পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৪র্থ অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ জারি করেন। তিনি ঘোষণা করেন যে, এ আদেশ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে কার্যকর হবে।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদের ১৬৯ জন এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০ জন সদস্য, সর্বমোট ৪৬৯ জন সদস্যের মধ্য থেকে ৪০৩ জন সদস্য নিয়ে গণপরিষদ গঠিত হয়। এর মধ্যে ৪০০ জন ছিলেন আওয়ামী লীগ দলীয় একজন ন্যাপ (মোজাফফর) এবং অন্য ২ জন ছিলেন স্বতন্ত্র।
পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৪র্থ অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. মৌলিক অধিকার বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : মৌলিক অধিকার বলতে রাষ্ট্রপ্রদত্ত সেসব সুযোগ-সুবিধাকে বোঝায় যা ব্যতীত নাগরিকদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ সম্ভব নয়। মানুষের ব্যক্তিত্ব ও মেধা বিকাশের জন্য একান্তভাবে অপরিহার্য যে সকল অধিকার রাষ্ট্র কর্তৃক বলবৎ হয় সেইগুলোই মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। মৌলিক অধিকার ব্যতীত সভ্য জীবনযাপন করা সম্ভব নয়। সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ তাদের শাসনতন্ত্রে সন্নিবেশিত থাকে। গণতান্ত্রিক সমাজের মূলভিত্তি হলো মৌলিক অধিকার।
২. মৌলিক অধিকার কেন প্রয়োজন?
উত্তর : মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকা এবং সুস্থ, সুন্দর জীবন পরিচালনার জন্য মৌলিক অধিকার প্রয়োজন।
যেসব অধিকার পূরণ ব্যতীত মানুষের বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে তাই মৌলিক অধিকার। যেমন— খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের অধিকার। এসব অধিকার পূরণ ছাড়া নাগরিকরা সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারে না। তাই বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫নং অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার পূরণের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
৩. বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মূল বিষয়বস্তু কী ছিল? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মূল বিষয়বস্তু হলো রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারের পরিবর্তে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত ব্যবস্থা প্রবর্তন। নতুন এ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকার লাভ করেন। এ ব্যবস্থা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশে একটি মন্ত্রিসভা থাকবে বলে বলা হয়। মন্ত্রিপরিষদ তার কার্য ও নীতির জন্য আইনসভার নিকট দায়ী থাকবে। মোটকথা, দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকে সংকুচিত করে প্রধানমন্ত্রীকে অসীম ক্ষমতাশালী করা হয়।
৪. পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ সংবিধানের মূলনীতিতে কী পরিবর্তন আনা হয়েছিল?
উত্তর : পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ সংবিধানের ৪টি মূলনীতির মধ্যে গণতন্ত্র ছাড়া বাকি তিনটিতেই পরিবর্তন আনা হয়েছিল। পঞ্চম সংশোধনীতে জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ধারণা আনা হয়। ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আনা হয়। পঞ্চম সংশোধনীতে সমাজতন্ত্রকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার হিসেবে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি করা হয়।
৫. প্রজাতন্ত্র বলতে কি বোঝায়?
উত্তর : যে শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধান জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন তাকে প্রজাতন্ত্র বলে।
প্রজাতান্ত্রিক সরকার গণতান্ত্রিক সরকারের একটি রূপ। তবে সব প্রজাতন্ত্রে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের পদ্ধতি একইরূপ নয়। কোনো কোনো প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকে।
৬. গণপরিষদ গঠন করা হয় কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গণপরিষদ গঠন করা হয়।
সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ জারি করেন। তিনি ঘোষণা করেন যে, এ আদেশ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে কার্যকর হবে।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদের ১৬৯ জন এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০ জন সদস্য, সর্বমোট ৪৬৯ জন সদস্যের মধ্য থেকে ৪০৩ জন সদস্য নিয়ে গণপরিষদ গঠিত হয়। এর মধ্যে ৪০০ জন ছিলেন আওয়ামী লীগ দলীয় একজন ন্যাপ (মোজাফফর) এবং অন্য ২ জন ছিলেন স্বতন্ত্র।
৭. সচিবালয় বলতে কী বোঝ?
উত্তর : সচিবালয় বলতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও তার বিভাগসমূহ নিয়ে গঠিত প্রশাসনিক সংস্থাকে বোঝায়।
সচিবালয় হলো একটি দেশের তথা প্রশাসন ব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র। সরকারি যাবতীয় কর্মসূচি ও সিদ্ধান্ত সর্বপ্রথম সচিবালয়ে গৃহীত হয়। সচিবালয় বিভিন্ন প্রকল্পও বাস্তবায়ন করে। সর্বোপরি দেশের প্রশাসন যন্ত্রকে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় কার্য সম্পাদনকারী দপ্তরই হলো সচিবালয়।
৮. বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ২টি কাজ লিখ।
উত্তর : বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের দুটি কাজ উল্লেখ করা হলো-
১. প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ দানের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদেরকে মনোনয়নের উদ্দেশ্যে এ সংস্থা যাচাই ও পরীক্ষা গ্রহণ করে থাকে।
২. সুষ্ঠুভাবে সরকারি কর্ম পরিচালনার জন্য নিরপেক্ষ ও ন্যায়সংগতভাবে কর্মচারি মনোনয়ন ও নিয়োগ করার দায়িত্ব সরকারি কর্মকমিশনের ওপর ন্যস্ত।
৯. ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : ধর্মনিরপেক্ষতা হলো রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং ধর্ম পালনের যেকোনো প্রকার বৈষম্যের স্বীকার হতে রক্ষা পাওয়ার অধিকার। ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি অনুযায়ী রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না। এখানে জনগণের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ধর্মের অপব্যবহার বিলোপ করা হবে।
রাষ্ট্রে বসবাসরত প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী ধর্মপালন, চর্চা ও প্রচার করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ ধর্মাবলম্বীকে যেমন অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যাবে না, তেমনি তার প্রতি কোনো প্রকার বৈষম্যমূলক আচরণও করা যাবে না। মোট কথা, সমাজ জীবন থেকে ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই হবে রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য।
১০. মৌলিক অধিকার কী?
উত্তর : মৌলিক অধিকার বলতে রাষ্ট্রপ্রদত্ত সেসব সুযোগ-সুবিধাকে বোঝায়, যা নাগরিকদের ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য একান্ত অপরিহার্য। মানুষের সুস্থ, সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবনযাপন এবং ব্যক্তিত্ব ও মেধা বিকাশের জন্য যে সকল অধিকার রাষ্ট্র কর্তৃক বলবৎ করা হয়, সেগুলোই মৌলিক অধিকার বলে স্বীকৃত।
বাংলাদেশ সংবিধানের ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদলাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে। কেবল ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, লিঙ্গ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদলাভের অযোগ্য হবে না কিংবা সেক্ষেত্রে তার প্রতি কোনোরূপ বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না।
আরো দেখো: পৌরনীতি ও সুশাসন সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
উপরে দেয়া Answer Sheet বাটনে ক্লিক করে পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৪র্থ অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post