প্রতিদান কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর : কবি বিশ্বাস করেন প্রতিহিংসা আর প্রতিশোধের মনোভাব বর্জন করে পরার্থপরতার মধ্যেই প্রকৃত সুখ ও জীবনের সার্থকতা লাভ করা সম্ভব। তাই যে কবিকে পথের বিবাগী করেছে কবি তার জন্যই পথে পথে ঘোরেন। অর্থাৎ অনিষ্টকারীর মঙ্গল কামনায় কবি নিজেকে নিবেদন করেন। অপকারীর উপকার করার মাধ্যমে তার মাঝে ইতিবাচক পরিবর্তন আনাই কবির লক্ষ্য।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবির কণ্ঠে প্রতিশোধ- প্রতিহিংসার বিপরীতে ব্যক্ত হয়েছে প্রীতিময় এক পরিবেশ সৃষ্টির আকাক্সক্ষা। আমাদের সমাজে সবাই একে অপরের প্রতি প্রতিহিংসা- পরায়ণ হয়ে পড়ে যে কোনো ঘটনায়। ক্ষমা করবার মনোভাব অনেকাংশেই কম। বিভেদ, হিংসা হানাহানিতে সমাজ পরিপূর্ণ। তাই কবির আশা সকলেই এই প্রতিশোধ প্রতিহিংসার বলয় থেকে বেরিয়ে এসে সম্প্রীতির সৃষ্টি করবে।
প্রতিদান কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর
১. কবিকে যে পর করেছে তাকে আপন করার জন্য কেঁদে বেড়ান কেন?
উত্তর: ব্যক্তিস্বার্থ পরিহার করে পরার্থপরতার মাধ্যমে সুখী ও সমৃদ্ধ পৃথিবী নির্মাণ করতে চান বলে কবিকে কেউ পর করলেও কবি তাকে আপন করতে কেঁদে বেড়ান।
‘প্রতিদান’ কবিতার কবি প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা আর বিভেদে বিশ্বাস করেন না। তিনি মনে করেন, ভালোবাসাপূর্ণ মানুষই নির্মাণ করতে পারে সুন্দর, নিরাপদ পৃথিবী। অনিষ্টকারীর ক্ষতি না করে তার উপকার করাই কবির আদর্শ। তাই কবিকে যে পর করে, কবি তাকে আপন করতে কেঁদে বেড়ান।
২. ‘আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর’ এ পঙ্ক্তিতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: আলোচ্য পঙক্তিতে কবি অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করে তার উপকার করার কথা বলেছেন।
কবি প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা আর হানাহানিতে বিশ্বাস করেন না। তিনি মহৎ হৃদয়ের মানুষ। শান্তিময়, নিরাপদ পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন বসেই তাঁর ঘর যে ভেঙেছে তিনি তাকেই ঘর তৈরি করে দিয়েছেন। অর্থাৎ শত্রুকে ক্ষমা করে পরম আপন করে নিয়েছেন।
৩. ‘ফুল করি দান সারাটি জনম-ভর’-পঙক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কবি অহিংসা ও মানবতায় বিশ্বাসী বলে সারাটি জীবন ফুল দান করেছেন।
কবি কখনো অনিষ্টকারীর ওপর প্রতিশোধ গ্রহণ চান না। তিনি অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করে, তার বিপদে পাশে থাকতে চান। তাই কেউ কবিকে কাঁটা দিলেও প্রতিদান হিসেবে কবি তাকে ফুল দিয়ে যাবেন সারাজীবন। কারণ প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ নয় বরং ভালোবাসাই পৃথিবীতে সুন্দর করে তুলতে পারে বলে কবির বিশ্বাস।
৪. যে মোরে করিল পথের বিবাগী- পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি – ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘যে মোরে করিল পথের বিবাগী পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি’- পঙক্তির মধ্য দিয়ে কবি পরার্থপরতার দিকটি তুলে ধরেছেন।
কবি বিশ্বাস করেন প্রতিহিংসা আর প্রতিশোধের মনোভাব বর্জন করে পরার্থপরতার মধ্যেই প্রকৃত সুখ ও জীবনের সার্থকতা লাভ করা সম্ভব। তাই যে কবিকে পথের বিবাগী করেছে কবি তার জন্যই পথে পথে ঘোরেন। অর্থাৎ অনিষ্টকারীর মঙ্গল কামনায় কবি নিজেকে নিবেদন করেন। অপকারীর উপকার করার মাধ্যমে তার মাঝে ইতিবাচক পরিবর্তন আনাই কবির লক্ষ্য।
৫. “আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন।
উত্তর: আলোচ্য চরণের মাধ্যমে কবি বোঝাতে চেয়েছেন কাছের-দূরের সব মানুষের প্রতিই তিনি সমান ভালোবাসা অনুভব করেন।
যে কবিকে পর করে দিয়েছে তাকেই আপন করতে কবির প্রাণ কাঁদে। কবি সকলকে আপনজন মনে করেন। তিনি কাউকে শত্রু ভাবতে পারেন না। তাই যারা কবিকে ভুল বুঝে পর করে দেয়, কবি তাদের জন্যই কেঁদে বেড়ান। কারণ তারা তাঁকে পর ভাবলেও কবি তা ভাবেন না। পরম মমতায় তাদের আপন করতে চান।
৬. ‘প্রতিদান’ কবিতায় ভালোবাসাপূর্ণ মানুষ কামনা করা হয়েছে কেন?
উত্তর: ভালোবাসাপূর্ণ মানুষ সুন্দর ও নিরাপদ পৃথিবী নির্মাণ করতে পারে বলে কবিতায় এমন মানুষের কামনা করা হয়েছে।
প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণ মানুষেরা কখনো অন্যের ভালো করতে পারে না। বরং তাদের দ্বারা সমাজের অমঙ্গল আর অনিষ্ট হয়। অন্যদিকে ভালোবাসাপূর্ণ মানুষ সহজেই পরকে আপন করতে পারে। তারা অন্যের দুঃখে সহায় হতে পারে। নিজেদের মনের সৌন্দর্য দিয়ে পৃথিবীকে নতুন করে সাজাতে পারে। তাই পৃথিবীতে ভালোবাসাপূর্ণ মানুষকেই কবি আকাঙ্ক্ষা করেছেন।
৭. কবি কাঁটার বিনিময়ে ফুল দান করতে চান কেন?
উত্তর: কবি অনিষ্টকারীর উপকার করতে চান বলে কাঁটার বিনিময়ে ফুল দান করেন।
কবি বিশ্বাস করেন, অনিষ্টকারীকে কেবল ক্ষমা করেই নয়, বরং প্রতিদান হিসেবে তার উপকার করার মাধ্যমে পৃথিবীকে সুন্দর করা সম্ভব। কেউ ক্ষতি করেছে বলে প্রতিশোধের বশবর্তী হয়ে তারও ক্ষতি করতে হবে কবি তা মানতে নারাজ। তাই কবিকে কেউ কাঁটা দিলে কবি তাকে প্রতিদানে ফুল উপহার দেন। অর্থাৎ কেউ তাঁর অনিষ্ট করলে বিনিময়ে তার মঙ্গল সাধন করেন।
প্রতিদান কবিতার অনুধাবন প্রশ্নের উত্তর
৮. যে গেছে বুকেতে আঘাত হানিয়া তার লাগি আমি কাঁদি’- কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কবি প্রতিহিংসাপরায়ণ নন বলে তাঁকে কেউ আঘাত করলেও তিনি আঘাতকারীর অকল্যাণে ব্যথা অনুভব করেন।
কবি পৃথিবীর সামগ্রিক কল্যাণে বিশ্বাস করেন। ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে কবির কাছে পরার্থপরতাই মুখ্য। তাই কবিকে কেউ আঘাত করলে, কবি তাকে পাল্টা আঘাত করেন না। বরং আঘাতের পরিবর্তে আঘাতকারীর জন্য কাঁদেন এবং তার মঙ্গল কামনা করেন।
৯. ‘ভালোবাসাপূর্ণ মানুষই নির্মাণ করতে পারে সুন্দর ও নিরাপদ পৃথিবী’ – ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: হিংসা-বিদ্বেষ নয় পারস্পারিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সহমর্মিতার সম্পর্ক পৃথিবীকে সুন্দর ও নিরাপদ করতে পারে।
বিভেদ, বিবাদ, হিংসা, বিদ্বেষ কখনো মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। সমাজ-সংসারে নানা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিরাজ করলেও কেবল ভালোবাসাপূর্ণ মনোভাবই পারে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলতে। ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে পরার্থপরতার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা এবং নিরাপদ পৃথিবীর নিশ্চয়তা নির্ভর করে। তাই ভালোবাসাপূর্ণ মানুষই পারে সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে।
১০. ‘কত ঠাঁই হতে কত কী যে আনি, সাজাই নিরন্তর’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: যে কবিকে নিষ্ঠুর বাণী দিয়েছে কবি তার মুখখানি সাজিয়ে দিতে চেয়েছেন।
কবি বিশ্বাস করেন কারো ক্ষতি করা নয়, উপকার করাই মানুষের প্রকৃত ধর্ম। তাই কেউ নিষ্ঠুর বাণী শোনালে কবি তার মুখ সাজিয়ে দিতে চেয়েছেন। দেখিয়ে দিয়েছেন প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ নয়, ভালবাসাই জীবনের আদর্শ।
১১. কবি দীঘল রজনী জেগে থাকেন কেন?
উত্তর: কবি দীঘল রজনী জেগে থাকেন যে তার ঘুম হরণ করেছে তার জন্য।
‘প্রতিদান’ কবিতার মূল বক্তব্যই হল ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে পরার্থপরতা। ঘুম হরণ করা এখানে প্রতীকী অর্থে অন্যের অনিষ্ট সাধনের বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে। কিন্তু কবি তার প্রতিদানে তার জন্য দীঘল রজনী জেগে থাকেন। সুন্দর, বাসযোগ্য পৃথিবী স্থাপন করতে চান বলে। প্রতিশোধ নেয়ার মানসিকতা কবির মাঝে অনুপস্থিত।
১২. যে কবির ঘর ভেঙেছে, কবি তার ঘর বাঁধতে চান কেন?
উত্তর: যে কবির ঘর ভেঙেছে, কবি তার ঘর বাঁধতে চান কারণ ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে তিনি অন্যের উপকার করতে চান । সমাজ সংসারে সবাই বিভেদ-হিংসা হানাহানিতে বিশ্বাসী। এর মধ্যেও কবির কণ্ঠে প্রতিহিংসার বদলে পরার্থপরতার বাণী ধ্বনিত হয়। তাই যে তার ঘর ভেঙেছে কবি তার ঘর বেঁধে দিয়ে তাকে সাহায্য করতে চান।
১৩. প্রতিদান’ কবিতায় কবির কণ্ঠে কোন আকাক্সক্ষা ব্যক্ত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘প্রতিদান’ কবিতায় কবির কণ্ঠে প্রতিশোধ- প্রতিহিংসার বিপরীতে ব্যক্ত হয়েছে প্রীতিময় এক পরিবেশ সৃষ্টির আকাক্সক্ষা। আমাদের সমাজে সবাই একে অপরের প্রতি প্রতিহিংসা- পরায়ণ হয়ে পড়ে যে কোনো ঘটনায়। ক্ষমা করবার মনোভাব অনেকাংশেই কম। বিভেদ, হিংসা হানাহানিতে সমাজ পরিপূর্ণ। তাই কবির আশা সকলেই এই প্রতিশোধ প্রতিহিংসার বলয় থেকে বেরিয়ে এসে সম্প্রীতির সৃষ্টি করবে।
১৪. কাঁটা পেয়ে তারে ফুল করি দান সারাটি জনম-ভর ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘কাঁটা পেয়ে তারে ফুল করি দান সারাটি জনম ভর’ –বলতে বুঝানো হয়েছে কবি কাঁটার আঘাত পেলেও এর বিনিময়ে ফুল দান করতে চান ।
কারণ প্রতিশোধ কখনো পৃথিবীকে সুন্দর করে তুলতে পারেনা বলে কবি বিশ্বাস করেন। তাই অনিষ্টকারীকে কেবল ক্ষমা করে নয়, বরং তার উপকার সাধনের মাধ্যমে কবি এই পৃথিবীকে বাসযোগ্য করতে চেয়েছেন।
১৫. ‘আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘প্রতিদান’ কবিতার এ চরণের মাধ্যমে কবি শত্রুকে ক্ষমা করে তার প্রতি শুভ কামনা জানিয়ে এ কথা বলেছেন।
যে কবিকে পর করেছে তাকেই আপন করতে কবির প্রাণ কাঁদে। কবি সবাইকে আপনজন মনে করেন। তিনি কাউকে শত্রু ভাবতে পারেন না। তাই যারা কবিকে ভুল বুঝে পর করে দেয়, কবি তাদের জন্যই কেঁদে বেড়ান। কারণ তারা তাকে পর ভাবলেও কবি তা ভাবেন না। পরম মমতায় তাদের আপন করতে চান। পাপী-অন্যায়কারী-ভুল পথে চলা মানুষ আসলে অসহায়। তাই কবি অন্যায়কারীকে নয়, পাপকে ঘৃণা করে পাপীর মঙ্গল চান।
◉ আরও দেখ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সকল গল্প-কবিতার CQ-MCQ সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা বই থেকে প্রতিদান কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। আমি আশা করছি, এই প্রশ্নগুলো প্রাকটিস করলে তোমরা পরীক্ষার জন্য শতভাগ কমন পেয়ে যাবে। সবগুলো অনুধাবন প্রশ্নের উত্তর পিডিএফ আকারে সংগ্রহের জন্য উপরে ‘ANSWER SHEET’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post