পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৩য় অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন গণতন্ত্রমনা রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক ধারা চালু করার মানসে তিনি পাকিস্তানে প্রথম শক্তিশালী বিরোধী দলের জন্মদান করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, সাধারণ নির্বাচনই গণতন্ত্রের সূতিকাগার।
তিনি জনগণের স্বাধিকারকে গণতন্ত্রের অন্যতম পূর্বশর্ত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। সব সময় ভাবতেন শাসনতন্ত্রের প্রশ্নে জনগণের রায়ই চূড়ান্ত। গণতন্ত্রের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করতে তিনি পিছপা হতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন, নির্ভুল নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্র কখনই ব্যর্থ হতে পারে না। গণতন্ত্রের প্রশ্নে আপসহীন নেতা ছিলেন বলেই তাকে গণতন্ত্রের মানসপুত্র বলা হয়।
পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৩য় অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : বেঙ্গল প্যাক্ট হলো বাংলার হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক বিভেদ সমাধানের লক্ষ্যে সম্পাদিত চুক্তি। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ অনুভব করেছিলেন যে, বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দাবি অগ্রাহ্য করে স্বাধীনতা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
এ দিক বিবেচনা করে চিত্তরঞ্জন দাশ মুসলমানদের সমর্থন ও হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। বাংলার মুসলিম নেতারাও তাঁর সাথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন এ.কে. ফজলুল হক, মৌলবি আবদুল করিম এবং হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী। তাদের উদ্যোগে ১৯২৩ সালে ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’ স্বাক্ষরিত হয়।
২. ফরায়েজি আন্দোলন বলতে কী বোঝ?
উত্তর : ফরায়েজি আন্দোলন বলতে হাজী শরীয়তউল্লাহ কর্তৃক পরিচালিত ফরজভিত্তিক আন্দোলনকে বোঝায়।
১৮১৮ সালে হাজী শরীয়তউল্লাহ মক্কা থেকে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি দেখলেন মুসলমানরা নানা প্রকার কুসংস্কারে লিপ্ত।
তারা কবরপূজা, পীরপূজা, ওরস ও মানত করে পরিত্রাণ পাবে বলে মনে করত। এ অবস্থা দেখে হাজী শরীয়তউল্লাহ ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনের ডাক দেন। এতে ইসলাম ধর্মের পাঁচটি ফরজ পালনের ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়। এই আন্দোলনই ইতিহাসে ফরায়েজি আন্দোলন নামে পরিচিত।
৩. তিতুমীর কেন বাঁশের কেল্লা স্থাপন করেন?
উত্তর : স্থানীয় অত্যাচারী জমিদার ও ঔপনিবেশিক ইংরেজ সরকারের বাহিনীকে প্রতিহত করতে এবং নিজের অনুসারীদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তিতুমীর (সৈয়দ মীর নিসার আলী; ১৭৮২-১৮৩১) বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন।
পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা তিতুমীর দরিদ্র কৃষকদের সাথে নিয়ে অত্যাচারী জমিদার এবং ব্রিটিশ নীলকরদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন।
তার আন্দোলন চব্বিশ পরগনা ও নদীয়া জেলার কৃষক, তাঁতীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে। একসময় সরকারসহ ক্ষমতাবানদের সাথে তাদের সংঘাত শুরু হয়। জমিদারদের বাহিনী এবং ব্রিটিশ সরকারের সেনাদল তিতুমীরের হাতে কয়েকবার পরাজিত হয়। তিতুমীর তার বাহিনীর নিরাপত্তা রক্ষা এবং প্রশিক্ষণের জন্য নারিকেলবাড়িয়ায় বাঁশ দিয়ে একটি কেল্লা নির্মাণ করেন ।
৪. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে গণতন্ত্রের মানসপুত্র বলা হয় কেন?
উত্তর : হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন গণতন্ত্রমনা রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক ধারা চালু করার মানসে তিনি পাকিস্তানে প্রথম শক্তিশালী বিরোধী দলের জন্মদান করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, সাধারণ নির্বাচনই গণতন্ত্রের সূতিকাগার। তিনি জনগণের স্বাধিকারকে গণতন্ত্রের অন্যতম পূর্বশর্ত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।
সব সময় ভাবতেন শাসনতন্ত্রের প্রশ্নে জনগণের রায়ই চূড়ান্ত। গণতন্ত্রের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করতে তিনি পিছপা হতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন, নির্ভুল নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্র কখনই ব্যর্থ হতে পারে না। গণতন্ত্রের প্রশ্নে আপসহীন নেতা ছিলেন বলেই তাকে গণতন্ত্রের মানসপুত্র বলা হয়।
৫. মুসলীম লীগ কেন গঠন করা হয়?
উত্তর : মুসলমানদের দুরবস্থার অবসান করে তাদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য মুসলিম লীগ গঠন করা হয়। ব্রিটিশ শাসনের শুরু থেকেই ভারতের মুসলমান সম্প্রদায় অবহেলিত ও বঞ্চিত হতে থাকে। ভারতের সব সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার জন্য ১৮৮৫ সালে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু কংগ্রেসের কিছু নীতি ও সিদ্ধান্তের কারণে মুসলমানরা হতাশ এবং আশাহত হয়ে পড়ে এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুসলমানরা সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হতো।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ শতকের প্রথমার্ধে মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি হয়। তারা নিজেদের জন্য আলাদা রাজনৈতিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এমন প্রেক্ষাপটে ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
৬. বেঙ্গল প্যাক্ট বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : বাংলার হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি রক্ষার জন্য সম্পাদিত একটি চুক্তি হলো বেঙ্গল প্যাক্ট।
ব্রিটিশ শাসনের অধীনে বাংলার ৬০ ভাগ জনগণ মুসলমান হলেও তারা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে অসাম্প্রদায়িক ও উদার মানসিকতার অধিকারী দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ বেঙ্গল প্যাক্ট এর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এ কে ফলুল হক, হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী, স্যার আব্দুল করিমসহ অন্যান্য মুসলিম নেতৃবৃন্দের সাথে ১৯২৩ সালে বেঙ্গল প্যাক্ট সম্পাদিত হয়।
অচিরেই এ চুক্তি সি আর দাশ ফর্মুলা নামে খ্যাতি লাভ করে। রাজনীতি, ধর্ম, কর্ম ইত্যাদি ক্ষেত্রে হিন্দু-মুসলমান উভয়ের স্বার্থ রক্ষা ও অগ্রাধিকার প্রতিষ্ঠাই হলো বেঙ্গল প্যাক্টের মূলকথা। দেশবন্ধুর এ প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে বাংলার হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের পথ প্রশস্ত করেছিল।
৭. মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে. মজলুম জননেতা বলা হয় কেন?
উত্তর : ষাটের দশকে আইয়ুব শাসনবিরোধী আন্দোলনে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন এক জ্বালাময়ী কণ্ঠ। তিনি সর্বদাই সাম্যের কথা বলেছেন। কৃষক-শ্রমিকের মুক্তি ও জনঅধিকার প্রতিষ্ঠায় মাওলানা ভাসানী এক বলিষ্ঠ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে তার সুযোগ্য নেতৃত্বের কথা সর্বজনবিদিত।
পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম পেরিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত রাজনীতিতে একটি স্বতন্ত্র ধারা তথা জনগণভিত্তিক রাজনৈতিক ধারা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। শোষিত ও নিপীড়িত মানুষদের স্বার্থ নিয়ে তিনি আজীবন আন্দোলন-সংগ্রাম করে গেছেন। এ কারণে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে মজলুম জননেতা বলা হয়।
৮. প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন বলতে কী বোঝ?
উত্তর : প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন বলতে প্রদেশের পূর্ণ কর্তৃত্বকে বুঝায়। প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থায় দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র সংক্রান্ত এবং অর্থ এ ত্রিবিধ বিষয়ের কর্তৃত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বিচার, পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা ইত্যাদি বিষয়ের কর্তৃত্ব প্রাদেশিক সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে এভাবেই ক্ষমতা বণ্টন করে দেওয়া হয়। মূলত এটিই হলো প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন।
৯. ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল বর্ণনা কর।
উত্তর : ১৯৭০ সালে নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনি ফলাফলে দেখা যায়, জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসন লাভ করে। তবে আওয়ামী লীগ পশ্চিম পাকিস্তানে কোনো আসন পায়নি।
পশ্চিম পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ১৩৮টি আসনের মধ্যে ৮৩টি আসন লাভ করে পিপল্স পার্টি। তবে এ দল পূর্ব পাকিস্তানে কোন আসন লাভ করেনি। প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টিতে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। বাকি ১২টি আসনের ৯টিতে স্বতন্ত্র, ২টিতে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং একটিতে জামায়াতে- ই-ইসলামী জয় লাভ করে।
১০. ফরায়েজি আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
উত্তর : বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে ফরায়েজি আন্দোলন ছিল অন্যান্য ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে পৃথক চরিত্রের। এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করা যায়।
১. ফরায়েজি আন্দোলন এক ধরনের শুদ্ধি ও সংস্কার আন্দোলন।
২. এ আন্দোলন এক বিশেষ সম্প্রদায়ের আন্দোলন।
৩. এ আন্দোলন মূলত একটি এলাকাভিত্তিক আন্দোলন।
৪. এটি ছিল কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির মুক্তির আন্দোলন।
৫. এ আন্দোলন এক প্রকার সামাজিক দিক-নির্দেশনামূলক আন্দোলন।
৬. ফরায়েজি আন্দোলনের রাজনৈতিক চরিত্রটি ছিল ব্রিটিশবিরোধী।
আরো দেখো: পৌরনীতি ও সুশাসন সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
উপরে দেয়া Answer Sheet বাটনে ক্লিক করে পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৩য় অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post