পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ৭ম অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : শাসন বিভাগের প্রকৃত ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে; কিন্তু সকল ক্ষেত্রে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করতে হয়। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীপরিষদেরও প্রধান। মন্ত্রীপরিষদের সদস্যদের প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দান করেন। মন্ত্রীদের মধ্যে দায়দায়িত্ব বন্টন করেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী সরকার ব্যবস্থার প্রধান নীতিনির্ধারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তবে আইন বাস্তবায়নগত সকল ক্ষমতা শাসন বিভাগের এখতিয়ারে। বাংলাদেশের শাসন বিভাগ এর ব্যাপ্তি সমুন্নত রেখেছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ থেকে একেবারে তৃণমূল পযায় পর্যন্ত। এ কারণে সরকারের এই বিভাগটির মাধ্যমেই রাষ্ট্রের সকল স্তরে আইন বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।
পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ৭ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন ১: বিলাশ একটি বই পড়ে জানতে পারল বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে একই ধরনের সরকারব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। ক্ষমতা বণ্টনের নীতি অনুসারে এই দুই দেশের সরকার পরিচালনা পদ্ধতি ভিন্ন। বাংলাদেশে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান ভিন্ন ব্যক্তি এবং আইন বিভাগ শক্তিশালী। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে একই ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান এবং রাষ্ট্রপতি ক্ষমতাশালী।
ক. একনায়কতন্ত্র কী?
খ. যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সরকারগুলো একই পদ্ধতির সরকারের ভিন্নরূপ- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত দুটি সরকারের পার্থক্য বিশ্লেষণ কর।
১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. একনায়কতন্ত্র হচ্ছে এমন এক ধরনের সরকারব্যবস্থা যেখানে কোনো ব্যক্তি, সংস্থা, গোষ্ঠী বা দল সব রাজনৈতিক কাজকর্ম পরিচালনার ক্ষমতা লাভ করে এবং সব নাগরিকের কাছ থেকে আনুগত্য আদায় করে।
খ. কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে সংবিধানের মাধ্যমে ক্ষমতা বণ্টনের ভিত্তিতে যে সরকার গঠিত হয় তাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলে। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কাঠামোতে একাধিক রাষ্ট্র বা প্রদেশ মিলে সরকার গঠন করা হয়। এ ধরনের সরকারব্যবস্থায় সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্র ও অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে ক্ষমতা বিভাজন করে দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকার সাধারণ বিষয়সমূহ এবং অঙ্গরাজ্যগুলো আঞ্চলিক বিষয়সমূহ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় উভয় সরকারই মৌলিক ক্ষমতার অধিকারী হয় এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র থেকে দেশ পরিচালনা করে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারত যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার পদ্ধতির উদাহরণ।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সরকারগুলো অর্থাৎ, মন্ত্রিপরিষদ শাসিত এবং রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা হলো গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থার দুটি ভিন্নরূপ।
রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি সাধারণত জনগণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। তিনি একই সাথে সরকারপ্রধান এবং রাষ্ট্রপ্রধান। মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকারপ্রধান এবং এখানে একজন নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান থাকেন। আর সংসদ সদস্যদের ভোটে একজন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং তিনি সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী রাজনৈতিক দলের একজন সাংসদকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেবেন। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থায় শাসক তার কাজের জন্য জনগণের কাছে দায়ী থাকেন। আর মন্ত্রিপরিষদশাসিত সরকারব্যবস্থায় শাসনকাজের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তাদের কাজের জন্য জাতীয় সংসদের কাজে দায়ী থাকেন। তাই বলা যায়, রাষ্ট্রপতি এবং মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারব্যবস্থা গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থার দুটি ভিন্নরূপ।
উদ্দীপকে দেখা যায়, বিলাশ একটি বই পড়ে জানতে পারল বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে একই ধরনের সরকারব্যবস্থা প্রচলিত আছে। ক্ষমতার বল্টনের নীতি অনুসারে এই দুই দেশের সরকার পরিচালনা পদ্ধতি ভিন্ন। অর্থাৎ বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদ শাসিত এবং যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের পরিচালক এবং সব ক্ষমতার অধিকারী। আর সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারব্যবস্থায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাছে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব থাকে। বাংলাদেশের শাসন বিভাগ রাষ্ট্র পরিচালনা করে এবং আইন বিভাগ শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের উল্লিখিত সরকারব্যবস্থা হলো গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থার দুটি ভিন্নরূপ ।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত যুক্তরাষ্ট্রের সরকারব্যবস্থা রাষ্ট্রপতিশাসিত এবং বাংলাদেশের সরকারব্যবস্থা সংসদীয় পদ্ধতির। তাই এ দুই সরকারব্যবস্থার মধ্যে বহুবিধ বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
যে শাসনব্যবস্থায় শাসন-সংক্রান্ত সব ক্ষমতা মন্ত্রিপরিষদের হাতে ন্যস্ত থাকে এবং মন্ত্রিপরিষদ নিজেদের যাবতীয় কাজ ও নীতিনির্ধারণের জন্য আইন পরিষদের কাছে দায়ী থাকে তাকে মন্ত্রিপরিষদশাসিত সরকার বলে অন্যদিকে, রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার বলতে এমন শাসনব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে রাষ্ট্রের শাসন পরিচালনার সব ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত থাকে এবং রাষ্ট্রপতি সাধারণত কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়ী থাকে না বরং তার দায়বদ্ধতা জনগণের কাছে। মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারব্যবস্থায় জাতীয় সংসদ হলো সব ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি হলেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।
বাংলাদেশের সরকারব্যবস্থায় অর্থাৎ সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় সার্বভৌম ক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যস্ত থাকে। আর যুক্তরাষ্ট্রের সরকারব্যবস্থা অর্থাৎ রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। আবার বাংলাদেশের সরকার তার যাবতীয় কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়ী থাকে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারকে কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। সংসদীয় সরকার বা মন্ত্রিপরিষদশাসিত সরকারব্যবস্থা স্থায়ীভাবে গঠিত নয় বরং যেকোনো সময় পরিবর্তিত হয়। এ সরকারব্যবস্থায় আইনসভাকে না জানিয়ে দেশের চরম সংকটকালে কিংবা জরুরি অবস্থা চলা কালেও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। এ ধরনের সরকারের বিভাগগুলো একত্রিত থাকে। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত স্থায়ী সরকারব্যবস্থা। এ সরকারব্যবস্থায় দেশের চরম সংকটকালে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। এছাড়া এ সরকারের বিভাগগুলো পৃথক থাকে। উপরের আলোচনায় সংসদীয় সরকারব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থার মধ্যকার বৈসাদৃশ্যগুলো ফুটে উঠেছে।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২: ‘ক’ রাষ্ট্রে সরকার প্রধানসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের আইনসভার কাছে জবাবদিহি করতে হয়। অন্যদিকে, ‘খ’ রাষ্ট্রে শাসন বিভাগ আইন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন। ফলে শাসন বিভাগকে তার কাজের জন্য আইন বিভাগের কাছে জবাবদিহি করতে হয় না।
ক. এককেন্দ্রিক সরকার কী?
খ. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে কী বোঝায়?
গ. ‘ক’ রাষ্ট্রে কী ধরনের সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘ক’ রাষ্ট্রের সরকারব্যবস্থা ‘খ’ রাষ্ট্রের চেয়ে উত্তম- বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩: ‘ক’ এবং ‘খ’ নামক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান যথাক্রমে রাষ্ট্রপতি ও রাজা। কিন্তু উভয় রাষ্ট্রের সরকার প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী।
ক. প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র কী?
খ. সর্বজনীন ভোটাধিকার বলতে কী বোঝ?
গ. ‘খ’ রাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার বিদ্য থাকার সম্ভাব্যতা যাচাই করো।
ঘ. দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে কোনটি প্রজাতন্ত্র? বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪: করিম সাহেব সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের সদস্য। তার প্রধান দায়িত্ব হলো জনগণের মৌলিক অধিকার ও সংবিধানের প্রাধান্য রক্ষা করা। তিনি তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন।
ক. গণভোট কী?
খ. রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে নির্দেশিত অঙ্গটির স্বাধীনতা রক্ষার উপায় বর্ণনা করো।
ঘ. উদ্দীপকে নির্দেশিত অগটি কীভাবে সংবিধানের প্রাধান্য জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করে? ব্যাখ্যা করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৫: সুমনের দেশে কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক বা স্থানীয় সরকারের মধ্যে ক্ষমতার কোনো বণ্টন নেই। সেখানে সকল ক্ষমতা সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্রের হাতে ন্যস্ত।
ক. এরিস্টটলের মতে সরকারের বিকৃত রূপ কোনটি?
খ. দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে নির্দেশিত সরকারের সুবিধা-অসুবিধা বিশ্লেষণ করো।
ঘ. স্থানীয় নেতৃত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই ধরনের সরকার কতটা সহায়ক? ব্যাখ্যা করো।
◉ আরও দেখো: পৌরনীতি ১ম ও ২য় পত্র সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ৭ম অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে মোট ৫টি প্রশ্ন উত্তর আমরা তোমাদের জন্য তৈরি করেছি। আশা করছি, এই প্রশ্নগুলো প্রাকটিস করলে তোমরা পরীক্ষার জন্য শতভাগ কমন পেয়ে যাবে। সবগুলো সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর পিডিএফ আকারে সংগ্রহের জন্য উপরে ‘ANSWER SHEET’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post