ‘চ’ জনগোষ্ঠী একই ভূখণ্ড, ভাষা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, রীতিনীতি ও অভিন্ন আশা আকাঙ্ক্ষার অধিকারী। কিন্তু তারা বিদেশি শক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত। শাসকগোষ্ঠীর স্বৈরশাসন এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাতন্ত্রবোধ ও ঐক্যবোধের জন্ম দেয় এবং তারা রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হয়। নানা আন্দোলন ও দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যদিয়ে তাদের স্বপ্ন পূরণ হয়। তারা ১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র লাভ করে।
ক. মূল্যবোধ কী?
খ. আইনের শাসন বলতে কী বোঝায়?
গ. ‘চ’ জনগোষ্ঠীর স্বাতন্ত্রবোধের সাথে তোমার পাঠ্যভুক্ত কোন বিষয়ের মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়ের সাথে সাম্যের সম্পর্ক বিশ্লেষণ কর।
১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. মূল্যবোধ এমন একটি মানদণ্ড যা ভালো-মন্দ নির্ধারণের মাধ্যমে মানুষের আচরণকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।
খ. আইনের শাসন হলো রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিবিশেষ, যেখানে সরকারের সব কার্যক্রম আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং যেখানে আইনের স্থান সবকিছুর ঊর্ধ্বে। ব্যবহারিক ভাষায় আইনের শাসনের অর্থ হলো, রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সরকার সর্বদা আইন অনুযায়ী কাজ করবে এবং রাষ্ট্রের কোনো নাগরিকের অধিকার লজ্জিত হলে আদালতের মাধ্যমে সে তার প্রতিকার পাবে। আইনের চোখে সবাই সমান এবং কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যে কেউ আইন ভঙ্গ করলে তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে- এটাই আইনের শাসনের বিধান।
গ. ‘চ’ জনগোষ্ঠীর স্বাতন্ত্র্যবোধের সাথে আমার পাঠাভুক্ত জাতীয়তাবোধের মিল রয়েছে।
জাতীয়তা হলো ভাষা ও সাহিত্য, চিন্তা, প্রথা ও ঐতিহ্যের বনে আবদ্ধ এক জনসমষ্টি, যা অনুরূপ বন্ধনে আবদ্ধ অন্যান্য জনসমন্টিকে নিজেদের থেকে পৃথক মনে করে। আর এ বোধ থেকে মানুষ নিজেদের স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। জাতীয়তার মহান আদর্শ বিশ্বের নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষকে মুক্তি সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছে। জাতীয়তার অনুঘটক হিসেবে দেশপ্রেম মানুষকে ব্যক্তিগত সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে দেশ গঠনের আত্মপ্রত্যয়ে বলীয়ান করেছে।
জাতীয়তা একটি মানসিক ধারণা, মনন ও চিন্তার এমন এক অবস্থা যা কোনো জনসমষ্টিকে অন্য জনসমষ্টি থেকে আলাদা করে এবং নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলে। জাতীয়তাবোধ থেকে মানুষ পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতা লাভের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। উদ্দীপকের বর্ণনায়ও এ বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে।
উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে, ‘চ’ জনগোষ্ঠী একই ভূখ-, ভাষা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, রীতিনীতি ও অভিন্ন আশা আকাঙ্ক্ষার অধিকারী। কিন্তু তারা বিদেশি শক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত। শাসকগোষ্ঠীর স্বৈরশাসন এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাতন্ত্রবোধ ও ঐক্যবোধের জন্ম দেয় এবং তারা রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হয়। নানা আন্দোলন ও দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যদিয়ে তারা ১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র লাভ করে। অর্থাৎ ‘ জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতা লাভের পেছনে জাতীয়তাবাদ অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত ‘চ’ জাতির স্বাতন্ত্র্যবোধের সাথে জাতীয়তাবোধের মিল রয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকের বিষয়ের সাথে অর্থাৎ স্বাধীনতার সাথে সাম্যের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। অপরের অধিকার বা স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করে স্বীয় ইচ্ছেমতো কাজ করার অধিকারকেই বলা হয় স্বাধীনতা। স্বাধীনতা হলো সভ্য সমাজের অপরিহার্য উপাদান। আর সাম্য বলতে এমন এক সামাজিক পরিবেশকে বোঝায়, যেখানে জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান সুযোগ সুবিধা লাভ করে। সাম্য নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন স্বাধীনতা।
স্বাধীনতার শর্ত পূরণ না হলে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় না। আবার স্বাধীনতাকে ভোগ করতে চাইলে সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সাম্য ও স্বাধীনতা একই সাথে বিরাজ না করলে অধিকার ভোগ করা সম্ভব নয়। স্বাধীনতা ও সাম্য একে অপরের পরিপূরক ও সহায়ক।
স্বাধীনতা ও সাম্য একই সাথে বৃহত্তর পরিসরে ব্যক্তি ও সমাজজীবনকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রণ করে। স্বাধীনভাকে অর্থবহ করতে হলে সমাজে সাম্য থাকতে হবে। সাম্য না থাকলে সমাজজীবন পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারবে না। বস্তুত সাম্য ছাড়া যেমন স্বাধীনতা হয় না, তেমনি স্বাধীনতা ছাড়া সামাও অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বৃহৎ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে স্বাধীনতা ও সাম্যের একই রূপ বলে প্রতীয়মান হয়। মূলত স্বাধীনতা ও সাম্য হলো একই মুদ্রার বিপরীত দিক। সাম্যের অনুপস্থিতি থেকেই স্বাধীনতার দাবির জন্ম হয়। উদ্দীপকেও দেখা যায়, বিদেশি শাসকগোষ্ঠীর স্বৈরশাসন এবং বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে ‘চ’ সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী দীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে। শাসকগোষ্ঠী উক্ত সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ না করলে তারা হয়তো স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করতো না। তারা এটা করেছে সাম্যের অনুপস্থিতির কারণে। আলোচনা শেষে বলা যায়, স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। স্বাধীনতা ও সাম্য পৃথক দুটি বিষয় নয় বরং একই আদর্শের দুটি দিক মাত্র।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২: ‘ক’ রাষ্ট্রের জনগণ জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান, ন্যায্য মজুরি প্রদান ও বেকারত্ব দূরীকরণ ইত্যাদি সুযোগ সুবিধা লাভের অধিকার সংরক্ষণ করেন। ফলে মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও জীবনে পূর্ণতা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
ক. আইন কী?
খ. মূল্যবোধ বলতে কী বোঝায়?
গ. ‘ক’ রাষ্ট্রের জনগণ কোন ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করছেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত স্বাধীনতা রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩: বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্রবাল তার শিক্ষক ও বন্ধুদের কাছে প্রিয়। সে প্রতিদিন সময়মত ক্লাসে আসে। ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার আগে সে প্রতিদিন তার ক্লাসরুমের বৈদ্যুতিক সুইচগুলো বন্ধ করে রেখে যায়। বিগত ভয়াবহ বন্যার সময় সে ও তার বন্ধুরা বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যায় এবং বিতরণ করে।
ক. সাম্য কী?
খ. দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা বলতে কী বোঝায়?
গ. প্রবালের কর্মকাণ্ডে কোন ধরনের মূল্যবোধ প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সমাজে মানবতাবোধ জাগ্রত করার ক্ষেত্রে উদ্দীপকে উল্লিখিত মূল্যবোধের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪: হোগল ডাঙ্গা গ্রামে ‘সবুজ সংঘ’ নামে যুবকদের একটি সংগঠন আছে। উক্ত সংগঠনের একটি লিখিত নীতিমালা আছে। সংগঠনটির অধিকাংশ সদস্যের সম্মতির ভিত্তিতে নীতিমালাটি তৈরি করা হয়েছে। প্রয়োজনে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে নীতিমালাটি পরিবর্তনও করা যাবে। সবাই এই নীতিমালাটি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। সংগঠনের সদস্যদের মূল কাজ মানুষের মধ্যে নৈতিকতা জাগ্রত করা, অসহায় মানুষের সেবা করা ও সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা।
ক. স্বাধীনতার সংজ্ঞা দাও।
খ. ধর্ম কীভাবে আইনের উৎস হিসেবে কাজ করে?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সংগঠনটির কাজের সাথে সরকারের কোন বিভাগের সাদৃশ্য আছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘সবুজ সংঘের সদস্যদের মতো দেশের সবাই আইন মেনে চললে সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব তুমি কি একমত? যুক্তি দাও।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৫: রাহেলা প্রতিদিন সকাল ৮.০০ টা থেকে বিকাল ৫.০০ টা পর্যন্ত দিনমজুরের কাজ করে। কাজ শেষে মজুরি নিতে গেলে কর্তৃপক্ষ পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে তাকে কম মজুরি দেয়। রাহেলা প্রতিবাদ করলে কর্তৃপক্ষ তাকে কর্মচ্যুত করার হুমকি দেয়। রাহেলা আশাহত না হয়ে যুক্তিসংগত দাবি আদায়ে ধৈর্য সহকারে শ্রমিকদের সংগঠিত করে। কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবির মুখে ন্যায্য মজুরি দিতে বাধ্য হয়।
ক. আইন কোন ভাষার শব্দ?
খ. মৌলিক অধিকার কাকে বলে?
গ. রাহেলা কোন ধরনের সাম্য ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. রাহেলার দাবি বাস্তবায়িত হওয়ায় কী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় জীবনে এর প্রভাব বিশ্লেষণ করো।
◉ আরও দেখো: পৌরনীতি ১ম ও ২য় পত্র সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ৩য় অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে মোট ৫টি প্রশ্ন উত্তর আমরা তোমাদের জন্য তৈরি করেছি। আশা করছি, এই প্রশ্নগুলো প্রাকটিস করলে তোমরা পরীক্ষার জন্য শতভাগ কমন পেয়ে যাবে। সবগুলো সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর পিডিএফ আকারে সংগ্রহের জন্য উপরে ‘ANSWER SHEET’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post