প্রতিদান কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : ‘প্রতিদান’ কবিতাটি কবি জসীমউদ্দীনের ‘বালুচর’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত। এ কবিতায় কবি ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে পরার্থপরতার মধ্যেই যে ব্যক্তির প্রকৃত সুখ ও জীবনের সার্থকতা নিহিত সেই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। সমাজ-সংসারে বিদ্যমান বিভেদ-হিংসা-হানাহানি দ্বারা আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও কবির কণ্ঠে প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার বিপরীতে ব্যক্ত হয়েছে প্রীতিময় এক পরিবেশ সৃষ্টির আকাক্সক্ষা। কেননা ভালোবাসাপূর্ণ মানুষই নির্মাণ করতে পারে সুন্দর, নিরাপদ পৃথিবী। কবি অনিষ্টকারীকে কেবল ক্ষমা করেই নয়, বরং প্রতিদান হিসেবে অনিষ্টকারীর উপকার করার মাধ্যমে পৃথিবীকে সুন্দর, বাসযোগ্য করতে চেয়েছেন।
প্রতিদান কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন ১. কথিত আছে, এক বুড়ি হযরত মুহম্মদ (স.) এর চলার পথে কাটা বিছিয়ে রাখতো এবং পথ চলতে নবির পায়ে কাটা ফুটলে আনন্দিত হতো । একদিন পথে কাঁটা না দেখে মুহাম্মদ (স.) চিন্তায় পড়ে গেলেন এবং বুড়ির বাড়িতে গিয়ে দেখলেন বুড়ি অসুস্থ । নবি (স.) কে দেখে বুড়ি ভয় পেয়ে গেল । মহানবী (স.) বুড়িকে ক্ষমা করে দিলেন এবং সেবাযত্ন দিয়ে তাকে সুস্থ করে তুললেন ।
ক. কবি কাকে বুকভরা গান দেন?
খ. কবিকে যে পর করেছে তাকে আপন করার জন্য কেঁদে বেড়ান কেন?
গ. উদ্দীপকের ভাবের সাথে ‘প্রতিদান’ কবিতার মূলভাবের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপক ও ‘প্রতিদান’ কবিতার ভাবার্থ ধারণ করলে একটি সুন্দর সমাজ গড়া সম্ভব’- বক্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কবিকে যে বিষে-ভরা বাণ দিয়েছে, কবি তাকে বুকভরা গান দেন।
খ. ব্যক্তিস্বার্থ পরিহার করে পরার্থপরতার মাধ্যমে সুখী ও সমৃদ্ধ পৃথিবী নির্মাণ করতে চান বলে কবিকে কেউ পর করলেও কবি তাকে আপন করতে কেঁদে বেড়ান।
‘প্রতিদান’ কবিতার কবি প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা আর বিভেদে বিশ্বাস করেন না। তিনি মনে করেন, ভালোবাসাপূর্ণ মানুষই নির্মাণ করতে পারে সুন্দর, নিরাপদ পৃথিবী। অনিষ্টকারীর ক্ষতি না করে তার উপকার করাই কবির আদর্শ। তাই কবিকে যে পর করে, কবি তাকে আপন করতে কেঁদে বেড়ান।
গ. উদ্দীপকের ভাবের সাথে ‘প্রতিদান’ কবিতার মূলভাবের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি হচ্ছে, অনিষ্টকারীকে কেবল ক্ষমা করেই নয় প্রতিদান হিসেবে তার উপকার করাই মানবজাতির আদর্শ হওয়া উচিত।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি বলতে চেয়েছেন, মানুষের জীবনের প্রকৃত সুখ ও সার্থকতা অপরের কল্যাণেই নিহিত। ত্রুটিপূর্ণ সমাজব্যবস্থায় বিভেদ-হিংসা-হানাহানি দ্বারা আক্রান্ত হলেও কবি দয়া, ভালোবাসা ও সহমর্মিতায় বিশ্বাস করেন। লোভ-লালসা, প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার বিপরীতে ভালোবাসাপূর্ণ সুন্দর, নিরাপদ পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন কবি। কবি অনিষ্টকারীর উপকার করার মাধ্যমে মহানুভবতার শক্তিতে পৃথিবীকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করতে চেয়েছেন।
উদ্দীপকে যে বুড়ি হযরত মুহম্মদ (স.)-এর চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে তাঁকে কষ্ট দিতে চেয়েছে, নবিজী তাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছেন। শুধু তাই নয়, বুড়ির বিপদে তাকে সাহায্য করেছেন। তাই বলা যায়, অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করে, তার মঙ্গল কামনাই মানবজাতির মূল লক্ষ্য, যা উদ্দীপকের ভাবের সাথে ‘প্রতিদান’ কবিতার মূলভাবের সাদৃশ্য নির্দেশ করে।
ঘ. উদ্দীপক ও ‘প্রতিদান’ কবিতার ভাবার্থ বিভেদ-হিংসা-হানাহানির পরিবর্তে প্রীতি, দয়া, ভালোবাসা ও পরোপকার যা মনে ধারণ করলে একটি সুন্দর সমাজ গড়া সম্ভব।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে পরার্থপরতার মধ্যেই যে ব্যক্তির প্রকৃত সুখ ও জীবনের সার্থকতা নিহিত সেই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। সমাজ-সংসারে বিদ্যমান বিভেদ-হিংসা-হানাহানি দ্বারা আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও কবির কণ্ঠে প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার বিপরীতে ব্যক্ত হয়েছে প্রীতিময় এক পরিবেশ সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা।
উদ্দীপকে হযরত মুহম্মদ (স.)-এর জীবনাদর্শ ফুটে উঠেছে। সেখানে এক বুড়ি নবি (স.)-এর পথে কাঁটা বিছিয়ে তাঁকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পেত। কিন্তু একদিন নবিজী পথে কাঁটা দেখতে না পেয়ে বিচলিত হয়ে বুড়ির খোঁজ নিতে তার বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি। জানতে পারলেন বুড়ি অসুস্থ। তখন নবি (স.) বুড়িকে ক্ষমা করে দিয়ে সেবাযত্ন করে বুড়িকে সুস্থ করে তুললেন। ‘প্রতিদান’ কবিতায় অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করে তার উপকারের যে আহ্বান ধ্বনিত হয়েছে সেটিই উদ্দীপকে প্রকাশ লাভ করেছে।
পরার্থে জীবন উৎসর্গ করাতেই মানবজন্মের সার্থকতা নিহিত। মহৎ হৃদয়ের ব্যক্তিগণ আত্মত্যাগের মহিমায় ভাস্কর। নিজের বৃহত্তর কল্যাণ সাধনে তারা সর্বদা তৎপর থাকেন। উদ্দীপকে হযরত (স.)-মাশীলতা এবং মহৎ উ দূর কার নিজেকে নিবেদন করেন। তেমনি ‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি অনিষ্টকারীকে কেবল ক্ষমা করেই নয়, প্রতিদান হিসেবে অি উপকার করার মাধ্যমে পৃথিবীকে সুন্দর, বাসযোগ্য করতে চেয়েছেন। ভাই বলা যায়, উদ্দীপক ও ‘প্রতিদান’ কবিতার ভাবার্থ করে করলে একটি সুন্দর সমাজ গড়া সম্ভব।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২. ফতেপুর গ্রামের সমিরউদ্দীন ও রহিমউদ্দীন দুই ভাই। বড়ো ভাই সমিরউদ্দীন ছোটো ভাই রহিমউদ্দীনকে ঠকিয়ে বাবার সঙ্গী সম্পত্তি আত্মসাৎ করে। বর্তমানে সমিরউদ্দীন কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত। এই বিপদের দিনে কেউ তার পাশে নেই। কিন্তু ছোটো ভাই রহিমউদ্দীন সব ভুলে সমিরউদ্দীনের পাশে দাঁড়িয়েছে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সে-ই ভাইকে সুস্থ করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
ক. পল্লিকবি জসীমউদ্দীন কোন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন?
খ. ‘আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর’ এ পঙ্ক্তিতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের রহিমউদ্দীন চরিত্রের সাথে প্রতিদান’ কবিতার কবিভাবনার সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপক ও ‘প্রতিদান’ কবিতার মূল লক্ষ্য একই।’ বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩. বজলু মতিন মণ্ডলের চায়ের দোকানে কাজ করে। একদিন বজলু চায়ের কাপ পরিষ্কার করতে গিয়ে অসতর্কতাবশত দুটি কাপ ভেঙে ফেলে। এতে মতিন মণ্ডল তাকে অনেক মারধর করে। রাতের কাজ শেষে যখন বজলু বাড়ি ফিরবে হঠাৎ সে দোকানের ক্যাশ বাক্সের পাশে কিছু টাকা দেখতে পায়। তার বুঝতে দেরি হয় না যে, দোকানির মালিক টাকা বাক্সে তুলতে ভুলে গেছে। পরদিন কাজে এসে বালু মতিন মণ্ডলকে টাকাগুলো ফেরত দেয়। তখন মতিন মিয়া বজলুকে শাস্তি দেওয়ার জন্য অনুতপ্ত হয় এবং বজলুর বেতন বাড়িয়ে দেয়।
ক. ‘নিরন্তর’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘ফুল করি দান সারাটি জনম-ভর’ – পঙক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের সাথে প্রতিদান’ কবিতার সাদৃশ্য আলোচনা করো।
ঘ. ‘মতিন মণ্ডলের মানসিক পরিবর্তন যেন কবির ভালোবাসাপূর্ণ পৃথিবী নির্মাণের সহায়ক।’- উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪. সাহার বানু একজন স্কুলশিক্ষিকা। তাছাড়া গ্রামের নানা উন্নয়নমূলক কাজের সাথে তিনি যুক্ত। গ্রামের মানুষের বিপদের দিনে তিনি সবসময় পাশে দাঁড়ান। কিন্তু তার প্রতিবেশী আফজাল হোসেন তাঁকে সহ্য করতে পারেন না এবং নানাভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা করেন। তবে স্কুলশিক্ষিকা সাহার বানু কখনোই আফজাল হোসেনকে নিজের শত্রু ভাবেন না। বরং তার বিপদের দিনেও সাহার বানু সবার আগে এগিয়ে আসেন।
ক. জসীমউদদীন কী হিসেবে সমধিক পরিচিত?
খ. যে মোরে করিল পথের বিবাগী- পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি – ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের আফজাল চরিত্রের সাথে প্রতিদান কবিতার বৈপরীত্য কোথায়? আলোচনা করো।
ঘ. ‘সাহার বানু যেন কবি ভাবনার প্রতিচ্ছবি’- উক্তিটি যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৫. সম্প্রতি আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় আম্পান লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেছে রূপপুর গ্রাম। কালাম ও গম্বুর দুজনই এই গ্রামের বাসিন্দা। কিন্তু সীর্ঘদিন ধরেই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত লেগেই আছে। গত কয়েক দিন থেকেই তারা ত্রাণের আশায় ইউনিয়ন পরিষদে খোজখবর করছিল। অবশেষে গফুর ত্রাণের বস্তা পেলেও ঝালাম কোনো ত্রাণ পেল না। বিষয়টি জানতে পেরে গফুর তার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে সো। সে নিজের ত্রাণের কিছু অংশ কালামকে দেয়। এতে তাদের মধ্যে শত্রুতার পরিবর্তে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়।
ক. কবি জসীমউদ্দীনের পৈতৃক নিবাস কোথায়?
খ. “আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন।
গ. উদ্দীপকের গফুর চরিত্রটি ‘প্রতিদান’ কবিতার কোন দিকটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘গফুরের কালামকে সাহায্য করা ‘প্রতিদান’ কবিতার চেতনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’- উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।
◉ আরও দেখ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সকল গল্প-কবিতার CQ-MCQ সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা মূল বই থেকে প্রতিদান কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। একই সাথে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য আরও অতিরিক্ত ৪টি প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। সবগুলো সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর পিডিএফ আকারে সংগ্রহের জন্য উপরে ‘ANSWER SHEET’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post