পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৪র্থ অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : মৌলিক অধিকার বলতে রাষ্ট্রপ্রদত্ত সেসব সুযোগ-সুবিধাকে বোঝায় যা ব্যতীত নাগরিকদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ সম্ভব নয়। মানুষের ব্যক্তিত্ব ও মেধা বিকাশের জন্য একান্তভাবে অপরিহার্য যে সকল অধিকার রাষ্ট্র কর্তৃক বলবৎ হয় সেইগুলোই মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। মৌলিক অধিকার ব্যতীত সভ্য জীবনযাপন করা সম্ভব নয়। সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ তাদের শাসনতন্ত্রে সন্নিবেশিত থাকে। গণতান্ত্রিক সমাজের মূলভিত্তি হলো মৌলিক অধিকার।
পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র ৪র্থ অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
১. রক্তাক্ত সংগ্রামের পর ‘ক’ রাষ্ট্র স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা লাভের এক বছরের মধ্যেই তারা পৃথিবীর একটি অন্যতম সেরা সংবিধান প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়। যা গোটা বিশ্বে প্রশংসিত হয়।
ক. বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি কয়টি?
খ. মৌলিক অধিকার বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংবিধানের সাথে তোমার পঠিত কোনো দেশের সংবিধানের সাদৃশ্য আছে কি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংবিধান অনুযায়ী “জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস।’ – বিশ্লেষণ করো।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হলো চারটি।
খ. মৌলিক অধিকার বলতে রাষ্ট্রপ্রদত্ত সেসব সুযোগ-সুবিধাকে বোঝায় যা ব্যতীত নাগরিকদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ সম্ভব নয়।
মানুষের ব্যক্তিত্ব ও মেধা বিকাশের জন্য একান্তভাবে অপরিহার্য যে সকল অধিকার রাষ্ট্র কর্তৃক বলবৎ হয় সেইগুলোই মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। মৌলিক অধিকার ব্যতীত সভ্য জীবনযাপন করা সম্ভব নয়। সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ তাদের শাসনতন্ত্রে সন্নিবেশিত থাকে। গণতান্ত্রিক সমাজের মূলভিত্তি হলো মৌলিক অধিকার।
গ. হ্যাঁ, উদ্দীপকের সংবিধানের সাথে আমার পঠিত বাংলাদেশের সংবিধানের সাদৃশ্য রয়েছে।
প্রতিটি স্বাধীন রাষ্ট্রেরই একটি সংবিধান থাকে। কারণ সংবিধানের ভিত্তিতেই একটি রাষ্ট্রের সকল কর্মকা- পরিচালিত হয়। এ কারণেই স্বাধীনতার পর পরই বাংলাদেশের একটি সংবিধান প্রণীত হয়। এই সংবিধানের বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলনই ‘ক’ রাষ্ট্রের সংবিধানের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়।
উদ্দীপকে ‘ক’ রাষ্ট্রটি স্বাধীনতা লাভের পর দ্রুততম ময়ের মধ্যে একটি সংবিধান প্রণয়ন করে। এর মূলনীতি হিসেবে যে বিষয়গুলোকে গণ্য করা হয় সেগুলো হলো জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। বাংলাদেশের সংবিধানের ক্ষেত্রেও এ বিষয়গুলো দৃষ্টিগোচর হয়। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। আর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। এরপর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পর পরই তিনি স্বাধীন রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য অনতিবিলম্বে সংবিধান প্রণয়নে মনোনিবেশ করেন।
১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করেন। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর এটি গণপরিষদ কর্তৃক চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়। এই সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ৪টি বিষয়কে নির্দিষ্ট করা হয়। এগুলো হলো বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতির ভিত্তিতে গড়ে ওঠা বাঙালি জাতীয়তাবাদ। শোষণহীন সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার লক্ষ্যে সমাজতন্ত্র। মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান এবং জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে গণতন্ত্র। সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতা বিলোপ ও সকল ধর্মের মানুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্মনিরপেক্ষতা। এ আলোচনা থেকে বাংলাদেশের সংবিধান এবং ‘ক’ রাষ্ট্রের সংবিধানের সাদৃশ্য প্রমাণিত হয়।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংবিধান অনুযায়ী অর্থাৎ বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’— বক্তব্যটি যথার্থ।
বাংলাদেশ সংবিধানের একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এ সংবিধানে জনগণের সার্বভৌমত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সংবিধানে বলা হয়েছে- ‘জনগণই সকল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উৎস’। জনগণ প্রত্যক্ষভাবে প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিচালনা করবে। অর্থাৎ এ সংবিধানে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন রয়েছে। গণতন্ত্রকে রাষ্ট্রের অন্যতম মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ঘোষণা করে সংবিধানের ১১নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে। প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।
বাংলাদেশের সংবিধানে জনগণের ক্ষমতায়ন স্বীকার করে নেয়ার পাশাপাশি মৌলিক অধিকারকেও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। আইন ব্যতীত এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না যাতে ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে। সর্বক্ষেত্রে জনগণের ক্ষমতায়ন হলেও দেশ আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। আইনের দ্বারা প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর ও অন্যভাবে বিধিব্যবস্থা করার অধিকার থাকবে। জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে দেশের সর্বত্র অবাধে চলাফেরা, এর যে কোনো স্থানে বসবাস, শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হওয়ার শোভাযাত্রায় যোগদান করার অধিকার সকলের থাকবে।
পরিশেষে বলা যায়, গণতন্ত্রের মূল কথাই হচ্ছে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। এর প্রতি অদম্য স্পৃহাই বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছিল। তাই সংবিধানে গণতন্ত্র তথা জনগণের ক্ষমতায়নকে রাষ্ট্রের অন্যতম মূল স্তম্ভ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
২. জনাব রশিদ একটি সংগঠনের প্রধান নির্বাহী। দায়িত্ব নেবার পর তিনি সংগঠনটি পরিচালনার জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করেন। সংগঠনটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা ও অন্যান্য সংগঠনের নীতিমালা পর্যালোচনা করে নীতিমালাটি তৈরি করা হয়। নীতিমালায় সদস্যদের অধিকার ও কর্তব্য, সংগঠন পরিচালনার মূলনীতি লিপিবদ্ধ করা হয়। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি লক্ষ রেখে নীতিমালাটি বেশ কয়েকবার সংশোধন করা হয়েছে।
ক. স্থানীয় শাসন কাকে বলে?
খ. মৌলিক অধিকার কেন প্রয়োজন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত নীতিমালার সাথে বাংলাদেশ সংবিধান প্রতিষ্ঠার পদ্ধতিগত মিল কোথায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উক্ত নীতিমালাটির সংশোধন সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক”- বিশ্লেষণ করো।
৩. সুমাইয়ার দেশের সংবিধান একটি লিখিত সংবিধান। সংসদীয় পদ্ধতির সরকার, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ইত্যাদি এ ‘সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য। এ সংবিধান সংশোধনের জন্য আইনসভার তিন-চতুর্থাংশের সদস্যদের সমর্থন প্রয়োজন। সংবিধানটিতে জনগণের মৌলিক অধিকারের উল্লেখ থাকলেও রাষ্ট্র চালনার মূলনীতির’ কোনো উল্লেখ নেই।
ক. সংবিধানের কোন সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হয়?
খ. বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মূল বিষয়বস্তু কী ছিল? ব্যাখ্যা করো।
গ. সুমাইয়ার দেশের সংবিধানের সাথে বাংলাদেশ সংবিধানের সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. বাংলাদেশের সংবিধান সুমাইয়ার দেশের সংবিধান অপেক্ষা উত্তম-তুমি কি একমত? যুক্তি দিয়ে লেখো।
৪. রাইমার দেশের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার এবং শক্তিশালী মন্ত্রিপরিষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে। আইনসভার সদস্যদের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সংবিধান পরিবর্তনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ক. কত তারিখে বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর হয়?
খ. পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ সংবিধানের মূলনীতিতে কী পরিবর্তন আনা হয়েছিল?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সংবিধানে বাংলাদেশ সংবিধানের কোন বৈশিষ্ট্যগুলো প্রতিফলিত হয়নি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. রাইমার দেশের সংবিধান সংশোধন পদ্ধতির তুলনায় তোমার দেশের সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি অধিকতর গ্রহণযোগ্য। উক্তিটির সপক্ষে তোমার মতামত পেশ করো।
৫. অধ্যাপক নাজমা আক্তার শ্রেণীকক্ষে পাঠদান করতে গিয়ে বলেন যে, বাংলাদেশের সংবিধান লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয়। ইচ্ছে করলেই সংবিধান সংশোধন করা যায় না। এটি সংশোধন করার পদ্ধতি স্পষ্ট করে সংবিধানের দশম ভাগ এ উল্লেখ রয়েছে। সেখানে সংবিধান সংশোধনের জন্য বিশেষ পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। সংবিধান পরিবর্তন, সংশোধন ও পরিমার্জন করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ক্ষমতাই চরম ও চূড়ান্ত।
ক. বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন কোনটি?
খ. প্রজাতন্ত্র বলতে কি বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বাংলাদেশ সংবিধান পদ্ধতি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাংলাদেশ সংবিধান পরিবর্তন ও পরিমার্জন করার ক্ষেত্রে উদ্দীপকে উল্লিখিত জাতীয় সংসদের ক্ষমতা বিশ্লেষণ করো।
◉ আরও দেখো: পৌরনীতি ১ম ও ২য় পত্র সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পৌরনীতি ২য় পত্র ৪র্থ অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে মোট ৫টি প্রশ্ন উত্তর আমরা তোমাদের জন্য তৈরি করেছি। আশা করছি, এই প্রশ্নগুলো প্রাকটিস করলে তোমরা পরীক্ষার জন্য শতভাগ কমন পেয়ে যাবে। সবগুলো সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর পিডিএফ আকারে সংগ্রহের জন্য উপরে ‘ANSWER SHEET’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post