পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ৮ম অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : জনসাধারণের মতই হলো জনমত। জনগণ যখন কোন একটি সাধারণ বা বিশেষ বিষয়ে মত পোষণ করে তখন তাকে জনমত বলে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণের মতামত অত্যন্ত মূল্যবান। কারণ জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস।
কেবলমাত্র জনমতের উপর ভিত্তি করে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হতে পারে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যে সরকার জনমতের প্রতি অধিক শ্রদ্ধাশীল, সেই সরকার বেশি গণতান্ত্রিক। আইন প্রণয়ন ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে জনমত কার্যকরী প্রভাব বিস্তার করতে পারে। সচেতন ও সজ্ঞান জনমতের ভয়ে সরকার গণস্বার্থ বিরোধী ও দমনমূলক আইন প্রণয়ন করতে পারে না। এভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনগণ সরাসরিভাবে সংবিধান সংশোধন, আইন প্রণয়ন এবং প্রশাসনিক দায়িত্বশীলতার উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ৮ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন ১: জনাব ফরহাদ চৌধুরী পৌরসভা নির্বাচনে একজন প্রার্থী। নির্বাচনের আচরণ বিধি মেনে তিনি নির্বাচনি প্রচার প্রচারণার কাজ শুরু করেন। তিনি ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। বিভিন্ন জায়গায় পথসভা, মিটিং, মিছিল এর আয়োজন, লিফলেট, ব্যানার, পোস্টার বিতরণ করছেন। তিনি জনগণকে তার প্রতি বিশ্বাস রাখারও আহ্বান জানান।
ক. জনমত কী?
খ. রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে জনাব চৌধুরীর কাজে কোন বিষয়টির প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের বিষয়টির সাথে গণতন্ত্রের সম্পর্ক বিশ্লেষণ কর।
১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. সংখ্যাগরিষ্ঠের যুক্তিসিদ্ধ ও সুচিন্তিত মতামতই জনমত, যা সরকার ও জনগণকে প্রভাবিত করতে পারে।
খ. রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে কোনো দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি জনগণের মনোভাব, মূল্যবোধ, বিশ্বাস, অনুভূতি ও দৃষ্টিভঙ্গির সমষ্টিকে বোঝায়।
আমেরিকান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গ্যাব্রিয়েল অ্যালমন্ড তার ‘The Civic Culture’ গ্রন্থে রাজনৈতিক সংস্কৃতি শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। তার মতে, ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো রাজনৈতিক ব্যবস্থার সদস্যদের রাজনীতি সম্পর্কে মনোভাব এবং দৃষ্টিভঙ্গির রূপ ও প্রতিকৃতি। অর্থাৎ কোনো দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সে দেশের জনগণ কীভাবে গ্রহণ করছে সেটার ধরনই হলো রাজনৈতিক সংস্কৃতি। রাজনৈতিক সংস্কৃতির মাধ্যমে একটি সমাজের রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে।
গ. উদ্দীপকে জনাব ফরহাদ চৌধুরীর কাজে জনমত গঠনের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
কোনো সময়ের ব্যাপক আলোচিত বিষয়টির পক্ষে বা বিপক্ষে গোটা জনগণ বা তার বৃহত্তর অংশ যে মত পোষণ করে তাই হলো জনমত।
জনমত আধুনিক গণতন্ত্রের অন্যতম চালিকা শক্তি। এটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রাণস্বরূপ। দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রভৃতি জাতীয় সমস্যা সমাধান বা বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জনমত গঠন করা হয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাদের জনমত গঠনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া। স্থানীয় বা জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে বিভিন্ন সংগঠন বা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা নিজেদের পক্ষে জনমত গঠনে সক্রিয় থাকে। যে দল বা প্রতিষ্ঠান নিজেদের পক্ষে বেশি জনমত গড়ে তুলতে পারে তাদেরই নির্বাচনে জয়ী হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, জনাব ফরহাদ চৌধুরী পৌরসভা নির্বাচনে একজন প্রার্থী। তিনি নির্বাচনি বিধি মেনে প্রচারণা চালাচ্ছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের ভোট প্রার্থনা করছেন। বিভিন্ন জায়গায় পথসভা, মিটিং মিছিল, পোস্টার-ব্যানারের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে নিজের পক্ষে জনমত গঠনের চেষ্টা করছেন। সেই সাথে তিনি তার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতির ওপর জনগণকে আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে বলছেন। তার এ কাজের মূল উদ্দেশ্য হলো নিজের প্রতি জনগণের আস্থা তৈরির মাধ্যমে পৌর নির্বাচনে জয়ী হওয়া। উদ্দীপকের পৌরসভা নির্বাচনের মতো আমাদের দেশেও নির্বাচন আসন্ন হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে এরকম কর্মকা- লক্ষ্য করা যায়। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিরা সভা-সমাবেশ এবং মিছিল-মিটিং করাসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করে নিজেদের পক্ষে জনমত গঠনের চেষ্টা করেন। আলোচনা শেষে বলা যায়, ফরহাদ চৌধুরীর কাজের মাধ্যমে জনমত গঠনের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকের বিষয়টির সাথে অর্থাৎ জনমতের সাথে গণতন্ত্রের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনমত নাগরিকের অধিকার সুরক্ষা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার মূলমন্ত্র। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাফল্য জনমতের ওপর নির্ভরশীল। জনমতই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি। সরকার জনমতের চাপে জনস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। আবার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকারের স্থায়িত্ব ও গতিশীলতা নির্ভর করে জনমতের ওপর। গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থায় জনমতের ভিত্তিতে সরকার জনস্বার্থে আইন প্রণয়ন করে। জনমত দুর্নীতি রোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। দুর্নীতিপ্রবণ সরকার জনমতের রোষানলে পতিত হয়। এ ভয়ে গণতান্ত্রিক সরকার দুর্নীতিমুক্ত সরকারব্যবস্থা গড়ে তুলতে সচেষ্ট থাকে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা গণতন্ত্রের সফলতার অপরিহার্য শর্ত। গণতন্ত্রকে কার্যকর ও শক্তিশালী করণে জনমতের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
গণতন্ত্রের সুষ্ঠু বিকাশ সাধন করতে হলে জনমতের বিকাশ সাধন পূর্বশর্ত। জনমতের বিকাশ ছাড়া গণতন্ত্র কল্পনা করা যায় না। এককথায় গণতন্ত্র জনমত নামক শাসনযন্ত্রের মাধ্যমে বেঁচে থাকে। জনগণের মতামতের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন হয়ে থাকে। নির্বাচনের প্রাক্কালে জনমত যে রাজনৈতিক দলের পক্ষে থাকে সে দল নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। সরকার জনমতকে উপেক্ষা করে দেশ পরিচালনা করতে পারে না। গণতান্ত্রিক সরকারের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বা কার্যাবলিতে জনমতের প্রভাব অপরিহার্য।
ওপরের আলোচনা শেষে বলা যায়, গণতন্ত্র ও জনমত ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সফলতায় জন্মত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আবার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ছাড়া জনমতের প্রতিফলন দেখা যায় না।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২: জনাব ‘ক’ একটি সংগঠনের সদস্য। যার কর্মকাণ্ড সারা দেশে বিস্তৃত। উক্ত সংগঠন ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, জাতীয় সমস্যা প্রভৃতি বিভিন্ন মাধ্যমে তুলে ধরার পাশাপাশি সমাধানের জন্য কর্মসূচি প্রণয়ন করে। অন্যদিকে, ‘ক’ এর বন্ধু অন্য একটি সংগঠনের সদস্য সংগঠনটি মুনাফা লাভের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমকে ব্যবহারে সচেষ্ট থাকে।
ক. জনমত কী?
খ. জনমত গঠনে সংবাদপত্রের ভূমিকা লিখ।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত ‘ক’-এর সংগঠনটি প্রধানত কোন কোন মাধ্যমকে ব্যবহার করে কর্মসূচি প্রণয়ন করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংগঠন দুটির মধ্যে কার কার্যক্রম জনমত গঠনে ভূমিকা পালন করে? বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩: স্ত্রী, দুই পুত্র ও মা-বাবা নিয়ে সুকান্ত রায়ের পরিবার। তিনি পরিবারের সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে যাবতীয় কাজ করে থাকেন। তাদের সাথে দেশ-বিদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে প্রায়ই আলোচনা করেন। রাজনৈতিক শিক্ষাবিস্তারে তার কর্মকা- গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ক. রাজনৈতিক দল কী?
খ. নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় গঠিত সংগঠন সম্পর্কে লেখ।
গ. সুকান্ত রায়ের কর্মকাণ্ডে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন বিষয়ের মিল খুঁজে পাও? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সুতান্ত রায়ের সর্বশেষ কর্মকা- গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কতটুকু কার্যকরী? বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪: ‘ক’ রাষ্ট্রের সরকার নানা দমন-পীড়ন নীতির সাথে জড়িত। ঐ রাষ্ট্রের অপর একটি রাজনৈতিক দল সরকারের অপকর্মের বিষয়গুলো বিভিন্নভাবে জনসম্মুখে তুলে ধরতে এবং এর বিপক্ষে জনসমর্থন সংগঠনে সচেষ্ট হয়। এতে করে দেশটির পরবর্তী নির্বাচনে সরকার দলের প্রার্থীদের ব্যাপক ভরাডুবি হয় এবং বিরোধী দল নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে। নবগঠিত সরকার আইনসভায় জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে।
ক. জনমত গঠনের একটি আধুনিক মাধ্যমের নাম লেখ।
খ. জনমত গঠনের প্রথম ও প্রাথমিক মাধ্যম কোনটি? ব্যাখ্যা করো।
গ. ‘ক’ রাষ্ট্রের সরকার কোন ধরনের ভূমিকা পালন করলে নির্বাচনে ভরাডুবি হতো না? বিশ্লেষণ করো।
ঘ. উদ্দীপকে নির্বাচনে বিরোধী দলের জয়লাভে কীসের প্রতিফলন ঘটেছে? বর্ণনা করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৫: চন্দন বর্মন একজন সাংবাদিক। তিনি সংবাদ সংগ্রহের জন্য বের হয়ে দেখলেন একটি বিশাল র্যালি তার নিজের সামনে দিয়ে যাচ্ছে। তিনি দেখেন একটি ব্যানারে লেখা আছে “এসো সংঘাতকে ‘না’ বলি, বাসযোগ্য দেশ গড়ি।” চন্দন বর্মন সংবাদটি সুষ্ঠু জনমত গঠনের জন্য পত্রিকায় প্রকাশ করেন।
ক. জনমতের একটি মাধ্যমের নাম লেখ।
খ. জনমত গঠনের পরিবারের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে জনমত সংগঠনের যে মাধ্যমের ইঙ্গিত রয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের জনমতের মাধ্যমটি ছাড়া আর কী কী মাধ্যম জনমত গঠনে ভূমিকা পালন করে আলোচনা করো।
◉ আরও দেখো: পৌরনীতি ১ম ও ২য় পত্র সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ৮ম অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে মোট ৫টি প্রশ্ন উত্তর আমরা তোমাদের জন্য তৈরি করেছি। আশা করছি, এই প্রশ্নগুলো প্রাকটিস করলে তোমরা পরীক্ষার জন্য শতভাগ কমন পেয়ে যাবে। সবগুলো সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর পিডিএফ আকারে সংগ্রহের জন্য উপরে ‘ANSWER SHEET’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post