পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৫ম অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : বাংলাদেশে সরকার পরিচালনার জন্য একটি মন্ত্রিপরিষদ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এর নেতা। তিনি যেরূপ সংখ্যক প্রয়োজন মনে করবেন, সেরূপ সংখ্যক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন।
মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রিগণ সাধারণত সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে নিযুক্ত হন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য কিন্তু সংসদ সদস্য নন এমন ব্যক্তিত্ব মন্ত্রী নিযুক্ত হতে পারেন। তবে এর সংখ্যা মন্ত্রিপরিষদের মোট সদস্যসংখ্যার এক দশমাংশের বেশি হবে না। মন্ত্রিসভা যৌথভাবে জাতীয় সংসদের নিকট দায়ী থেকে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে বা কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে মন্ত্রিসভাও ভেঙে যায়।
পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৫ম অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থেকে বিচারকদের স্বাধীনভাবে বিচার কাজ পরিচালনা করার ক্ষমতাকে বোঝায়। কোনো দেশের শাসনব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না তা বিচারের মাপকাঠি হলো সে দেশের বিচার বিভাগ কার্য সম্পাদনে কতটুকু স্বাধীন। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষ সমাজব্যবস্থার প্রধান স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত। জনগণের মৌলিক অধিকার, সংবিধান এবং আইন সংরক্ষণে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা জরুরি।
২. বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা কী?
উত্তর : আইনসভা কর্তৃক প্রণীত কোনো আইন কিংবা শাসন বিভাগের কাজ সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না তা বিচার বিভাগ কর্তৃক পর্যালোচনা করার ক্ষমতাই হলো বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা। বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা ধারণাটির উদ্ভব হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের অভিভাবক ও ব্যাখ্যাকারক। সংবিধানের অভিভাবক ও রক্ষাকারী হিসেবে বিচার বিভাগ এর শ্রেষ্ঠত্ব অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য সচেষ্ট থাকে।
বিচার বিভাগের নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, আইনসভা কর্তৃক প্রণীত কোনো আইন সংবিধানের সাথে অসংগতিপূর্ণ, তাহলে তা বাতিল করার ক্ষমতা বিচার বিভাগের রয়েছে। তেমনি শাসন বিভাগের কোনো কাজ সংবিধানসম্মত না হলে বিচার বিভাগ তা অবৈধ ঘোষণা করতে পারে। সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্ব ও পবিত্রতা বজায় রাখতে বিচার বিভাগ এ ক্ষমতা প্রয়োগ করে।
৩. বাংলাদেশের আইনসভার গঠন লেখো।
উত্তর : বাংলাদেশের আইনসভার নাম হলো জাতীয় সংসদ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে জাতীয় সংসদ ৩৫০ জন সদস্যের মধ্যে ৩০০ জন সদস্য একক আঞ্চলিক নির্বাচনি এলাকাসমূহ হতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। এছাড়া ৫০ টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। এরা সংসদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হবেন। সংসদের কার্য পরিচালনার জন্য সংসদ সদস্যদের ভোটে একজন স্পিকার ও একজন ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন।
৪. সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বলতে কী বোঝ?
উত্তর : সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বলতে বাংলাদেশের সংবিধানের বিভিন্ন বিধিবিধানের আলোকে সরাসরি যেসব প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো কে বোঝায়। বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলি সাংবিধানিক আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়।
এ প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সরকার তথা নির্বাহী বিভাগ কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারে না এরা স্বাধীনভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে। এই সংস্থাগুলোর সভাপতি ও সদস্যগণ নির্দিষ্ট মেয়াদে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োজিত। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন, নির্বাচন কমিশন, এটর্নি জেনারেল, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক।
৫. সচিবালয় বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : সচিবালয় বলতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও তার বিভাগসমূহ নিয়ে গঠিত প্রশাসনিক সংস্থাকে বোঝায়।
সচিবালয় হলো একটি দেশের তথা প্রশাসন ব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র। সরকারি যাবতীয় কর্মসূচি ও সিদ্ধান্ত সর্বপ্রথম সচিবালয়ে গৃহীত হয়। সচিবালয় বিভিন্ন প্রকল্পও বাস্তবায়ন করে। সর্বোপরি দেশের প্রশাসন যন্ত্রকে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় কার্য সম্পাদনকারী দপ্তরই হলো সচিবালয়।
৬. বাংলাদেশের মন্ত্রী পরিষদের গঠন বর্ণনা কর।
উত্তর : বাংলাদেশে সরকার পরিচালনার জন্য একটি মন্ত্রিপরিষদ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এর নেতা। তিনি যেরূপ সংখ্যক প্রয়োজন মনে করবেন, সেরূপ সংখ্যক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন। মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রিগণ সাধারণত সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে নিযুক্ত হন।
সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য কিন্তু সংসদ সদস্য নন এমন ব্যক্তিত্ব মন্ত্রী নিযুক্ত হতে পারেন। তবে এর সংখ্যা মন্ত্রিপরিষদের মোট সদস্যসংখ্যার এক দশমাংশের বেশি হবে না। মন্ত্রিসভা যৌথভাবে জাতীয় সংসদের নিকট দায়ী থেকে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে বা কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে মন্ত্রিসভাও ভেঙে যায়।
৭. বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট কীভাবে গঠিত হয়?
উত্তর : সুপ্রিম কোর্ট হলো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৯৪ নম্বর অনুচ্ছেদ হতে শুরু করে ১১৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের গঠন, কার্যাবলি ও মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত। প্রধান বিচারপতির আসন এবং প্রত্যেক বিভাগের আসন গ্রহণ করার জন্য রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক নির্ধারিত সংখ্যক বিচারক নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হবে।
৮. মৌলিক অধিকার বলতে কী বোঝ?
উত্তর : মৌলিক অধিকার বলতে আমরা রাষ্ট্রপ্রদত্ত সেসব সুযোগ-সুবিধাকে বুঝি যা ব্যতীত নাগরিকদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ সম্ভব নয়। অর্থাৎ মানুষের ব্যক্তিত্ব ও মেধা বিকাশের জন্য একান্তভাবে অপরিহার্য যে সকল অধিকার রাষ্ট্র কর্তৃক বলবৎকৃত হয় সেইগুলোই মৌলিক অধিকার বলে স্বীকৃত।
মৌলিক অধিকার ব্যতীত সভ্য জীবনযাপন করা সম্ভব নয়। সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ তাদের শাসনতন্ত্রে সন্নিবেশিত থাকে। গণতান্ত্রিক সমাজের মূলভিত্তি হলো মৌলিক অধিকার।
৯. বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : আইনসভা প্রণীত আইন ও শাসন বিভাগ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না তা বিচার বিভাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে। যদি আইনটি বা সিদ্ধান্তটি সংবিধানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয় তবে বিচার বিভাগ তা বাতিল করে দিতে পারে। বিচার বিভাগের এ ক্ষমতাকে বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা বলে আখ্যায়িত করা হয়।
১০. বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কীভাবে নির্বাচিত হন?
উত্তর : বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদের সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাঁচ বছরের জন্য একজন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। অর্থ্যাৎ প্রত্যেক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংসদ সদস্যদের দ্বারা মূলত তিনি নির্বাচিত হয়ে থাকেন।
আরো দেখো: পৌরনীতি ও সুশাসন সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
উপরে দেয়া Answer Sheet বাটনে ক্লিক করে পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৫ম অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post